এক্স

এক্স

অনেক আবেগে আপ্লুত হয়ে আমার এক্স কে বলেছিলাম, তোমার ব্যবহার করা কোনো কিছু আমাকে গিফট দিও। যাতে তোমার গায়ের গন্ধ আমার সাথে সবসময় থাকবে। খবিশ ব্যাটা আমাকে তার পাঁচ মাস ধরে না ধোয়া পায়ের মোজা আমাকে গিফট করেছিলো। বক্স খোলার সাথে সাথে মোজার গন্ধে আমি তিন মিনিটের মত অজ্ঞান হয়ে ছিলাম। এরপর কেউ একজন এক বোতল মিনারেল ওয়াটার আমার উপর ঢেলে আমার জ্ঞান ফিরিয়েছিল। আর ওইদিকে খবিশ ব্যাটা বলছিলো তোমাকে গিফট করবো বলে মোজা টা পাঁচ মাস ধুইনি। এটা শুনার পর আমি আবার দুই মিনিটের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।’

মধুমিতার করা এই পোস্ট এ এক ঘণ্টায় ১ হাজার হাহা আর ৫০০ কমেন্ট। পোস্ট টা দেখা মাত্রই মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল। ওর সাথে কয়েকদিন আগেই আমার ব্রেকাপ হয়েছে। আর পোস্ট টা ও আমাকে উদ্দেশ্যে করেছে। আমি ই ওকে মোজা গিফট করেছিলাম। আর এমন ভাবে অজ্ঞান হওয়ার টাইম বলে দিচ্ছে মনে হচ্ছে অজ্ঞান হওয়ার সময় স্টপ ওয়াচ দিয়ে টাইম গণনা করে রেখেছিল। পোস্ট এর নিচে আমাকে নিয়ে করা কমেন্ট গুলি পড়ে মেজাজ সপ্তম থেকে অষ্টমে উঠে গেলো। রেগে গিয়ে ওকে টেক্সট করেই ফেললাম

-ওই মহিলা আমাকে নিয়ে এসব কি লিখছোস?
-যা সত্যি তাই লিখছি। আগে আগে দেখ তোর সব কুকীর্তি আমি ফাঁশ করমু। আর কয়েকদিন পর তোর নাম আর ছবিও আপলোড দিমু। আর মহিলা কারে কস?? আমাকে তোর মহিলা মনে হয়??

– এসব কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। তুই সবার সামনে আমাকে নিয়ে এভাবে মজা উড়াচ্ছিস??
-কেন এরপর কি অন্য মেয়েকে পটাতে কষ্ট হবে নাকি?
-ভাগ্য করে তোর মত একটা এক্স পাইছিলাম!! আমার বাকি এক্স গুলা অনেক ভালো। তুই একটা বিটলা মহিলা। তুমি

যার ওয়াইফ হইবি তার বারোটা বেজে যাইবো। এরপর অনেক গুলি এংগ্রি রিয়েক্ট দিয়ে আমার আইডি ব্লক দিয়ে দিলো। আমি অন্য একটা ফেইক আইডি থেকে ওর পোস্ট গুলি নিয়মিত ফলো করছি। মধুমিতার নেক্সট পোস্ট ছিলো ওই খবিশ ব্যাটা একদিন মেসেজ দিয়া বললো

-ওগো আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবা?
-হ্যা বলো কি রিকোয়েস্ট?
-তুমি কোনোদিন অন্য কাউকে বিয়ে কইরো না। আমি তো ভীষণ রোমান্টিক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-আমাকে এত ভালোবাসো!! ওই খবিশ টা তখন কইলো
-না গো। তুমি যারে বিয়ে করবা তার লাইফ টা পুরো ত্যাজপাতা বানিয়ে দিবা। আমার ওই বেচারার জন্যই কষ্ট হয়।

মধুমিতার জন্য আমি আমার আসল নাম ভুলে যাচ্ছি। এমনকি এক্সামের খাতাতেও নিজের নাম ভুল করে খবিশ লিখে ফেলেছিলাম। পোস্ট করে এমন ভাবে আমাকে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দিচ্ছে যে আমি কপাল চাপড়াচ্ছি, কোন দু:খে আমি ওর সাথে রিলেশনে গেছিলাম।

আমাকে নিয়ে করা পোস্ট গুলি রীতিমত ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। আমি অসহায়ের মত ওর পোস্ট গুলি দেখি আর কপাল চাপড়াই। কমেন্টে অনেকেই আমার চাঁদমুখ খানি দেখতে আগ্রহী। সবাই অপেক্ষা করছে আমাকে দেখার জন্য। আর সবার অপেক্ষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য ও একদিন ঘোষণা দিয়ে দিলো ‘আগামীকাল সন্ধ্যা ৭ টায় ওই খবিশটার ফটো আপলোড করা হবে। চোখ রাখুন ফেসবুকের পর্দায়।’

-অর্নব, তুমি?? ভিলেন মার্কা একটা হাসি দিলাম। বাসায় অনেক বার এই রাবণ মার্কা হাসির অনুশীলন করেছি। আমার হাসি শুনে মধুমিতা বলল
-এরকম জোকারের মত হাসছো কেন??

ফেসবুকে তো আমাকে অপমান করেই এখন আমার বন্ধু গুলার সামনে সরাসরি অপমান করছে। ওরা মুখ টিপে হাসছে। আমি ধমক দিয়ে বললাম,

-ওই মহিলা এত বেশি কথা বলোস ক্যান?
-এই আমাকে বারবার মহিলা বলবা না। আমার এখনো বিয়াই হয় নাই।
-আল্লাহ যে কার ভাগ্যে তোরে লিখা রাখছে কে জানে!
-তুমি আমাকে কিডন্যাপ কেন করেছো??

আমি ইশারা দিয়ে আমার বন্ধুদের বাইরে যাওয়ার জন্য বললাম। এরপর যা হবে সেগুলি ওদের দেখা উচিত হবে না। মধুমিতা ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে একটা চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে।

-কি হল তুমি ওদের বাইরে যেতে বললে কেন? কি করতে চাও তুমি আমার সাথে? তুমি খবরদার আমার সামনে আসবে না। আমি ধীর পায়ে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ও ছটফট করছে। আমি হুট করে ওর পায়ে পড়ে গিয়ে বললাম

-বইন, আমাকে মাফ কইরা দে বইন। তোর সাথে ব্রেকাপ করা টা আমার ভুল হইছে। তোর সাথে রিলেশন করা টা আমার আরো বড় ভুল হইছে। মানুষ মাত্রই তো ভুল করে। তোর পায়ে পড়ি, আজকে তুই যে আমার পোস্ট আর পিক আপলোড দেয়ার ঘোষণা করছিলি সেটা করিস না। আমার মান ইজ্জত ডুবাইস না। মুহূর্তের মধ্যে ওর ভয়ার্ত চোখ মুখ পাল্টে গেল। সেখানে নিষ্ঠুর হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

-ঠিক আছে। তবে একটা শর্ত আছে।
-কি শর্ত? আমি তোর সব শর্ত মানতে রাজি।
-তোর বন্ধু আসিফকে আমার খুব পছন্দ হইছে। ওর সাথে আমার লাইন করিয়ে দিতে হইবো। এইটা শুনার পর আমি চার মিনিটের মত অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত