রাত ৩ টার সময় ভাবী আমাকে ঘুম থেকে তুলে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে। সাথে মুখে মিষ্টি। আমি কিছু ই বুঝতে পারছি না। এত রাতে নীল রঙ এর একটা শাড়ি আমাকে পড়িয়ে দিল ভাবী। পড়া শেষ করে রাত দেড় টার দিকে ঘুমিয়েছি। এরমাঝে ই ঘুম থেকে ডেকে তুলে এই অবস্থা। কিছু বলব তাও পারছি না চোখ লেগে আসছে আমার। হাত মুখ ধুয়ে চুল ঠিক করে দিল ভাবী। রাত ৩ টায় ছেলে আমাকে দেখতে আসছে। দেশের বাইরে থেকে এসে সোজা আমাদের বাসায়। এটা কি রকম কি বুঝতে পারছি না। এক মামার মাধ্যমে আসা তাদের। মা আর বড় আপু রান্না পুরো দমে শুরু করে দিয়েছে।
মা আর আপু রান্না করছে। বাবা গ্রামের বাড়িতে গেছে। ভাবী আমাকে রেডি করে দিল। এর ৫ মিনিটের মাথায় কলিং বেল বেজে উঠল। ভাইয়া দরজা খুলে দিল। আমি অদ্ভুত ভাবে বসে আছি সবার সামনে। আজ বাবা বাসায় থাকলে মানা করে দিতাম এরকম হুটহাট কি ভালো লাগে। ছেলেটা কিরকম তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ঘরের প্রত্যেকটা কোণা যেন খুটে খুটে দেখছে এরকম ভাবে। মা আর আপু নাস্তা নিয়ে এল। ছেলেটা বেশ ভদ্র মনে হল। সালাম দেয়া সবার কুশলসংবাদ জানল আগ বাড়িয়ে। কথাবার্তা বেশ ভালো। মাথা ভর্তি চুল, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা ব্লেজার পড়া বেশ ভালো ই লাগছে দেখতে।
নাস্তা করে হঠাৎ ছেলের মা আমাকে ডেকে উনার পাশে বসালেন। আমি বসলাম। আর কোনো কথা না বলে ই উনি ব্যাগ থেকে আংটি বের দিলেন। দুটো আংটি। আচকমা আংটি পড়িয়ে দেওয়ায় আমরা সবাই একটু অবাক হয়ে গেলাম। এভাবে ১ম এসে এরকম আংটি পড়িয়ে দিল ব্যাপার টা বেশ অদ্ভুত। কিন্তু মা ভাইয়া ভাবী আপু কিছু ই বলছে না। চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। যেন সব নরমাল। আদ্রের মুখ হালকা হাসি। এই হাসিটা দেখে আমার ভালো লাগার কথা কারন এত সুন্দর হাসি আমি আর কারো মুখে দেখিনি। এতটা নির্মল হাসি। কিন্তু আমি কেমন জানি ঘাবড়ে গেলাম।
মাঝরাতে আংটি পড়িয়ে দিয়ে নাস্তা করে ঠিক ৪:৪৫ মিনিটে উনারা চলে গেল। পুরো রান্না শেষ হল না, না খেয়ে চলে গেল। আমি যেন ঘুরের মধ্যে আছি। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। সামনে পরিক্ষা এখন এসব ঝামেলা। মোবাইলে ছবি গুলো দেখছিলাম আংটি পড়ানোর ছবি। শুধু আংটি দুটোর ছবিও ছিল। কিন্তু তারপরও আর্দ্রের মুখটা মনে করে ভালো লাগছিল খুব। কিরকম একটা মায়া মায়া চেহারা শুভ্রতায় ঘেরা। বাবা পরদিন ই চলে আসলেন। বিষন্ন চেহারা নিয়ে। জানতে চাইলে বললেন, উনি আমার জন্য আর যে ছেলে আসবে দেখতে মামার মাধ্যমে তার জন্য আংটি বানিয়ে ছিলেন। মামা বলছিলেন আসলে ই নাকি পাকা কথা হয়ে যাবে। কিন্তু বাবা সেই আংটিগুলো বাড়িতে এনে কোথায় হারিয়ে ফেলেছেন।
যখন ই মা আর ভাইয়ার মুখ থেকে রাত ৩ টায় মেহমান আগমনের কথা জানলেন আর আংটি দুটো দেখলেন কেমন জানি অবাক হয়ে গেলেন। বার বার বলছিলেন এরকম একদম এরকম নাকি সেই আংটিগুলো ছিল। এর একটু পরে ই মামা ফোন করলেন। জানালেন যে, মেহমান আসার কথা উনারা আসবে না। মানে কি? গতরাতে যারা এসে ছিলেন তারা কে ছিল তবে? আর মামা ই তো ফোন করল জানাল। সেসব কথা বললে মামা বললেন উনার ফোন অফ পরসু থেকে মোবাইল নষ্ট মামির নাম্বার ব্যবহার করছেন। এসব কথা শুনে কেন জানি আমার মাথাটা ঘুরছিল। বার বার আমি হাতের দিকে তাকাচ্ছি আংটিটা তো আছে আর খুলতেও পারছি না..!
সব যেন ঘুলাটে হতে লাগল সবার কাছে। সব শেষে জানা গেল, এ বাড়িতে একটা মেয়ে ছিল খুব রুপবতী। একটা ছেলে তাকে পছন্দ করত ছেলেটা অবস্থা ভালো তবে হিন্দু আর মেয়ের পরিবার মুসিলম। একদম পুরো বিধি বিধান মানা মুসলিম। তাই মেয়ের পরিবার মেনে নেয়নি। ফলে ছেলে মেয়ে দুজন আত্মহত্যা করে। তারা একে অপরকে ভালোবাসত। আর এরপর থেকে যারা এখানে আসে তাদের মেয়ে থাকলে এরকম ঘটনা ঘটে। ঘটনা জানার পর আমরা বাসা ছেড়ে দিলাম। যখন ই বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় রওয়না হলাম তখন হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার হাতে আংটি টা নেই। কোনো অজানা কারণে আংটিটা খুজে ই পেলাম না। এমনকি মোবাইলের ছবি গুলোও নেই। ভয়ে হাত পা কাঁপছে আমার।
এর বেশ কয়দিন পর সবকিছু অনেক স্বাভিবক হয়ে এলো। নতুন বাসা সবকিছু নরমাল। খালামনি আসলেন। কোনো এক দরকারে। মা বাবার সাথে কথা বলে আমাকে একটা খাম দিলেন হাতে। আমি খুশি মনে খাম খুললাম। খুলে দেখে ই আমার সারা গা শিউরে উঠল একি দেখছি। নাম খেয়াল করতে ই দেখলাম আর্দ্রের জায়গায় আদিব,,,আর চেহারা ! অথচ এই চেহারাটার কথা আরো কারো ই মনে নেই। শুধু আমার মনে আছে আশ্চর্য জনক ভাবে। আবার সেই নির্মল হাসি মুখ… চুল, চোখ আমার হাত কাঁপছে।