ছ্যাঁকা

ছ্যাঁকা

—“আমার সাথে একটা খুব কাকতালীয় ঘটনা ঘটেছে। সারাবছর যার মেসেজের অপেক্ষাতে আমার রাতদিন পার হয়ে যায় কিন্তু কোন মেসেজ পেতামনা। সে ব্যক্তি আমায় আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। যে ব্যক্তির কথা বলছি তিনি আমার বিখ্যাত, কুখ্যাত ক্রাশ। যার একটা মেসেজের জন্য আমি দিনরাত ছটফট করি। তার জন্য প্রতিদিন দুই তিন লাইলের খাদ্য অখাদ্য টাইপের কবিতা লিখে টাইমলাইনে পোস্ট দিই। কিন্তু পোড়া কপাল আমার যার জন্য পোস্ট করি সে ছাড়া বাকি সবাই , হা, হুতাশ শুরু করে।

আর ইনবক্সে মেসেজের বন্যা শুরু করে দেই। সে দুঃখে মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে কচুগাছের সাথে ঝুলে পড়ি। প্রতিদিন নিত্যনতুন ছবি তুলে আপলোড করি। কখনো মুখের বাম সাইড, কখনো বা মুখের ডান সাইড। কখনো বা, হাতে মেহেদী পড়ে তার পিক৷ আবার কখনো শাড়ি পড়ে, চুল খোলা রেখে হাত দিয়ে একচোখ ঢেকে রেখে পিক তুলে পোস্ট করি। কখনো বা আলতা রাঙা পায়ে নপুর পড়ে একহাত রেখে পিক তুলে আপলোড দিই। কিন্তু দুইন্নার, আবুল, চাবুল সবাই, ওয়াও,নাইস, সাথে কপি করে কবিতার লাইন কমেন্ট করে। তাদের কমেন্ট দেখলে মনে মনে বলি, তোদের চোখ কানা হয়ে যাক। হাতে পচন ধরুক তোদের। হুচট খেয়ে ডাস্টবিনে পইড়া যা।

কেউ কেউ তো মেসেঞ্জারে প্রেম করার জন্য উৎসুক হয়ে পড়ে। কেউ কেউ তো ইন্দুরের বিষ খাইয়া সুসাইড খাওয়ার হুমকি দেই। এগুলো কিছুই আমার মনে দাগ কাটেনা। জীবন আমার বিরহময় আমার ক্রাশের জন্য। মাঝে মাঝে নিজেকে শাবানার মতো জনম দুঃখীনি লাগে। ক্রাশ হবে এটিটিউড ওয়ালা । সহজে পটবেনা। কিন্তু তাই বলে এমন নির্দয় ওয়ালা হোক সেটা তো বলিনাই। মাঝেমধ্যে নিজে নিজেকে গালি দিই, শালী পোলার অভাব পরছে তোর জীবনে যার জন্য ওমন শালারপুতরে নিজের ক্রাশ বানায়লি। এই কথা বলার পরে আমার অন্য মন বলে, ক্রাশ কি আর হিসেব করে খাওয়া হয় মনু! মাথায় একটা হাত দিয়ে,দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি এই জেবনে তার লগে তোর কথা হবেনা নে।

ক্রাশের আইডি যতোগুলো গ্রুপে আছে আমিও তার পিছু পিছু ওই গ্রুপে এড হয়ে যায়। ক্রাশের পোস্ট কমেন্ট সব দেখি। কয়টা মেয়ে লাভ, রিয়েক্ট , কয়টা ওয়াও রিয়েক্ট দেই সব চ্যাক করি। মেয়েদের লাভ আর ওয়াও রিয়েক্ট দেখে তখন সেকল মেয়েকে মনে মনে বদদোয়া করি। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি সবকয়টার উপর জেনো ঠাডা পড়ে। ভুড়িওয়ালা জামাই কপালে জুটে।

প্রতিদিন মদ খেয়ে জেনো গনপিঠুনি দেই। সারারাত গুতগুত করে জেনো নাক ডাকে। ক্রাশ কখন পোস্ট করবে তার জন্য উৎপেতে থাকি কবে সে পোস্ট করবে আর আমি কমেন্ট করবো আর সে কমেন্টের রিপ্লাই দিবে। কমেন্টের রিপ্লাই রিপ্লাই খেলতে খেলতে একসময় মেসেঞ্জারে কথা শুরু হবে। কিন্তু এসে গুড়ায় বালি৷স্বপ্ন, ইচ্ছে আমার স্বপ্ন আর ইচ্ছে অবধি থেকে যায় বাস্তবে আর বদল হয়না । কারণ সে আমার কমেন্ট বাদ দিয়ে বাকি সবার কমেন্টের রিপ্লাই করে। দুঃখ কষ্টে তখন মনের মাঝে একটা গানের লাইন বারবার বেজে বেজে উঠে, ” জ্বলেদ্দে পুড়েদ্দে, হইলজের ভেতরে ” সাথে আরো একটা হিন্দি গানের লাইন বেজে উঠে, “অ্যাপনা টাইম অ্যায়েগ্যা ”

এসব তো বাদ দিলাম ক্রাশ যখন আমায় আমার জন্মদিনে একটা লম্বা রচনা লেখে উইশ করেছিলো সেদিন আমি খুশিতে বাক-বাকুম। খুশি মনে আমিও লম্বা করে একটা মেসেজ দিই। আমার মনের শত আবেগ, শত মাধূর্যতা মিলিয়ে । কিন্তু সে মেসেজ আর সিন হয়নি। ভেবেছি ব্যস্ত পরে সিন করে কথা সামনের দিকে এগোবে। কিন্তু দিন যায়, রাত যায়, সপ্তাহ যায়, এমন করতে করতে মাসে যায় মাস থেকে যেতে যেতে আমার আরেক জন্মদিনের সময় এগিয়ে আসে কিন্তু মেসেজ আর সিন হলোনা । সে রাগে দুঃখে সেদিন প্রমিজ করি এর প্রতিশোধ আমি তুলে নিবো তাই ফেইক আইডি খুলে তারে বিরক্ত করা শুরু করি। ইমোশনাল কথা বলি, সুসাইড করার হুমকি দিই যদি আমার সাথে প্রেম না করে তাহলে। টমেটোর সস দিয়ে আই লাভ ইউ লিখে তার পিক তুলে তারে সেন্ড করে দিলাম আর লিখে দিলাম , আমার হাতের তাজা রক্ত দিয়ে তোমায় আমি আমার ভালোবাসার জানান দিলাম। সে আমার মেসেজটা দেখে তাড়াতাড়ি আমায় ব্লক করে দেই।

আমিও দমে থাকার পাত্রী নই সাথে সাথে আরেকটা আইডি খুলি অন্য আরেক নামে। এবার তার এক্স সেজে তাকে জ্বালাতন করি। নানান রকম কথা বলে কনফিউজড করি। তার রাগী রাগী মেসেজ গুলো দেখলে মনের মাঝে শান্তি শান্তি অনুভব করি। একটা জিনিস আমি অনুভব করতে শুরু করি ক্রাশ আমাকে ছাড়া বাকি সবার সাথে কথা বলে। প্রথমে মনের ভুল ভাবি, কিন্তু পরে আমার বান্ধবী তিন চারটা যা আছে সবাইরে বলি তাকে মেসেজ দিতে। তারা আমার জোরাজোরিতে মেসেজ দেই সাথে রিপ্লাই ও আসে। তার এমন আচরণ দেখে আমার মাথা হাইপার হয়ে যায়। তিন চারটা আইডি দিয়ে বিরক্ত করা শুরু করি। একটা ব্লক দিলে অন্য আরেকটা। তাকে বিরক্ত করে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করি।

কয়েকদিন যাবত ক্রাশের ডাটা অফ দেখি। নামের পাশের সবুজ বাতিটা আর জ্বলেনা। তার চিন্তায় চিন্তায় দুইদিন শুধু বিরিয়ানির উপর ছিলাম । ভাত কি জিনিসতো ভুলেই গিয়েছি। সাত আটদিনের মাথায় দেখি তার নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলে উঠে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে তার আইডিতে ঢু মারি যদি নতুন কোন পোস্ট করে। কিন্তু তার আইডিতে গিয়ে ৪৪০ভোল্টের একটা বড় রকমের ঝটকা খেয়ে বসি। ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের মতো, বজ্রপাত হচ্ছে,গুড়ুমগুড়ুম করে মেঘ ডাকছে। আমি উলটপালট হয়ে ঘুরছি। ক্রাশ আমার পোস্ট করেছে got married with Omuk তাহা দেখিয়া আমি বুকের উপর একটা হাত রেখে প্রবীনমিত্রের মতো নায়ায়াহ বলে চিৎকার করে উঠলাম।

মনে হচ্ছে হার্টঅ্যাটাক এসেছে। কুকড়িয়ে কুকড়িয়ে আমি বলতে লাগলাম, এটা হতে পারেনায়াহ। একহাত দিয়ে বুকের বাম পাশটা চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে ঢুকি , শত শত ছেলে মেয়ে তাকে উইশ করছে। নতুন জীবনের জন্য প্রান ভরে দোয়া দিচ্ছে, এতসব দেখে মনের মাঝে একটা গানের লাইন বেজে উঠে,
” জ্বলেরে, জ্বলে আগুল জ্বলে ” ভাঙ্গামনটা নিয়ে পরিনীতা মুভির মতো আমিও কমেন্ট বক্সে একটা ডায়লগ মেরে আসলাম, এখানে আমার না করা একটা সংসারের গল্প রয়ে গেলো৷ ” মনের দুঃখে আজ আমি মেয়াদবিহীন পেপ্সি খাবো। পেপ্সি খেয়ে মাতাল হওয়ার ভং ধরবো। “

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত