বিরিয়ানি

বিরিয়ানি

আহ! কি বিরিয়ানি! রুমে গিয়ে শুধু খাওয়ার অপেক্ষায় হাঁটতেছি। পারলে রাস্তায় খেয়ে নিতাম। কিন্তু বড় হয়ছি লজ্জার একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে।

দীর্ঘ বিরতির পর মসজিদে আবার বিরিয়ানি প্রথা চালু হয়েছে। কতদিন যাবৎ মসজিদের বিরিয়ানি নাড়ির মধ্যে পরে না। আজ মুখ হা করে, মন খুলে বাসায় গিয়ে বিরিয়ানি খাব। রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছি পুটলাটি নিয়ে। মাথায় টুপি। হাতে পুটলা ঝুলছে। হঠাৎ উপর থেকে আওয়াজ আসল; ভাইয়া অর্ধেক বিরিয়ানি দিয়া যান না। কে? ভাইয়া আমি মারিয়া।

ও মারিয়া। লজ্জা করে না তোমার। আমাকে ভাইয়া ডাকো। সাথে আবার বিরিয়ানি চাও। কয় কিছুদিন আগে যে, চকলেট দিবস গেছিল আমায় দিছিলা চকলেট। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে চলে গেছ। লজ্জা শরম নাই মাইয়া। আমার কাছে বিরিয়ানি চাও। জোর গলায় বলে হাঁটা শুরু করে দিলাম। আরে আহাদি ভাইয়া নামাজ থেকে আসছেন বুঝি? ক্যান দেখে মনে হচ্ছে না? অবশ্যই ভাই। ক্যান মনে হবে না! হয়ছে আমার পথ ছাড়ো। বাসায় যেতে হবে। আরে ভাইয়া এটা কি বলেন! হাতে বিরিয়ানির পুটলা রেখে কিভাবে আপনাকে ছাড়ি বলেন তো?

ক্যান ছাড়তে পারো না। তুমি আমাকে কোন কিছুর ভাগ দাও কোন সময়? তোমাকে আমি ক্যান বিরিয়ানি দিব? ক্যান ভাই। আমাদের ঘরে যা রান্না হয় সব-ই তো দিয়ে যায়। আর কি চান আপনি? সব দিয়ে যাও হা! কয় কয়েকদিন আগে যে কিস ডে গেছিল দিছিলা আমাকে একটা কিস? হয়ছে ভাই প্যাঁচাল মাইরেন না। আমি আজকে কিস দিয়ে দেব। তবে বিরিয়ানি আগে দিতে হবে। না না। আমি বিরিয়ানিও দেব না। আর তোমার পুরাতন কিসও নেব না। এই বলে আবার সামনে হাঁটা শুরু করলাম। বুঝলাম আজকে কোন পাপ করছিলাম এত গুলার সাথে দেখা হচ্ছে। নামাজ থেকে আসলাম। না পাপ নাই। আজকের জন্য পাপ মুঁছে গেছে।

ওহ্! আজকে আমাকে আর বিরিয়ানির পুটলা নিয়ে বাড়িতে যেতে দিবে না। এখন আমিই তাকে আগে জিজ্ঞেস করে ফেললাম। কি জয়া কোথায় যাচ্ছো? ভাইয়া আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম। মারিয়া ফোন দিল তাকে নাকি বিরিয়ানি দিয়ে আসছেন! আমিও আসছিলাম বিরিয়ানি নেয়ার জন্যে। আচ্ছা, তোমাদের কি কোন লজ্জা-শরম কিচ্ছু নেই। তোমারা কি বলো তো? এক আমাকে ভাই বলে ডাকছো। দুই বিরিয়ানি চাচ্ছো। তোমরা আমাকে কি দিয়েছো এ জীবনে? ক্যান ভাই সব দিয়েছি!

সব দিয়েছো। মিথ্যাবাদীর দল। ঐ দিন যে এত্ত গুলা গোলাপ নিয়া গেছিলা। কয়। তখন এই ভাই কোথায় ছিল! তখন তো আমাকে ভাইয়া বলে একটা গোলাপ দিয়ে গেলা না। এখন আইছে ভাইয়া ডাকতে। যাও এখন, তার কাছে গিয়ে বিরিয়ানি চাও। যাকে গোলাপ দিয়ে আসছো। মনে হয় লজ্জা পাইছে। আহ্ একটু শান্তি পেলাম। আর কারও সাথে দেখা হওয়ার কোনো চান্স নাই। চিন্তিহীনভাবে বাসায় গিয়ে পৌঁছাতে পারব। শুধু বাড়ি ওয়ালার মাইয়াটা ঘুমে থাকলেই হয়। রুমের দরজা খুললাম। পা ফেলব রুমের ভিতর, এমন সময়। আহাদি ভাইয়া! কি আহাদি ভাইয়া? তোমাকেও ফোন করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে?

না ভাইয়া। আপনি এসব কি বলেন? আমাকে তো কেউ কিছু জানায় নি। বাঁচা গেল। ভাইয়া! কি ভাইয়া? আপনার হাতে কি ঝুলতেছে? ঐটা মোগ ডাল। যাও। আমার এখন রান্না করে খেতে হবে। এমন মিথ্যা কথাটা বলতে পারলেন ভাইয়া? আমি আপনাকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আপনাকে একদিন না দেখতে পেয়ে। তো দেখেনেই কি করি? হ্যাঁ! সব ঠিক আছে। নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসো। কিন্তু ভাইয়া তোমার তো ভাই নেয়। আর মিথ্যা কথা কি শুধু বলছি? তুমিও তো মিথ্যা কথা বলছো।

ভাইয়া আমি কি মিথ্যা বললাম? ক্যান গতকাল বলো নাই তুমি। লিটু মামার ফার্মেসী থেকে গোলাপ কিনতেছো? হে! কয় আমি গিয়ে তো গোলাপ পেলাম না। কি ফেলেন ভাই? রুমে আসো ড্রয়ার থেকে বের করে দেখাচ্ছি। লুচু, বদমাশ কোথাকার, লাগবেনা তোর বিরিয়ানি। যা তুই একা গিয়ে বিরিয়ানি খা। বৌনটু বিরিয়ানি নিয়া যাও। পেছনে ফিরে আর তাকালো না। বাঁচা গেল। কথা গুলো না বললে শয়তানের দল আজকে বিরিয়ানিটা খেয়েই নিতো। যাই এবার খাওয়া যেতে পারে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত