সারাদিন ঢাকার রাস্তায় ঘুরোঘুরি করে ধুলাবালি আর গাড়িঘোড়ার শব্দে মাথা ঝিমঝিম করছিলো। বাসায় যাওয়ার পথে ফার্মেসি থেকে এক পাতা প্যারাসিটামল কিনে নিলাম। কলিংবেল চাপতে ছোটভাই দরজা খুললো৷ প্যারাসিটামলের পাতাটা টেবিলে রেখে গোসল করতে গেলাম। অনেকক্ষণ ধরে ঝর্ণা ছেড়ে গা ভিজিয়ে সাবান মাখতে মাখতে দেখি পানি চলে গেছে। ছোটকে বললাম নিচে গিয়ে দারোয়ান চাচাকে মটর অন করার কথা বলতে।
কিছুক্ষণ পর পানি এলো। গোসল করে যখন বের হলাম টেবিলে তাকিয়ে দেখি প্যারাসিটামলের পাতাটায় একটাও ট্যাবলেট নাই, খালি পাতাটা উপুর হয়ে পড়ে আছে টেবিলের ওপর। কাপড় পাল্টে ট্যাবলেটহীন প্যারাসিটামলের পাতাটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বুঝতে চেষ্টা করছিলাম যে, ট্যাবলেটগুলো কোথায় গেলো। আমার ভাইটা রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি ভাবছো এতো?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘এইযে ওষুধটা আনলাম, এটাতো ভারাই ছিল। খালি হলো কী করে?’
ছোট উত্তর দিল, ‘তুমি যখন গোসল করতে ঢুকলে আমি ওষুধের পাতাটা নিয়েছিলাম একটা ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য। জানোইতো কালকে পরিক্ষা। মাথাসহ গোটা শরীর কেমন ঝিমঝিম করছিলো তাই জাস্ট একটা ট্যাবলেট খেতে চেয়েছিলাম। আমি একটা ট্যাবলেটই খেয়েছি কিন্তু সেটা দেখে মা এসে বললো কিরে কি ওষুধ এটা? আমি মাকে বললাম প্যারাসিটামল। মা বললো, ‘দে আমাকেও একটা দে৷ কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।’ মা একটা ট্যাবলেট নিলো।’ আমি ওকে থামিয়ে বললাম, তারপরেওতো আটটা ট্যাবলেট থাকার কথা?
ছোট আবার বলা শুরু করলো, ‘আরে ঘটনাতো সেখানেই শেষ না। রানু খালা রান্নাঘর থেকে কাশি দিতে দিতে বেরিয়ে এসে বললো ‘ছোট্টু কি ওষুধ এটা? আসি বললাম প্যারাসিটামল। খালা বললো দাওতো একটা ট্যাবলেট, সন্ধ্যা থেকে হাঁচি-কাশি দিতে দিতে অবস্থা খারাপ। একটা ট্যাবলেট খেয়ে যদি একটু ভালো লাগে।’ রানু খালাকে একটা ট্যাবলেট দিলাম।’ আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম, আরে তারপরেওতো সাতটা ট্যাবলেট থাকবে নাকি?ছোট বললো, ‘আরে শোনো এরপর বাবা আসলো। তার নাকি হাটু ব্যাথা করছে, পা কামড়াচ্ছে। প্যারাসিটামল খেলে নাকি সারবে। আমি তাকে একটা ট্যাবলেট দিলাম৷ বাবা বললো একটা ট্যাবলেটে তার কাজ হবে না, দুইটা লাগবে। কি আর করা বাবা দুটো ট্যাবলেট নিয়ে চলে গেলো।’
আমি খানিক চুপসে গিয়ে বললাম ‘তারপর?’ ছোট তার মুখটা তিনশ ষাট ডিগ্রি ঘুরিয়ে এনে বললো, ‘তোমার ছোট বোন, তার নাকি জ্বর জ্বর ভাব। মুখে রুচি নাই৷ সেও একটা প্যারাসিটামল খেয়ে সুস্থ্য হতে চায়। আমি প্রথম দিতে চাইনি। পরে জোর করে একটা ট্যাবলেট নিলো।’ আমি এবার খুব বিরক্ত, ‘তারপরওতো চারটা ট্যাবলেট থাকবে নাকি?’ ছোট বললো, ‘হ্যাঁ তখন পর্যন্ত চারটা ট্যাবলেট ছিলো। কিন্তু রানু খালা রান্না করে চলে যাওয়ার সময় বললো তার জামাইয়ের নাকি ঠান্ডা লাগছে, তার জন্য একটা ট্যাবলেট নিয়ে যেতে চায়। আমিও তাকে একটা ট্যাবলেট দিয়ে দিলাম৷’ ‘তারপর?’
‘তারপর তিনটা ট্যাবলেট আমি তোমার টেবিলে রেখে গিয়েছি। ঠিক তখনই ডোরবেল বাজলো। পাশের বাসার রাহেলা আন্টি এসেছে। এসে বললো তার মেয়েটার গায়ে নাকি জ্বর উঠেছে। আমাদের বাসায় প্যারাসিটামল আছে কিনা! আমি বললাম আছে। রাহেলা আন্টি বললো, তাহলে বাবা দুটো ট্যাবলেট দাও। আমার গত রাতে ঘুম হয়নি, মাথাটা ঘুব ধরে আছে। একটা আমি খাবো একটা শান্তার জন্য (শান্তা আন্টির মেয়ের নাম) শান্তার জন্য আন্টি ট্যাবলেট নিয়েছে শুনে ভালোই লাগলো। কিন্তু আরওতো একটা ট্যাবলেট থাকার কথা?
ছোট বললো, ‘নিচে গিয়েছিলাম দারোয়ান চাচাকে মটর ছাড়ার কথা বলতে। গিয়ে দেখি ব্যাটা বসে বসে ঝিমাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম চাচা কি সমস্যা, অসু্স্থ নাকি? চাচা বললো, ‘হ বাজান শরীরটা ম্যাজোম্যাজো করতেয়াছে। এক্ক্যুা প্যারাসিটামল খাইতে পারলে মনে অয় ভালো লাগদে।’ আমি বললাম ‘আচ্ছা আপনাকে প্যারাসিটামল দিচ্ছি আপনি মটর অন করেন।’ চাচাকে সবশেষ ট্যাবলেটটা দিয়ে এসেছি। আর কিছু জানতে চাও? আমি উদাস চোখে শূণ্য প্যারাসিটামলের পাতাটা হাতে নিয়ে বললাম, ‘না, যা জানার আমি জেনে গেছি যা বোঝার গেছি বুঝে প্যারাসিটামল তার নয় যে কিনে এনেছে তাহারে।’








