ফিরে দেখা

ফিরে দেখা

-নতুন বউ সকাল আট টা অবধি ঘুমাচ্ছে।মা বাবা কোন শিক্ষাই দেয় নাই।লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বসেছে।

কী  মেয়েকে ঘরের বউ করে আনলাম। মান সম্মান সব গেলো। আমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে তার মা দরজার সামনে কথা গুলো আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে। উনার কথা শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।আসলো এমনিতেই আমি সকাল দশটার পর ঘুম থেকে উঠি।তার মধ্যে কাল রাতে আমার বিয়ে হয়েছে শ্বশুর বাড়ি আসতে আসতে রাত প্রায় একটা।আর সব রিচুয়াল পালন করতে করতে বিছানার সাথে গা লাগিছি রাত প্রায় তিন টায়।

আসার সময় মা বলেছিলো এনি আমার শাশুড়ি আজ থেকে তাকে যেনো মা বলে ডাকি। আমি খুব অভিমানী মেয়ে।শাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে অভিমান হয়নি রাগ হয়েছে।কেনো জানেন আমি বাপের বাড়ি ছিলাম তখন আমার মা কোনদিন আমাকে ঘুমের জন্য বকে নি।কখনো বলেনি আমি লজ্জা ছাড়া বেহায়া।কখনো শুনিনি আমার ঘুমের জন্য সম্মান নষ্ট হয়।জানেন আমি বেশি ঘুমাই বলে ছোট থেকেই আমি ডে শিফট এর স্টুডেন্ট ছিলাম। স্কুল কলেজ সব ডে শিফট ছিলো।

হ্যা তবে বকা শুনেছি কোনদিন যদি ঘুম থেকে উঠতে এগারোটার বেশি বাজতো তখন মা খুব বকতো কিন্তু ঘুমের জন্য নয় সকালের নাস্তার জন্য বলতো দেরি করে উঠলে আমি শুধু এক বেলা খাবার খাই।দুপুরের খাবার টা মিস হয়ে যায় স্কুল কলেজের জন্য। কিন্তু আজ যথারীতি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিল এ গেলাম চেয়ার এ বসে খাবার এর জন্য অপেক্ষা করলাম।খাবার জুটে নি জুটে ছে বকা।রান্না করতে বল্লো আমায় রান্না যে আমি পারি না।আমি যে রান্না পারি না এ কথা আমার মা হাজার বার বলেছে আমার শ্বশুর শাশুড়ি কে। তখন তারা বলেছিলো কোন সমস্যা না।কিন্তু আজ আমায় কত কথা শুনালো। কিচেন থেকে খাবার গুলো এনে টেবিল এ রাখলাম সবার সাথে খেতে বসে গেলাম। কত বড় ভুল করেছি জানেন? শাশুড়ি সাথে সাথে বল্লো

-তোমার মা কি তোমায় এটাও শেখায়নি যে পরিবার এর সবাই কে আগে খাবার দিতে হয়।বেহায়ার মত আগে আগে খেতে বসে গেছো। জানেন আমি সব সময় এমনটাই করেছি।আগে আগে টেবিল এ খেতে বসে গেছি।কিন্তু কোনদিন তো মা বাবা আমায় এ নিয়ে বকে নি। খুব রাগ আমার খাবারই খেলাম না।

সারাদিন না খেয়েই ছিলাম কেউ জিজ্ঞাস ও করলো না আমি খেয়েছি কিনা।অথচ নিজের বাড়িতে রাগ করে না খেয়ে স্কুলে চলে গেলে মা খাবার নিয়ে স্কুলে চলে যেতো আর বলতো না খেলে খুব বকবে বান্ধবীদের সামনে মান সম্মান থাকবে না।কিন্তু আজ সন্ধ্যা বেলা আর খিদের জালা সহ্য না করতে পেরে ফ্রিজ খুলে দেখি মিষ্টি রাখা। সব সাদা মিষ্টির মাঝে একটা কালো মিষ্টি। কালো মিষ্টি আমার খুব প্রিয় তাই খেয়ে ফেললাম।কে জানতো আমিমি কত বড় পাপ করেছি। রাতের বেলায় হলো এত বড় কান্ড আমার ননদ (বিবাহিতা)বলছিলো মা একটা কালো মিষ্টি ছিলো কই গেলো।আমার ছেলেটার জন্য রেখেছিলাম।আমি তখন বললাম আপু আমি খেয়েছি।শাশুড়ি সাথে সাথেই বল্লো তুমি কী চোর গো।না বলেই আমার নাতির খাবার খেয়ে নিলা।তোমার মা বাবা কিছুই শেখায়নাই।আরো কত কথা জানেন নিজের বাড়িতে না বলে খেলে কিছুই শুনেতে হত না।খাবারের অভাব কখোনো করিনি।এত কথাও শুনিনি কিন্তু আজ আমি চোর।

বিদায় এর আগে মা বলে দিয়েছিলো এটা নাকি এখন থেকে আমার ঘর।কই আমার ঘরে তো আমাকে এত বকা কোনদিন শুনতে হয়নি।।যার হাতে আমায় তুলে দিয়েছিলো।তার আগে বলেছিলো যে সে নাকি আমার ভালো মন্দ আজ থেকে দেখবে আমার সব সুখ দুখের দায়িত্ব ও নাকি তার।সে কথা দিয়েছিলো যে সে নাকি আমাকে সুখে রখবে।
তাই তার কাছে গেলাম।থাপ্পর খেলাম। তাকে সব কথা বলেছিলাম সে আমাকে বল্লো মা কোথায় ভুল।ঠিকই তো করেছে।তোমাকে তোমার মা কিছুই শেখায়নি।একদিনও পার হয়নি আর তুমি আমার মায়ের নামে আমার কাছে নালিশ করছো।কেমন মেয়ে তুমি যদি একটু মানিয়ে না চলতে পারো। আমি তো অবাক।

জানেন আমি কি আশা করবছিলাম ভেবেছিলাম বিয়ের পর নতুন বাড়িতে আসার পর সবাই হয়তো বলবে তুমি ভয় পেয়ো না।আমরা সবাই তোমার আপন।কথাকথিত হাসব্যান্ড হয়তো বলবে তোমার কোন চিন্তা নেই আমি তোমাকে সাহায্য করবো সাবার সাথে মিশতে।সবাই তোমার সম্মান যেনো করে সে দিক টা আমি খেয়াল রাখবো।তোমার ভুল শুধরানোর দায়িত্ব আমার।নতুন বাড়িতে তোমার মনের ভয় দূর করার দায়িত্ব আমার। কিন্তু কী পেলাম। জানেন সব বিয়ের পর প্রথম কিছুদিন সবমেয়েই এমন কিছু আশা করে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেদের থেকে।নতুন বাড়ির লোক জন যাতে তাকে সহজ করে দেয় সবার আপন হতে।কিন্তু কত জন বা এত সৌভাগ্যবতী হয়?এজন্যই বুঝি ভালো মেয়েরাও খারাপ বউমা হয়ে যায়। কিছুদিন পর নাহ আর পারছি না।সবার কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। দিনরাত কাজের জন্য খোটা শুনি।চেষ্টা তো আমি করছি।

এখন আবার নতুন আবদার বিয়ের সময় তারা মুখ ফুটে কিছু চায়নি তারা নাকি আমার মা বাবার বিবেক পরিক্ষা করছিলো।শাশুড়ি বল্লো কেমন মা বাবা গো তোমার।কিছু চায়নি বলে তাদের কী বিবেক নেই।তারা কি জানে না মেয়ে বিয়ে দিলে কিছু উপহার দিতে হয়। আরো কত কি। কথা টা আমি মা কে বললাম।আমার মা খুব চালাক জানেন পরের দিন আমার মা আমার জন্য দশ ভরি গহনা নিয়ে আসলো সাথে আমার প্রিয় খাবার।তা দেখে শাশুড়ি মোটেও খুশি হয়নি। আমার মা বলে গেলো আপনার ছেলে তো আমার মেয়ে কে গহনা বানিয়েই দিতো।এখন আর তাকে কষ্ট করতে হবে না।আমি আমার মেয়ে কে গহনা দিয়ে গেলাম।এখন আপনার ছেলে কে বলেন যে টাকা দিয়ে আমার মেয়ে গহনা দিতো সেই টাকা দিয়ে আপনাকে উপহার দিতে। আমার বাবা ও এসেছিলো।

আমি মা বাবা গল্প করছিলাম।তখন বাবা বল্লো কিছু ফার্ননিচার বানিয়ে দিলে হয়না?মা সোজা বল্লো যা আমারমার মেয়ে ব্যাবহার করতে পারবে না তা কেনো আমি দিবো।তুমি যে ফার্নিচার এর কথা বলছো তা আমার মেয়ে ব্যবহার করতে পারবে না।টিভি ফ্রিজ যাই দাও আমার মেয়ে টা ব্যাবহার করতে পারবে না।এর এসব দিলে তাদের চাহিদা আরো বাড়বে।তাই গহনা দিলাম।কিন্তু মা বল্লো তোর গহনা গুলো তোরি থাকবে কিন্ত আজ আমি নিয়ে গেলাম তোর সাজতে হলে আমাকে একটা ফোন দিবি নিয়ে আসবো আমি।আমার হাসব্যান্ড কথা গুলো শুনেছিলো সে এসে বল্লো

-এ বাড়ি তে গহনা থাকলে কেউ চুড়ি করবে না। মা বল্লো
-হ্যা বাবা চুড়ি হবে না।শুধু আমার মেয়ে সাজতে পারবে না।

তুমি ওর হাসব্যান্ড হও।এমন তো নয় যে আমি তোমার কাছে আমার মেয়ের বেপারে কিছু লুকিয়ে তোমায় বিয়ে দিয়েছি।আমার মেয়ে কোন কাজ পারে না।এ কথা তোমাকে হাজার বার বলেছি।আমার মেয়ে ঘুমকাতুরে এ কথাও তোমায় বলেছি।লাজ লজ্জা সব ভুলেই তোমায় বলেছিলাম আমার মেয়ের প্রিয় খাবার কোন গুলো।সবি তো বলেছিলাম যে আমার মেয়ে কিভাবে মানুষ হয়েছে।তোমার অামার মেয়ের এসব ব্যপার নিয়ে বিয়ের আগে কোন সমস্যা ছিলো না।তখন কেনো মেনে নিয়েছিলা।একবার বলে দিতা আমার মেয়ে তোমার পছন্দ নয়।জোর করে তো তোমার কাছে আমি আমার মেয়ে কে বিয়ে দেইনি।তখন তুমি বলেছিলে তোমাদের বাড়ি তে এত কাজ নেই।

কাজের লোক আছে।সেইদিন কেনো বলো নাই।আমার মেয়ে কে কাজের লোক বানাচ্ছো।এতদিন ধরে যা আমার মেয়ের সাথে হচ্ছে চলো তা তোমাকে বোঝাচ্ছি চলো তুমি আজ থেকে আমার বাড়ি তে থাকবে আর সেই সব ঘটনা আমি তোমার সাথে করবো যা যা আমার মেয়ে এই বাড়িতে সহ্য করছে।তোমার মা বলেছিলো তুমি নাকি সত্যবাদী। কই তোমার সততা? আমার হাসব্যান্ড চুপ। মা বাবা রেগে চলে গেলেন। রাতে আমার হাসব্যান্ড আসলো বল্লো সরি।আমি কিছু বললাম না।আমি রস গজা মনের সুখে খাচ্ছিলাম মা নিয়ে এসেছে।হাসব্যান্ড বল্লো কোনদিন খাওনি নাকি।

-অনেকদিন পর খাচ্ছি তো তাই। হাসব্যান্ড কিছু বল্লো না।অনেক ক্ষন চুপ ছিলো। অনেক রাতে বল্লো
-আমার মা এর সাথে একটু মানিয়ে চলো।
-চেষ্টা করবো।
-ইউটিউব এ একটা ভিডিও দেখালো ভিডিও টা ছিলো কীভাবে শাশুড়িরর মন মত বউ হওয়া যায়। অনেক গুলো ভিড়িও দেখলাম। ফেসবুকে অনেক পোস্ট ও দেখালো।তার পর আমি বললাম একটা কাজ করতে হবে।

-এর পর শুধু বললাম শাশুড়ি মা এর মত হলেও শাশুড়ি আসলে কোনদিনো মা হয় না।
-সে বল্লো কে বলেছে।
-আমি বললাম আমার মা এত দিন আপনাকে কত ভালোমন্দ রেধে খাইয়েছে।কত আদরর করেছে কিন্তু আপনি কি আমার মা কে নিজের মা ভাবেন?আজ কিছু কথা শুনালো আপনাকে তাতেই আপনি আপনার বন্ধু কে ফোন দিয়ে বলছেন যে মেয়ের মা ভালো না।মেয়ের মা দেখে বিয়ে করতে।

-সে চুপ।
-অথচ দেখেন আমার সাথে এতদিন ধরে কত কি হলো।আপনি আমাকে কত পোষ্ট আর কত ভিডিও দেখালেন কিভাবে শাশুড়িরর মন মত বউ হওয়া যায়।একবার সার্চ দিয়ে দেখবেন কোথাও এমন পোষ্ট আছে কিনা যে মা এর মন মত মেয়ে কীভাবে হবেন।নেই।আমার মায় এর প্রিয় মেয়ে হতে আমার শুধু একটা কাজ করতে হয়েছে সেটা হলো পেট ভরে তিন বেলা খেতে।।তাহলে বলেন শাশুড়ি কি করে মা হয়।কোন শাশুড়ি তার বউ মা কে মেয়ে মনে করে না।মেয়েরর সাথে কে এমন করে?আর একটা কথা জানেন পর কখনো আপন হয় না।

-মানে।
-আপনি আমার হাসব্যান্ড হলেও পর।
-আপনি পারতেন আমার জায়গায় একটা কাজের লোক রেখেদিতে।

কিন্তু আপনি শুধু আমাকে অপমান করেছেন। ইটস ওকে। আমি চেষ্টা করবো সবার প্রিয় হতে।আমি চেষ্টা করবো।তাতে আমাকে যদি ঘরের বউ থেকে কাজের লোক হতে হয় তবে তাই হোক।কাজ করতে না কোন অসুবিধা আমার নেই।আপনি তো অনেক টাকা বেতন পান তাতেও সমস্যা নেই।যদি আপনি এত টাকা বেতন না পেতেন কাজের লোক রাখার সামর্থ না থাকতো তাতেও আমি খুশি হতাম যদি আপনি আর বাকি সাবাই আমাকে সাহায্য করতেন তাড়াতাড়ি বাড়ির বউ হতে।

ধীরে ধীরে যদি আমাকে আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেন আর তা পালন করতে সাহায্য করতেন।হয়তো আমি তাহলে সব তাড়াতাড়ি শিখতে পারতাম।।সবাইকে নিজের আপন করতে পারতাম।কিন্তু এখন আমি সব আদব কায়দা।সব দায়িত্ব শিখে গেলেও হয়তো কাউকে নিজের আপন করতে পারবো না।ভাবতেও পারবো না।।সরি।আর এটাই বাস্তবতা।আমি টিভির হিরোইন নই সাধারণ মানুষ। তাই আমার থেকে এর বেশি এক্সপেক্ট করবেন না।আমি সত্যি পারবো না।বাকি আপনার ইচ্ছে। পরদিন থেকে নিজেকে সেইভাবে রেডী করলাম।

এখন আমার বিয়ের আঠাশ বছর হলো আজ আমার ছেলের বিয়ে আমার ছেলের বউ ও কিছু পারে না।সব জেনে শুনেই এনেছি।এখন আমার বাসায় তিন জন কাজের লোক আছে। আমার ছেলে কে বলেছি যাকে বিয়ে করেছো তার প্রতি লয়াল থেকো।একটা বিয়ে টিকিয়ে রাখা শুধু একটা মেয়ের দায়িত্ব নয়।পরিবার আর স্ত্রীর মধ্যে যখন যে কেউই ভুল হতে পারে।কিন্তু তুমি সত্যের সাথে থেকো।পরিবার এর সম্মান আজ থেকে রক্ষার দায়িত্ব তোমার।কেনো এ কথা কেনো বললাম তা তুমি শীঘ্রই বুঝতে পারবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত