সমাধান

সমাধান

শাকিরা আন্টির বয়স তখন ২১ ছিলো ,আর আমার ছিলো ১৪ বছর। আন্টির গায়ের রঙ একদম কালো ছিলো!সামনের দাঁত গুলো উঁচু ছিলো যার কারণে মানুষের চোখে তিনি অসুন্দর বলে গণ্য ছিলেন,যার জন্য বিয়ে ও হচ্ছিলো না।

আমি অনেক কিছুই বুঝি তখন,উনার বিয়ের জন্য বেশি পাত্র ও আসতো না,,,,আর যদি ও একটা দুইটা আসতো কিন্তু দেখে যাওয়ার পর তাদের আর কোনো হদিস পাওয়া যেতো না। দরিদ্রতার কারণে উনার পড়ালেখা ও ইন্টারমিডিয়েটে থেমে গেছে,কারণ উনার বাবা উনার ৫ বছর বয়সে মারা গেছে, ছোট আরেকটা বোন ও আছে।
পরিবার চলতে হিমসিম খেতো বলে তিনি একটা কিন্ডারগার্টেনে চাকরি নিয়েছিলেন। যেখান থেকে মাত্র ২ হাজার টাকা পেতেন, সেটা দিয়েই ছোট বোন আর মায়ের সামান্য চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করতেন৷

আমাকে তিনি সবসময় সন্ধ্যার পর পড়াতে আসতেন, শিক্ষক হিসাবে বাসায় আসতেন তিনি। উনি যখন আমাকে পড়াতেন কথা বলতেন আমি মাঝে মাঝে অবাক হতাম,এতো সুন্দর করে একটা মানুষ কিভাবে কথা বলে?
আমার কাছে এতো ভালো লাগতো সেটা বুঝানোর মতো না,কিন্তু উনাকে পাত্র পক্ষের কাছে কেনো যে পছন্দ হয় না বুঝি না! তখন ভাবতাম বাহ্যিক সৌন্দর্য টাই কি মানুষের কাছে সব।? আমি যখন উনাকে বলতাম,,আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে আন্টি, আপনি অনেক সুন্দর আর আপনার ব্যবহার ও অনেক সুন্দর। তখন উনি আমার গাল টেনে বলতেন,আরে কিউটি আন্টি দেখতে খুব জগণ্য বুঝলে? না হলে কি আর কেউ এক পলক দেখেই মুখ ফিরিয়ে নেয়!? খুব খারাপ লাগতো আন্টির কথা গুলো।

উনার ছোট বোন আবার মোটামুটি অনেকটা সুন্দরী, তাদের বয়সের মধ্যে মাত্র ৩ বছরের ব্যবধান৷ তাই চারদিক থেকে ছোট মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতো। কিন্তু উনার মা সেটা গ্রহণ করতেন না, বড় মেয়ের এমনিতেই বিয়ে হচ্ছে না এর মধ্যে ছোটটাকে বিয়ে দিলে যদি বড়টার আর না হয় সেটা নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে ছিলেন। শাকিরা আন্টি বলতেন উনার জন্য উনার বোন সামিরাকে যেন ঘরে বসিয়ে না রাখে,,বিয়ে হোক এতে উনার আপত্তি নেই। কিন্তু উনার মা কখনোই এই কথা চিন্তা ও করতেন না,বলতেন আল্লাহ যা ভাগ্যে রাখছে তাই হবে কিন্তু বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছি না।

শাকিরা আন্টির বয়স যখন ২২ এর মধ্যে পড়েছে তখন শরীরে এলার্জী থেকে বিরাট সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। প্রথমে নরমাল ভেবে ভালো চিকিৎসা করা হয় নি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সারা শরীরে সেটা বিকট আকার ধারণ করেছিলো । ২২ বছর বয়সে উনাকে মাথার চুল ন্যাড়া করতে হয়েছে,কারণ চুল সব উঠে গেছিলো এমনিতেই । এরপর জমি বিক্রি করে ঢাকা নিয়ে ভালো চিকিৎসা করা হলো কিন্তু ডক্টর বলেছিলেন এই সমস্যা টা কখনো সেরে যাবে না,আর বাংলাদেশে উনাকে নিয়ে কম সংখ্যক এমন রোগী পেয়েছেন তিনি। যাদের ও সারা শরীর এভাবে টোসা উঠে একদম এসিডের মতো পুড়ে গেয়েছিলো।

ডক্টরকে তিনি নিজে জিজ্ঞেস করেছিলেন উনার কি হয়েছে আর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? তখন নাকি ডক্টর উনাকে বলেছিলেন বেঁচে থাকা শুধুই আল্লাহর হাতে এখন। এই কথা টা তিনি পরিবারের কাছে গোপন করেছিলেন৷ সেসময় বাড়িতে আনার পর তিনি একটু মাত্র সুস্থ হয়েছিলেন,,কিন্তু এই শরীর নিয়েই আবার স্কুলটাতে পড়াতে যাওয়া শুরু করেছিলেন৷ চেহেরাটা ও পুড়ে গেছিলো। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনি এতো অসুস্থ কিন্তু এতো দূর হেটে গিয়ে পড়ান কেনো?

জবাবে বলেছিলেন,যতোদিন বেঁচে আছি পেট তো চালাতে হবে মনা । এর ৬ মাস পরে আবারো রোগ টা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছিলো, তখন উনার অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলো, কোলে করে ঘরে বাইরে আনা নেওয়া করতে হতো। তখন মানুষের থেকে খুব কষ্টে ধার নিয়ে আবারো ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, আর তখন ই আমরা সবাই শুনেছিলাম ডক্টর উনাকে আগেই বলেছিলেন এই রোগ টা ভালো হওয়ায় সসম্ভাবনা কিংবা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ও নেই। কিন্তু শাকিরা আন্টি উনার মাকে বলতেন আম্মা সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। সব কিছুর সমাধান হবে। হ্যাঁ সবকিছুর সমাধান হয়েছিলো মাত্র ৬ দিন পরেই। সৌন্দর্যেরবিহীন অবহেলিত জীবন টা তার সমাপ্তি হয়েছিলো। আর দূর্দান্ত সমাধান দিয়ে গিয়েছিলেন সবকিছুর।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত