কলাতন্ত্র

কলাতন্ত্র

আমার ছোটোবোন আমাকে এসে বলছে,আপু তোমার কাছে কলা আছে?কলার প্যাকেট কি আমার ভয়ে আলমারিতে লুকিয়ে রেখেছো? আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কলা কি কেউ আলমারিতে রাখে!মাথা কি গেছে তোর? কিন্তু না ওর একই কথা আমি ওর জন্য কলা লুকিয়ে রেখেছি। আমি শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে আম্মু আম্মু বলে চিৎকার করে উঠতেই ও ভয় পেয়ে চলে গেলো। মনে মনে রাগ হয়ে নিজেকে নিজেই বললাম ওই ছেড়ি জীবনে আমারে কলা খাইতে দেখছস তুই!কলার গন্ধই আমি সহ্য করতে পারিনা।সেই কলা নাকি আমি আবার আমার আলমারিতে রাখবো!

রাতে যখন আব্বু বাসায় আসার সময় হলো তার আগেই আমার ছোটোবোনকে দরজার কাছে পায়চারি করতে দেখলাম,আরেহ যে মেয়ে কিনা দরজা খোলার ভয়ে কলিং শুনলেই বিছানায় গিয়ে কম্বলের নিচে লুকিয়ে পড়ে সে নাকি আজ আব্বু বাসায় আসার জন্য অপেক্ষা করছে এমনকি কলিং খোলার জন্য ও তৈরী! আম্মুকে বললাম তোমার মেয়ে তো খুব ভদ্র হয়ে গেছে। অতি ভক্তি কিন্তু চোরের লক্ষণ! আম্মু ক্ষেপে গিয়ে বললো, মায়া তুই নিজের ছোটোবোনকে দেখে একটু শেখ কি সুন্দর করে দরজা খুলবে জন্য দাঁড়িয়ে আছে,আর ওকে এত্ত হিংসা করিস কেনো তুই?একটু স্নেহ করতে পারিস না?

যাহ বাব্বা কি এমন বললাম যে এতো কথা শুনালো!বাসায় মেজ মেয়েদের সবদিকেই সমস্যা অথচ বাবা বাসায় আসলে আমিই বেশিরভাগ সময় দরজা খুলে দেই।যাইহোক আমি আমার ঘরে যাবো এমন সময় বাবা আসলো।
বাবা আসতে না আসতেই দরজা খুলে লক্ষীমন্ত হয়ে আমার বোন বাবাকে বললো বাবা শুনোনা,আমার কলা লাগবে,কলা শেষ হয়ে গেছে। তুমিতো জানোই আমার কলা ছাড়া চলেই না।স্কুলে আমার সব বান্ধবীরা কলা নিয়ে আসে খালি আমি নিয়ে যাইনা বলে ওরা আমাকে নিয়ে খ্যাত বলে হাসাহাসি করে। আরেহ আজব তো!এটা কি যুগ আসলো রে ভাই!স্কুলে কলা না নিয়ে গেলে হাসাহাসি করবে। এগুলো ভাবতেই বাবা ওকে বললো ঠিকাছে মামুনি আগামীকাল তোমার আপুকে সাথে নিয়ে গিয়ে কলা কিনে নিয়ে এসো,আমি তোমার আম্মুকে অফিস যাওয়ার সময় টাকা দিয়ে যাব। আমি বিরক্ত হয়ে বাবাকে বললাম কি বললা তুমি!আমি যাব কলা কিনতে।পারবোনা আমি।

ছোটোবোন এসে পারেনা পাঁয়ে পড়ে যায়!বলে আপু চলোনা প্লিজ আপু। আমার মেজাজ খারাপ কমলো কারণ আমার যেতেই হবে বাবা যেহেতু একবার বলে দিয়েছে।কিন্তু মনে মনে একটা বুদ্ধি বের করে নিলাম যে,যাব ঠিকই কিন্তু ওকে সঙ্গে করে আগে শপিংমল এ যাব যাতে করে কলা কেনার কথা ভুলে যায় মেকাপবক্স দেখে আর আমিও বেঁচে যাই। যথারীতি পরের দিন আমরা শপিংমল এত উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম।আমার কিছু বলতে হলোনা, ও নিজে থেকেই বললো আপু মেকাপ কিনে দাও আর সঙ্গে একটা কলার প্যাকেট ও কিনে দিও কিন্তু।

আমার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো ইচ্ছে করলো ঠাটিয়ে এক চড় দেই কিন্তু পাবলিক প্লেসে এগুলো করা ঠিক হবেনা ভেবেই চট করে বলে ফেললাম বনু রে, আমি না টাকা ভুলে বাসায় রেখে এসেছি। তুই সন্ধ্যায় বাবার সঙ্গে এসে কলা কিনে নিস। মন খারাপ করে বললো আচ্ছা ঠিকাছে কিন্তু কলা ছাড়া আমি আর স্কুলেই যাবোনা। এ কেমন কথা!তাও চুপচাপ বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ও ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকেই সেখান থেকে বুয়াকে চিল্লায়ে বলতেছে,বুয়া আমার কলা সব তুই নষ্ট করছোস তাইনা?আমাকে এক্ষুনি কলা দিয়ে যা বলতেছি।

আমাদের বুয়া আবার সেরকম! একটা কথা থেকে কেমন করে পেঁচিয়ে বড় করতে হয় সেটার থেকে ঝড় তুফান তুলতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানে। আম্মু সবেমাত্র ঘুমিয়েছিলো, বুয়া আম্মুর কানের কাছে যেয়ে চিৎকার দিয়ে বলতেছে ও খালাম্মা..আমার ছুডু আপার মাথায় গন্ডগোল হইয়া গেছেরে খালাম্মা। আপারে লইয়্যা এহন কই যাবেন আম্মা! আমার মা ও এগুলো শুনে টাস্কিতো।এইতো ভালো মেয়েটা শপিং করতে গেল! আম্মু আমার ছোটোবোনকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মারে তোর কি হইছে মা! ছোটোবোন ও ফুল ভলিউম এ চিল্লায়ে বলতেছে আমারে কলা দাও এক্ষুনি আম্মু।বুয়ার সাহস কিভাবে হয় আমার কলায় হাত দেওয়ার!

মা বলে,তুই বাথরুমের ভেতর কলা খাবি কেন?তোর মাথা কি খারাপ হয়ে গেলো নাকি রে জামি! বোন আরও এক লেভেল ভলিউম বেড়ে দিয়ে বলল আমার মাথা খারাপ হয়নি। চিল্লাচিল্লি শুনে আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,তুই কি মাইর খাবি নাকি বাইর হবি? ও বের হলো তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম বাথরুমে কেউ কলা নিয়ে যায়? ও বললো কেনো আপু তুমি জানোনা! কলা ছাড়া ফ্রেশ হওয়ার পর আমি মুখ মুছবো কি দিয়ে! আমি এবার হাসতে হাসতে ওইখানেই গড়াগড়ি করতে লাগলাম বুয়া ভ্রু কুচকে বলতেছে মেইজোফার মাথাও খারাপ হইয়া গেছে নাকি খালাম্মা? আমার এভাবে হাসি দেখে জিজ্ঞেস করলো হাসিস ক্যান? আমি বললাম কলা মানে কি জানো বায়োলজির ভাষায়?কলা মানে টিস্যু।

বোন বললো আরেহ সেটাই তো তোমারা কি জানোনা নাকি!টিস্যুর অপর নামই তো কলা!স্যার গতকালই ক্লাসে বলেছিল, আর আমিতো স্যায়েন্টিস হতে চাই এজন্য ভেবেছিলাম বিজ্ঞান এর ভাষায় কথা বলবো এখন থেকে।
আম্মু বললো তারমানে এত্তদিন এই কলার জন্যই চিল্লাইছোস!বলতে বলতে আম্মুও আমার সাথে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। বুয়া আর আমার বোন কিছু না বুঝে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বোনও শুরু করে দিলো।বুয়া কি আর একা দাঁড়িয়ে থাকবে সেও গড়াগড়ি খেতে লাগলো।আমাদের এখন গড়াগড়ির সময়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত