ট্রেন তিন ঘন্টা লেট। বিমান বন্দর ট্রেন স্টেশনের একেবারে একদিকে গিয়ে বসলাম। এদিকটা একটু অন্ধকার। মানুষজনও কম। আমার ভিড়ভাট্টা কখনোই ভালো লাগে না। দূর থেকে মানুষ দেখতে ভালো লাগে। সাড়ি সাড়ি রেল লাইন। তার উপর দিয়ে লোহার দানব কত কত মানুষকে এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে। কত কষ্ট চড়ে লোহার দানবে। কত সুখ। কত গল্প। কত কবিতা। কত ভবঘুরে।
সিগারেট ধরিয়ে আয়েস করে টান দিলাম। তুর্ণা নিশিথা করে চট্টগ্রাম ফিরবো। কত বছর পরে নিজের বাড়িতে ফেরা। একটু সময় করে নিতে নিতেই কি করে যে নয়টা বছর পার হয়ে গেলো। বাবা মাকে নিয়ে ঢাকায় থাকি। তাই তেমন তাড়াও ছিল না। বউ আর দুই মেয়ে। এই নিয়ে সংসার। বউয়ের আর সময় হয় না সংসার সামলাতে সামলাতে। আমি তো কোন কালেই সংসারী মানুষ ছিলাম না। বউ আছে বলেই কি করে যেন সংসারের এক কোণায় টিকে আছি। বা বলা ভালো টিকিয়ে রেখেছে আমায়।
ক্যালেন্ডারে নভেম্বর ঢুকে গেছে। তবুও এখনো শীত পড়েনি। শহরে একটু দেড়িতেই শীত নামে। ঘড়িতে বাজে এগারোটা। হালকা ঠাণ্ডা বাতাস ছেড়েছে। কালো ধোঁয়ায় অভ্যস্ত ফুসফুসে এমন হিমেল হাওয়ায় মনটা চনমনে হয়ে উঠে। কমলাপুর অভিমুখে একটা ট্রেন স্টেশনে এসে থামলো। ট্রেনের জানালায় একেকটা মুখ দেখা যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় প্রতিটা ট্রেনের জানালায় থাকে একেকটা গল্প। যেই গল্প কখনো শোনা হয় না। জানা হয় না। হয়তো কোন এক জানালায় চুপচাপ বসে আছে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গল্পটা।
আমাদের গল্পটাও শুরু হয়েছিলো এমন এক ট্রেনের জানালা থেকেই। চট্টগ্রাম ষোলশহর ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলাম শাটল ট্রেন ধরার জন্য। ট্রেন এসে থামলো। আমি তখন সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছিলাম। সেদিন একেবারেই ভিড় ছিল না। ভাবলাম আস্তে ধিরে উঠা যাবে। এমন সময় আমার সামনে দাঁড়ানো ট্রেনের জানালা থেকে একটা বই নিচে পড়ে গেলো। ভাগ্যিস রেললাইনে পড়েনি। বইটা হাতে নিয়ে জানালার ভিতরে হাত বাড়িয়ে দিলাম। মোটা বইটা দেওয়ার সময় আড় চোখে চেয়ে দেখি শীর্ষেন্দুর মানবজমিন। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে বইটা নিতে নিতে খুব ছোট্ট করে বলল, ‘থ্যাংকস!’
সেই ছোট্ট একটা শব্দে কি যেন ছিল। আমি কিছু বলতে পারলাম না। আলতো করে হাসলাম শুধু। ট্রেন ছেড়ে দিবে তাই আরেকটা বগিতে গিয়ে উঠলাম। বগি কাঁপিয়ে সবাই গান গাইছে। ইমতিয়াজ বাবুর সেই সময়ের জনপ্রিয় একটা গান, ‘আহা কি সুন্দর ঐ দু’টি চোখ/ নেশা ভরা ঐ রাঙা দু’টি ঠোঁট/ রঙ করা চুল লাগছে ভালো/হাতে কেসিও ঘড়িটি কালো/ জানি না কখন এই মনটি/ চুরি করেছে…।’ কানের ভিতরে গান আর চোখের তারায় মানবজমিন বইটা। একটু পর পর গানের ফাঁকেফাঁকে কানে বাজছে ‘থ্যাংকস’ শব্দটা। গল্পের শুরুটা এভাবেই হয়েছিলো।
পাহাড়ে ঘেরা সবুজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সবখানে কেমন এক প্রাণের উচ্ছ্বাস। সেদিনের পর থেকে সবখানে আরো প্রাণের নির্যাস পেতে থাকলাম। ট্রেন থেকে নামার পরে মেয়েটাকে আর দেখিনি। জানিও না কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে। দেখা হলো আবার ঠিক এক মাস পরে শহীদ মিনারের সামনে। এই একটা মাস প্রতিদিন আশা ছিল আজ দেখবো- কাল দেখবো। কিন্তু দেখা হয়নি। কিন্তু একবারের জন্যও মন খারাপ হয়নি। বরং ভালো লাগা আরো বাড়ছিলো।
নাম জানি না যার। কোথায় থাকে তাও জানি না। অথচ সেই মানুষটাকেই একা একা ভালবেসে ফেললাম। আমাকে ভালবাসবে কিনা তার থোড়াই কেয়ার করি। এ যেন আমার একার অনুভূতি। যেন তাকে ভালবেসে যাওয়াতেই আমার যত সুখ। একবারই দেখা। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য। একটাই কথা, ‘থ্যাংকস’ এরপর আর কোনো শব্দ আমার কানে আসেনি। বই পড়ুয়া মেয়েটাকে দেখার জন্য আমার মনে কেমন এক অস্থিরতা তৈরি হলো। সেই প্রথম অস্থিরতাটা ভীষণ ভালো লাগলো। অস্থিরতাও যে এতো ভালো লাগতে পারে আগে জানতাম না। অথচ মেয়েটাকে দেখার জন্য আমার কোনো চেষ্টা ছিল না। আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম সব সময়ের হাতে। সময় তার সময় মতো আমাদের ঠিক আবার দেখা করিয়ে দিবে।
শহীদ মিনারের ওদিকে মেয়েটা একা বসেছিলো। হয়তো বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। কাছে এগিয়ে গেলাম। গতকাল একটা ক্যাসেটে পছন্দের কিছু গান রেকর্ড করিয়েছিলাম। কেন যেন সেই মুহূর্তে মনে হলো ক্যাসেটটা মেয়েটাকে দেই। সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মেয়েটার হাতে মানবজমিন বইটা। বললাম, ‘বইটা এখনো শেষ হয়নি?’ মেয়েটা বইয়ের মাঝে বুকমার্ক রেখে বইটা বন্ধ করে বলল, ‘চা খাবেন? সেদিন আপনাকে থ্যাংকস ছাড়া আর কিছুই বলা হয়নি।’ আমি অবাকই হলাম। আমি আশা করেছিলাম আমাকে ও চিনবে না। বললাম, ‘আমাকে চিনতে পেরেছেন?’ মেয়েটা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘আমি আপনাকে অনেক আগে থেকেই চিনি। সেদিন স্টেশনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন। আপনাকে দেখতে দেখতেই বইটা হাত থেকে পড়ে গেলো।’ আমার অবাক লাগার মিটারের রিডিং বেড়েই চলছিলো। জিগ্যেস করলাম, ‘কিভাবে চিনেন?’ বলল, ‘চলেন চা খাই।’
হাঁটতে লাগলাম। সূর্যের আলোটাকেও কত স্নিগ্ধ লাগছিল। বুকের মধ্যে কেমন এক এক অচেনা অনুভূতি। যার অনুবাদ করতে পারছি না। কোনো অর্থ বুঝতে পারছি না সেই অনুভূতির। কিন্তু বুকটা ভরে আছে পুরোটাই সেই অনুভূতিতে। সবকিছুর হয়তো অনুবাদ হয় না। হাঁটতে হাঁটতেই মেয়েটার দিকে ক্যাসেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ‘এখানে আমার পছন্দের কিছু গান আছে। গতকাল রেকর্ড করিয়েছি। আপনাকে দেখে মনে হলো ক্যাসেটটা আপনাকে দেই। আপনি কি নিবেন ক্যাসেটটা?’ মেয়েটা হাত বাড়িয়ে নিলো। আবার সেই ছোট্ট করে বলল, ‘থ্যাংকস।’ কি যে আছে এই ছোট একটা শব্দে। আমাকে আটকে ফেলে ভীষণ মায়ায়। ভীষণ রকম হাহাকারে মোড়ানো ভালো লাগার তৃষ্ণায়।
বললাম, ‘বি সাইটের তিন নম্বর গানটা আগে শুনবেন। মিকি মান্নানের মেঘলা মেঘলা এই দিনে। আজ যদিও চনমনে রোদেলা দিন। কিন্তু এই গানটা মাথায় ঘুরছে। এই গানটাই আগে শুনবেন।’ মেয়েটা আলতো হাসি দিয়ে বলল, ‘আপনার নাম তো শাকিল তাই না। আমি আফসানা। আফসানা শবনম।’ বললাম, ‘শবনম নামেই ডাকি?’ মেয়েটা কেবল মাথাটা একপাশে কাত করে সম্মতি জানালো। সেদিন আমাদের আর চা খাওয়া হয়নি। পর দিন আর দেখা হলো না। এখনের মতো সেদিন তো আর সেলফোন ছিল না। নব্বই দশকে আমাদের সময়টা ছিল ল্যান্ডফোন আর চিঠির। একদিনের যাত্রা বিরতির পরে আবার দেখা হলো। সেদিনই ল্যান্ডফোনের নাম্বার নিয়ে রাখলাম।
আস্তে আস্তে আমার জীবনে একেক রকম রঙের সমাহার ঘটতে লাগলো। ঝুপড়িতে বসেছিলাম। শবনম বলল, ‘সেই গানটা এখন পর্যন্ত অনেকবার শুনে ফেলেছি। কি সুন্দর কথা গুলো- মেঘলা মেঘলা এই দিনে তোমায় পড়েছে মনে/সারাটিক্ষণ বসে থাকি/ কখন যে চুপিসারে আসবে/ আমার কাছে… কত সুন্দর সুর। জানেন গান হলো একেকটা শিকল। এই গানটা এখন এতোবার শুনছি যে এই গানের সাথে ওই সময়ের সবকিছু সুরের শিকলে আটকে গেছে।’ আমি জিগ্যেস করলাম, ‘কিভাবে।’ শবনম বলল, ‘ধরুন আজ থেকে বিশ পঁচিশ বছর পরেও যদি এই গানটা শুনি তাহলে এই সময়ের সবকিছু সেদিন মনে পড়ে যাবে। এই ভার্সিটির দিন গুলো। এই ঝুপড়ি। শাটল ট্রেন। সবকিছু।’ বললাম, ‘আর আমাকে?’ শবনম খুব সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে বলল, ‘আপনাকে মনে পড়বে সবার আগে। এই গানটার সাথে এই সময়ের যে শিকলে বাঁধা সেখানে আপনিই তো প্রথম উপলক্ষ।’
মনে মনে ভাবলাম, শুধু মনেই পড়বে শবনম। বিশ পঁচিশ বছর পরের জীবনটায় দু’জন কি একসাথে থাকতে পারি না। শবনম জিগ্যেস করলো, ‘কি ভাবছেন?’ বললাম, ‘নাহ কিছু না।’ ও কি বুঝলো জানি না। হঠাৎ ব্যাগ থেকে একটা র্যাপিং পেপারে মোড়ানো প্যাকেট দিলো। জানতে চাইলাম কি আছে। বলল বাসায় গিয়ে দেখতে। সেদিনই প্রথম কেমন বিষন্নতা নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। এর আগে কখনো শবনমকে হারিয়ে ফেলার চিন্তা মাথায় আসেনি। কারণ ওকে তো আমি পাই নি। হারাবো কি। কিন্তু ও যখন বলল বিশ পঁচিশ বছর পরে গানটা শুনলে আমার কথা ওর মনে পড়বে তখন থেকে আমার সব এলোমেলো লাগছিলো। কেন আমার কথা মনে পড়বে। কেন আমি সেদিন ওর সাথে থাকবো না। কেন আমরা দু’জন একসাথে থাকবো না বিশ পঁচিশ বছর পরেও। পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলার অনুভূতি যে কতটা অসহায়ত্বের সেটা বোঝানো যায় না।
বাসায় এসে র্যাপিং পেপার খুলে দেখি একটা গল্পের বই। বইয়ের পৃষ্ঠায় লেখা- ভালো থেকো, শুভ জন্মদিন। শবনম কিভাবে জানলো রাত বারোটার পরেই আমার জন্মদিন। এই মেয়েটা শুরু থেকে আমাকে কেবল অবাকই করে আসছে। ওর ল্যান্ডফোনে ফোন দিলাম। মনে হচ্ছিল ফোনের পাশেই বসেছিল। এক রিং হতেই রিসিভার কানে নিলো। বললাম, ‘আপনি কিভাবে জানেন আমার জন্মদিনের কথা।’ আমাকে অবাক করে দিলো আবারো এরপরের কথায়। দেখতে অনেক নরম ধরনের হলেও চিন্তাভাবনায় শবনম ছিল অনেক স্মার্ট। নব্বই দশকের মেয়েদের মতো বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না ওরকম না। সরাসরি বলল, ‘আপনি না। তুমি।’ যেই বিষন্নতা নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম সেই বিষন্নতা এক নিমিষে উড়ে গেলো। আবার বইটা হাতে নিয়ে দেখলাম, আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে। অথচ খেয়াল করিনি।
শাটল ট্রেনের সেই জীবনটা এরপর কেবল প্রতিদিন একেকটা ছোটগল্পের মতো এগোতে লাগলো। এতো সহজে এতো ঝামেলাহীন প্রেম সেসময় খুব কমই হতো। শবনমের কথাটা আজ আমার সামনে প্রমাণিত সত্য। সংসার হয়েছে। বাচ্চা হয়েছে। অথচ এখনো যখনই মনে পড়ে শেখ ইশতিয়াকে গান- নীলাঞ্জনা ঐ নীল নীল চোখে চেয়ে দেখো না। সাথে সাথে সেই শাটল ট্রেনের জীবনে ফিরে যাই।
শাটল ট্রেনের জীবন ছিল নির্দিষ্ট গন্তব্যের। কিন্তু জীবনের গন্তব্য অনেক বিশাল। সেই বিশাল গন্তব্যে আমি শবনমকে নিয়ে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের গন্তব্য আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। আজ এই বিমানবন্দর স্টেশনে বসে ভাবছি আবার যদি দেখা হয়ে যায় শবনমের সাথে তাহলে কেমন লাগবে আমার। আজ আমার স্ত্রী আছে। দুই কন্যা আছে। ওরও হয়তো সংসার হয়েছে। বাচ্চাকাচ্চা। আমি জানি না ওর কি মিকি মান্নানের মেঘলা মেঘলা এই দিনে গানটা শোনা হয় কিনা। ও বলেছিলো সবার আগে আমার কথাই মনে পড়বে। আমার কথা মনে পড়ার গান গুলোকি শবনম আর শুনে? সেই ক্যাসেটের দিন এখন আর নেই। ক্যাসেটটাও হয়তো নষ্ট হয়ে গেছে।
জীবনের গন্তব্য মিলবে না জেনেও আমাদের জীবনে এমন অনেকের সাথেই আমাদের দেখা হয়ে যায়। কেন হয় তার হিসাব আমরা মেলাতে পারি না। তাদের সাথে দেখা না হলে এমন কোনো ক্ষতি তো হতো না। অথচ তারা সারাজীবন ক্ষত হয়েই বুকের এক কোণায় পড়ে থাকে নিরবে। আমার মতো এমন অসমাপ্ত গল্প হয়তো অনেকেরই আছে। কিভাবে সম্পর্ক গুলো শেষ হয়ে যায় জানি না। আসলে একটা সময়ে এসে জানতেও চাই না। কেউ যে ছিল শুধু এই অনুভূতিটাই রেখে দিতে ভালো লাগে। কেন সে আমার হলো না সেই কথা আর ভাবতে ইচ্ছে করে না।
শবনমের সাথে কিভাবে সম্পর্কের শেষটা হয়েছিলো সেটা আমি মনে না করতে করতে আজ ভুলেই গিয়েছি।
শবনম আমার জীবনের অসমাপ্ত একটা ছোটগল্প। শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। শবনম নেই। কিন্তু ওর নামটা আমার কাছে রয়ে গেছে। ওর স্মৃতি আছে। কেবল একটা অপ্রাপ্তি হয়ে আছে। আমার জীবনের দুঃখ হয়ে নেই। আমার শুধু একবার জানতে ইচ্ছে করে ও কেমন আছে। সময়ের শিকল বাঁধা গান গুলো ও কি আর শুনে। আমার কথা কি মনে পড়ে। নাকি ভুলেই গেছে এই ঘেরাটোপের সংসারে।
ট্রেন এসেছে। উঠে পড়লাম। এক বিচ্ছিরি সিটে সিট পড়েছে। সামনাসামনি সিট। আমার সামনে পুরো এক ফ্যামিলি বসেছে। আমিই বোধহয় ওদের এক মাত্র অপরিচিত পাশাপাশি আটটা সিটের মধ্যে। আমার সামনে বসেছে এক ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে। মেয়েটার পাশে বোধহয় ওর ছোটভাই। ভাইবোনের চেহারার ভীষণ মিল। হঠাৎ মেয়েটাকে ওর মা ডাক দিলো, ‘শবনম…’ শুধু নামটাই কানে এলো। আমার সারা শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো। মেয়েটাকে আবার দেখলাম ভালো করে। কি মিষ্টি দেখতে। চিবুকে একটা তিল। হাসলে তারার মতো জ্বলে। এই ট্রেনের বগি থেকেই হয়তো আরো একটা গল্প শুরু হতে যাচ্ছে।
পাঠক এবার আপনাদের একটা সত্যি কথা বলি। আমার মধ্যে একটা দুঃখবিলাসী ভাব আছে। যেতে যেতে দুঃখ নিয়ে বিলাস করতে আমার ভালো লাগে। অনেক দিন পর দুঃখ নিয়ে বিলাস করার এক সুযোগ পেয়েছি। তাই সবচেয়ে ভালবাসার মানুষকে হারালে কেমন দুঃখ লাগবে সেটা ভেবেই একটু বিলাস করলাম মনে মনে। শুরুতে বলেছিলাম- আমাদের গল্পটাও শুরু হয়েছিলো এমন এক ট্রেনের জানালা থেকেই। আমাদের মানে আমার আর শবনমের। সেই গল্পটা কোনো অসমাপ্ত প্রেমের গল্প নয়। অবারিত বয়ে চলা প্রেমের গল্প।
আমাদের জীবনের গল্প। শবনমই আমার স্ত্রী। আমাদের এতো পাগলপারা ভালবাসা আমরা হারিয়ে ফেলবো এটা আপনারা ভাবলেন কিভাবে। আমাদের ভালবাসার ট্রেনে আরো দু’টো বগি যুক্ত হয়েছে। আমাদের দুই কন্যা। মনের মধ্যে আমার শবনম। আর চোখের সামনে আরেকটা মিষ্টি শবনম বসে আছে। আমার বড় মেয়েটার ডান চিবুকেও এমন তিল আছে। আমার মেয়েটাও একদিন শবনম মেয়েটার মতো বড় হবে। মেয়েটা হাসলেও ওর তিলটা তারার মতো জ্বলে। ট্রেনটা জীবনের মতো। একেক স্টেশনে থামে একেকটা গন্তব্যে। আমার গন্তব্যে আমি পৌঁছে গিয়েছি। আমার শবনম আমার গন্তব্য।