স্পেশাল ভ্যালেন্টাইন

স্পেশাল ভ্যালেন্টাইন

লিফটের মধ্যে ভদ্রলোকের সাথে দেখা হয়ে গেল, এক হাতে বাজারের ব্যাগ আর অন্য হাতে একটা খাঁচা। খাঁচার মধ্যে মাঝারি সাইজের একটা ময়না পাখি ঝাঁপঝাঁপি করছে।

: কেমন আছো, শারমিন?
: জী ভালো, পাখি কিনলেন নাকি ভাইয়া!
: এই, কিনলাম আর কি।
: ও আচ্ছা, তা হঠাৎ পাখি?
: না মানে ভাবলাম, সামনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, এই উপলক্ষ্যে তোমার ভাবী কে উপহার দেই, ওর আবার পাখি পোষার বেশ শখ কিনা।

: ভালো তো! ভাবী নিশ্চিত খুব খুশি হবেন। কথা পুরোপুরি শেষও করতে পারলাম না, তার আগেই আমাদের ফ্লোর এসে গেল। তাই আর কথা না বাড়িয়ে মৃদু হাসি দিয়ে দুজন দুজনের ফ্ল্যাটে চলে গেলাম। এই ভদ্রলোকের নাম রিয়াজ। মাস খানেক হলো এ বাড়িতে এসেছেন। পোস্টিংয়ের কারনে উনি আগে আগেই ঢাকা থেকে চলে এসেছেন তবে উনার স্ত্রী ঢাকাতেই রয়ে গেছেন। কি সব কাজ টাজ শেষ করে তারপর নাকি আসবেন। বিকেলে আমার রুমের সামনের টানা বারান্দায় চায়ের মগ নিয়ে হাঁটাহাটি করা আমার অভ্যাস। প্রতিদিনের মতো সেদিনও চা নিয়ে বারান্দায় আসতেই উনার সাথে দেখা। উনি পাখিকে খাওয়াচ্ছেন।

: বুঝলে শারমিন, পাখিটাকে কথা শেখাচ্ছি, প্রথমে শেখাচ্ছি তোমার ভাবীর নাম, এরপর আরও অন্যকথা শেখাব। পাখির মুখে নিজের নাম শুনে তোমার ভাবী কি টাসকি টাই না খাবে বল?

: জী।
: এই ময়না বল, মেহজাবীন, বল মেহজাবীন। ময়না কয়েকবার ডানা ঝাঁপটালো কিন্তু কিছুই বলল না।
: মেহজাবীন নামটা বোধহয় বেশি বড় তাই না? একটু ছোটহলে ডাকতে সুবিধা হতো।
: জী ভাইয়া, তবে আপনি চেষ্টা করতে থাকেন, হয়ে যাবে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে আসতে তো দেরিই আছে। এর কয়েকদিন পর উনাকে আবার বারান্দায় দেখলাম। বেশ উচ্ছ্বসিত।

: শারমিন দেখ, ময়না টা শীষ দিচ্ছে।
: বাহ্ ভালো তো!
: নাম অবশ্য বলছে না, অথচ কেনার সময় দোকানদার বলল, নাম নাকি বলতে পারে! শালা কত বড় মিথ্যুক দেখেছো।

: হুম তবু আপনি চেষ্টা করতে থাকেন, বললে ভালো না বললে এটাই দেবেন, ভাবী এতেও খুশি হয়ে যাবে।
: ইয়ে আসলে কি করে যে বলি, আসলে হয়েছে কি তোমার ভাবীর সাথে আমার একটু মন কষাকষি চলছে কিছুদিন ধরে। সে বলেছে, আমি নাকি একটুও রোমান্টিক না, ওর জন্য নাকি কিছুই করিনা। এজন্য ইচ্ছে করে ওকে ভ্যালেন্টাইন্স এর আগের দিন আসতে বলেছি। রাত বারোটায় এই পাখি দিয়ে সারপ্রাইজ দেব, তাইলে যদি ভুলটা কিছু কমে। কেমন আইডিয়া বলতো?

: বেশ আইডিয়া। আর একটা কাজ করুন, একটা ছোট্ট কেক আর একজোড়া নুপুরও কিনবেন। কেক কাটার পর পায়ে নুপুর পরায় দিবেন, তাইলে আরও খুশি হবে।
: আরে! ভালো বুদ্ধি তো, থ্যাংক ইউ সো মাচ। কিন্তু এই ময়না নিয়ে কি করি বলতো, কথাই তো বলে না!
: বলবে বলবে, চেষ্টা করেন। এর সপ্তাহ দুয়েক পর রিয়াজ ভাইকে আরও উৎফুল্ল অবস্থায় দেখা গেল।

: শারমিন, তোমার কথাই ঠিক হয়েছে, ময়না টা আসলেই কথা শিখে গেছে, দেখ, এই ময়না বল মেহজাবীন ময়না বলল, মেহজাবীন
: এবার বল রিয়াজ, বল ময়না সেটাও বলল।

এভাবে একের পর এক নাম ধরে ডাকল। আমার নামও বলল দুই বার, শুনে বেশ মজা পেলাম। যাক, রিয়াজ ভাইয়ের কষ্ট সার্থক হল তাহলে। তেরো তারিখ বিকেলের দিকে একটা মেয়েসহ রিয়াজ ভাইকে বাসায় আসতে দেখলাম। বুঝলাম, ওটাই ভাবী। বেশ লাগলো দুজন কে একসাথে দেখতে। রাত বারোটায় ঘুমাতে যাব, এরমধ্যে কাঁচ ভাঙার ঝনঝন শব্দে নড়েচড়ে বসলাম। শব্দ আসছে রিয়াজ ভাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে। একটু পরেই দরজা খোলা, বন্ধ করার ঠাস ঠাস আওয়াজও পাওয়া গেল। আমি অবশ্য সেদিক তেমন পাত্তা দিলাম না, না দিয়ে সোজা কম্বলের মধ্যে ঢুকে গেলাম। সকাল হতেই বারান্দায় রিয়াজ ভাইকে বিমর্ষ মুখে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেল। উনি নাকি আমার জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করছেন।

: ইয়ে শারমিন তুমি একটু তোমার ভাবী কে ফোন করবা, করে একটু সবকিছু বুঝিয়ে বলবা প্লিজ?
: আপনার উপকার হলে অবশ্যই করব কিন্তু আমার ধারণা তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে, চিন্তা করে দেখেন।
: সেটাও অবশ্য ঠিকই বলেছো, তাইলে এখন আমি কি করি বলতো!
: সেটা আমি কি জানি!

বলে হাসতে হাসতে চলে আসলাম। ঘটনা যা ঘটেছে তা হাসার মতোই। রাত বারোটায় রিয়াজ ভাই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভাবীর সামনে কেক এনেছেন, ভাবী খুশি হয়ে কেক কেটেছেন। এরপর ভাবীর পায়ে রিয়াজ ভাই নুপুর পরিয়ে দিয়েছেন। ভাবী তাতে নাকি খুশিতে আরও আটখানা হয়ে গেছেন। এরও পরে রিয়াজ ভাই সামনে নিয়ে গেছেন ময়নার খাঁচা। নিয়ে গিয়ে বলেছেন,

: ময়না বল, মেহজাবীন মেহজাবীন ময়না বলছে, শারমিন, শারমিন! কি একটা অবস্থা!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত