“দোস্ত,মালডারে তো খাইয়া দিসি”- বলে যে ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হায়েনার মতো হাসে; সে তার বোনের বেলায় সবচেয়ে বেশী সেনসিটিভ! “খাইয়া তো দিলি মাম্মা,তো এখন কি মালডারে রাখবি নাকি ছাইড়া দিবি?”- বলে যে ছেলেটা পিঠ চাপড়ে দেয়, সে ছেলেটার পরিবারের মেয়েদের দিকে কেউ খারাপ দৃষ্টিতে তাকাতে পারে না! “খাইয়া কেনো ছাইড়া দিবি হ্লা? রেখে রেখে খাবি।”- বলা ছেলেটাও তার বোনের বোরকার বা পোশাকের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন! এবার আসি মূল কথায়। পৃথিবীর যত প্লে বয় টাইপ ছেলে আছে, তারা দু’জায়গায় সবচেয়ে দুর্বল! এক তার মা, দুই তার বোন।মানুন আর নাইবা মানুন,এটাই চিরন্তন সত্য! মানলাম আপনি একজন প্লে বয়, বেশ কয়েকটা মেয়ে নিয়ে আপনার ক্রিকেট,ফুটবল,হকি খেলা হয়ে গেছে। আপনার শর্টফিল্মের লিংক নেটের বাজারে বেশ রমরমা আর অস্হির সাড়াও ফেলেছে! কিন্ত ভাইয়া, একবার নিজের বোনের কথাটা ফিল করেছেন?
আসেন, আমি শুদ্ধ আপনার বোনকে নিয়ে পার্কে যাবো। আপনার মহো শর্টফিল্ম বানাবো না। কি? রাজি তোহ্? দেবেন? কি হলো মিস্টার প্লে বয়? চুপসে গেলেন? তাহলে অন্যের বোন নিয়ে কি করে লুলামি করেন? সে রাইটস কে দিলো আপনাকে?! যা করার করলেন গোপনে, ভিডিও করার কি দরকার ছিলো? তাও আবার নীল জগৎ এ ছেড়েও দিলেন? সাবাস পুরুষ! এই না হলেন বাঘের বাচ্চা নেড়ি কুত্তা!! কি রে ভাইয়া, এতো চুলকানি কিসের? একদিন আপনার কুপ্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো বলে? একদিন আপনার মনের রঙ্গ তামাশা মিশ্রিত খায়েশ মিটাতে দেয় নি বলে? বাহ্, চমৎকার শর্ট। বাউন্ডারি হাঁকালেন জবর!
আরে ভাইয়া,একটিবার চিন্তা করেছেন কি? আমাদের সমাজে মেয়েদের অবস্থান কোথায়? ওরা যতই সমান অধিকার বলে চেঁচায় না কেনো, কখনো সমাজ পূর্নাঙ্গ অধিকার তাদের দেবেনা। একটা জব করতে যাক, প্রমোশনের জন্য যাক, আপনি তখনি সুযোগে বাগে নিতে চাইবেন! আজ যে মেয়েটা হেসে হেসে ভার্সিটি মাতালো,কাল সে মেয়েটা পত্রিকার হেডলাইন! কারন আপনার ভালোবাসা প্রযোজিত, ইমোশন পরিচালিত,যৌবন শক্তি নিবেদিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা দর্শকরা বেশ লালা চেটে উপভোগ করলে মেয়েটা পারেনি।যে মেয়েটাকে দেখে সবাই শ্রদ্ধা করতো, তাকে দেখেই সবাই বাজে মন্তব্য করতে থাকলো।
“খেলা হবে নাকি আজ রাতে?”
“অহংকার সব অমুকের সাথে তমুক দিনন বেডে রেখে আসলা?”
“ভিড্যুটা জোস ছিলো”
“নতুনটার লিংক কবে পাবো সুন্দরী?”
আরো কতো কি ব্লা ব্লা ব্লা! আর তার উপর তো মাশাআল্লাহ্ আমাদের চটি টাইপ অনলাইন পত্রিকা আর রেডিও বদনা পেজ গুলো রেডি আছেই সেটাকে আরো মুখরোচক করতে। “অমুক ভার্সিটির তমুকের ভিড্যু দেখুন লাইভ” “ছিঃ ছিঃ মেয়েটি কি করলো বয়ফ্রেন্ডের সাথে, দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।” হয়তো বা এসব ছাড়া পত্রিকা বা ও টাইপ পেজগুলো মনে হয় চলে না।আল্লাহ্ মালুম! কিন্ত এর ফলাফল নিয়ে আমরা ভাবিনা।
একটাবার সে সিচুয়েশানে ননিজেকে বা নিজের বোনকে দাড় করিয়ে দেখুন! মৃত্যু ছাড়া আর পথ পাবেন নাহ্, হতভাগীদের ও সেটাই মেনে নিতেতে হয়েছিলো। আমার বোন পতিতা নাহ্, তাকে পতিতা বানানো হয়েছে। আমার বোনন বেশ্যা না, তাকে জোর করে এই তকমা চাপিয়ে দিয়েছে। আমার বোন নষ্টা না, তাকে সমাজ জোর করে ই প্ল্যাকার্ড হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। আসলে কি জানেন? একটা মেয়ে যখন ভালোবাসে তখন সর্বস্ব দিয়েই ভালোবাসে। আর এতোটাই অন্ধভাবে ভালোবাসে যে, আপনার মুখোশের আড়ালের আসল চেহারাটা সে টের পায় না। আর যখন ধরতে পারে, তখন আপনি পগার পার। বাকিটা পত্রিকার পাতায়!
গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া আনিকার মৃত্যুর দায়ভার কার? ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে মরে যাওয়া সুমির মৃত্যুর দায়ভার সমাজ এড়িয়ে যেতে পারবে? নাহ্,পারবে নাহ্। নীলা নামক মেয়েটার গলায় নীল গরল ঢেলে আকন্ঠ নীল পিয়াসী স্নিগ্ধ নীলাম্বরী হয়ে মৃত্যুর মতো নীল সরল সত্য কে মেনে নেয়ার পেছনে কে ছিলো? আর কেউ না। আমি,আপনি,সমাজ! সমাজ আবার কি করলো? – প্রশ্ন করতেই পারেন। এখানে ধর্ষিতার উপাধি বেশ্যা আর ধর্ষকের উপাধি হিরো কনডমের বিজ্ঞাপনের মতো “আসল পুরুষ”! এখানের টিজ করা ছেলেটা সমাজের চোখে স্মার্ট বয়, বোরকা পড়া মাদরাসার মেয়েটারই শুধু চরিত্র খারাপ।
এখানে রিসার মতো মেয়েটা জনসম্মুখ এ দর্জির ছুরিকাঘাতে মরে যায়। শুধু প্রেমে না রাজি হবার জন্য। এখানে তনুর মতো হাসিমুখ ঝরে যায় নিরাপত্তা বেষ্টিত অঞ্চলে। এখানে খাদিজা নিরাপদ ছিলো না ভার্সিটি ক্যাম্পাসে। হায় দেশ আমার হায় সমাজ। পুরুষ জাতি, আর কত ছোটো করবে নিজেদের? বিবেকবোধ জাগেনা আজও? চেতনাদন্ড না জাগিয়ে চেতনা জাগাগাও। বালিকাকে না লাগিয়ে বালিকার সম্মানন আদায়ে লাগো। লিংক লিংক না করে লিঙ্গ কেটে দাও ধর্ষকের। বেশ্যা না বলে বোন বলে মাথায় হাত রাখো মেয়েটির। মজার ঘটনা না বলে দূর্ঘটনা বলে স্বান্তনা দাও।
ট্রাস্ট মি,কোনো বোন গলায় দড়ি,মুখে বিষষ,ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেবে না। আর যদি তা না পারো তবে অন্তত ক্ষতি করোনা। উত্যাক্ত করোনা প্লীজ। উপরে একজন আছে, জবাবদিহিতা করতে হবে। নূন্যতম ছাড়ও দেবেন না তিনি। আপনি হয়তো কমেন্ট করবেন, দেয়ে পটানোর জন্য সাধু টাইপ পোস্ট। বুকে হাত রেখে বলতে পারি, আমার লিস্টের কোনো মেয়ে বলতে পারবেনা, শুদ্ধ কারো ইনবক্সে নক দিয়েছে। আমার বুয়েট ক্যাম্পাসের কোনো মেয়ে বলতে পারবেনা, শুদ্ধর চোখে ভুলেও চোখ পড়েছে।
আসুন নিজে বদলাই,অন্যকে বদলাতে বলি। আই প্রমিজ,আগামী প্রজন্ম সুন্দর সমাজ সুন্দর পৃথিবী পাবে। আর যদি তা না হয় তবে আসুন, আমরাই মরে যাই। এ লজ্জা কে নেবে? এর দায়ভার কার? হয়গো বা এ সমাজ দেখে একদিন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বুদ্ধ রথটাও বিড়বিড় করে বলবে, “এ আমার দেশ না”