রুপন্তীর আম্মু

রুপন্তীর আম্মু

গত ভ্যালেন্টাইনস ডে তে রুপন্তীর আম্মুকে বাহাত্তর ডজন চুড়ি দিছিলাম। সে চুড়ি জরিনা খালা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসছে। এর আগে একশো টা কালারের একশো রকমের লিপস্টিক গিফট করেছি। সেগুলো রুপন্তীর আম্মু অনলাইনে বেচে দিছে। তাই এবার ভাবছি একটু অন্য স্টাইলে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করবো। কিন্তু সকাল সকাল দেখি শাশুড়ি আম্মা এসে হাজির। রুপন্তীর আম্মুকে সকাল থেকেই কাছে পাওয়া যাচ্ছেনা। মা কে পেয়ে সবকিছু ভুলে গেছে। তবে আমার প্ল্যান চেন্জ করা যাবেনা। আজকে রাতে বারোটাই সারপ্রাইজটা দিবো রুপন্তীর আম্মুকে।জরিনা খালার সাথে প্ল্যান বানালাম।

পুরো ছাদে লাল গোলাপ দিয়ে সাজিয়ে দিলাম। নিচে কার্পেট বিছিয়ে তাতে গোলাপের পাপড়ি ফেলে দিলাম। ব্যাকগ্রাউন্ডে কিশোর কুমারের রোমান্টিক সং চলবে। লাল নীল লাইট দিয়ে বড় বড় বেশ কয়েকটা ফুলের তোড়া এনে টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম। বেশ বড়সড় কেক কিনে আনলাম হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে লিখেও রাখলাম। একটা বড় টেডি বেয়ারের পেছনে আমি লুকিয়ে থাকবো। রুপন্তীর আম্মু ছাদের দরজা খুললেই ফিল্মি স্টাইলে হাঁটুর উপর বসে ওইশ করবো। হাতের পেছনে একটা রিং ও থাকবে। প্ল্যান অনুযায়ী জরিনা খালারে বললাম রাতে রুপন্তীর আম্মুকে যেনো চোখমুখ বেঁধে ছাদে নিয়ে আসে। আবার চিৎকার চেঁচামেচি করলে শাশুড়ি আম্মা উঠে যাবে। প্ল্যানের বারোটা বাজবে তখন। জরিনা খালা আবার কোন কাজ শুরু করার আগে এক ডজন কলা খাবে।

এদিকে আমি অপেক্ষা করছি। জরিনা খালা যদিও আসতে একটু লেইট হয়েছে তবুও সে রুপন্তীর আম্মুরে একেবারে চোখ মুখ বেঁধে উঠিয়ে নিয়ে আসছে। চোখমুখের কাপড় খুলতেই দেখি শাশুড়ি আম্মা। শাশুড়ি আম্মা চিল্লানি শুরু করছে। হারামজাদা বলে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। হঠাৎ জরিনা খালার ফেলে দেয়া কলার খোসাতে হুচট খেয়ে সরাসরি তিনতলা থেকে পড়ে গেল। আমি আর জরিনা খালা উকি দিয়ে দেখি অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। মনে হয় নিচে পড়ে খালাস! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ছে জরিনা খালা? দেখবা না কারে উঠিয়ে আনতেছো? আই কিছছি! খালাম্মা আফার ড্রেস পইরা আফার রুম হুতি আছে। আই মনে কইচ্ছি আফা! এহন কি কইরবেন ভাইজান ? আওয়াজ শব্দ নাই মনে হইতাছে তো পইড়া একবারে খালাস! আরে অলক্ষ্মী কথা কইয়ু না! নিচে চলো! নিচে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। হঠাৎ জরিনা খালা কিসের সাথে জানি হুচট খেলো। ভাইজান বস্তা এক্কান কেডা জানি পথে ফেলাইয়া রাখছে।

আমি নিচে হাত দিয়ে দেখি। আরে এটাতো শাশুড়ি আম্মা পড়ে চিৎপটাং হয়ে আছে। জরিনা খালা এটা শাশুড়ি আম্মা। তোমার জন্য আজকে এই অবস্থা। জরিনা খালা অন্ধকারে নাকেমুখে হাত দিয়ে বললো, ভাইজান পাক্কা গেছে, দেহেন কোন বাতাস নাই! আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, তো এখন? আরে টেনশন লইয়েন না। দারোয়ান বদরুদ্দীনরে বইলা লাশটা বস্তা ভইরা ঠিকানায় পাঠাইয়া দিতে অইবো। কোন ঠিকানায়? আরে ভাইজান, মানে দূরে কোন জঙ্গলে ফালাইয়া আসতে হইবো। নাইলে দুজনে ফাঁসিতে ঝুলমু! আচ্ছা করো করো যা করবার করো। বদরুদ্দীনরে ডাকা হলো। কিছু এক্সট্রা টাকা দিয়া গাড়ির পেছনে বস্তা ভইরা জঙ্গলে পাঠিয়ে দিছি।

রাতে একেবারে ঘুম হয়নায় ভয়ে। এদিকে সকালে উঠে রুপন্তীর আম্মু শাশুড়ি আম্মারে না দেখে চিল্লানি শুরু করছে। আমি বললাম, দেখো হয়তো আব্বার কথা মনে পড়ছে তাই চলে গেছে বাড়িতে। আজকে ভ্যালেন্টাইনস ডে না! আরে আমারে না বলে আম্মা কোথাও যাবেনা। শ্বশুর আব্বার কাছে ফোন দিয়ে জিগাইলো। তিনি বললেন এখানে আসেনি। রুপন্তীর আম্মু সারাবাড়ি না পেয়ে পুলিশ কল দিয়ে বসলো। আমি আর জরিনা খালা তো ভয়ে কাঁপছি। পুলিশ আমারে জিগাইলো, আমিও বলে দিছি, কোথাকার শাশুড়ি? কিসের শাশুড়ি? আমি কোন শাশুড়ি মাশুড়িকে কে চিনি না? জরিনা খালারে জিগাইলো সে ভয়ে ভয়ে বললো, কসম কইতাছি আই গতকাইল রাইতে কি অইসে জানিনা। কাউরে ছাদ থেইকা পড়তেও দেহি নাই।

জরিনা খালা কিছু জানিনা জানিনা বলে সব বলে ফেলতেছে আমি তাড়াতাড়ি জরিনা খালারে চিমটি কাইটা থামিয়ে দিলাম। পরে পুলিশ ডান্ডা দেখিয়ে ধমক দিল, সাথে সাথে জরিনা খালা ভয়ে কাইন্দা দিল, আর সব বলে দিচ্ছিল সাথে সাথে দরজা দিয়ে শাশুড়ি আম্মা প্রবেশ করলো। রুপন্তীর আম্মু চিৎকার দিয়ে শাশুড়ি আম্মারে জড়িয়ে ধরলো আমি ও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। শাশুড়ি আম্মার পুরো শরীরে কাদা আবর্জনা। মনে হয় জঙ্গল থেকে লেগে গেছে। শাশুড়ি আম্মা বললো, সব তোর জামাইর কান্ড ভ্যাগিস একটা বস্তার উপর পড়ছিলাম। তাই জানে বেঁচে গেছি। পরে গার্ডেন গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। সকালে জ্ঞান ফিরতেই চলে আসলাম।

মনে মনে বলতে লাগলাম, ব্যাপার কি! শাশুড়ি আম্মা গার্ডেনে ছিল। তাহলে যারে আমরা বস্তা ভইরা জঙ্গলে ফেলে আসছি সেটা কে? ঠিক সে সময় আক্কাস মিয়া ঢুকছে, ইনস্পেকটর সাহেব! থানায় অনেক খুঁজলাম আপনারে পেলাম না। শুনলাম এখানে আসছেন। আমার বউটারে গতকাল রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা। জরিনা কানে কানে বললো, ভাইজান আমরা যারে ফেলে আসছি সেটা আক্কাইচ্ছার বউ। আর আন্নের শাশুড়ি আক্কাইচ্ছার বউয়ের উপর পইড়ছিল। হেতি ওইহানে খালাস!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত