লুঙ্গি বিড়ম্বনা

লুঙ্গি বিড়ম্বনা

তখন আমি ক্লাস ফাইভে সমাপনী পরীক্ষা শেষ করলাম। ছুটিতে নানুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে পড়লাম এক বিপদে। নানু আর আমি সেদিন একসাথে ঘুমিয়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে চেতন পেয়ে বুঝতে পারলাম আমার পরনে লুঙ্গিটা নেই, তাই লেপ কম্বল জড়িয়ে অমনি ছিলাম। নানু উঠে আমাকে বার কয়েক ডাক দিলেন, ‘এই দুলু উঠবি নাকি? দেখছিস না কত সকাল হয়ে গেছে।’

আমি তো পড়ে গেলাম মহাবিপদে! এই মুহূর্তে বলতেও পারছিনা যে আমার পরনে লুঙ্গিটা নেই, আর নানুর সামনে লজ্জায় উঠতেও পারছিনা। নানু বাইরে যাবেন ঠিক সেই মুহূর্তে ক্লাস থ্রিতে পড়া মামাতো বোন নেহা হুট করে ধপাস শব্দে আমার উপরে এসে পড়ল─ভাইয়া উঠো না তারাতারি খেলতে যাব। আমি বললাম, ‘তুই যা, আমি একটু পরে যাচ্ছি।’ নানু ততক্ষনে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে গেছেন। এটাই সুযোগ, নেহাকে বাইরে বের করে দিয়ে আমি চট করে লুঙ্গিটা খুঁজে পরে নিব। কিন্তু নেহা যেন কোন কথাই শুনছেনা। ও আমাকে সাথে নিয়েই বের হবে। ইতোমধ্যে বাইরে থেকে আবারো নানুর জোড় কন্ঠে ডাক শুনতে পেলাম- ‘কখন থেকে নেহা ডাকছে উঠতে পারিস না? উঠবি নাকি আমি গিয়ে লেপ কম্বল সরিয়ে দিব।’

হায় হায়! কি মছিবতে পড়লাম। নানু যাই করুক অন্ততপক্ষে এই কাজটা যেন না করে। আমি নেহাকে কোনোরকম বুঝিয়ে ওকে বাইরে বের হতে বললাম। যাক বাবা, বাঁচা গেল! আমি উঠব উঠব ঠিক সেই মুহূর্তে আম্মু এক পাল মহিলা নিয়ে এসে আমার কাছে হাজির। ইসস্… এ দেখছি বিপদের উপরেও মহাবিপদ। এ মুহূর্তে মনে হল আমার মত বড় বিপদে হয়ত কেউ কোনদিন পড়েনি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো।

আম্মু মহিলাদের বললেন, ‘এই হলো আমার ছেলে দুলু।’ আমি মহিলাদের দিকে তাকালাম, কোনদিন দেখিনি এদের। একটা মহিলাকেও চিনতে পারলাম না। কোন একজন মহিলা বলে উঠলেন, ‘তো এখনো শুয়ে আছ কেন বাবু, উঠো তো তোমাকে দেখি’। পাশ থেকে আরেকজন মহিলা বললেন, ‘সেদিনকার ছেলে কত্ত বড় হয়ে গেছে তাই না? ওরে বাবা এখন এত প্রশংসা শোনার দরকার নাই আমার, সবাই একটু বাইরে যান না প্লিজ’, মনে মনে বললাম আমি। আম্মু মহিলাদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন─ ‘এরা সবাই তোমার খালামণি হবে, আমার ছোট কালের বান্ধবী, একসাথে অনেক খেলাধুলা করেছি আগে। কয়েক বছর পর গ্রামে আসল এরা।’ আমি মনে মনে বিরক্ত হলাম, ‘পরিচয় পর্বের আর সময় পেলনা’ ‘আম্মু তোমরা বাইরে যাও আমি একটু পরেই আসছি।’ মুখে বললাম আমি।

মোটা একটা মহিলা বললেন, ‘এখনি ওঠো তো বাবু, তোমাকে দেখার জন্যই তো আমরা আসলাম।’ বলে তিনি লেপের একটা অংশ উঁচু করতে চাইলেন। এ দেখছি আরেক ডাইনি, সময় অসময় বোঝেনা যখন যেটা মন চায় সেটাই করে। আমি সাথে সাথেই লেপের উঁচু করা অংশ চাপ দিয়ে কাছে টেনে নিলাম। আম্মু বললেন, ‘ভীষণ লাজুক তো, তাই এমন। তোরা আয়, পরে দেখিস আমার ছেলেকে।’ বলে তিনি মহিলাদের বাইরে নিয়ে গেলেন। গেলেন ভালো কথা, কিন্তু দরজাটা খোলা রেখেই গেলেন। আরেক মছিবত। এ অবস্থায় যদি আমি উঠে লুঙ্গি খোঁজার অভিযান চালাই তাহলে দরজা দিয়ে যে কেউ দেখে ফেলতে পারে। আমি সাথে সাথেই আম্মুকে ডাক দিলাম। আম্মু কাছে এলে বললাম, ‘আসলে আমার পরনে লুঙ্গিটা নাই আম্মু। খুলে কোথায় যে পড়ে গেছে কে জানে। তাই তখন উঠিনি আমি।’

আম্মু হাসলেন। আমি আবারো বললাম, ‘তুমি বাইরে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দাও। আমি লুঙ্গি খুঁজে পরতেছি।’
আম্মু তাই করলেন। বাইরে দরজার সামনে দারোয়ানের মত দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি লেপ কম্বল সরিয়ে লুঙ্গি খুঁজতে লাগলাম। দেখি খাটের নিচে এক কোণায় লুঙ্গিটা পড়ে আছে। মানুষ মহামূল্যবান কিছু দেখতে পেলে যেভাবে কুড়িয়ে নেয় আমিও ঠিক সেভাবে লুঙ্গিটা কুড়িয়ে নিলাম এবং সাথে সাথে পরলাম। উফ্… যাক বাবা বাঁচা গেল! স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললাম। তারপর মনে মনে বললাম, ‘এবার আয় কে কে পরিচয় হবি আমার সাথে।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত