-শুনলাম তুই নাকি আজকাল ভবিষ্যৎ বলে বেড়াচ্ছিস?
আমি তখন চানাচুর থেকে বাদাম বেছে আলাদা করে রাখছিলাম। চানাচুরে বাদাম দেয়ার আইডিয়া টা যার মনে মনে তার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করতে ব্যস্ত ছিলাম। তাই খালার কথা খেয়াল করা হয় নি।
-কিছু বললে খালা?
-কালা হয়েছিস? কথা শুনতে পারিস না?
-খেয়াল করিনি। আবার বলো।
-তুই আগে চানাচুরের সব বাদাম আলাদা করে রাখ তারপর বলছি।
-হয়ে গেছে। বলো।
-তুই নাকি তোর আশেপাশের মানুষদের ভবিষ্যৎ বলে বেড়াচ্ছিস?
-কে বলেছে তোমাকে?
-যেই বলুক বিষয়টা সত্যি?
-হু। তুমি কি তোমার ভবিষ্যৎ জানতে চাও? দাও তোমার হাত সামনে রাখো।
-ধ্যাত। আমার আবার ভবিষ্যৎ কী রে? আমার মেয়েটার হাত দেখে একটু বলে দে তো ওর ভাগ্যে কি আছে?
-আচ্ছা রাহা কে ডাকো।
খালা চেঁচিয়ে রাহা কে ডাকতে লাগলো। রাহা পাশের রুমেই ছিলো। কিন্তু খালা এমন জোরে চেঁচাচ্ছে যেন রাহা আরো দশ বাড়ি দূরে আছে। রাহা কানের মধ্যে আঙুল দিয়ে কানের পোকা বের করার চেষ্টা করতে করতে এই রুমে আসলো।
-কি হলো চেঁচাচ্ছো কেন?
-তোর হাত টা দেখা? রাহা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলল
-আসিফ ভাইয়া জীবনে কোনোদিন এক টাকার চকোলেট নিয়ে এসেছে বলেতো আমার মনে পড়ে না। আজ কি এমন নিয়ে এসেছে শুনি?
-বেশি কথা বলিস না তো। হাত বাড়া।
ও হাত টা বাড়িয়ে দিলো। আমি বিজ্ঞের মত ভাব নিয়ে ওর হাত দেখতে লাগলাম। খালার কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ। ডাক্তার রা যেমন রোগীর অসুখ মারাত্বক পর্যায়ে গেলে তার সামনে কিছু বলে না তেমনি আমিও রাহার সামনে কিছু বললাম না।
-রাহা তুমি ওই ঘরে যাও।
-হুহ। আপনার এই ভোজবাজি শুধু আমার মায়ের সামনেই চলবে। মুখ ভেংচিয়ে ও চলে গেল। খালা উৎকণ্ঠিত হয়ে বললেন
-কিরে খুব খারাপ কিছু হবে?
-হু খালা। অবস্থা তো খুব খারাপ। তোমার মেয়ে তো পালিয়ে বিয়ে করবে??
-কি বলিস!!
-হু। ছোট বেলা থেকে মেয়েকে এমন টাইট দিয়ে রেখেছো যে পালিয়ে গিয়ে তোমার নাক কেটে তোমার উপর প্রতিশোধ নিবে। বুঝলে? আমি আর কিছু বলার আগেই দেখলাম খালা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আমি রাহা কে ডাকলাম। রাহা এসে মায়ের অবস্থা দেখে পেরেশান হয়ে উঠলো।
-এমন অবস্থা কি করে হলো? আপনি মাকে কি বলেছেন?
-আমি বলেছি তুমি পালিয়ে বিয়ে করবে।
রাহা রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। আমি রাহাকে ওই অবস্থায় রেখে চলে আসলাম। যাওয়ার সময় ওদের পারিবারিক ডাক্তারকে খবর দিয়ে আসলাম। রাহার কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি হালকা সাজুগুজু করলেও খালা সন্দেহ করতেন যে ও নিশ্চয়ই কোনো ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। যেই ফোনটা ছিল সেটাও নিয়ে নেওয়া হয়েছে তার থেকে। খালা নিয়মিত আমাকে আপডেট দিয়ে যাচ্ছেন । আমিও খালাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি।
-আসিফ বলছিস??
-আমার ফোন আমি ছাড়া কেউ ধরে না খালা।
-শোন আমি রাহার থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছি।
-ভালো করেছো।
-আজকে চোখে কাজল, হাতে চুড়ি পড়ে যাচ্ছিল। নির্ঘাত যার সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্লানিং করছে তার সাথে মিট করতে যাচ্ছিল।
-আমারো তাই মনে হয়। হতে পারে সেই ছেলেটা ওর সাথে একই কলেজে পড়ে।
-আজ থেকে ওর কলেজ যাওয়াও বন্ধ। অচেনা একটা নাম্বার থেকে আমার কাছে কল আসলো। কল ধরতেই রাহার কণ্ঠ ভেসে উঠলো।
-আমার যদি একটা খুন মাফ করা হতো তাহলে আমি আপনাকে খুন করবো। আপনার মত জঘন্য মানুষ আমি আর দেখিনি। আপনার জন্য আমার বাইরে যাওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপনি এমন টা কেন বললেন?
-এমনি বলেছি।
-আমি আপনার কথাকে ভুল প্রমাণিত করবো। আমার বিয়ে আমার মায়ের ইচ্ছেতেই হবে। আপনি আমার সম্পর্কে আর যা যা ভবিষ্যৎ বানী করবেন আমি সব ভুল প্রমাণিত করবো। আমি পিয়াস কে যতটা ভালোবাসি তার চাইতে বেশি আপনাকে ঘৃণা করি। ওর সাথে সত্যি সত্যি ই আমি পালিয়ে যাওয়ার প্লানিং করেছিলাম। কিন্তু সেটা আমি করবো না। And I promise…
-তুমি ভালো থেকো রাহা। আমি একটু ব্যস্ত আছি। রাখছি।
রাহা সত্যি ই তার প্রমিস রেখেছে। পিয়াসের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেনি। পারিবারিক ভাবে ফ্যামিলিকে মানিয়ে তারপর ওদের বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু আসিফ রাহার বিয়েতে যায় নি। রাহা ওকে সেখানে দেখলে একদম সহ্য করতে পারতো না। এমন একটা গুরূত্বপূর্ণ দিনে মেয়েটাকে রাগিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।