সিঙ্গেল

সিঙ্গেল

ঘুম ঘুম কাঁনে শুনতে পেলাম ফোনটা আমার কাঁন্না করছে।এপাশ ওপাশ করে ফোনটা হাতে নিলাম।চোখ বন্ধ অবস্থায় কলটা রিসিভ করতেই মেয়ে কন্ঠ ভেসে ওঠলো।বলল

-ঐ কই তুমি?
-আমি তো শুয়ে আছি!
– কি! তুমি এখনো শুয়ে আছো।আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্যে ওয়েট করছি!

কে আপনি আপা? হারামজাদা কুত্তা কি বলিস তুই? কে মানে আমি?শুক্রবারে বিশেষ ক্লাসের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলাম।আর তুই বলিস কে আমি?

আপা আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে! হায় খোদা! ৩ বছর প্রেম করার পর এই দিনে আমাকে এ কথা শুনতে হলো।মুজে উঠায়া নে মওলা! দেখেন আপা কাঁদবেন না! আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নাই।আমি তো জন্মগত সিঙেল। তোর জন্মগত সিঙেল আমি ছুটামু হারামী।তাড়াতাড়ি আয় আজকে! তোর চৌদ্দগুষ্ঠির সষ্টি পূজা করবো। মেয়েটার কথায় রিতিমত অবাক হলাম।কে এই মেয়ে সকাল সকাল আমার ঘুমের ফালুদা করে দিচ্ছে।না এটা মানা যায় না।মজা করবে ভালো কথা।কিন্তু সিঙ্গেল একটা ছেলেকে নিয়ে কেনো মজা করবে? এ কোন খেলা খেলছে আমাকে নিয়ে।যাই হোক।আমি বললাম আপু দেখেন আপনার সত্যিই ভুল হচ্ছে! আমি তো আপনাকে চিনিই না।তাহলে কেমনে আপনার সাথে আমি তিন বছর প্রেম করলাম?

দেখো তামিম।মিথ্যে বলবানা।তোমার দেয়া প্রতিটা গিপ্ট আমার কাছে আছে।তুমি যদি এরকম করো; তাহলে সবগুলো আমি নিয়ে তোমার বাবার কাছে হাজির হবো। আই মোর জ্বালা।বাপে আমার কলেজে যাওয়ার জন্য ২০টাকা রিক্সা ভাড়া দেয়।আর ১০টাকা দেয় টিফিনের জন্যে।আমার বাপে যে কিপ্টার কিপ্টা।কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে মাত্র ৩০ টাকা দেয়।সেই ছেলে গার্লফ্রেন্ডকে গিপ্ট করবে? এটা পৃথিবী মেনে নিবেনা। গিপ্টের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো করে বললাম

আপু ; আব্বারে আমারে ত্রিশ টাকার বেশি কোন দিন দেই না।আমার বাপযে কিপ্টার কিপ্টা এই কথা শুনার পর।কোন মেয়েই আমার সাথে প্রেম করবে তো দূরে থাক;আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপই করতে চাই না।তাই বলুন আমি কেমন করে তিন বছর আপনাকে গিপ্ট দিলাম। দেখো তামিম।আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই কেঁদে দিবো। আপু কাঁদেন; কাঁটেন।মাটিতে আপনি নাগিন ডান্স দেন।তাতে আমি কি করবো।সকাল সকাল আমার ঘুমের বারোটা তো আপনি বাঁজিয়ে দিলেন। বাবু তুমি এমর করোনা প্লিজ। আমি তোমার জান তুমিই তো বলতা।আজ ভেলেন্টািন্স ডে।চলনা দু’জন কোথায় ঘুরে আসি।

ওরে আমার নানির ঘরে নানি।একবারই তো কইছি বাপে আমার হাত খরচ ত্রিশটাকার বেশি দেই না।আর আমার ঘুরাঘুরি ভালো লাগেনা। দেখো তামিম; আমি বয়সে তোমার চেয়ে ছোট।নানি বলবানা।চলনা ঘুরে আসি। মাইরেলা আমারে।কতবার কমু।আমার বাপ কিপ্টা।তার বাপও কিপ্টা। মানে আমার দাদাও কিপ্টা।শুনেছি দাদার বাপও কিপ্টা ছিলো।এটাও শুনেছি দাদার দাদাও বাকি কিপ্টা ছিলো।একটা কিপ্টা ফ্যামিলির ছেলে আমি।আমার বাপের জন্ম কিপ্টার ঘরে। টাকা পয়সা নাই।তাই আপা মাপ কইরা দেন।

ঠিকাছে ভাই ভালো থাইকেন আপনি।আসলে ভুল হইছে।এতক্ষণ নাম্বার চেক করেনি।এখন চেক করে দেখলাম রং নাম্বার।রাখি এদিকে আমার বফ ফোন দিচ্ছে।ভালা থাকবেন। যাক শেষমেশ বুঝাতে সক্ষম হলাম।যে আমি তার বিএফ না।সেও বুঝলো।যাক এক্টা ঘুম দেওয়া যাবে। কিছুক্ষণ পর আব্বা দরজায় নক করলো।মধুর সুরে বললো বাবা তামিম তুমি কি জেগে আছো? আব্বার কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলাম কুচ তো ঘরবর হে।আমিও সুন্দর করে বললাম; জ্বি আব্বা জেগে আছি। আব্বা বললো।দরজাটা কি একটু খুলবে তুমি।ভিতরে আসবো!

আব্বা একটু ওয়েট উঠতেছি।আব্বাকে উঠার কথা বলেই রেডি হয়ে নিলাম।দৌড়ের জন্যে প্রস্তুতি।তারপর দরজা খুলে দিলাম। আহ দরজা খুলে তো মুই একটা চমকিয়ে গেলুম।একজনের হাতে মিষ্টি।একজনের হাতি পানি।একজনের হাতে রসমলাই।একজনের হাতে পায়েস।মাইরালা।এসব কি দেখছি আমি। আব্বা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো।বাবা তামিম যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।এগুলো সব তোমার জন্যে।ব্যাপারটা কি কিছুই বুঝতে পারলাম না। খাওয়া শেষ করলাম।আব্বা চলগেল আম্মাও চলেগেল রুম থেকে।ছোট বোনকে ডাক দিয়ে বললাম। আচ্ছা ঘটনা কিরে।এত আপ্যায়ন,আদর যত্ন ঘটনা কি? তখন আমার বোনটা আমাকে বললো। সকালে তোরে কোন মেয়ে ফোন দিছিলো?

হুম দিয়েছিলো তো। ঐটা আব্বার পরিচিত একটা মেয়ে ছিলো।তোরে পরীক্ষা করছিলো। তুই প্রেম করিস,নাকি তুই সিঙ্গেল। সেই পরীক্ষায় পাশ করছস।তাই এরকম।এতো কিছু দিতো না।তুই যে কিপ্টা বলছস।সেজন্যই এত কিছু। বোনটা আমার চলেগেল।আমি তো আহাম্মক হয়েগেলুম। পানি তে খেয়ে মইরা যাই।আজকাল বাপেও আমার সাথে মজা করে।এ সিঙ্গেল জীবন কই রাখুম আমি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত