-আতিফ পাচটা বছর পার হয়ে গেছে তদের বিয়ে হয়েছে,আমাদের কি ইচ্ছা হয় না নাতি নাত্নিদের সাথে খেলা করার এই বুড়ো বয়সে?(মা)
-হ্যা হয়তো তো”(মাথা নিচু করে আমি বললাম)
-তাহলে আর কত দিন পর নাতি নাত্নিদের মুখ দেখতে পারবো।এভাবে দেখবি একদিন আমরা মরেই যাবো তবুও আমরা তর ছেলে-মেয়ের মুখ থেকে দাদি-দাদা ডাক শুনতে পারবো না (মা)
-এমন কথা বলো না তো মা।(আমি)
-আমি এবার দাদি ডাক শুনতে চাই।যদি স্নেহা না পারে তাহলে বল আবার নতুন করে তকে বিয়ে করাবো(মা)
-কি বলছো এসব।ওর দোষ কোথায় এখানে?(আমি)
-তো কার দোষ।?(মা)
-দেখছি আমি(আমি)
কথা বলেই মার সামনে থেকে চলে আসলাম। আমারও খুব ইচ্ছে হয় আমাকে বাবা ডাক দেক। স্নেহাও সব সময় মনমরা হয়ে থাকে।
-আতিফ(স্নেহা)
-হ্যা বলো(মার রুম থেকে রুমে আসছি তখন স্নেহা ডাক দেয়)
-আরেকটা বিয়ে করে নাও।বাবা-মায়ের আশা পূরণ করো(স্নেহা)
-স্নেহা সন্তান আল্লাহর দেওয়া রহমত বান্দার জন্যে।সেখানে তোমার আর আমার কিছু করার আছে?(আতিফ)
-হুম জানি।কিন্তু হয়তো এখানে দোষ টা আমারই তাই আমাদের সন্তান হচ্ছে না।অনেক তো চেষ্টা করতেছি(স্নেহা)
-চলো ডাক্তারের কাছে যাই(আতিফ)
-নাহ,তুমি আরেকটা বিয়ে করে নাও(স্নেহা)
-নাহ।আজকে দুপুরে রেড়ি থেকো,ডাক্তারের কাছে যাবো(আতিফ)
কথা বলেই কাজের জন্যে বাহিরে চলে আসলো আতিফ। সবারই ইচ্ছা হয় বিয়ের দুই এক বছর পরেই সন্তানের মুখ দেখা। বিয়ে মানেই তো এক সাথে থাকা,নতুন করে আরো নতুন মানুষ গড়ে তুলা।দলবদ্ধ হয়ে সমাজে সবার সাথে বসবাস করা। যারা বিয়ে না করে সমাজের মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে ধির পায়ে বাসায় আসে আতিফ।
_স্নেহা হলো চলো(আতিফ)
-হুম এইতো(স্নেহা রুম থেকে)
স্নেহা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্যে রাজি হয়েছে।তবে অনেক জোড়াজুড়ি করার পর। মার কাছে কটু কথা শুনতে হয় প্রায়ই,আশেপাশের আন্টিরা মাঝে মাঝে এসে কিছু কথা শুনিয়ে যায়। এইসব শুনে সব সময় মনমরা হয়ে থাকে স্নেহা। আর স্নেহার জন্যে আতিফেরও কষ্ট লাগে এখানে স্নেহার তো কোনো দোষ নেই। তাহলে কেনো তাকে এসব কটু কথা শুনতে হচ্ছে? প্রশ্ন গুলো নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করলাম। কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলাম না।
-চলো(স্নেহা)
-হু,,,,,,ম(স্নেহা কে দেখতে আজ সেই প্রথম দিনের দেখার মতো লাগছে।
চুল গুলো পপ করে সামনে একটু উচু করে ফুলিয়ে রেখেছে। চোখে কাজল মেকাপ ছাড়া অনেক সুন্দর লাগছে। আর সাথে আচলে কাজ করা একটা খয়েরী রঙের শাড়ি। দেখতে কতটা সুন্দর লাগছে তা ভাষায় বুঝিয়ে বলতে পারবো না। তখন একটু বয়স কম ছিল,আর এখন একটু বেশি তবে বয়সের সাথে মিলিয়ে স্নেহাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
-ওই কি দেখো এমন হা করে মশা ঢুকবে তো মুখে(স্নেহা মজা করে)
-আমার বউকে দেখছি(আতিফ)
-তা তো প্রতিদিনই দেখো আজকে আবার নতুন করে দেখতেছো নাকি?(স্নেহা)
-হুম।প্রথম দিনের সেই পরিটা কেই দেখছি(আতিফ)
-রাখো তো তোমার ফাজলামো। তুমি দাড়াও মাকে বলে আসি(স্নেহা কথাটা বলেই মার রুমে চলে যায়) আমি দাড়িয়েই রইলাম।
-চলো(স্নেহা একটু পর হাসি মুখে আসে)
-হুম(আতিফ)
মা এমনিতে সন্তানের জন্যে দুই একটা কথা বললেও স্নেহাকে খুব ভালোবাসে। মা স্নেহা কে কোনো কথা বলতো না।যদি আশেপাশের বাসার আন্টিরা উস্কানিমূলক কথা না বলতো তাহলে। আমার মনেও ভয়,স্নেহা তো আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। আমার থেকেও ও বেশি ভয় পাচ্ছে। না জানি কি রিপোর্ট আসে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকাপ করে দুইজন বসে আছি।
-আপনাদের কারোর কোনো সমস্যা নাই।আসলে আপনার স্ত্রী বেশি পিল খেয়ে ছিলেন আগে তাই আরকি একটু দেরি হচ্ছে।
আল্লাহর যদি রহমত করেন তাহলে অতি তাড়াতাড়ি আপনাদের বাড়িতে নতুন অতিথি আসবে। ডাক্তারের কথা শুনে কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না স্নেহা তো খুশিতে আমাকে ডাক্তারের সামনেই জড়িয়ে ধরেছে। খুশি তো হওয়ারই কথা।পাচটা বছর কম না প্রতিটা মেয়েরই আশা থাকে সে মা হবে সন্তানের সাথে সব সময় মজা করবে, খেলবে, কথা বলবে, প্রতিটা সময় পার করবে ছেলে-মেয়েদের সাথে মজা করে।
-আসি ডাক্তার সাহেব।আমাদের জন্যে দোয়া করবেন(আতিফ)
– আপনাদের জন্যে সব সময় দোয়া থাকবেই।
চলে আসি হাসপাতাল থেকে গন্তব্য এখন বাড়িতে নয়! কোনো এক পার্কে নাহয় আজকের বিকেলের বাকি সময়টা পার করে রাতের খাবারটা বাহিরে খেয়েই বাসায় যাবো মাকে ফোন করে বলে দিলাম আসতে একটু দেরি হবে। সবারই একটু না একটু সমস্যা থাকবেই।কেউ পরিপূর্ণ ভাবে সমাজে গঠিত নয়। আর এইটা তো আল্লাহর হাতে,তাহলে কেনো এখানে আমরা বাড়ির সেই বউটাকে দোষারোপ করি। হয়তো আল্লাহ চাচ্ছেন না তাই দিতেছেন না।আল্লাহ যখন খুশি হয়ে দিবেন তখন তো দিবেনই।