চশমাওয়ালা

চশমাওয়ালা

আব্বু আম্মু জোর করে এক হাবলার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন।ছেলেটার নাম কাব্য।কাব্যকে আমার একদম পছন্দ না।আর পছন্দ হবেই বা কি করে,আমার তো পছন্দ স্মার্ট,হ্যান্ডসাম,কিউট ছেলে।কিন্তু কাব্য একদম তার উলটো,এক দম সহজ সরল,সাদাসিধা। কিন্তু হুট করে একদিন আব্বুর বন্ধুর পরিবার আমাদের বাসায় আসলেন আর আব্বু বললেন আজই আমার বিয়ে।এবং তার বন্ধুর ছেলে কাব্যর সাথেই।আমি খুব না করলাম,কিন্তু বাবা মা আমার বারণ শুনলেন না। আম্মু তো জানে আমার কেমন ছেলে পছন্দ,তবুও তারা আমার ভালো লাগা গুলোকে খুন করে কাব্যর মত এক হাবলার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন।

আমি বার বার না করায়,সেদিন বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন।আর বাধ্য হয়ে আমার কাব্যকে বিয়ে করে নিতে হয়।
হাবলা টাকে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।আমি বসে আছি, পাঞ্জাবী আর চশমা পরা ছেলেটা ধীর পায়ে রুমে ঢুকলো। ইশরে,চশমা।অসহ্যকর একটা বস্তু।চশমা দেখলেই আমাত গা ঘিনঘিন করে। হতে পারে এই ছেলের চোখে সমস্যা।তাইতো চশমা পরে আছে।আল্লাহ্‌, শেষমেস এই চশমাওয়ালাই আমার ভাগ্যে জুটলো? কাব্য আমার সামনে এসে একটু কেশে বল্লো,

-আমি কি বসতে পারি?
-না পারেন না,আপনি দাঁড়িয়ে থাকুন।আর আমি ঘুমাই।

এই বলে আমি আমি খাটের ওপাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে যাই। আম্মু আব্বুর সাথে কথা কাটাকাটি,কান্নাকাটি,বিয়ে এসব ঝামেলায় আমি টায়ার্ড হয়ে যাই।শুয়ার সাথে সাথে কখন যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তার খেয়াল ই নেই। সকালে ঘুম থেকে জেগে তাকিয়ে দেখি কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।

-এ কি আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
-আপনি না রাতে বললেন দাঁড়িয়ে থাকতে।তাই দাঁড়িয়ে আছি।আপনি তো খাটে বসার অনুমতি দেন নি আমাকে।
-তাই বলে কি সোফা ছিলোনা?ওখানে বসা গেলোনা? মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো কাব্যর কথা শুনে।সারারাত হাবলাটা দাঁড়িয়েছিলো।
-ঠিকাছে ঠিকাছে যান এবার ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলুন।আমিও ফ্রেশ হয়ে নেই।

বিয়ের পরের দিনই আমার সারা গায়ে জ্বর। আমি নাস্তা করে এসেই শুয়ে পড়লাম। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। আমি যখন চোখ খুলি দেখি কাব্য আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।

-আপনি?
-দেখুন,আপনি অন্য কিছু ভাববেন না।

আপনার গায়ে আমার হাতও লাগেনি দেখুন। রুমাল টা ভিজিয়ে এমন ভাবে আপনার কপালে রেখেছি আর তুলেছি যাতে আমার হাত আপনার কপালে না লাগে। মনে মনে বলছি, কি এক পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি। বিয়ের ৫ দিন পর হঠাৎ করেই আমার মাথায় প্রচুর ব্যথা শুরু হয়।চোখে যেন অন্ধকার দেখছি।অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই আমি। দ্রুত কাব্য আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।ডাক্তার আমাকে কিছু মেডিসিন আর একটা চশমা হাতে ধরিয়ে বলেন, মেডিসিন গুলা নিয়মিত খাবেন আর আজ থেকে এই চশমা টা আপনার সারাজীবনের সঙ্গী।এটা যত্ন করে রাখবেন।

কাব্যকে আমি চশমার জন্য আরো বেশি বিরক্তবোধ করি,অথচ চশমাটা ও এমনিতেই পরে,কম্পিউটার ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করতে হয় বলে পরে। তাই রেগুলার পরার অভ্যাস হয়ে গেছে ওর।ও চাইলেই খুলে রাখতে পারে।অথচ আমার তো এখন সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে গেলো এই চশ্মা। বাসায় এসে আমি শুয়ে আছি আমার সব বান্ধবীরা আমার বাসায় চলে আসে।

-কি রে তোরা?
-হুম,হুট করে বিয়ে করে নিলি।আমাদের তো জানালিওনা।রাগ করে ছিলাম তোর উপর।কিন্তু যখন জানলাম তুই অসুস্থ তখন সবাই রাগ ভুলে একাই চলে আসলাম তোকে দেখতে।

-কিভাবে জানলি আমি অসুস্থ?
-টিনা দেখেছে তোকে হসপিটালে নিয়ে যেতে।আর তোর বর নাকি যে কান্না করছিলো।

পরে আমি ফোন দেই তোর নাম্বারে,ফোন তোর বর রিসিভ করে। আর তার কাছ থেকেই সব কিছু জানতে পারি।আসলেই দুলাভাই খুব ভালো রে। কি সুন্দর করে আমার সাথে কথা বল্লো।আমাকে আসতে বল্লো,আর বল্লো সব বান্ধবীদের নিয়ে যেন চলে আসি। আর সরিও বল্লো,বিয়েটা হুট করে হয়ে যাওয়ায় কাউকে বলতে পারেনি বলে। কিন্তু দুলাভাই কই?

-কি জানি কোথায় গেছে।
-এই তো আমি এসে গেছি। কেমন আছেন সবাই?
-আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো।আপনি?
-এইতো চলছে।

কাব্য বাজার করে নিয়ে এসেছে। ও নিজেই নাকি রান্না করে খাওয়াবে আজ সবাইকে। মিনা,টিনা ওরা কাব্যকে কাটাকুটি করে দিলো।কাব্য নিজেই সব কিছু রান্না করলো। বাহ্ ছেলেটা ভালো রান্নাও পারে। খাওয়াদাওয়া শেষে বান্ধবীরা সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো। মিনা বলে গেলো,জানিস দেখে শুনে স্মার্ট সুদর্শন ছেলে বিয়ে করলাম।যাতে লোকে ওকে দেখে বলে মিনার বর টা যা হ্যান্ডসাম না। কিন্তু বুঝিনি শুধু মাত্র সৌন্দর্য আর স্মার্টনেস ই জীবনে সব কিছু না। ভালবাসা,কেয়ার,স্বামী-স্ত্রীর দুজনের প্রতি দুজনের মায়া এগুলাই সব কিছু। ভাগ্যগুনে এমন বর পেয়েছিস।দোয়া করি সুখী হ। রাতে আমি বসে আছি।কাব্য আমার জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে এসেছে।

-আপনি কি একাই খাবেন?নাকি আমি খাইয়ে দিবো? তাছাড়া কাল থেকে নিজের খেয়াল নিজেরই রাখতে হবে।আমার ছুটি শেষ।জবে জয়েন করতে হবে।

-আর দুই টা দিন বেশি ছুটি নেয়া যায়না?
-কেন?
-ঝগড়া,অসুস্থতা,মান অভিমানেইতো এক সপ্তাহ কেটে গেলো।

ভালবাসারই তো সময় পেলাম না।আমার চশমাওয়ালাটাকে ভালবাসার জন্য দুইটা দিন সময় দিন আমাকে।ছুটি বাড়িয়ে নিন। কাব্য আমার চোখের দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে বল্লো,

-আমি কি আপনার হাত টা একটু ধরতে পারি?
-হুম পারেন যদি কখনো না ছাড়েন।
-কোন দিন ছাড়বোনা।কোন দিন না।

হোক না কাব্য সাদাসিধা,হোকনা সে চশমাওয়ালা।কিন্তু আমাকে তো ভালবাসে।আমার জন্য তো মায়া আছে।
আর জীবনে চলতে গেলে এই ভালবাসাটাই প্রয়োজন। সৌন্দর্য তো আজ আছে কাল নেই,স্মার্টনেস তো আজ আছে কাল নেই। কিন্তু ভালবাসা,সেটা সারাজীবন থাকবে।আর বাড়তে থাকবে,বাড়তেই থাকবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত