আভান আমার প্রশংসা করে নাকি অপমান করে আমি অনেক সময় বুঝতে পারি না। ওর মত এত সুন্দর করে অপমান আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ করে নি। তার কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। সকালে চা নিয়ে দিলাম। ও তখন বারান্দায় বসে ছিল। চায়ে এক চুমুক দেওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম
-কেমন হয়েছে?
-শরবত টা অসাধারণ হয়েছে। কিন্তু শরবত তো ঠাণ্ডা খেতে ভালো লাগে। এক কাজ করো কাপে দুই পিস বরফ ছেড়ে দাও। এক্ষুণি ফ্রিজ থেকে দুই পিস বরফ নিয়ে আসো তো। আমি ওর কথা বুঝতে না পেরে সত্যি সত্যি ই বরফ আনতে ছুটলাম। মাঝপথে যাওয়ার পর বোধগম্য হলো ও আসলে আমার বানানো চা টাকে শরবত বলে কটাক্ষ করেছে। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। ইচ্ছে করছিলো শরবত মানে চা ওর মাথায় ঢেলে দেই।
-কি হলো বরফ এনেছো??
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছো? এটা কি শরবত? চায়ে তুমি বরফ দিয়ে খাবে?
-ওমা কি বলো? এটা চা ছিলো?? স্যরি স্যরি। আমি ভাবলাম শরবত ছিলো। তুমি একবার বলতেও পারতে এটা চা। নয়ত এই ভুল হতো নাকি?
দ্বিতীয়বারের মত আমাকে আমার রাগের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেল আভান। আমি কাপ টা ওর হাত থেকে নিয়ে ঠাস করে নিচে ফেলে দিলাম। একদিন রাস্তা দিয়ে কানে হেডফোন দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন আমাকে ডাকছে। হেডফোন টা খুলে কে ডাকছে সেটা খুঁজতে লাগলাম। একটা ছেলে হাপাতে হাপাতে এসে বলতে লাগলো
-এই আপনি কি কানে কম শুনেন?
-না তো। কে আপনি?
ও কোনো জবাব না দিলে আমার হাত থেকে হেডফোন টা নিয়ে নিলো। এরপর সেটা ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। আমি কোনো কারণে রেগে গেলে কথা বলতে পারি না। কথা যেন মুখে আটকে যায়। তখনও আমি অবাক আর রাগে কথা বলতে পারছি না। ছেলেটাই বলতে লাগলো
-আরেকবার যদি আপনাকে রাস্তায় হেডফোন কানে দিয়ে রাস্তায় হাঁটতে দেখি আমি নিজেই আপনাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির নিচে ফেলে দিবো। সেই কখন থেকে আপনাকে ডাকছি। আর আপনি তাকাচ্ছেন ই না। শুনুন আমি আভান এণ্ড আই লাভ ইউ। কালকে উত্তর টা দিয়ে দিবেন। আসি।
এটা ছিলো আভানের আমাকে করা প্রপোজের স্টাইল। আমি আভানের জন্য আরেক কাপ চা বানাচ্ছি। তবে এবার চায়ে এক দানা চিনিও দেই নি। এবার দেখি ও আমাকে কি বলে। যথারীতি ওকে চা এগিয়ে দিলাম। ও চা হাতে নিয়ে চুপচাপ চা টা খেয়ে ফেলল। এবার আর কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম না। একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। ও আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল
-শোনো আমাকে কিন্তু জিজ্ঞেস করবে না যে তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম
-কেন??
-আমি মিথ্যে বলতে পারি না।
-মিথ্যা বলতে না পারা টা তো খুব ভালো…হোয়াট! তুমি কি বলতে চাইছো আমাকে বাজে দেখাচ্ছে??
আমি দুইদিন ধরে ওর সাথে কথা বলছি না। ও উশখুশ করছে কথা বলার জন্য। কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছি না। আমাকে সুন্দর ভাবে অপমান করার মজা বুজাচ্ছি। ও আমার সামনে বসে বলল
– রেহানাকে চিনো??
-(চুপ)
-আরে ওই যে কি সুন্দর করে গান গাইতো মেয়েটা! ওর সাথে আজকে ফোনে কথা হয়েছিলো। ফোনে ওর ভয়েস টা এত মিষ্টি লাগে যে কি বলবো। আমার তো খুব দু:খ ই লাগছিলো। ইশ আমার বউয়ের কণ্ঠ ও যদি এমন হতো!!
-কি….কি.. ব.আর কোনো কথা বের হচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করছি কথা বলার। কিন্তু আর কোনো শব্দ ই বের হচ্ছে না।
-এই কি হলো তোমার?? কথা বলতে পারছো না?? আমি ডাক্তারকে খবর দিচ্ছি। ও ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে গেলো। একবার ওকে বলছিলাম
-শোনো, পুলিশরা হলো জনগনের বন্ধু। তোমাকে এমন হতে হবে যাতে মানুষ রা বিপদে পড়লে সবার আগে তোমাকে জানায়। মুভি থেকে ডায়লগ টা কপি করে ওকে বলেছিলাম। ও তখন মোবাইলে পিডিএফ পড়তে পড়তে জবাব দিয়েছিলো
-মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য পুলিশের চাকরীতে ঢুকি নি। পুলিশ হলো জনগনের সার্ভেন্ট সোজা কথায় বলা যায় চাকর। তারা মালিক আমরা সার্ভেন্ট। আর মালিকের সাথে সার্ভেন্টের বন্ধুত্ব করা সাজে না। সেবারো আমার কথা গলায় আটকে গেছিলো। কোনো কথা বলতে পারিনি। এই ছেলের সাথে থাকতে থাকতে একদিন কথা গলায় আটকেই মরে যাবো। ছোটবেলা থেকে আমার এই অভ্যাস টার জন্য অনেক সমস্যায় পড়েছি। কোনো কারণে রেগে গেলে কথা গলায় আটকে আসে। হঠাৎ রক্তিমের ডাকে ঘোর ভাংলো। বাবার মতই পুলিশের চাকরী তে জয়েন করেছে ও। পুলিশের ইউনিফর্মে ওকে অসাধারণ লাগছে।
-আম্মু…
-বল রক্তিম?
-বের হচ্ছি আম্মু। দোয়া করো।
-হুম। শোন পুলিশ হচ্ছে জনগনের বন্ধু। নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করবি যাতে মানুষ বিপদে পড়লে তোর কথা আগে মনে পড়ে। ও তখন বলল
-মা.. কারোর সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য আমি পুলিশের চাকরীতে জয়েন করিনি। পুলিশ হচ্ছে জনগনের সার্ভেন্ট।
-হু আর মালিকের সাথে সার্ভেন্টের বন্ধুত্ব হয় না। হয়েছে???
-হাহা
-বাবা তোকে এসব ট্রেনিং দিচ্ছে?
-হু মা। তোমাকে একটা কথা বলি??
-হ্যা বল
-তোমার শাড়িটা খুব সুন্দর.. আমি হেসে বললাম
-তোর বাবা পছন্দ করে দিয়েছে। আমারো এই শাড়ির রঙ টা খুব পছন্দ। ও তখন বলল
-কিন্তু তোমাকে মানাচ্ছে না।
এই বলে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। আমি পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছি। আবার রাগে কথা আটকে গেছে। আর আভান বলছে
-তুমি কি কথা বলতে পারবে? নাকি ডাক্তার ডাকতে হবে??