বদ্ধ দরজা

বদ্ধ দরজা

“এবার তো সব ঠিক আছে। এখন আর কি শর্ত দিবেন বলেন। হাত ঘড়িটা পড়েই আমি রুম থেকে বের হয়ে গেট অব্দি এসে যখন পকেটে হাত দিলাম দেখলাম মোবাইল নেই। দাড়োয়ান চাচা আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে গলার মাফলারটা ঠিক করে নিল। একবার ভাবলাম দাড়োয়ান চাচাকে বলি “চাচা মোবাইলটা বাসায় ফেলে আসছি, একটু এনে দিবেন? বাসায় গিয়ে আম্মাকে বললে হবে।” কিন্তু বলি নি দাড়োঁয়ান চাচাকে কথাটা। আমি নিজেই পিছনে ফিরে আবার বাসার দিকে গেলাম। কলিংবেল বাজাতেই আম্মা দরজা খুলেই আমার দিকে কেমন করে যেন একটু দেখে বললো জানতাম আবার আসবি। তুই কিরে বলতো? নিশ্চিত আজকেও ফেলে গেছিস।

আমি একটা হাসি দিয়ে মাথার চুল চুলকিয়ে ভিতরে ঢুকেই বললাম.. কি করবো বলো। জানোই তো আমি এমোনি। যাওয়ার সময় কিছু না কিছু ফেলে যাই। এইটা বলেই সোজা রুমে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে যেই সিড়ি দিয়ে তিন তলা থেকে দোতলায় নামলাম দেখলাম ফারহা দেয়ালে পিট লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে দিয়ে নামতেই ও আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। কালো আকাশি কালারের একটা চাদর গায়ে প্যাচানো। আমি একটু চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। হাতে একটা রুমাল। কিছুক্ষন পর পর ওটা দিয়ে নাকের পানি মুছছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। যেই আমি কিছু বলত যাবো “কিছু বলবে? কিন্তু তার আগেই আমাকে ঐ কথাটাই বললো এবার তো সব ঠিক আছে এখন আর কি শর্ত দিব। আমি চুপ করে গায়ের জ্যাকেট টা ঠিক করে বললাম..

“এই কয়েকদিন ধরে একটু বেশিই ঠান্ডা পরছে তাই না? ফারহা কিছু না বলে রুমাল দিয়ে নাকের পানি মুছে আমার দিকে একটু ইতস্ত করে আবার বললো..
“নতুন শর্ত দিবেন না?

ওর অবস্হা দেখে বেশ ভালো করেই বুঝলাম সর্দি লেগেছে। সত্যি আমার কেমন জানি লাগলো ওর কথার ধরন টা দেখে। আমি বললাম..

“তোমার সর্দি কবে থেকে? ও আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে রুমাল দিয়ে আবার নাকটা মুছে বললো..
“আমার সর্দি কবে থেকে সেটা আপনার দরকার নেই। আপনাকে কি বলেছি আপনি শুনতে পান নি?

আমি মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিলাম। এই রকম একটা কিছু হয়ে যাবে আর ফারহা ও আমার এইসব শর্ত দেওয়া একটা একটা করবে আমি সত্যি এটা কল্পনা করি নি। আমার চুপ থাকা দেখে ও আবার বললো “কি হলো বলুন। আমাকে আর কি কি শর্ত পালন করতে হবে বলুন।

আমি চুপ করে ওর একটু কাছাকাছি গেলাম আমার কাছে যাওয়া দেখে ও একটু পিছনে হেটে রুমাল দিয়ে নাক মুছতে মুছতে দেয়ালে পিট লাগায়। আমি ওর আরো কাছে গেলাম। তারপরো ওর দিকে একটু তাকিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর আছে শরীরে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম…

“তুমি জানো তুমি কতবড় একটা বোকা মেয়ে। আমি করতে বলেছি বলে এই গুলা করবা? নিজের ভালোটা নিজে বুঝো না? ফারহা একটু চুপ করে রইলো। আসলে সত্য বলতে কি এই মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু কেন করে এর কারনটা আমি এখনো বুঝতেই পারি নি। ওর আচরণ গুলা আমার কাছে অন্য টাইপের মত লাগতো। ফারহা আমাদের বাড়িওয়ালার ছোট মেয়ে। আমি ছাদে আসলেই ওকে দেখতে পাই। আমি যখন বলি..

“এই তুমি ছাদে কি করো? পড়া লেখা নেই? ও আমার দিকে অন্য রকম ভাবে তাকিয়ে বলতো..

“কাজ আছে। একজনের জন্য আসি।
“কার জন্য?
“আপনি না জানলে ও চলবে। মনে করেন আপনি। এই রকম কথা বার্তা বলেই হাসি দিত। ওর এই রকম ইঙ্গিত গুলা আমি কিছুই বুঝতাম না। আমি মশকারা হিসেবে ধরে নিতাম। কিন্তু সত্যি সত্যি একদিন যখন আমাকে বললো..

“আচ্ছা আপনি প্রেম করেন? আমি একটু অবাক হয়ে ওর এই রকম কথা শুনে বললাম…

“এই প্রশ্ন কেন?
“আহা যা বলতে বলছি বলেন। কেন আস্ক করেছি তার একটা কারন আছে তাই না?
“কি কারন?
“আগে বলুন তো। আমি মাথা দিয়ে না সূচক ইশারা দিলাম, না করি না। ও একটু হেসে বললো…

“গুড। আপনি কেন প্রেম করেন না? কাউকে ভালো লাগে নি? আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার কাছে মনে হচ্ছিল ও আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলো। আমি যখন চুপ করে ওর তাকিয়ে ছিলাম ও আবার বললো..

“আচ্ছা বলতে হবে না। মনে করেন এখন আপনাকে কেউ লাইক করে আপনি কি তাকে মেনে নিবেন? ওর কথা শুনে আমি একটু হাসলাম।
“কি হলো হাসির কিছু বলেছি আমি?
“আমাকে আবার কে পছন্দ করবে?
“করবে না কেন? কেউ তো একজন আছে। কী মেনে নিবেন তাকে? আমি একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে চুল গুলা চুলকিয়ে বললাম..

“মেনে নেওয়া তো অনেক পরে। আগে দেখবো বুঝবো তারপর ভাবা যাবে মেনে নিব কি নিব না। কিন্তু এই গুলা তুমি কেন জানতে চাচ্ছো?
“বললাম না কারন আছে। আমার এক বান্ধবী আপনাকে আপনাকে লাইক করে।
“বান্ধবী? তোমার বান্ধবী?
“হুম। আচ্ছা কতদিন লাগবে দেখতে. বুঝতে?

আমি শুধু হাসলাম ওর কথা শুনে। সব কিছু ঠিক ছিল। আমি ব্যাপারটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাই নি। কিন্তু এর কয়েক দিন পর ও আমাকে ইতস্তত করে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো…

“জানেন আমার মন খারাপ। আমি না একটা খারাপ কাজ করেছি।
“কি খারাপ কাজ? ও মাথা উচু করে আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থেকে বললো..
“আমি এক জনের সাথে মিথ্যে বলেছি। আমি হাসলাম। আমার হাসি দেখে ও মাথাটা আবার নিচু করে ফেলে। আমি বললাম..

“এই নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। তাকে সত্যটা বলে দিলেই হয়।
“সে যদি অন্য কিছু মনে করে আমাকে নিয়ে।
“কিছুই মনে করবে না। তুমি বলে দেখোই না একবার।
“সত্যিই উনি কিছু মনে করবে না?

আমি চুপ করে রইলাম। তারপর ও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো “আপনাকে আমার বান্ধবীর কথা বলেছিলাম নাহ? ওটা মিথ্যে। যে মেয়েটা আপনাকে লাইক করে সে মেয়েটা আপনার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি কথা শুনে একটু নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলাম। এই মেয়ে বলে কি? তারপর কয়েকটা কাশি দিয়ে কিছু না বলে সোজা চলে আসি।  এর পর থেকে ওকে দেখলেই আস্তে করে না দেখার ভান করতাম। এসবে কিছু হচ্ছিল না। আমাকে ডাক দিলো..

“এই যে দাঁড়ান, দাঁড়ান বলছি।
“পরে কথা বলি? আমার না একটা কাজ আছে খুব আর্জেন্ট। ও আমার সামনে এসে বললো..

“আমি বেশি সময় নিব না। জাস্ট এইটুকু জানতে চাই আমাকে ইগনোর করার কারনটা। আমি কি দেখতে ভালো নই? আমার কণ্ঠ কি সুন্দর না?
“আসলে কি বলবো আমি জানি না। এটা কি করে সম্ভব বলো? তোমার বাবা জানতে পারলে কি অবস্হা হবে তুমি জানো? ও একটু চুপ করে রইলো। ওর চেহারার হাল দেখে ওকে শান্তনা দিলাম..

“তুমি আমাকে লাইক করতেই পারো। লাইক করা খারাপের কিছু নেই। লাইক যে কাউকে করা যায়। কিন্তু ঐ যে বললাম না একদিন যে আমাকে চায় তাকে বুঝতে হবে আমার। সে আমার কথা শুনে কিনা। আমার মন মত হয়ে ওঠতে পারবে কিনা। ওর আচরণ মানে তোমার সব কিছু আমাকে বুঝতে হবে। তারপর ভেবে দেখবো তোমার সাথে আমার যায় কিনা।

“কি করতে হবে আমাকে বলুন। আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না আমাকে ওর ভালো লাগে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি ওকে বললাম..
“তোমার বাবা তো এই গুলা মেনে নিবে না। তোমার বাবার সাথে ঝগড়া করতে হবে।
“ঝগড়া করবো কেন?
“আমাকে সত্যি চাইলে তোমার বাবার সাথে ঝগড়া করার অভ্যাস করতে হবে। একদিন না একদিন তোমার বাবা জেনে ফেলবে। তখন তোমার বাবা আমাকে কিছু করলে তোমাকে গরম মানে রাগী রাগী ভাব দেখাতে হবে। এখন থেকে ঝগড়া না করলে তখন পারবা না।

“কিন্তু কি নিয়ে ঝগড়া করবো?
“যা ইচ্ছা তা নিয়ে। এইটা করতে পারলে তারপর ভাবা যাবে।

আমি তো ভেবেছিলাম ফারহা ওর বাবার সাথে ঝগড়া করতে পারবে না। আর এই কাজটা করতে না পারলে আমি এইটা থেকে বেঁচে যাবো। কিন্তু ফারহা ঠিকঠিক ওর বাবার সাথে একদিন রাগী রাগী ভাব নিয়ে জোরে জোরে ঝগড়া করলো। যেটা আমি কখনো ভাবতেও পারি নি। ঝগড়া করার আগে আমাকে ফোনে বলে দিয়েছিল বাবার সাথে ঝগড়া করবে পচা মাছ বাজার থেকে আনছে এই বিষয়টা নিয়ে। ওর কান্ড কারকারখানা দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে একটা শর্ত দিলাম আমাকে যদি সত্যি চাও তাহলে চার দিন খুব সকালে এই ঠান্ডা দিয়ে গোসল করতে হবে। ও একটু ভেবে বললো..

“সকালে গোসল করার সাথে এটার সম্পর্ক কি?
“আছে আছে। তুমি যে আমার কথা মত চলবে কিনা এটা বুঝার জন্য।
“এই ঠান্ডা দিয়ে আমি পারবো না।
“আমাকে চাইলে পারতে হবে।

শোনো ঠান্ডা পানি দিয়ে করতে হবে কিন্তু। অবশ্য তুমি গোসল না করলে ও সেটা আমি জানতে পারবো না, যতক্ষন তুমি আমাকে বলবে না গোসল করেছো। তুমি যদি গোসল না করে আমাকে বলো গোসল করেছো তাহলে দেখবে সম্পর্ক বেশি দিন টিকবে না। কারন যে সম্পর্ক মিথ্যে দিয়ে শুরু ওটা কোন না কোন কারনে ভেঙ্গে যায়।

আমি এই কথা গুলা এই কারনেই বলেছি ও কখনো এত সকালে ঠান্ডা দিয়ে গোসল করবে না। যার ফলে আমি বেঁচে যাবো এই প্রেম প্রেম খেলা থেকে। কিন্তু ফারহা গত দিন গোসল করে আমাকে বলেছে গোসল করেছে। আর এখন আমার সামনে সর্দি ঠান্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার এইসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনার কাজ গুলা ও ঠিকঠিক করবে আমি বুঝতেই পারি নি। ও এখনো দেয়ালে পিট লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইসব উদ্ভট কাজ করতে দেওয়া আমার মোটেও ঠিক হয় নি। মেয়েটা সত্যিই কি আমাকে ভালোবাসে? আমি ওর হাতটা ধরে বললাম “চলো আমার সাথে। ও রুমাল দিয়ে নাক মুছতে মুছতে বললো “কোথায় যেতে বলছেন? সর্দি জ্বর এনে কি অবস্হা করেছো দেখেছো? ও মুখটা অন্য দিকে করে ফেললো। কিন্তু কিছু বললো না। আমি আবার বললাম.. “আরো চলো। ডাক্তার দেখাতে হবে। “যাওয়ার দরকার নেই। আপনি তো এটাই চেয়েছেন তাই নাহ?

ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমার আসলেই এই রকম করা ঠিক হয় নি। আমি হাত দিয়ে ওর চোখের কোনে জমানো পানি মুছে দিয়ে বললাম..তোমাকে আমার বুঝা হয়ে গেছে এইটুকু ভেবে রাখে এই জাহেদ এখন তোমার। ও একটু কান্নার ঘোংড়ানি দিয়ে রুমালটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। আমি বললাম কি করবো এটা দিযে? ও বললো.. নাক মুছে দিন। আমাকেও বুঝতে হবে আপনাকে আমার সাথে যায় কিনা। এখন আমি যা বলবো তা করতে হবে হুহ.. আমি শুধু হাসলাম ওর কথা শুনে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমার জগৎটা এত দিন ছিল একটা খোলা দরজা যা আজ আবদ্ধ করে দরজা বন্ধ করে দিল ফারহা…..

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত