ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ

ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ

কিরে আজকের plan কি তোর?

-আজকের plan মানে?প্রতিদিন যেমন তেমনই।খাবো,গোসল করবো,নামাজ পড়বো,পড়তে বসবো, ঘুমাবো।
-আরে আজ ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে কি plan তোর?
– আজ ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ। অতিরিক্ত কোন plan করিনি।
-তুই শালী আসলেই একটা ক্ষেত।এই বলে বান্ধবী চলে গেল।

বান্ধবীর সাথে কথোপকথন করার পর ক্ষেত বলে আক্ষায়িত করা হলো আমায়।মনে ভিষণ কষ্ট পাইলাম।রান্নাঘরে খালা রান্না করছে।খালকে চিৎকার দিয়ে বললাম,

-খালা রান্না শেষ হলে আমার খাবারটা নিয়ে রুমে আইসেন।আজ আর ঘুম থেকে উঠমুই না। একটু পরে বান্ধবী রুমে আসলো।বেশ সাজুগুজু করছে দেখা যাচ্ছে।শাড়ি, চুড়ি পাউডার-টাউডার মেখে একাকার।একটু পর একটা ফোন আসলো আর বললো,

-এইতো আমি বের হবো এখনই। এটা বলেই হন হন করে বেরিয়ে পরলো।একটাবার বলারও প্রয়োজনবোধ করলনা,
-দেখতো দোস্ত আমায় কেমন লাগছে? মনের কষ্টে কষ্টিত হয়ে বিচানায় শুয়েই আছি।মনে মনে বলছি উঠতাম না আজকে আর উঠতামই না। একটু পর খালা রান্না শেষ করে খাবার নিয়ে আমার রুমে আসলো,

-ও হাফসা খালা উঠেন। আপনের খাবার নিয়া আইছি। খালার কথা শুনে কম্বলের নিচ থেকে মাথা তুলে আমি পুরাই টাস্কিত।
-খালা! কি ব্যপার খালা।লাল চুড়ি,লাল শাড়ি,লাল টিপ,লাল গোলাপ।হঠাৎ এতো সাজুগুজু কেন?
-ও হাফসা খালা আম্নে কোন জগতে বাস করুইন!আইজ তো ভালোবাসা দিবস।

হেরলাইগ্গা আম্নের খালু কাল রাইত বারোটার সময় এইগুলান হাতে ধরায়া দিয়ে বলে,কি জানি কয়,ওহ মনে পড়ছে, হিপি বেলাইনটাইনদে ।আমি ত আচানক হইয়া গেছি।বলি ও ফুলির বাপ, এইতা কি ইঞ্জিরি কইতাছুইন। আমি তো কিছুই বুঝতাছিনা।তখন আপনের খালু বুঝাইয়া কইলো সব।ও হাফসা খালা কইনছেন দেহি, কেমন লাগতাছে আমারে? খালার কথা গুলো সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে।হা করে শুধু শুনেই গেলাম।

-খালা আপনাকে তো লাল পরীর মতো লাগতেছে।পুরাই লাল পরী।
-আপনের খালুও এই কথা কইছে।

এই কথা বলে খালা একটা নীল হাসি, না না একটা লাল হাসি দিয়ে খাবারটা টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো। পুরো মেসটা যেন খা খা করছে। কোথাও কেউ নেই। সবাই যার যার বফের সাথে দেখা করতে চলে গেছে।অসহায়ের মতো শুধু পরে আছি আমি।হে আল্লাহ উপর থাইকা একটা দঁড়ি ফালাও আমি বায়া বায়া তোমার কাছে চলে যাই।
মনের দুঃখে বিরহের গান গাইতে থাকলাম,

“”আজ সিঙ্গেল বলে পাইলাম না রে ভালোবাসার স্বাদ, ভালোবাসা আমার দিকে বাড়ায় নারে হাত। তাইতো আজ ফেব্রুয়ারি আমার কাছে শুধুই চৌদ্দ তারিখ, আমি ছাড়া সবাই হলো ভালোবাসার শরিক। মনের দুঃখ মনে নিয়ে ভাবলাম একা একা মেসে থেকে লাভ কি।তারচেয়ে বরং একটু ঘুরেই আসি পার্ক থেকে(ময়মনসিংহ জয়নুল আবেদীন পার্ক)।নদীর পাড়ে বসলে হয়তো মনটা একটু ফুরফুরা লাগবে।তাই বেড়িয়ে পরলাম।সামনে একটা রিকশা দেখে ডাক দিলাম। এই মামা এদিকে আসেন।

-কই যাইবেন মামা?
-পার্কে যাবো।ভাড়া কত?
-৫০ টেহা দিয়া দিয়েন।
-মাথা ঠিক আছে আপনার।বিশ টাকা ভাড়া।৫০ চাইছেন কেন?
-আরে মামা আইজ ভালোবাসা দিবস।তাই ভাড়া বাড়ছে।
-ভালোবাসা দিবস তো আমার কি হইছে?
-ওতো কথা কইয়া লাভ নাই।৫০টেহায় গেলে যাইবেন,না গেলে হাঁইট্টা যাইন গা।
-আরে মামা রাগ করেন কেন।চলেন ৫০টাকায় দিবো।

মনে দুঃখে বলতে লাগলাম, “‘”ভালোবাসা দিবস তুমি ডাকাত,কসাই, বিশ টাকা ভাড়া পঞ্চাশ টাকা করে আমাদের মতো সিঙ্গেলদের করেছো অসহায়।।।

পার্কে গিয়ে তো আমার চোখ কপালে।চারিদিকে শুধু কাপল আর কাপল।লম্বা+লম্বা কাপল,খাটো +খাটো কাপল, লম্বা+খাটো কাপল(অনেকটা অমিতাব বচ্চন এর জুটির মতো)।কিছু কিছু অসহায় প্রাণী ও আছে ঠিক আমার মতো।যাদের পাশে লম্বা,খাটো কেউ নেই।পার্কের প্রতিটা বেঞ্চ কাপল দিয়ে ফিলআপ কারা। একটু যে বসবো তারও কোন সুযোগ নেই।ঘুরতেছি আর ঘুরতেছি। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা শুরু করলো। সুযোগ খুঁজছি ফাঁকা পেলেই সুযোগ মতো টুক করে গিয়ে বসে পড়বো। তার আগে ফুসকা খেয়ে নেওয়ার জন্য গেলাম ফুসকা ওয়ালার কাছে।

-মামা এক প্লেট ফুসকা দেন তো।
-মামা এক প্লেট কেন?সাথে মামা আসে নি?না কি রাগ করেছে। এমন প্রশ্ন শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পরে গেলো।কি বলবো মান সম্মানের কথা।মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম,

-আরে না মামা। সে নদীর ঐ পারে গেছে তো তাই ভাবলাম একা একা কি আর করবো একটু ফুসকাই খেয়ে নেই।
ফুসকা শেষ করে দেখলাম একটা কাপলের পাশে একটু জায়গা ফাঁকা হয়েছে।তাই দৌঁড়ে গিয়ে বসে পরলাম।যাক বাবা অবশেষে একটু বসার জায়গা তো পেলাম। চারিদিকে এতো ভালোবাসাবাসি দেখে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিলো।কি করা যায়, কি করা যায়, তাই মনে মনে ভাবছি।হঠাৎ মাথায় অদ্ভূত একটা বুদ্ধি চলে আসলো।পাশে বসা কাপল গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখি,আহা! তাদের কি ভালোবাসা।দাঁড়া দেখাচ্ছি তোদের ভালোবাসা।

-এই যে ভাইয়া আগের আপুটা একটু বেশিই কিউট ছিলো। এই কথা বলে তারাতারি সেখান থেকে চলে গেলাম।
তারপর আড়ল থেকে দেখলাম আপুটা ভাইয়ার গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে চলে যাচ্ছে, আর ভাইয়াটাও আপুটার পিছন পিছন যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে আহা আমার যে কি সুখ মনের ভিতর বয়ে যাচ্ছিলো।তা বলে বুঝাতে পারবো না।ফর্মুলা আমার কাজে দিছে। এইভাবে কম পক্ষে সাতটা কাপলের মধ্যে দিছি গিট্টু লাগায়া।কি যে সুখ লাগতাছে মনে। এইবার আট নাম্বার কাপলের পালা।সামনে তাকিয়ে দেখি হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করছে এক কাপল।কাছে গিয়ে বলালম,

-উহু, হলোনা ভাইয়া।ভাইয়া আগের আপুটাই তো বেশি কিউট ছিলো।

মেয়ে তো কথা শুনে রাগে আগুন। এক ঝটকায় ভাইয়ার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো।আর কোন দিন তোর মুখ দেখতে চাই না।আজ থেকে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।যা তুই।ব্রেকআপ। এ কথা বলে আপুটা চলে গেলো।কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম ভাইয়াটার কোন রিএ্যাকশনই নেই।যেন আপুটা চলে যাওয়াতে উনি একটু বেশিই খুশি হলেন।আমিও ওখান থেকে যথাসম্ভব চলে যাচ্ছিলাম। তখনই পেছন থেকে ভাইয়াটা ডাক দিয়ে বললো,

-এই যে আপু একটু শুনবেন। আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম।তারপরও সাহস করে বললাম,
-জ্বি বলেন।
-ঠিকই বলেছেন।মিতু একটু বেশিই কিউট ছিলো।By the way,আপনি কি করে জানেন আগের মেয়েটা বেশি কিউট ছিলো?

আচ্ছা বাদ দেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।এই মেয়েটাকে কিছুতেই ঘার থেকে নামতে পারছিলাম না।আপনার জন্য বেঁচে গেলাম। ছেলেটার কথা শুনে আমি আর কি বলবলো।মুছকি হেসে চলে যাচ্ছিলাম।এমন সময় ছেলেটা পিছন থেকে আবার ডাক দিলো।

-এই যে শুনেন না। আপনি কি সিঙ্গেল?আপনাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে। এই কথা শুনে আমি ত পুরাই টাষ্কিত।কি বলবো বুঝে পাচ্ছিলাম না।আসলে এই প্রশ্নের কি উত্তর দেওয়া যায় বলেন তো।

-ছেঁচড়া পোল।লুচ্চা বেডা।
-কিছু বললেন?
-আসলে ভাইয়া আমার উনি নদীর ঐ পারে গেছে তো। আসলেই চলে যাবো। এই কথা বলে নিজের আত্মাটা নিজের হাতে নিয়া যত দ্রুত সম্ভব কুইট্টা একটা দৌড় দিলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত