গত বছরের ঘটনা। ১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবসে বাসা থেকে বের হইনি। ভালবাসা দিবস পালন করার মতো কেউ নাই।থাকলেও বের হতাম কিনা সন্দেহ। তো পরের দিন সকাল বেলা পাড়ার এক ছোট ভাই বাসায় এসে হাজির।মুখটা মলিন,কাঁদো কাঁদো ভাব।এমন তো হওয়ার কথা নয়, বেশ হাসিখুসি ছেলে, হঠাৎ কি হলো! সে বসতে বসতে বললো, বড় ভাই,পড়ে গেছি! শোয়া অবস্থায় ছিলাম, উঠতে উঠতে বললাম, সেকি!কিভাবে পড়লে?ব্যথা পাওনি তো? ছেলেটা উদাস গলায় বললো, আহ বড় ভাই!সে পড়া নয়,প্রেমে পড়ে গেছি!! আমি ধপাস করে আবার শুয়ে পড়লাম। শুধু আপনি রাজি হন,তাহলে সব ঠিক। কিসে রাজি হবো।
প্রেমে। লে হালুয়া! তুমি আমার সাথে প্রেম করবে নাকি?কি সব আজেবাজে কথা বলছো? ডাইল মাইল খাইছোনি মিয়া! মাথা ঠিক আছে তো? আমি ঠিকই বলছি বড়ভাই! আপনি রাজি থাকলে সব ঠিক।ছেলেটা এমন বোকা বোকা কথা বলছে,রাগ হচ্ছে।শুনেছি ছেলেরা প্রেমে পড়লে বোকা হয়,এতো প্রেম করার আগেই গাধা হয়ে গেছে! এই গাধা আবার কার প্রেমে পড়লো?
মায়া লাগল।এক গ্লাস পানি দিলাম, ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো। শান্ত হওয়ার পর বললাম, তুমি আবার কার প্রেমে পড়লে?মেয়েটার নাম কি? সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, জানি না বড় ভাই! মানে! আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। নাম জান না? না। বাসা কোথায়? তাও জানি না। আমি ছেলেটাকে প্রচন্ড ধমক দিতে চাচ্ছি,পারছি না।কেমন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।আমার কেমন মায়া লাগল। আমি স্নেহের সুরে বললাম,এবার ব্যাপারটা খুলে বল।উত্তেজিত হওয়ার কিছু নাই।
সে বলতে শুরু করল।সে যা বললো তার সারমর্ম দাড়ায়,পাঁচ ছয় দিন আগে সে বন্ধুদের নিয়ে বই মেলায় গিয়েছিল।একটা স্টলে মেয়েটাকে দেখেছে বই বিক্রি করতে।অসম্ভব ভাল লেগেছে তার।তার পর থেকে প্রতিদিন সে ঐ স্টলে যায়।এই কয়দিনে অনেক বই কিনেছে ঐ স্টল থেকে, শুধু মেয়েটাকে দেখার জন্য।ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে, নাম জিজ্ঞেস করতে সাহস পায়নি। তা আমাকে কি করতে হবে? জানি না গুরু,শুধু জানি তুমি চেষ্টা করলে সব সম্ভব। আমি পারবো নারে ব্যাটা।যা ভাগ এখান থেকে। সে কেঁদে ফেললো,ও কথা বল না গুরু।তোমার দ্বারাই সব সম্ভব। আমি জানি, এই কাজ তোমার বাম হাতের খেল! সে আমার পা জড়িয়ে ধরল।শুনেছি ছেলেরা প্রেমে পড়লে বোকা হয়, এতো দেখি আবাল হয়ে গেছে!
সন্ধার পর বাসা থেকে বের হলাম ওকে নিয়ে।বই মেলায় গিয়ে সেই স্টল খুঁজে বের করলাম।মেয়েটা দেখলাম, সাধারন মানের একটি মেয়ে।অথচ ওর কাছে বিশ্ব সু্ন্দরী!।হায় রে প্রেম!! দু,একটা বই কেনার ফাঁকে ফাঁকে মেয়েটার সাথে কথা বললাম,নাম রিমা।বাসা কাছেই বাটা চত্ত্বর এলাকার দিকে।মেয়েটাকে স্মার্ট মনে হল।তাই ভনিতা না করে ঘটনা খুলে বললাম,সব শুনল।ওর দিকে তাকিয়ে হাসল।তারপর বলল, অপেক্ষা করেন। ছোট ভাইয়ের দিকে তাকালাম,ওর চোখ বলছে আমি বিশ্বজয় করে ফেলেছি।আনন্দে ঘামছে। স্টল বন্ধ হওয়ার পর মেয়েটি বললো,চলুন,আমার বাসা কাছেই, এক কাপ চা খেয়ে যাবেন।
আমি বেশ অবাক হলাম। এই মূহুর্তে সে বাসায় যেতে বলবে আশা করিনি। আনন্দে ছোট ভাইয়ের চোখ চিক চিক করছে।মানুষ মেঘ না চাইতেই জল পায়, এ তো দেখি সমুদ্র পেয়ে যাচ্ছে! হাটতে হাটতেই মেয়েটার বাসায় পৌছে গেলাম।গেট খুলে বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।একটা ড্রয়িং রুমে বসলাম। রিমা বললো,আপনারা বসুন,চা’য়ের ব্যাবস্হা করছি। সে ভিতরে চলে গেল। ছোট ভাই গদগদে কন্ঠে বললো,আমি বলেছি না গুরু, তুমি থাকলে সব হয়!আহ গুরু, তুমি কি চিজ! ঘটনা ঘটিয়ে দিলে!! ওর আনন্দ দেখে আমারও ভাল লাগছে।
আমরা বসে রিমার জন্য অপেক্ষা করছি। ছোট ছোট দু’টো বাচ্চা রুমে প্রবেশ করল,বেশ সুন্দর দেখতে।বেশ মিষ্টি।ছোট ভাই আদর করে একজনকে কোলে তুলে নিল। বাবু, তোমার নাম কি? নদী। তোমার আব্বুর নাম কি? হুমায়ুন।ঐ তো আমার আব্বু। বলেই দেয়ালে টাঙানো একটা ছবি দেখালো। আমরা এতোক্ষন ছবি খেয়াল করিনি।ছবিতে রিমার পাশে এক ভদ্রলোক।আমি ঘামতে শুরু করলাম।
আমতা আমতা করে কোন রকমে বলতে পারলাম, পাশের মহিলাটি কে,বাবু ? কেন, আমার আম্মু! ঘরে ভূমিকম্প হলেও এতোটা অবাক হতাম না! কি বলছে এই বাচ্চা? ওদের মা? ছোট ভাইয়ের দিকে তাকালাম, সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ইশারা করলাম,যার অর্থ দাড়ায়,ব্যাটা দৌড় দে! চা খাওয়ার দরকার নাই।বেঁচে থাকলে আরেকদিন খাওয়া যাবে, আগে তো ইজ্জত রক্ষা করি!