প্রত্যাশা

প্রত্যাশা

নীলার আর আমার বিয়ে হয়েছে তিন মাস হলো। বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করি নীলাকে।নীলা ভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করেছে।আর আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছি। এর মধ্যে নীলার একটা সরকারি চাকুরী হয় প্রাইমারি স্কুলে। নীলা আমাকে জিজ্ঞেস করতেছে

~চাকরিটা কি করবো?
–সরকারি চাকুরী কতজনের কপালে জোটে বলো।অবশ্যই করবে তবে বাবা,মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে নিও কেমন।

–আচ্ছা ঠিক আছে। রাতে অফিস শেষে বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই মা এসে দড়জাটা খুললো।
–কি ব্যাপার মা নীলা কোথায়?
–ঘুমাচ্ছে
–এই অসময়ে ঘুম?
— হুম যেয়ে দেখ কি হয়েছে।
–রুমে ঢুকতেই দেখি সত্যিই নীলা ঘুমাচ্ছে। কপালে হাত রেখে দেখলাম জ্বর আসে নি তো। নাহ জ্বর নেই।আমি আস্তে আস্তে ডাক দিলাম। এই নীলা কি হয়েছে? অসময়ে শুয়ে আছো যে?

~ভালো লাগছে না হিমু।
–উঠো। আমাকে খুলে বলো কি হয়েছে?
~আরে তেমন কিছু না।
–বললেই হলো। বলো
~হিমু মা চাকরিটা তে সম্মতি দিলেও বাবা না করে দিয়েছেন।
–কি বলো,?
~হুম ঠিক বলেছি।মা বলেছেন দুজনে চাকরি করলে সংসারের আয় উন্নতি বাড়বে।

আর বাবা বলেছেন -হিমু তো ভালো একটা কোম্পানিতে চাকরি করছে।স্যালারি ও ভালো। তাহলে ঘরের বউ বাহিরে কেনো যাবে চাকরি করার জন্য? তাছাড়া বউ মা যদি বাহিরে থাকে সারাদিন যখন সন্তান হবে।সন্তান মানুষ করবে কিভাবে?

–তুমি চিন্তা করো না।আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলবো।
~আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এখন আমার মনটা খুব খারাপ। একটা কবিতা শুনাও। মন ভালো হয়ে যাবে।
–দূর বোকা মেয়ে, মন খারাপ করার কি আছে? তুমি আসো আমার সাথে।
~কোথায়?
–ছাদে
~এখন এই মূহুর্তে ছাদে কেনো?
–হুম এখন এই মুহুর্তে এসেই দেখো না।
~আচ্ছা ঠিক আছে চলো।
–নীলাকে নিয়ে ছাদে যাই। দেখো নীলা কতো বড় চাঁদ উঠেছে আজকে। খুব সুন্দর তাই না।
~হুম সত্যিই খুব সুন্দর। তুমি নিয়ে না আসলে চাঁদের সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারতাম না।
–হুম। আর আমিও আমার নীলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতাম না।

চাঁদের আলোয় কতটা সুন্দর লাগছে আমার নীলাকে। নীলা আগামীকাল আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলবো।আর আমার বিশ্বাস বাবা বুঝবেন। আর তুমি চাকরিটা করবে। তবুও মন খারাপ করে থেকো না।সারাদিন অফিসে খুব ব্যাস্ত থাকি। রাতে এসে যদি লক্ষী বউটার মনের আকাশে মেঘ ভেসে বেড়াতে দেখি তখন তো হিমুটার মনের আকাশটাই মেঘাচ্ছন্ন আকার ধারণ করবে।

~কি যে বলো হিমু।এতো সুন্দর একটা মূহুর্ত উপহার দিয়েছো।তবুও মন খারাপ থাকবে নীলার!

–এখন তাহলে একটু হাস্য উজ্জ্বল মুখখানা দেখতে চায় হিমু।
~আচ্ছা এখন চলো তো রুমে।অনেক রাত হয়েছে। একসাথে খাবো তারপর…
–তারপর কি?
~তারপর আবার কি ঘুমাবো।
–আমার তো ঘুম আসবেনা। আমি ডুবে যাবো নীলার শহরে,এই বলে এগিয়ে আসছি নীলার দিকে নীলা দৌড়ে রুমে চলে যায়।
–পরের দিন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর যখন একসাথে খেতে বসেছি তখন বাবাকে বললাম বাবা নীলা চাকরিটা করতে চায়?
-নাহ কোনো দরকার নেই।ঘরের বউ ঘরেই শোভা পায়। বাহিরে কেনো চাকরি করার জন্য যাবে?আর তাছাড়া তর ইনকাম ও তো আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।

–শুনো তাহলে বাবা।একজন ছেলে দিনরাত পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে একটা ভালো চাকরির জন্য।ঠিক তেমনি একটা মেয়েও অনেক পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে যেন নিজের পায়ে দাড়াতে পারে। একজন মেয়ে এক্সাম হলে কখনো চিন্তা করে না যে, প্রশ্নের উত্তর গুলো এতো কষ্ট করে দিয়ে কি লাভ। একদিন তো বিয়ে হয়ে যাবে।আমার স্বামী আমার সব দায়িত্ব নিবে। একজন মেয়ে বিয়ের পর যখন কোনো চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যায়, সে কিন্তু এক্সাম হলে বসে থাকে না।বরং সে সারাজীবনে যা অর্জন করেছে তা দিয়ে চেষ্টা করে ভালো করে এক্সামটা দেয়ার জন্য।এই জন্যে নীলার চাকরিটা হয়েছে। তবুও কেনো চাকরিটা করবে না?

-দেখ বাবা তুই যতটা সহজ ভাবছিস ততটা সহজ নয়। সমাজের লোকজন কি বলবে? ছেলে এতো টাকা ইনকাম করার পরও ছেলের বউকে চাকরি করতে বাহিরে যেতে দিচ্ছে। আর সমাজের লোকজন এটাও বলবে শ্বশুর শ্বাশুড়ি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আর ছেলের বউ বাহিরে চাকরি করে

–শোনো বাবা তাহলে, মেয়েরা যখন এক্সাম হলে এক্সাম দিতে যায়, তখন সব বাবা মা চাইবে তাদের মেয়েকে একজন মহিলা শিক্ষিকা সার্চ করুক।

-হুম তা ঠিক।
–আর তোমার ছেলের বউ যখন প্রেগন্যান্ট হবে, তখন তুমি অবশ্যই চাইবে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তারকে দেখাতে?

-হুম ঠিক তাই।
–তাহলে তোমার ছেলের বউ চাকরি করলে সমস্যা কি? আর সে তো ইসলামি শরীয়ত মেনে নিজেকে গুছিয়ে বাহিরে যাবে। বাহিরের অবুঝ মানুষগুলো যা ইচ্ছে তাই বলুক।

-দেখ হিমু আমি শিক্ষকতার পেশায় যুক্তিবিদ্যা ক্লাস নিয়েছি।কিন্তু আজ তর যুক্তিতে হেরে গেলাম। বউ মা অবশ্যই চাকরি করবে।
–হুম বাবা।তবে আমার বিশ্বাস নীলা ইসলামি শরীয়ত মেনে নিজেকে গুছিয়ে বাহিরে যাবে। তুমিও বিশ্বাস রেখো বাবা।
-অবশ্যই বিশ্বাস আছে বাবা। রুমে আসতেই নীলা বলছে?

~এই যে যুক্তিবাদী হিমু সাহেব পড়াশোনা করেছেন তো ইঞ্জিনিয়ারিং, কিন্তু এতো সুন্দর যুক্তিগুলো কোথা হতে শিখেছেন?
–বাপকা বেটা
~তাই না। আমার কিন্তু এখন চাঁদ দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। নিয়ে যাবে?
–হুম নিয়ে যাবো।তবে আজ ফাঁকা রাস্তাটায় দুজনে হাটবো। নীলাকে নিয়ে রাতের ফাঁকা রাস্তাটায় হাটছি। নীলাও আমার পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে।যেতে যেতে বলছে

~আচ্ছা হিমু তুমি আমাকে এতটা বোঝো কেনো?
–তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী তাই।
~জানো আমি আমার স্কুল, কলেজ জীবনে অনেক প্রপোজাল পেয়েছি। কিন্তু কখনোই কাউকে মনের মতো পারফেক্ট মনে হয় নি। চেয়েছিলাম বিয়ে হবে যার সাথে, সে যেনো আমার মনের মতো হয়। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমার প্রত্যাশার চেয়েও ভালো একজনকে আমার জীবনে দিয়েছেন।

–তুমি এই সমাজের দুষিত রিলেশনশিপ গুলো থেকে দূরে থেকেছো, তাইতো একজন শুদ্ধ পুরুষ পেয়েছো।
~তুমিও কিন্তু একজন বিশুদ্ধ নারী পেয়েছো।
–শুদ্ধতাকে ঘিরেই কিন্তু বিশুদ্ধতা।
~হিমু আমি কিন্তু চাকরিটা করবো না।
–কি বলো তোমার জন্য বাবাকে এতো কষ্ট করে বুঝালাম, আর তুমি চাকরিটা করবে না।
~আরে এখন না।তুমি বাবা হওয়ার পর। কারণ তখন সন্তান মানুষ করার জন্য হলেও চাকরিটা ছেড়ে দিতে হবে।

–আচ্ছা পরেরটা পরে দেখা যাবে।এখন চলো বাসার দিকে যাওয়া যাক।
~কেনো বাবা হওয়ার শখ জেগেছে বুঝি?
–হুম। খুব
~এখনি এতো শখ করে লাভ নেই হিমু সাহেব।আরও তিন বছর পর। মনে থাকবে তো?
–হুম মহারানী মনে থাকবে।
~হিমুটা সত্যিই প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভালোবাসে আমায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত