পাঞ্জাবি

পাঞ্জাবি

__ ” চোখ বন্ধ করে সামনে হাত বাড়ান তো একটু “। আমি একথা বলেই উজ্জ্বল চোখে তাকালাম রাসেল ভাইয়ের দিকে। কিন্তু কপালের ফ্যার সে আমার দিকে এমন লুক দিলো যেন আমি তেলাপোকা প্রজাতির কোন প্রানী।চোখ ছোট ছোট করে বলল,

___ ” তুই কি আমারে অন্ধ হওয়ার প্র‍্যাক্টিস করাচ্ছিস নাকি? না ইচ্ছা আছে অন্ধ করে রাস্তায় বাটি হাতে দিয়ে বসিয়ে ভিক্ষা করালে আমারে কেমন লাগে তাই দেখবি?” এবার চোখের কোণে পানি জমা শুরু হল। টলমল চোখ মেলে তাকালাম তার দিকে হাতের থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে তার দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। এবার বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

___ ” তোর বার্থডেতে তুই আমারে গিফট দিচ্ছিস কেন?”

পাশে বসা শিহাব ভাই আমার দিকে বত্রিশ দন্তের ফুল ফুটিয়ে তাকিয়ে রইল। আমি তার হাসির অর্থ স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। উনি আগেই বলেছিল তার মনে নেই। আমি ধরা গলায় বললাম,

___ ” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ “।
___ ” নিজেরে নিজেই উইশ করার সিস্টেম কবে থেকে চালু হল?”

আমার মনে চাচ্ছিল সামনে যদি কোন দেওয়াল থাকত তো ওই মানুষটার চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে সেই দেওয়ালের সাথে ধাড়াম ধাড়াম করে টাক দিতাম। মনের ইচ্ছা মনেই মাটি দিয়ে দাঁতের উপর দাঁত কিড়মিড় করে কোন মতে বললাম,

___ ” আজকে আপনার বার্থডে? ”
___ ” আমি কি লেদা পোলাপান নি যে তুই গিফট কিনে দোলাতে দোলাতে আমারে দিবি? তুই ভাবিস কি আমারে?”
আমি আর কিছু না বলে ব্যাগটা তার পাশে রেখেই হেঁটে চলে আসি। পিছনে শুনতে পেলাম শিহাব ভাই রাসেল ভাইকে বলছে,

___ ” মেয়েটার সাথে এমন না করলেও পারতি। কত শখ করে গিফট নিয়ে এসেছে তোর জন্য”।
উওর যেন কি দিল রাসেল ভাই আমি ঠিক শুনি নাই। কিন্তু ১০০% শিওর ভাল কিছু তো বলবেই না কখনও।

বাসায় এসে বারেবার মনে হতে লাগল যেচে কেন বারেবার অপমানিত হতে যাই আমি। অকারনেই চোখে বারবার পানি আসতে লাগল। মানুষটা একবার খুলেও দেখলো না যে কি গিফট এনেছি। রাতে খাওয়ার টেবিলে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

___ ” কি রে বাবু তোর পেট খারাপ হয়েছে নাকি?”
বাকি সবাই খাওয়া রেখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পড়ল। এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপরে ভাইয়ার কথা শুনে বাঁধই ভেঙ্গে গেল মেজাজের। প্রায় চিল্লিয়ে বললাম,

___ ” আমার মুখে কি লেখা আছে আমার আমাশয়, ডায়রিয়া হইছে? ফাজলামির জায়গা পাও না?”
___ ” তুই এত ওভার রিএক্ট করতেছিস কেন?”

ভাইয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করল। খালাও বেশ অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে বুঝলাম যে, বেশিই ওভার রিএক্ট করে ফেলেছি আজকে। চুপ করে কোন মতে নাকে মুখে ভাত গুঁযে রুমে এসে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। মিলি পাশে শুয়ে বিড়বিড় করে বলল,

___ ” এক জায়গার রাগ অন্য জায়গায় দেখিয়ে কি লাভ।” প্রচন্ড জিদে উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়ালাম চুপ করে। চেয়ার টেনে গ্রীলের উপরে পা উঠিয়ে বসে রইলাম চুপ করে। বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরই পাই নি। ঘুম ভাঙ্গল বৃষ্টির ছিঁটায়। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। চোখ ডলতে ডলতে উঠে দাঁড়ালাম। হঠাৎ কেন জানি না মনে হল সামনের ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে কেউ দাঁড়ানো। ভাল করে তাকাতেই কলিজার মধ্যে মুচড়িয়ে উঠলে। এতো রাসেল ভাই এত রাতে এখানে কি করে? বেশ কিচ্ছুক্ষন হাত দিয়ে ইশারা করার পরে সে আমার দিকে তাকালো। মাথায় ছাতি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বৃষ্টির মধ্যে। আমাকে ইশারা করল ফোনের জন্য। রুমে দৌড়ে যেয়ে দেখি প্রায় শখানেক মিসকল। বিশাল এক ঢোঁক গিললাম মনে মনে। ফোন কানে দিতেই স্টেনগানের মত অঝোরে বকার বৃষ্টি হতে লাগল৷ আমি এত কেয়ারলেস কেন, আমার ফোন ব্যবহার কোন অধিকারই নাই, আমার আজকের পর থেকে ফোন ব্যবহার বন্ধ ব্লা ব্লা। সর্বশেষ বলল,

___ ” পাঁচ মিনিটের জন্য নিচে নামতে পারবি?”
___ ” এত রাতে নিচে?”
___ ” হ্যাঁ বা নাতে উওর দে। তোরে দুই লাইন দিয়ে বলি নাই এই উপপাদ্য চিত্র সহ প্রমান কর।”

আমি হু বলেই ফোন কেটে নিচে নামলাম। কেঁচি গেটের কাছে এসেই দেখি ছাতি হাতে বাবু দাঁড়িয়ে আছে৷ গেট খুলতেই ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে সোজা বলল,

___ ” আমাকে মানিয়েছে কেমন”।

এবার আমার অবাকের মাত্রা ছাড়ানোর পালা। গাঢ় নীল পাঞ্জাবি পরে মানুষটা আমার সামনে। নিচের অর্ধেক ভিজে গেছে বৃষ্টির ছাটে। ভেজা ভেজা মুখ এলোমেলো চুল আর সেই পাগল করা চোখের দৃষ্টি এবার আমার মাতাল হওয়ার পালা। ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে কানের কাছে বলল,

___ ” যতটা ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না তোর চয়েজ। পাঞ্জাবিটা সুন্দর “! হঠাৎ আমার হাত দুটো তার হাতে নিয়ে বলল,
___ ” ভিজবি আমার সাথে সারাজীবন”।
___ ” হুম”। মাথা নিচু করে উওর দিলাম। থুতনী ধরে মুখ উঁচু করেই কপালের একটা চুমু দিয়ে বলল,
___ ” এজন্যই তো এত ভালবাসি।”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত