সম্পর্কের পথ চলা

সম্পর্কের পথ চলা

– চৈতী! চৈতী পেছন ফিরে দেখে শিহাব দাড়ানো। চৈতী মুখে একটা প্রশস্ত হাসি টেনে বলে,

– কি হয়েছে স্যার। কিছু বলবেন?
– কতবার বলেছি, অফিস শেষে স্যার বলবানা। এখন উঠো গাড়িতে।
– নাহ শিহাব আমি যেতে পারবো।
– প্রতিবার বলো, আর আজকে খুব বড় মিটিং হয়েছে দেখো ৯ঃ৩০ বেজে গেছে তুমি যদি এখন একা যাও তোমার মিনিমাম ১১ টা বাজবেই। তাই আমি তোমাকে ৪০ মিনিটে পৌছে দিচ্ছি।

– রোজ তো এভাবেই যাতায়াত করি শিহাব। এখন তুমি ড্রপ করলে তোমার উল্টো পথ যেতে হবে। তার চেয়ে ভালো তুমি আমার টেন্সন বাদ দিয়ে নিজের এবং নিজের হবু বউয়ের চিন্তা করো। শিহাব আরেকটু এগিয় এসে বলে,

– সারাজীবন চিন্তা করতে দিবে আমাকে, আই প্রমিস ইউ কোনোদিন অবিশ্বাসের পাত্র হবো না। চৈতী কথাটা শুনে দুইপা পিছিয়ে যায়। তার এতদিনের সন্দেহ আজ ক্লিয়ার হয়েছে। কিন্তু স্যার হিসেবে খুব সম্মান করে তাই বলে কি! নাহ এসব ভাবাও পাপ।

– স্যার আমার লেট হচ্ছে, আমি চললাম।
– চৈতী আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। প্লিজ আমি আর তোমাকে অড সিচুয়েশনে ফেলাবো না প্লিজ গাড়ি তে উঠো।
চৈতী কিছুক্ষণ ভেবে একটা বড় নিশ্বাস ত্যাগ করে গাড়িতে উঠে। গাড়ি চলছে আপনমনে আর শিহাব আঁড়চোখে তাকাচ্ছে। এইবার চৈতী নিজ থেকেই বলল,

– শিহাব উই আর নট সেম। আই এম থার্টি টু নাও। এন্ড ইউ অলসো থার্টি টু। আমি জব করি সাথে আই এম সিঙ্গেল মাদার। তোমার ভবিষ্যৎ একদম ব্রাইট। আর আমি স্ট্রাগল করি। শিহাব এতক্ষণ চুপচাপ কথা গুলো শুনছে এখন সে গাড়ি স্টপ করে দেয়। চৈতী অবাক হয়। শিহাব বলা শুরু করে,,

– জানো চৈতী তোমার সাথে আমার ওঠাবসা ৪ বছরেও বেশি। এর আগের থেকে আমি তোমাকে চিনি। কিভাবে জানো তুমি চার বছর আগে একটা স্কুলে চাকরি করতে সেখানে তোমার মেয়েকে নিয়ে তুমি আসা যাওয়া করতে। তোমার মুখে ক্লান্তি ছিলো কিন্তু নিজের মেয়ের জন্য কোনো রকম হতাশা না। আমি অন্য মেয়েদের সাথেও ওঠাবসা করি। কিন্তু যতটুকু ভালো তোমার সাথে ফিল হয় যতটুকু ভালোলাগা তোমাকে দেখলে কাজ করে আমি বুঝে ফেলেছি এই চারটা বছরে আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।

– ঠিক আছে মানলাম শিহাব ভালোবেসে ফেলেছো। কিন্তু আমি আমার ভালোর জন্য আমার মেয়ের খুশি স্যাক্রিফাইস করতে পারবো না। আমার মেয়ে যেখানে খুশি সেখানে আমি খুশি। আজ পর্যন্ত কতগুলো সম্পর্ক টিকেছে এই শত বাবা বা শত মায়ের পরিবারে। অধিকাংশই শুধু ঝগড়া, পারিবারিক অশান্তি। আমি চাইনা আমার মেয়েকে আমি অবহেলা করতে শুধু মাত্র একটা নতুন সম্পর্কের জন্য। যতই বলো আমি পারবো না। না তোমার সাথে না অন্যকারো সাথে।

– চৈতী আচ্ছা মানলাম। জাস্ট ফরগেট ইট। আমার কথা গুলো বের করে ফেলো আমরা এখন একটু ফ্রেন্ডস দের মত কথা বলি? চৈতী চোখ বন্ধ করে হেলান দেয় সিটের সাথে খুব টায়ার্ড লাগছে।শিহাব গাড়ী স্টার্ট দেয়। আজ ইতি কলেজ টুর এ গিয়েছে বলে এতটাইম দিতে পেরেছে অফিসে নয়ত পারতো না।

– বেবি কখন নিয়েছিলে?
– হু?
– আচ্ছা, বিয়ে কবে করেছিলে আমি যতদুর জানি তোমার মেয়ের বয়স ১৪ তাইনা?
– চারবছর আগের বয়স এখন থাকবে?
– ওহ সরি তাহলে তো মেয়ে এডাল্ট হয়ে গেছে।
– হুম।
– ১৪ বছরে বেবি হয়েছে বাহ খুব ফাস্ট তো।
– ২০০২ সালে আমার সামনে আমি আমার বোনের মৃত্যু দেখেছি।

আমার বোন আমার থেকে ২ টা বছরের বড় ছিলো বাল্যকালে মা হওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলো। আর এর ফলাফল মৃত্যু ছিলো। নিজের বাচ্চা জন্ম নেয়ার সাথে সাথে বুবু আমার কোলে উঠিয়ে দিয়ে সম্পুর্ণ দায়ভার আমাকে দিয়ে দেয়। তার ৩০ সেকেন্ড এর মাথায় সে মারা যায়। সেইদিন চোখের একফোঁটা পানিও গড়িয়ে পড়েনি আমার কারণ আর হাতে ইতি ছিলো। শিহাব সাথে সাথে ব্রেক মারে কিন্তু চৈতী চোখ খুলেনি তার চোখের কোনা থেকে অশ্রু বের হয়ে গড়িয়ে পড়ে। শিহাব জিজ্ঞেস করে,,

– তারপর?
– ১৪ বছরের মেয়ে ছিলাম, হ্যা বুঝতাম সংসার কি বাচ্চা কিভাবে লালন পালন করা যায় কিন্তু নিজের যে মা হয়ে যাবো সেটা বুঝতে পারিনি। ভাবতাম কিছুদিন পালব তারপর ইতির নতুন মা এসে বা দুলাভাই এসে নিয়ে যাবে। চলছিলো এভাবেই ২ মাস। তারপর দুলাভাই এসে আমার রুম থেকে ইতি কে নেয় খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলাম দুলাভাই আসাতে কারণ দুলাভাই আমার খুব পছন্দের ছিলো কিন্তু সেই দুলাভাই আমার বর হবে সেটা কল্পনাতেও করিনি। বাবা মা সবাই ভয়ে ছিলো কারণ যদি বড় মেয়ের মত আমিও মারা যাই? কারণ বড় বুবুর মারা যাওয়ার অর্ধেকের চেয়ে বেশি অবদান তো দুলাভাইয়ের ছিলো।

সেইদিনই বিয়ে করে নিয়ে যায়। আমি তখন বুঝতাম না কবুল কেন বলতে হয় মোনাজাত ধরে একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে অন্যের বাসায় চলে যাওয়াকে কি বলে ভালোই ভালো চলছিলো শহরের সব কিছু যেন স্বর্গীয় লাগছিলো। দুলাভাইয়ের কাছে যে অনেক টাকা পয়সা সেটা বুঝতে সময় লাগেনি। কিন্তু সেই সাথে আমি ইতিকে নিজের মেয়ে মানা আর ইতি আমাকে মা মানা স্টার্ট করে দেয়। সব কিছুতে শুধু ইতি আর ইতি। সম্পর্কটা এত টা গভীর হয়ে যাচ্ছিলো যে অন্যদিকে নজর ও যাইনি কেউ আমাকে খুব করে চায়।

প্রচন্ড রকমের ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম যখন দুলাভাই আমাকে… কিন্তু নিজেকে বাচিয়ে ফেলি। তাও প্রতিদিন বাচা কি সম্ভব? মা বাবাকে কল করি তারা কোনো ভাবে হ্যাল্প করেনি। তাই উপায় না পেয়ে দুলাভাই যখনি কাজে যেত আমি ইতি কে নিয়ে বের হতাম আর আশের বাসার, তারপর দোকানদার সব জায়গায় না না ধরনের কাজের নটিস চ্যাক করতাম। সব শেষে আমি আমার বিয়ের সব প্রুভ নিয়ে একটা শিক্ষকের কাছে দেই সে সব দেখে আমার মা বাবার কাছে নটিস পাঠায়। কিন্তু সেটাতেই আমার প্রবলেম শেষ হয়নি বয়স কম ছিলো বলে সবাই শুধু তাড়িয়ে দিয়েছে দুলাভাই আমাকে সেইদিন খুব মেরেছে ইতি কে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছিলো সেইদিন ইতি কে রক্ষা করার জন্য পাথে থাকা লোহার ভাস দিয়ে ইচ্ছেমতো জানোয়ারটা কে মেরেছিলাম। তারপর কি হলো জানো?

– চাইল্ড ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট তুলে নিয়ে যায় তাইনা?

চৈতী নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে আজ থেকে ১২ বছর পর সে কেদেছে। ইতির জন্মের ৮ টা বছর নরকের মত কাটিয়েছে চৈতী। শুধু নিজের বোনের কথা রাখতে গিয়ে একটা আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। ইতি কে নিয়ে বাচার নতুন স্বপ্নকে পূরণ করার সেই প্রবল ইচ্ছা সে পূরণ করতে চেয়েছিলো কিন্তু নিজের শরীরে সেই জানোয়ারের ছোয়া গুলোই তুলতে পারেনি। সতিত্ব বাচাতে পেরেছে কিন্তু…. শরীরের স্পর্শ গুলো তো ঠিকই মনের মধ্যে ছুড়ির মক্ত আঘাত কেটেছে। শিহাব আবার বলে উঠে,,

– কখন ছেড়েছিলো? আর ইতি কোথায় ছিলো?
– সেই শিক্ষকের কারণে দ্রুত ছুটে গিয়েছিলাম ইতির থেকে দেড় টা মাস আলাদা থেকে বুঝতে পেরেছি রূহ এর সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে।  ইতি অরফানেজ ছিলো ভাবতে এখনো আত্মহত্যা করতে মন চায়। ইতি কে নিতে হ গিয়েছিলাম যেইদিন সেইদিন তার ওঠা একটা দাঁত দিয়ে প্রচুর কামড়িয়েছিল ভাবতেই হাসি পায়। মেয়েটা নিজের রাগ ঝেড়েছে।

সেই শিক্ষকটার কারণে আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি সাথে সেলাই শিখেছিলাম তারপর গার্মেন্টস এ ঢুকে ইতিকে কোলে রেখে সব করতাম কত কষ্ট। ততদিনে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তাও সেই জানোয়ার টা কাস্টাডি চেয়েছে। সেইদিন খুব গালি দিয়েছিলাম সে কিনা তার মেয়ের মত শালি কে ভোগ করতে চেয়েছে সে নিজের মেয়েকেও ভোগ করতে দ্বিধা করবেনা। কোর্ট না যাওয়া তার বদলে সেই জানোয়ারটা আমাকে একরাতের জন্য চেয়েছে। ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দেয়ার ইচ্ছে করে।

মা বাবা ততদিনে আমার সাপোর্ট করেছে। আমাদের এতটাকা ছিলো না যে কোর্টের মামলা শেষ করব। আর দুলাভাই যতটাকার মালিক তাতে তো জীবনেও না। চলে আসলাম পালিয়ে প্রথমে চিটাগং থেকে সিলেট তারপর পঞ্চগড় তারপর কুষ্টিয়া এভাবে এভাবে তারপর একটা আত্মীয়র বাসায় উঠে সব নতুন করে শুরু করেছি। একবার ভাবো শিহাব, যেই মেয়ে নিজের বয়স দেখেনি একটা সম্পর্কের জন্য। সেই মেয়ে কতটা স্ট্রং হতে পারে? আজ এই চোখের পানি যদি তোমার কাছে দুর্বলতা লেগে থাকে তাহলে মনে রাখবা এই চোখের পানি যখন শুকিয়েছে সেই তখন থেকে আমি আবার নতুন করে জন্ম নিয়েছি। এই বলে চৈতী গাড়ি থেকে নেমে রিকশা ডাক দেয় আর সেটাতে উঠে পড়ে আর শিহাব চৈতীর যাওয়ার পথের দিক তাকায় থাকে।

কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে শিহাব। এত কঠিন সময় কিভাবে পাড় করল! সে টিনেজার ছিলো। গ্রামের মেয়ে আরো। কিভাবে? শিহাব নিজের হাত দিয়ে চোখের রাখে। তারপর কি একটা ভেবে গাড়ি স্টার্ট দেয় সোজা চৈতীর রিকশার সামনে ক্রস করে থামে। রিকশাওয়ালা রিকশা থামাতেই চৈতী চোখ খুলে এতক্ষণ সে চোখ বন্ধ করে ছিলো। শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় চৈতী শিহাবের দিক। আজ কিছু ঘটাবে সে বুঝতেই পারছে। মানিয়ে ছাড়বে নয়ত উল্টা পাল্টা কিছু। শিহাব গাড়ির উইন্ডো নিচে নামায়। সে ইশারা দিচ্ছে কোনো ঝামেলা ছাড়া রিকশা থেকে নেমে গাড়িতে উঠতে।
চৈতী ভাড়া মিটিয়ে নিচে নেমে আসে তারপর হাটতে শুরু করে শিহাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

– এই মেয়ে অনেক ঘাড়ত্যাড়া কিন্তু এই মেয়েই যে আমার চাই। শিহাব গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চৈতীর সামনে থামায়। চৈতী এবার বলেই উঠে,,
– কেন করছেন?
– পরে কি হয়েছে সেটা শুনবো।
– কি?

পরে কি হয়েছে এটা শোনার জন্য এতক্ষণ এখানে আছেন। তাহলে শুনুন ইতির জন্য আমি এতকিছু করেছি সেটা আপনি বা অন্য কোনো পুরুষ তার বউ বাচ্চার জন্য করতে পারবেনা। ইফ ইউ নো হোয়াট একটা পুরুষ ভাবে একটা মেয়েকে বিয়ে করে তাকে ভোগ করে রোজগারের টাকা দিয়ে দিলেই ইনাফ। কিন্তু এটা বুঝেন একটা মেয়ে কি চায় না চায়। একটা মেয়ে কত কষ্ট করে আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষ বুঝতে পারেনা। আপনারা শুধু দেখেন একটা মেয়ে টাকা পেলেই খুশি।
আপনিও সেম। আপনি এখন বলবেন আমি তোমার বস অনেক বড় পজিশন এ আছি খুব ইনকাম করি তোমাকে আর ইতি কে বেস্ট লাইফ দিবো। কিন্তু এটা বুঝেন না আমি যদি টাকা দেখতাম তাহলে আমার দুলাভাইয়ের সংসার করতাম এখন। জাস্ট গো নাও ভালো লাগছে না আমার। শিহাব বের হয়ে আসে আর চৈতীর বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে,,

– এত কি এটিটিউড দেখাচ্ছো! তোমার পিছনে পরে আছি বলেই এত এটিটিউড? তাহলে শুনো ভালো লাগে তোমাকে, ভালোবাসি তোমাকে, তোমার সব কিছুকে, ইতিকেও আপন করে নিবো কিন্তু আমার ফিলিংস আমার চিন্তাভাবনা কে তুমি হার্ট করেছো। এতদিন ধরে তুমি যেই ব্যবহার টা ডিজার্ভ করে এসেছো না আমার থেকে সেটা আজ থেকে এখন থেকে আর পাবাও না। এই বলে শিহাব গাড়িতে উঠে আর স্টার্ট দেয়। চৈতী কিছুক্ষণ একপলকে তাকিয়ে থাকে তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় আর বিড়বিড় করে বলে,,

– ইডিয়ট!

চৈতী পেছন ফিরে কিছু কদম যায় দেখার জন্য সেই রিকশাটা আছে কিনা, কিন্তু ব্যর্থ নেই সেখানে তাই চৈতী হাটা শুরু করে। কিছুদুর এগোতেই একটা চায়ের টঙ্গ দেখতে পায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সেদিকে এগোতে শুরু করে ততক্ষণে ইতির কল আসে চৈতীর মোবাইলে। চৈতী কল রিসিভ করার সাথে সাথে ইতির এত এত কথা শুনতে পায় অজান্তেই হেসে ফেলে। কিন্তু চৈতী এখনো নটিস করেনি সামনেই শিহাব তার গাড়ি পার্ক করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে চৈতীকে দেখছে। শিহাবের রাগ আছে কিন্তু সে যখন ইন্সাল্ট হয় তখন সে তার রাগ দেখায় নয়ত যেকোনো সিচুয়েশনে সে খুব ঠান্ডা মাথায় সব কিছু ভাবে ও করে।

– আম্মু, কোথায় তুমি? আর এত আওয়াজ কেন?
– আমি বাহিরে আজ অফিসে ওভারটাইম করতে হয়েছে।
– এই বুঝি তুমি প্রমিস পালন করেছো যাওয়ার সময় বলেছিলাম না আমি নেই তাই বেশি রেস্ট নিবা আসতে দাও অফিস যেতে দিবো না। হটাৎ কারো টানে চৈতী তাকায় সামনে শিহাব তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে নিজেই কথা বলা শুরু করেছে,,

– এই যে মামনি একদমই টেন্সন করো না তোমার আম্মু আমার সাথে হেফাজতে আছে।
চৈতী বার বার মোবাইল নেয়ার ট্রাই করছে বাট পারছেনা কারোন শিহাব চৈতীর থেকে লম্বা। শিহাব হয়ত ৫’১১” আর চৈতী ৫’৪”।

– এটা কেমন, এভাবে কেউ কারো মোবাইল নিয়ে নেয়? রেগে বলল চৈতী।
– আচ্ছা ইতি তোমার আম্মু কি খুব রাগী?
– আরে আংকেল আর বলবেন না। সে সব পুরুষদের সাথে এমন করে। আমি বুঝিনা সে মহিলাদের সাথে খুব ভালো। লাগে যে আগের জনমের শত্রুতা আছে। শিহাব মনে মনে।ভাবে আগের জনমে না এই জনমেই শত্রুতা আছে।

– আচ্ছা ইতি মামনি এখন একটু তোমার আম্মুর সাথে কথা বলো, চৈতীকে মোবাইল ফিরিয়ে দিলে সে দ্রুত হেটে সামনে চলে যায়,
– ইতি আমি এখন রাখি বাসায় পৌছাতে লেট হচ্ছে বাসায় আসতেই কল করবো,,
– আচ্ছা।
– তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িও অনলাইন দেখলেই খবর আছে।
– আচ্ছা।

কল কাটতেই কাধে কারো স্পর্শ পেতেই পিছনে তাকায়। শিহাব কান ধরে আছে। চৈতী শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার হাটা ধরলেই শিহাব হাত টান দেয় আর বলে,,

– গাড়িতে উঠো।
– উঠবো না।
– কেন?
– কেন মানে উঠতে বলেছি উঠো।
– আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড মিষ্টার শিহাব?

এতটা বাজে কিভাবে হোন? নিজের সেল্ফরেস্পেক্ট বলতে কিছু নেই? আর আজই পেলেন আমার সময় নষ্ট করতে নাকি এটাও প্ল্যান ছিলো। আজ কেউ নাই বাসায় সাথে ওভার টাইম ভালোই ফাসানো যাবে চৈতীকে। তাইনা…ইডিয়ট! শিহাব নিজের রাগ কন্ট্রোল করে কিছুটা দুর গিয়ে একটা রিকশা নিয়ে আসে তারপর নিজে গাড়িতে উঠে চলে যায়। আর চৈতী কিছুক্ষণ তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,

– ইন্সাল্ট সহ্য হয়না আবার আমার সাথে সংসার করার ইচ্ছা হুহ্।

চৈতী উঠে পড়ে রিকশায়। আজ কিছুই ভালো লাগছে না আগেও তো মেয়েকে ছাড়া থেকেছে। তখন তো তেমন কষ্ট লাগেনি। তাহলে আজ কেন ঘুম আসছে না চৈতীর। বিছানায় এদিকসেদিক করতে করতে উঠে বসে একগ্লাস পানি খেয়ে ইতিকে কল করে,, দুইবার রিং করে যখন ব্যস্ত বলা আসছে তখন চৈতী বুঝলো মোবাইল সাইলেন্ট করা আর ইতি ঘুমোচ্ছে। চৈতী উঠে ব্যালকনিতে দাড়ায়।

বিয়ে- একমেয়ের মা হওয়া- ডিভোর্স- পালিয়ে যাওয়া। কতটা ইজি হবে একটা মেয়ের জন্য। সম্পর্কের পথ চলা কি এতই সোজা? এতই সোজা হয় বুকের মধ্যে ইয়া বড় একটা পাথর রেখে নিজের একটা আলাদা দুনিয়া বানানো। আল্লাহ এত শক্তি কিভাবে দেয় একটা মেয়েকে। আগে জানতাম একটা বাচ্চাকে জন্ম দেয়া দুনিয়ার সবচেয়ে বড় কঠিন কাজ যেটার কষ্ট পুরুষ মানুষ পেলে মরার কামনা করবে সেখানে এই জন্ম দেয়ার চেয়ে লালন পালন করা আরো বেশি কষ্টের। যা আজ বুঝলো শিহাব চৈতীর কাহিনি শুনে। শিহাব স্টাডি টেবিলে এসব হিসাব করছে আর ফিল করার ট্রাই করছে কতদিন কতদিন নিজেকে শেষ করার চেস্টা করেছে চৈতী শুধু নিজের মেয়ের দিক তাকিয়ে। মেয়ে না আপন মেয়ে না কিন্তু আপনের চেয়ে আরো বেশি কিছু ইতি চৈতীর জন্য। হয়ত এটাকেই সম্পর্কের পথ চলা বলে। চৈতী চোখ বন্ধ করে হিমশীতল বাতাস উপভোগ করছে আর বড় বড় নিশ্বাস ত্যাগ করছে আর ভাবছে,

– শিহাব আপনি যদি আমার সাথে জড়িয়ে যেতেন আপনি বুঝতেন আমি কি কেউ আমাকে কাদাতে পারেনা। কেউ না। কেউ আমাকে কষ্ট দেয়ার আগে দুইবার ভাবে কারণ আমার শক্তি আমার দুর্বলতা আমার সব সব কিছু ইতি। যে আমার ইতিকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে তাকে আমি নিজের থেকে বেশি ভালোবাসবো। কিন্তু আমার মেয়েকে যে কষ্ট দিতে পারবে তাকে আমি নিজের পায়ের তলায় মেশাতে একবারও ভাব্বো না। সম্পর্ক কোনো তুচ্ছ না! সম্পর্ক গড়ে উঠে আত্মার মিলন দিয়ে। আর ইতির সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। যাকে বের করে নেয়া মানে নিজেকে মেরে ফেলা। সম্পর্কের জন্য অনেক অনেক খারাপ পথে হেটেছি। কিন্তু ইতির গায়ে একটা স্পর্শ আসতে দেইনি। মা হতে হলে আগুনের উপর দিয়ে হাটতে হয় একটা মেয়েকে। যা সবাই পারেনা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত