জোকার

জোকার

জাহিদুর রহমান অনেক রাগী রাগী মুখ করে বসে আছে। আর স্ত্রী মিতালি যখন আজকে রেগে গিয়ে বলল

-তোমার কোনো পারসোনালিটি ই নেই। তুমি একটা জোকার। সবসময় হাহা হিহি করে হাসতে থাকো। তোমার লাইফের ৯০% শুধু হেসে তুমি পার করে দিয়েছো।
-কি!! আমার কোনো পারসোনালিটি নেই?? আমি জোকার?
-নেই ই তো। সবসময় জোকারদের মত হাসতে থাকো। রাগ বলে কোনো কিছু আছে তোমার মধ্যে??
-এত বড় কথা? আমিও রাগ করতে পারি। আর সেই প্রমাণ আমি তোমাকে দিবো। আমাকে কি করতে হবে বলো?
-অভয় কে বকা দিতে হবে। সেটা যে কারণেই হোক।

এইটা শুনার পর ই তার মুখটা চুপসে গেল। তার মতে অভয়ের মুখ পৃথিবীর সবচাইতে মায়াবী। অমন মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে কড়া ভাষায় কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু তার স্ত্রী এখন তার দিকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আর তিনি কখনো চ্যালেঞ্জে হারেন না। তিনি যে করেই হোক আজকে অভয় কে বকা দিবেন ই।

অভয়ের সাথে জাহিদুর রহমানের বন্ধুর মত সম্পর্ক। ছেলের ২১ বছর বয়স চলছে। এই ২১ বছরে তিনি ছেলেকে বকা দেওয়া তো দূরে থাক জীবনে কোনোদিন একটা ধমক ও দেন নি। আর সেজন্যই অভয়ের মায়ের ভাষ্যমতে ছেলে নাকি বিগড়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাহিদুর রহমানের সেটা একেবারেই ভুল মনে হয়। তার ছেলে পড়ালেখায় ভালো রেজাল্ট করে, খেলাধুলায় ভালো, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে, ধর্মকর্মেও কোনো অবহেলা করে নি। আর বন্ধুর মত হওয়ার জন্য ছেলে যে কারোর সাথে রিলেশন নেই এটাও ভালো ভাবে জানেন। তবে তার বকা না দেওয়াটা অভয়ের মা ঠিক পুষিয়ে দেয়। অভয় অনেক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর কিছুটা অধৈর্য হয়ে বলল

-বাবা, তুমি কি কিছু বলবে? জাহিদুর রহমান অন্যমনস্ক হয়ে বললেন
-উ অভয় হেসে বলল
-ঊ মিতালি রেগে গিয়ে বলল
-এখানে কি তোমাদের স্বরবর্ণের পরীক্ষা হচ্ছে?? তুমি অভয় কি বলতে চেয়েছিলে বলো।

অভয় ভেবে পায় না তার এমন হাস্যজ্জল বাবা কীভাবে মায়ের মত এমন রাগী মহিলাকে বিয়ে করলো। জাহিদুর রহমান ভাবছেন ছেলের করা কোন ভুলের জন্য তিনি অভয়কে বকা দিবেন। কিছুক্ষণ ভাবার পর জাহিদুর রহমান বললেন..

-অভয়
-জ্বী বাবা
-তোমাকে আজকে আমি খুব কড়া কিছু কথা বলবো।
-ওকে বাবা
-কিন্তু শর্ত হলো তুমি আমার কথা শুনে হাসতে পারবে না।
এটা শুনেই অভয়ের ফিক করে হাসি এসে পড়লো। ও হাসি টা থামিয়ে বলল..
-ঠিক আছে। হাসবো না।

জাহিদুর রহমান কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে গম্ভীর মুখ নিয়ে পায়চারী করলেন। মিতালিও অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন তার স্বামী তার ছেলেকে জীবনে প্রথমবার কি বলে বকা দেন সেটা দেখার জন্য। কিন্তু অনেক ভাবার পরেও ছেলের কোনো ভুল তার চোখে পড়ছে না। কি নিয়ে বকা দিবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না। মিতালি তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন। অবশেষে তিনি বললেন..

-তোমার বয়স কত চলছে অভয়??
-২১ বছর।
-তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?
-না বাবা নেই। এরপর রাগী স্বরে জাহিদুর রহমান বললেন
-আমার ছেলে হয়ে তুমি এখনো একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারলে না। তুমি জানো তোমার মত বয়সে আমি তোমার মা কে বিয়ে করে ফেলেছি। আর তুমি আমার ছেলে হয়ে এখনো একটা প্রেম ই করতে পারলে না আর কিছু বলতে নিয়েছিলেন তার আগেই খেয়াল করলেন সাপের মত ফোঁসফোঁস একটা আওয়াজ আসছে। জাহিদুর রহমান ভয়ে ভয়ে বললেন

– অভয় ঘরে কি কোনো সাপ ঢুকলো নাকি! কেমন একটা আওয়াজ আসছে শুনতে পারছো?
– বাবা সাপ না, মা রাগে ফুসছে। বকা দেওয়ার আগে একবার প্রাকটিস করে নিতে পারলে ভালো হতো। মনে তো হচ্ছে আজকেও আমাদের দুইজন বাইরে থাকতে হবে। বাবা আর ছেলে দরজার বাইরে বসে আছে। কিন্তু এই দরজা আজকে কিছুতেই খুলবে না। বাপ ছেলে বাইরে বসেই গল্প করছে।

– তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
-না বাবা।
-মশা অনেক বেশি। তোমার মায়ের কাছে একটা মশার কয়েল চাইবো নাকি?
-চাইলেও কোনো লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
-তাও একবার চাই।
-দেখো কি বলে। জাহিদুর রহমান জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলল
-মিতালি, মশা খুব কামড়াচ্ছে। একটা কয়েল দিবে প্লিজ? মিতালি ভিতর থেকে জবাব দিলো
-কেন?? মশা কামড়াচ্ছে তোমরা বাপ বেটা মিলে মশাকে কামড়াও।
-কিন্তু ওত ছোট মশাকে কীভাবে কামড়াবো?? তুমি একবার দেখিয়ে দিবে প্লিজ?

এই কথা শুনে মিতালির আরো রাগ লাগলো। লোকটা কি কোনোদিনও একটু সিরিয়াস হবে না? এই লোকটাকে যে কি মনে করে বিয়ে করেছিলো কে জানে?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত