জীবন

জীবন

কলিংবেল বাজার শব্দে গিয়ে দরজা খুলে দেখি আমার স্বামী ইফতী। একটা মেয়ের হাত খুব শক্ত করে ধরে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।যা দেখে বুকটা ধককরে উঠলো আমি তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করলাম।

— কে এই মেয়ে ইফতী?
— আমার বৌ। মুখগম্ভীর করে বলে ইফতী।
— মানে কি ইফতী!!
— রুশা সব জানো তুমি!! দাঁতে দাঁত চেপে বলে ইফতী।
— সব জানি মানে এই মেয়ে কে?
— আমার প্রথম স্ত্রী রুহি ও।এবার বুঝেছো!! চেঁচিয়ে বলে ইফতী।

কথাটা শুনা মাএ আমার শরীল ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করি।কাঁপা কাঁপা পায়ে পিছাচ্ছি দেয়ালে ঠেস দিয়ে। এমন মনে হচ্ছে আমি এক্ষুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। ইফতী এগিয়ে এলো মেয়েটার উপসস সরি আমার সতীন রুহির এর হাত ছাড়িয়ে। আমাকে ধরতে বাট আমি হাত দিয়ে বাধা দিলাম ইফতীকে আমাকে ধরতে। আমি শুধু ফুফাচ্ছি কান্না আসছে না অতিরিক্ত শক পেয়ে। ইফতী আমাকে আর ধরলোনা। আমি সোফায় ধপ করে বসে পড়ি। ইফতী দরজায় গিয়ে মেয়েটাকে ভিতরে আসতে বলে। মেয়েটা মাথা নিচু করে সেখানেই দাঁড়িয়ে জেনো নতুন বৌ কেউ তাকে বরণ করলে ভিতরে আসবে!!!

ইফতী ওকে ভিতরে এনে রুমে নিয়ে গেলো।আমাদের রুমের পাশের রুমে।যা দেখে আমার বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে। এবার আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম। কিন্তু ইফতী বাইরে আসার আগে। আমি দৌড়ে আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে এসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। এইদিকে ইফতী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে।

— রুহি যাও ফ্রেস হয়ে নাও।
— মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে তোমার ওর কাছে যাওয়া উচিৎ। রুহি করুণ স্বরে বলে উঠে।
— যাচ্ছি।রাতে আর আসবো না রুশাকে সামলাতে হবে যেভাবেই হোক।তুমি সাবধানে থেকো আর ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়ো।

একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই ইফতী উঠে চলে যায়।রুহিকে কিছু বলতে না দিয়ে। ইফতীর যাওয়ার পানে রুহি তাকিয়ে থেকে চোখেরজল ফেলে।আজ ইফতীর সন্দেহের জন্য দু দুটি মেয়ের জীবন নষ্ট। দু দুটি মেয়েকে তার স্বামীর ভালোবাসার ভাগ দিতে হবে না চাওয়া শর্তে ও।কিন্তু কিছুই করার নেই এইটাই যে নিয়তি।এইটাই জীবন কার জীবনে কি কি হয় কেউ জানে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুহি। ইফতী কখন থেকে রুশাকে ডাকছে দরজায় লক করছে বারবার কিন্তু রুশা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে দরজা খুলছেনা।

— রুশা দরজা খুলো নাও।না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি। চেঁচিয়ে উঠে ইফতী।

রুশা ভয়ে কেঁপে উঠে ইফতী চিৎকার এ। কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে এসে দরজা খুলে রুশা। ভয়ানক জোড়ে কেঁদে উঠে রুশা ইফতীকে দেখে। ইফতী দ্রুত এগিয়ে এসে রুশাকে জরিয়ে ধরে। রুশা ইফতীর বুকে ঢলে পড়ে কাঁদতে থাকে। ইফতী আটকায়না রুশাকে। কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে রুশার সামনে বসে ইফতী। রুশা ইফতীর হাত শক্ত করে ধরে বাচ্চাদের মতো বলে উঠে।

— ইফতী ঐ মেয়েটা কাজের মেয়ে তাইনা?? ওকে দেখে তোমার বৌ মনে হয়না। মেটার শরীরে মারের দাগ। রাস্তা থেকে তুলে এনেছো না??আমার সাথে মজা করছো তুমি না..

রুশার কথা গুলা এতোক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে শুনছিলো ইফতী। রুশার কথা শেষ না হতেই কষিয়ে চড় বসি দেয় ইফতী। রুশা গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।ইফতী তার উপর হাত তুলেছে বিশ্বাস হচ্ছে না রুশার।
ইফতী কোনো দিকে পরোয়ানা করে উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠে ইফতী।

— সাহস কি করে হলো!!রুহিকে কাজের মেয়ে বলার, রাস্তার মেয়ে বলাম?? ও আমার বৌ শুনেছিস বৌ আমার প্রথম বৌ। আর প্রথম ভালোবাসা ও আমার তুই জানিস সেটা ভালো করেই। আর একদিন রুহিকে নিয়ে আজেবাজে কথা বললে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো বাড়ি থেকে। মাইন্ড ইট। বলেই ইফতী গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রুশা আর এক্টু ও কাঁদেনা। চুপচাপ শুয়ে পড়ে। অতিরিক্ত কষ্টে মানুষ কাঁদতে ভুলে যায়। আর রুশা সেই অতিরিক্ত কষ্ট পেয়েছে ইফতীর থেকে। তাই রুশা কাঁদতে ভুলে গেছে। ইফতী রুম থেকে বেরিয়ে রুহির কাছে যায়। এখন এক মাএ রুহিই শান্তি দিতে পাড়বে তাকে আর কেউনা। ইফতী রুমে ঢুকে দেখে রুহি বেডে বসে কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। ইফতী এগিয়ে গিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।

— সরি রুহি আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা। আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ। গম্ভীরকণ্ঠে বলে ইফতী।
— আপনি কেনো চেঁচামেচি করলেন?? কাঁদতে কাঁদতে বলে রুহি।
— ঘুমাও। আজ আমি তোমার বুকে মাথা রেখে তৃপ্তির ঘুম ঘুমাবো। আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে ইফতী রুহির চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
— আমিও। রুহি বলে উঠে।

ইফতী মুচকি হাসে। ইফতী রুহি আজ তৃপ্তির ঘুম ঘুমালেও। রুশার চোখে দূরদূর কোনো ঘুম নেই। কিভাবে থাকবে? যেই মেয়ের জন্য তার স্বামী বড় সতীন এনে দিয়েছে। সেই মেয়ের কি আর ঘুম আসে?? রুশা এক দৃষ্টিতে ফ্যান এর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটি অসম্ভব ফুঁলে আছে। তাও চোখের পাতি পরছেনা রুশার। রুশা ভাবছে।

— আচ্ছা এতো ভালোবাসার ফল কি ইফতী এভাবে দিলো আমাকে। আমার ভুল কি ছিলো??? আচ্ছা ইফতী এখন কই ঐ মেয়ের কাছে?? আমি এসব কিভাবে মেনে নিবো!!! আজ প্রথম তুমি আমায় মারলে তাও ঐ মেয়ের জন্য?? না আমি এসব মেনে নিবোন। রুশা ফুফাতে ফুফাতে উঠে খুঁজে ব্রেড হাতে নেয়……

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত