ডেস্টিনি কান্ড

ডেস্টিনি কান্ড

___” আম্মা প্লীজ আমারে পাঁচটা হাজার টাকা দেন আপনার পায়ে পড়ি। আম্মা প্লীজ স্কুলে যাওয়ার পথে এমন আকুতি কাকুতি শুনে তাড়াতাড়ি উঁকি দিলাম খালাফ রুমে। ও আল্লাহ দেখি ভাইয়া খালার পায়ে ধরে না না ওটাকে ধরা বলা যাবে না বলতে হয় পা ধরে ঝুলে আছে। খালা বিশাল বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বললেন,

___ ” টাকা তো গাছে ধরে তুই বলবি আর আমি ছিঁড়ে ছিঁড়ে তোর হাতে দেব তাই না? সব কথা বাদ তুই পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে করবি কি আগে সেটা বল। ভাইয়া এবার নড়েচড়ে বসল কিন্তু খালার পা ছাড়ার নাম নিশানা নেই। টের পেলাম পিছন থেকে মিলিও এসে উঁকি দিয়েছে। ভাইয়া গল পরিষ্কার করে নিয়ে বলল,

___ ” আম্মা আমি ব্যবসা করব আপনি এখন আমারে পাঁচ হাজার টাকা দেন আমি লিখিত দেব দশ বছর পর এই পাঁচ হাজার টাকার বদলে আমি আপনারে বিশ হাজার টাকা দেব। ” খালা কিছু বলতে যাবে এমন সময় হঠাৎই আমাদের দিকে চোখ পড়ল উনার। বিশাল এক হাঁক দিয়ে বলল,

___ ” এইখানে কি করস তোরা? এখানে কি যাত্রা পালা চলতেছে নাকি? যা যা স্কুলে যা তোরা! ”
খালার ঝাড়ি শুনে এত মজাদার এক এপিসোড বাদ দিয়ে স্কুলে রওনা দিলাম। মনে মনে খচখচ করতেই লাগল খালা কি টাকা দিলো নাকি দিলো না। মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

___ ” বাবু আপু চিন্তা কইরো না আম্মু টাকা দিত না এই জীবনে “।
___ ” বলা যায় না রে মিলি ফিফটি ফিফটি চান্স দিতেও পারে।”

মুখ গম্ভীর করে বললাম আমি। এর পরের দিন সকালে দেখি কে জানি সাদা শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামনে যেয়ে দেখি ও আল্লাহ এতো ভাইয়া। তাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। সাদা ধবধবে ফর্সা শার্ট কালো প্যান্ট আর কালো টাইয়ে যেন ভাইয়ার চেহারাই পাল্টে গেছে। অবাক হয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,

___ ” ভাইয়া যাও কই?”
___ ” মিটিং আছে কোম্পানির ভাইয়া তাচ্ছিল্য স্বরে উওর দিল। আমি আরো অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,

___ ” তোমারে চাকরি দিলটা কে? সরি সরি চাকরি পেলে কবে?”
___ ” ওই তোর ফালতু বকবক বন্ধ করবি না তোরে যাওয়ার আগে একটু থেরাপি দিয়ে যাব? খালি পারে আজাইরা ফ্যাচফ্যাচ করতে।” ভাইয়া আমারে বকতে বকতেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। এর পর থেকে শুরু হল ভাইয়ার চাকরি জীবন। কয়েকদিন পর পরই বিশাল সেজেগুজে মিটিং এ যায়। আমি বা আপু যদি চাকরির ব্যাপারে প্রশ্ন করি সোজা বলে দেয়,

___ ” তোরা ছোট এসব বুঝবি না বড়দের ব্যাপার স্যাপার।” এর মাঝে একদিন রোজার মধ্যে শুনতেছি ভাইয়া খালুরে পড়াইতেছে,

___ ” আব্বা এই প্রজেক্টে যদি আপনি মাত্র পনেরো হাজার টাকা ইনভেস্ট করেন তো মাত্র দশ বছর পরে আপনি পঞ্চাশ হাজার টাকা পাবেন।”

___ ” তোরা কি চোরাকারবারি করিস নাকি যে এই টাকায় পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবি?” খালু চোখ মুখে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ফুটিয়ে প্রশ্ন করলেন। ভাইয়া বিনিময়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,

___ ” আব্বা আমাদের ট্রি প্রজেক্ট মানে গাছ লাগানো প্রজেক্ট আছে ওখানে আপনার টাকা বিনিয়োগ করব। দশ বছর পরে সেই গাছ বড় হলে কেটে বিক্রি করবে। পঞ্চাশ হাজার টাকা আপনাকে দেওয়ার পরে যা থাকবে সেটা আমাদের কোম্পানির। আর এমন কত হাজার লোক বিনিয়োগ করেছে সেটা তো বলার বাহিরে খালুর মুখ দেখে বোঝা গেল সে ব্যাপারটায় আগ্রহী। ঈদের একসপ্তাহ আগে খালা আমাদের নিয়ে শপিংয়ে যাবে। সবাইকে বলল সময় মত রেডি হয়ে থাকতে। বড় আপু আমি আর মিলি তো খুশিতে আট আট ষোলখানা হয়ে যাচ্ছি। কে কি কিনবো কোন কালার ইত্যাদি ইত্যাদি আলোচনা হচ্ছে তুন্দুমার। ঠিক এমন সময় ভাইয়া এসে হাজির। এসেই আমাদের তিন বোনকে বলল,

___ ” নুমা, বাবু মিলি তিনটা সোজা হয়ে বস। তোদের সাথে জরুরি কথা আছে।” আমরাও বিনা বাক্য ব্যয়ে সোজা হয়ে বসল। ভাইয়া ঘাড় নুইয়ে ষড়যন্ত্র করার ভঙ্গিতে বলল,
___ ” এবারের ঈদের শপিংয়ের প্লান কি তোদের।”

মিলি তখন গলগলিয়ে ঈদে কি কিনবো না কিনবো কোথায় শপিংয়ে যাব সব বলতে লাগল। সব শুনে ভাইয়া নাক সিঁটিয়ে বলল,

___ ” আজন্ম গরু থেকে যাওয়ার প্লান কবে চেঞ্জ করবি?” ভাইয়ার কথা শুনে বড় আপু অবাক হয়ে বলল,
___ ” এসব কি বলতেছ ভাইয়া ঈদের শপিং এর সাথে গরুর কি সম্পর্ক?”
___ ” ঈদের মার্কেটিং এর পিছনে এত এত টাকা না খুঁইয়ে ইনভেস্ট তো করতে পারিস। আজ থেকে পাঁচ বছর পরে এই টাকাই বিশাল এক এমাউন্টে পরিনত হবে। ”

তখন ভাইয়া বসে বসে আমাদের তিনবোনের ব্রেন সার্ফেক্সেল দিয়ে ওয়াশ করল। অতপর খালার কাছ থেকে নিজেদের শপিং বাবদ বরাদ্দকৃত তিনহাজার টাকা ভাইয়ার হাতে তুলে দিলাম। সেবারের ঈদ যারে বলে গেল মরার মত। সবাই নতুন জামাকাপড় পরে ঘুরতেছে আর আমরা তিনবোন মুখ ঝুলিয়ে বারান্দায় বসে বসে সবাইকে দেখি। ঈদের বেশ কয়েকদিন পরে কোন এক শুক্রবার সন্ধ্যায় খালুর কোন এক অফিসের কলিগ এসে খালুকে কি কি যেন বলে গেল। খালুকে মিলি বাদে আমরা বাকি তিন ভাইবোনই জমের মত ভয় পাই। ওই ভদ্রলোক চলে যাওয়ার পরে খালু টিভি ছেড়ে বেশ খানিকক্ষন টিভিতে কি কি যেন সংবাদ দেখলেন। তারপর খালাকে কি কি বলতেই খালাও গম্ভীর হয়ে গেল৷ রুমের থেকে অনেক চেষ্টা করার পরেও খালা খালুর কথাগুলো শুনতে পারলাম না। শেষমেষ ভাইয়া যখন বাসায় ঢুকলো খালু কোন কথা না বলেই ভাইয়ার ঘাড় ধরে উড়াধুড়া কিল শুরু করলেন। আমাদের ভাইয়া মিনিমাম ছয়ফুটের কাছাকাছি লম্বায় আর খালু মাত্র পাঁচ ফুট পাঁচ৷ উনি লাফিয়ে লাফিয়ে ভাইয়াকে মারতেছেন আর বলতেছেন,

___ ” হারামীর বাচ্চা আমার পনের হাজার টাকা তুই জলে ফালাইছত। তোর ডেস্টিনি কোম্পানি টাকা নিয়ে চম্পট। আজকে তোরে মাইরাই ফালামু”। খালুর এই কথা শুনেই আমার কলিজার মধ্যে সজোরে এক মোচড় দিল। মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরেই বসে পড়লাম। তখন শুনলাম খালা খালুরে বলতেছে,

___ ” জয়ের আব্বা আপনার পনেরো হাজারের মাইর হলে ওরে আমার কাছে দিয়েন আমি আমার পাঁচ হাজারের কিল কিলামু “। বড় আপু আর মিলিও কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। অবস্থা বেগতিক দেখে ভাইয়া কোন মতে জুতা জোড়া হাতে নিয়ে সেই যে বাড়ি ছাড়া হয়েছিল পনেরো দিনের আগে আর ফেরেনি বাসায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত