তানিশাদের বাসার সামনে আজকেও এসেছি ৷ গেটে দাঁড়িয়ে ইচ্ছামত মোবাইল টিপছি ৷ বড়লোকের বাড়ির সামনে দাঁড়ানোর জন্য একটু পরিপাটি হয়ে আসতে হয়, এজন্য ব্র্যান্ডের শার্ট পরে, মাথার চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে, চোখে সানগ্লাস আর মাথায় ক্যাপ পরে উপস্থিত হই প্রতিদিন ৷ স্মার্ট ভাব আমার মধ্যে বিদ্যমান, মোটকথা, মেয়েদের আকৃষ্ট করার মত লুক আমার ৷ হ্যান্ডসাম লাগার মত পোশাক পরিধান করা অভ্যাস আমার ৷ আজকেও সেটার ব্যতিক্রম ঘটেনি ৷ যেসম়য় তানিশার বাসায় এসে হাজির হই এবং গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফোন টিপি তখনই তানিশা বেলকণিতে এসে দাঁড়ায় ৷ তার পরনে থাকে আকর্ষণীয় ড্রেস ৷ আমার কাজ তাকে আড়চোখে দেখা আর ফোন টিপাটিপি করা ৷ তবে ঝামেলায় পড়তে হয় দারোয়ানকে নিয়ে ৷ ব্যাটাকে প্রতিদিন ২০টাকা করে না দিলে গেটের সামনে থাকতেই দেয়না ৷
ভার্সিটি শেষে, মেসে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করেই তানিশার বাসায় এসে উপস্থিত হই ৷ কিন্তু দারোয়ানের জ্বালায় ঠিকমত কাজ করতে পারিনা ৷ তবে বাড়ির কাজের মেয়েটা খুব ভাল ৷ আমাকে দেখে মিটমিট করে হাসে আর বলে ভাইয়া কেমন আছেন? আমিও মিষ্টি হেসে উত্তর দিই ভাল আছি ৷ এভাবে চলতে চলতে একসময় ফিল করি কাজের মেয়েটার প্রতি আমার অন্যরকম একটা অনুভূতি তৈরি হতে যাচ্ছে ৷৷ আসলে কাজের মেয়ের সৌন্দর্য তানিশার চেয়ে বেটার ৷ মাঝেমধ্যে কাজের মেয়েটা এমন সব পোশাক পরে যেন মন হয় সে ফিল্মের নায়িকা কাজের মেয়ে নয় ৷ দারোয়ানের থেকে তার নাম পরিচয় জেনে নিয়েছি অনেক আগেই ৷ কাজের মেয়েটার গ্রামের বাড়ি নাকি রাজশাহী ৷
রাজশাহীর মেয়েরা খুব সুন্দরী ও দয়ালু হয় এটা আবারো প্রমাণিত হলো ৷ কারণ জ্বলন্ত উদাহরণ এই কাজের মেয়েটাই! তার রুপে ও ব্যবহারে মুগ্ধ আমি ৷ এজন্যই তো এমন ভালবাসার অনুভূতির শুরু ৷ দারোয়ানকে অনেক বলে, এমনকি ৫০০ টাকা ঘুষ দিয়ে WiFi পাসওয়ার্ড নিয়েছিলাম ৷ এর মাধ্যমে টানা ১ মাস ফ্রি নেট ইউস করা হয়ে গেছে ৷ এমন সুবিধা ভোগ করতে এসে কাজের মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম, এটা সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার! কিন্তু এবার তাকে প্রোপজ করার পালা ৷ কাজের মেয়ের নাম অনিমা ৷ তার নামে একটা চিঠি লিখলাম ৷ মনের মাধুরি মিশিয়ে হ্নদয় নিংড়ানো সব ভালবাসার কথা চিঠিতে উল্লেখ্য করলাম ৷ কিন্তু চিঠিটা দেবার সময় বাঁধলো বিপত্তি ৷ বাড়িওয়ালার বড় ছেলে বাসার গেটে আমাকে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ক্ষিপ্তস্বরে বলল,
—-তুই এখানে কি করছিস? কি কাজ এখানে? উঁকিঝুঁকি কিসের? ভয় পেয়ে গেলাম ৷ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থতমত খেয়ে কাঁপা গলায় বললাম,
—-এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ বাসাটার দিকে চোখ পড়তেই থমকে দাঁড়ালাম ৷ এত সুন্দর বাড়ি এই প্রথমবার দেখলাম ৷ কি সুন্দর করে রঙ করা হয়েছে ৷
—-তোরে কে বললো বাসার দেয়ালে রং করা হয়েছে?
—-কেন রঙ করেন নি?
—-স্টুপিড! ওটা রঙ নয়, স্টাইলস লাগানো হয়েছে! বোকাবনে গিয়ে ঢোক গিলে আতঙ্কিত চোখে বললাম,
—-ও আচ্ছা, আমার চোখে মনে হচ্ছিল রঙ করা ৷
—-তোর ভাবগতি আমি বুঝতে পারছি ৷ আমার ছোট বোনকে দেখার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস, তাইনা? এটা বলেই তানিশার ভাই আমার গায়ে হাত তুলতে লাগলো ৷ তখনই কাজের মেয়েটা চলে আসলো ৷ সে তাকে থামিয়ে দিলো ৷ এবং উচ্চস্বরে বলল,
—-ভাইয়া, ওকে মেরোনা ৷ সে আমার পরিচিত ৷ তাকে ছেড়ে দাও! তানিশার ভাই রাগস্বরে বলল,
—ঠিকআছে, ছেড়ে দিলাম ৷ আজকের পর যেন তাকে না দেখি!
কথাটা বলেই তানিশার ভাই চলে গেল ৷ কাজের মেয়েটা না গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো ৷৷তার অভিব্যক্তিতে বুঝতে পারলাম সে কি যেন বলতে চাই, অথচ বলতে পারছেনা ৷ মিষ্টি হাসি হেসে সে গেট থেকে বাসার ভেতর চলে গেল!
পরেরদিন দারোয়ানের হাতে ১০০০ টাকা দিয়ে বললাম,
—-ভাইয়া, এই চিঠিটা বাসার কাজের মেয়ের হাতে দিবেন ৷ যদি সে চিঠিটা পায় এবং আমাকে চিঠির রিপ্লাই দেয় তবে আপনি আরো এক হাজার টাকা পাবেন, বুঝলেন? দারোয়ান চকচকে ১হাজার টাকা পেয়ে খুশির চোটে বলল,
—-ঠিকআছে, আমি আজই চিঠিটা কাজের মেয়ের হাতে দিব ৷ তুমি কোনো চিন্তা করোনা ৷
বাসায় গিয়ে খুব অস্থির লাগছিল ৷ আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ৷ আজকে সময় যেন কাটছেনা ৷ কালকে বিকেল হলে অনিমার চিঠি পাবো ৷ সে প্রস্তাবে রাজি হবে কি হবেনা, এটার জন্য চিন্তায় আছি! রাত ঠিক ১টার দিকে অচেনা নম্বর থেকে ফোন পেলাম ৷ রিসিভ করার পর জানতে পারলাম কাজের মেয়ে ফোন দিয়েছে ৷ কথা বলতে লাগলাম ৷ রাত ২ টা পর্যন্ত কথা চললো ৷ আচমকা ঘুমিয়ে গেলাম আমি! পরেরদিন বিকেলে গেলাম তানিশাদের বাসায় ৷ কিন্তু দূর্ভাগ্য , কাজের মেয়ে আমার কাছে না এসে তানিশা এসে হাজির হলো ৷ তার সাথে কোনো কথা বললাম না, শুধু মোবাইল টিপছিলাম ৷ যখন কাজের মেয়ে বাসার গেটে আসলো তখন তানিশা চলে গেল ৷ কাজের মেয়েটা আমাকে বাসার দক্ষিণ সাইটের বাগানে নিয়ে গেল ৷ দুজনে অনেক কথা বললাম ৷ একপর্যায়ে সে আমার নম্বর চেয়ে বসলো ৷ নম্বর চাওয়াতে মৃদ্যু হেসে বললাম,
—-কি ব্যাপার, রাত ২টা পর্যন্ত কথা বললাম ৷ এরমধ্যে নাম্বার ডিলিট করে দিছো নাকি? অনিমার ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ সে বাকা চোখে তাকিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
—-কি বলছেন? আমি কখন আপনার সাথে কথা বললাম? নাম্বারই বা কই পেলাম? তাছাড়া আমি রাত ১০ টা বাজলেই ঘুমিয়ে যাই ৷ ২টা পর্যন্ত কিসের জন্য জাগবো?
—-মশকরা করছো? আমি তোমাকে চিঠি দিলাম, চিঠিতে আমার নম্বর দেওয়া ছিল ৷ চিঠিতে বলেছিলাম যদি আমার ভালবাসার ঢাকে সাড়া দাও তবে ফোন দিও ৷ যদি ফোনে কথা বলতে লজ্জা পাও তবে পরেরদিন চিঠিতে আমার প্রস্তাবের জবাব দিও ৷ খুশির কথা যে তুমি রাতে ফোন দিয়েছিলে, ফোন দিয়ে বললে তুমিও আমাকে ভালবাসো!! আর এখন কেন এমনটা বলছো? অনিমা দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে বলল,
—মাথা কি গেলো আপনার? আমি কখন আপনার চিঠি পেলাম? তবে এটা সত্যি যে ফেসবুকে আপনার সাথে আমার দু মাসের সম্পর্ক ছিল ৷ ঐ সময় আপনার থেকে ফোন নম্বর নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু ২ মাস পর তো আপনি আমার সাথে সম্পর্কের ইতি টানলেন ৷ কারণ, একটাই আমি আপনাকে আমার পিকচার দিইনি ৷ কেন পিকচার দিইনি জানেন? কারণ, আমার পিকচার দেখলেই চিনে ফেলতেন ৷ পরে হতো ঝামেলা ৷ সবকিছু ভেবে পিকচার দিইনি ৷ এই সামান্য কারণে আপনি ব্লক করলেন আমাকে ৷ এমনকি আপনি আমার নম্বরটাও ব্লকলিস্টে রেখেছেন! হকচকিয়ে উঠলাম অনিমার কথায় ৷ ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে বললাম,
—-তারমানে ফেসবুকের তানিশা নামের আইডির মেয়েটা তুমি? ইশ! যদি জানতাম ওটা তোমার আইডি তাহলে ব্লক করতাম না ৷ তুমি কাজের মেয়ে তাতে কি? তোমারও তো মন আছে ৷ আর তোমার ভালবাসাতেই আমি সন্তুষ্ট!অনিমার চোখ কপালে উঠলো ৷ তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল ৷ কপট রাগের উদয় হলো ৷ চেঁচানো গলায় বলল,
—-কে কাজের মেয়ে? কপালে ভাঁজ ফেলে বললাম
—-কে আবার, তুমি?
—-থাপ্পর চিনেন? আমি কেন কাজের মেয়ে হতে যাব? আমাকে কি কাজের মেয়ে বলে মনে হয়?
—-তাহলে? কে তুমি?
—-আশ্চর্য! আমি এই বাড়ির মেয়ে তানিশা!আঁতকে উঠলাম ৷ কি শুনলাম এটা? হতভম্বের চোখে তাকিয়ে রইলাম ৷ হতবুদ্ধি আমি নিচুস্বরে বললাম,
—-তুমি যদি বাড়িওয়ালার মেয়ে হও, তাহলে ঐ মেয়েটা কে? যাকে তানিশা নামে চিনি! যে বেলকণিতে এসে দাঁড়াতো! তীব্র বিরক্তির কন্ঠে সে জবাব দিল,
—-বোকা, তার নাম তানিশা না, নীলিমা ৷৷ সে আমাদের বাসার কাজের মেয়ে ৷
—-আশ্চর্য! সে কাজের মেয়ে হলে বেলকণিতে কি করতো?
—সে প্রতিদিন বিকেলে বেলকণিতে আসতো কারণ আমার ২ বছরের ভাতিজার সঙ্গে খেলতো ৷৷
—-ও এবার বুঝতে পারছি আমার ভুলটা ঠিক কোথায় ছিল ৷ আমি তোমার প্রেমে পড়েই চিঠি লিখেছিলাম,
ভেবেছিলাম তুমি কাজের মেয়ে ৷ আর এজন্য চিঠি লিখে দারোয়ানকে দিয়ে বলেছিলাম চিঠিটা কাজের মেয়ের নিকট দিও! এতটুকু বলতে না বলতে অনিমা থুক্কু তানিশা আমার গালে অনবরত থাপ্পর লাগালো ৷ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত হিংস্র হয়ে ক্ষিপ্তস্বরে বলল,
—-তোর রুচি এত খারাপ? কাজের মেয়ের সাথে প্রেম করার শখ হয়? কিন্তু গাধার গাধা, আমাকে কোন দৃষ্টিতে কাজের মেয়ে মনে হতো? হুহ? মিনমিন গলায় বললাম,
—-সরি ভুল হয়েছে ৷ আমি বুঝতে পারিনি! সব দোষ আসলে দারোয়ানের ৷ আমি তোমাকে দেখিয়ে দারোয়ানকে বলেছিলাম এটা কে? সে বলেছিল কাজের মেয়ে, নাম অনিমা ৷ আর বেলকণিতে দাঁড়ানো মেয়েটাকে দেখে বলেছিলাম সে কে? দারোয়ান বলেছিল সে বাড়িওয়ালার মেয়ে তানিশা! সব দোষ ঐ দারোয়ানের, তবুও আমার ভুলের জন্য মাফ চাই, মাফ করো! সে আরেকটা থাপ্পর মেরে বলল,
—-ভুল করতে থাক ৷ কাজের মেয়ের সাথে প্রেম করছিস না, করতে থাক ৷ কিন্তু ভুলেও আমার বাসার সামনে আসবিনা ৷ যদি তোর মুখ দেখি, একদম কেটে দিবো কাঁচি দিয়ে! ঐদিন পর ভুলেও আর তানিশার বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়নি, এমনকি WiFi রয়েছে এমন কোনো বাড়ির সামনে দিয়েও যায়নি! কিন্তু ঘটনার ১ মাস ১৪ দিন পর ঠিক ১৪ ফেব্রুয়ারীতে তানিশা অর্থাৎ যার প্রেমে পড়েছিলাম সে ফোন দিয়ে বলল,
—-আমি পার্কে আছি, ফেসবুকের একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম ৷ কিন্তু তাকে লুকিয়ে দেখে নিয়েছি ৷ সে বয়সে আমার আব্বুর বয়সী ৷ অনেক বড় বিপদে পরেছি ৷ তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো ৷ ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,
—-যদি তুমি থাপ্পর মারো, কিংবা কাঁচি দিয়ে কেটে দাও, তখন কি হবে?
—-আরে ওটা তো রাগ করে বলেছিলাম ৷
কিন্তু তুমি ওটাকে সিরিয়াসলি নিলে কিসের জন্য? বিষয়টাকে এমনভাবে গুরুত্বে নিলে যে তুমি আর আমাদের বাসার সামনে এলেই না, এজন্য রাগ করে ফেসবুকে একজনের সাথে মজার ছলে সম্পর্ক করা শুরু লাগলাম ৷ কিন্তু সে যে বয়স্ক হবে ভাবিনি! তুমি এখনই চলে আসো, তাড়াতাড়ি! আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করো ৷৷ নইলে বান্ধবীরা আমাকে নিয়ে ট্রল করে মারবে!
—-আসছি, কিন্তু তুমি আমার নম্বর কই পেলে?
—কাজের মেয়ের থেকে নিয়েছি ৷
—-ও আচ্ছা! পার্কে গেলাম ৷ সেখামে গিয়ে দেখি তানিশা শাড়ি পড়ে পার্কের সিটে বসে আছে ৷ আমি তার সামনে দাঁড়াতেই কষে একটা থাপ্পর মেরে ক্ষিপ্তস্বরে বলল,
—-বোকা, মন চুরি করে নিয়ে দূরে দূরে থাকা, তাইনা? এটা বলা শেষ করে সে একটা কাঁচি বের করে রাগে গজগজ করে ফের বলল,
—-তাড়াতাড়ি প্রোপজ করো, নইলে কুট্টুস করে কেটে দিবো ৷ আর হ্যাঁ, একটা সত্যি কথা বলি, ঐ বাড়িতে কোনো বাড়িওয়ালার মেয়ে থাকেনা ৷ দুজন কাজের মেয়ের থাকে ৷ আমি অনিমা আর যাকে তুমি বাড়িওয়ালার মেয়ে ভাবো সে নীলিমা ৷ বাড়িওয়ালার মেয়ে তানিশা, সে দেশে থাকেনা, সুইজারল্যান্ড থাকে! ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে বললাম,
—-আমি প্রোপজ না করলে সত্যিই কি কেটে দিবে?
—-হুহ, সত্যিই কেটে দিবো ৷
—-কিন্তু, আমার তো বিয়ে ঠিক হয়েছে, কেটে দিলে আমার কি হবে?
—-বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে? আমাকে রেখে তোমার অন্যকারো সাথে বিয়ে ঠিক, কি ব্যবসা পেয়েছে, ব্যবসা? একদম তাজা গিলে খাবো, বুঝছো?
—-কিছু করার নেই ৷ যার সাথে বিয়ে ঠিক, সে কোটিপতির মেয়ে ৷ তোমার মত কাজের মেয়ে না ৷ সে আবারো থাপ্পর লাগিয়ে দাঁত কটমট করে বলল,
—-আমি কাজের মেয়ে কে বলল তোরে? ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—-তুমিই তো বললে!
—-ওটা বলেছি তোর মন পরীক্ষা করতে ৷ দেখলাম তোর মন কতবার পরিবর্তন হয় ৷ পরীক্ষা নেওয়া হয়ে গেছে ৷ এবার অ্যাকশনে যাবো ৷ তিন পর্যন্ত গণনা করব, প্রোপজ না করলেই মাইর হবে! আজকে ভালবাসা দিবস বলে ভয়ার্ত মনে মিনমিন গলায় বললাম,
—-I Love You অনিমা ৷ আবারো থাপ্পর উপহার পেলাম ৷ অনিমা থাপ্পর মেরে বলল,
—-অনিমা কে? আবারো ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে বললাম,
—-কে আবার? তুমি!
—-স্টুপিড! আমি তানিশা ৷ অনিমা তো সেই কাজের মেয়েটা, যে বেলকণিতে দাঁড়িয়ে থাকতো!
—-আশ্চর্য! তুমি না একটু আগেই বললে, তোমার নাম অনিমা! আর সেই মেয়েটার নাম নীলিমা ৷
—-মিথ্যা বলেছিলাম ৷ আমার নামটা আসলে ভুলে গেছি! সেই মেয়েটার নামও! একথা শোনার পর নিজেকে পাগল মনে হলো ৷ বুঝছিলাম না অনিমা থুক্কু তানিশার কোন কথাটা সত্য! যখন সে আমাকে জড়িয়ে ধরে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
—-আমি তোমার সাথে মজা করতে ভালবাসি ৷ আর তাইতো মিথ্যা কথা বলে পার্কে নিয়ে এলাম ৷ আজ ভালবাসা দিবস জানোই তো ৷ তবে এটা কিন্তু মজা নয় যে আমার নাম তানিশা এবং আমি বাড়িওয়ালার মেয়ে ৷ তবে তুমি যাকে বাডিওয়ালার মেয়ে ভাবতে সে না বাড়িওয়ালার মেয়ে, আর না কাজের মেয়ে়, সে আসলে আমার ভাবী হয়, মেজো ভাইয়ার স্ত্রী ৷ আমাদের বাসায় কাজের মেয়ে ছিলনা, ছিল ৫০ বছর বয়সী একজন বুয়া ৷ দারোয়ান তাকেই চিঠিটা দিয়েছিল ৷ আর বুয়া আমার ভাবীকে ৷ ভাবী মজা করে তোমার সাথে রাত্রীতে কথা বলেছিল, বুঝলে? আমি আর জ্ঞান ধরে রাখতে পারলাম না, অজ্ঞান হয়ে গেলাম!