পরীক্ষার হলে বসে অরুন আবিষ্কার করলো যেইপাশে তার সীট পরেছে সেই সীটের সামনে পেছনে ডানে বামে চারিদিকেই ভয়ঙ্কর সুন্দরী ললনা।পেছনে বসা মেয়েটি নায়িকাদের মতো।সামনে বসা মেয়েটি রূপবানের আপডেট ভার্সন।এই মুহূর্তে যদি সিনেমার মতো কোনো গুন্ডাপান্ডা এসে পরীক্ষার হলে ঢুকে হামলা দিতো তাহলে সে মারপিট করে মেয়েদের কাছে সিনেমার সুপার হিট নায়ক হয়ে যেতো।এতো সুন্দরী মেয়েদের মাঝে সীট পরে নিজের কাছে নিজেকেই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে তার।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়া মাত্রই হাতে গোনা দুই তিনটা প্রশ্ন তার কমন পরেছে।কিন্তু তার কাছে মন্দ লাগছে না।বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর সে পেছনের,সামনের কিংবা পাশের সীটে বসা মেয়েগুলোর কাছে জিজ্ঞেস করার ওজুহাতে কথা বলবে ভেবেই তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে।এক ঘন্টায় নিজের মন মতো লেখার পর অরুনের মনে হলো তার এইবার মেয়েগুলোর কাছে বাকি প্রশ্নের উত্তরগুলো জানতে চাওয়া উচিত।কিন্তু কি বলে সে তদের সাথে কথা বলা শুরু করবে বুঝতে পারছে না।প্রথমে যেই মেয়েটার সাথে কথা বলবে তাকে কি প্রথমে ‘হাই’ বলে কথা শুরু করবে নাকি সরাসরি উত্তর জিজ্ঞেস করবে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।এখন মনে হচ্ছে সকল কঠিন পরীক্ষাও এই পরিস্থিতি থেকে সহজ।পরীক্ষায় উত্তর বানানো গেলেও মেয়েদের সাথে কথা শুরুর সূচনা সহজে বানানো যায় না।অরুন কিছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করে ডানপাশে বসা মেয়েটিকে বললো-
-এই যে শুনছেন?আপনি কি দুই নং প্রশ্নটা পারেন? মেয়েটা কিছু শুনলো কিনা বোঝা গেলো না।অরুন আবার ডাকলো-
-এই যে শুনছেন! মেয়েটি পাশে তাকানো মাত্রই তার আনন্দের তাপমাত্রা বেড়ে গেলো।মেয়েটি বললো-
-আমাকে বলছেন?
-জি।আপনি কি দুই নং প্রশ্নটা লিখেছেন?
-না।
‘না’ বলা সত্ত্বেও এক বিন্দু আফসোস হওয়ার মতো কিছু ঘটলো না অরুনের মনে বরং তার এখন ভালো লাগছে সে এই সুন্দরী মেয়েটির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পেরেছে এবং সেই সাথে মেয়েটির মিষ্টি গলার স্বর সে শুনতে পেরেছে।যদি কোনো কবি এই মুহূর্তে তার পরিবর্তে বসতো তাহলে নিশ্চিত দুই একটা কবিতার লাইন সেই কবির মাথায় চলে আসতো।অরুন নিজের মনে কোনো কবিতার লাইন আবিষ্কার করতে পারলো না বলে সামান্য মন খারাপ করলো।কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই মনে হলো মেয়েগুলো রোজ তার পাশে বসবে আর সে মেয়েদের মাঝখানে বসবে।এই ভেবে হতাশা মুছে আবার আনন্দ হতে লাগলো তার।
কিছুক্ষণ এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এক ঘন্টা পেরিয়ে গেলো।অরুন এইবার পেছনে বসা মেয়েটির দিকে লক্ষ্য করে দেখলো মেয়েটি এক মুহূর্তের জন্যও এদিক ওদিক তাকাচ্ছে না।লিখেই যাচ্ছে লিখেই যাচ্ছে।যদি পরীক্ষার খাতায় প্রেমপত্র লেখা যেতো তবে অরুন খাতার পাতায় পাতায় মেয়েটির জন্য প্রেমময় চিঠি লিখে ভরে ফেলতো কিন্তু এইরকম কোনো সুযোগ নেই বলেই অর্ধেক খাতা খালি অবস্থায় রয়ে গেছে।কিছুক্ষণ এসব নিয়ে ভাবার পর পেছনে বসা মেয়েটির ডাক শুনে সে চমকে গেলো।
-এই যে শুনছেন! অরুন ব্যস্ত হয়ে জবাব দিলো-
-কোনো সাহায্য করতে পারি?
-আপনি কি একটু ডানদিকে তাকাতে পারবেন?
-কেন?
-ডান পাশের মেয়েটা আপনাকে দেখতে চাচ্ছে।
অরুন লজ্জা লাল হয়ে ডান পাশের সুন্দরী মেয়েটির দিকে ফিরলো কিন্তু ডানপাশের মেয়েটির সাথে শুধু একবারই দুই নং প্রশ্ন জানতে চেয়েছিলো সে এরপর তার দিকে মেয়েটি আর তাকিয়েই দেখে নি।অরুন লজ্জার হাসি এনে পেছনে বসা মেয়েটিকে বললো-
-পরীক্ষা হলে কেন মজা করছেন?
-উহু।মজা করছি না।আপনি কি পাঁচ মিনিট ওখানে তাকিয়ে থাকতে পারবেন? অরুন বোকার মতো সেখানেই তাকিয়ে থাকলো।সুন্দরী মেয়েদের জন্য সে হাজারবার বোকা হতেও রাজি। একটু পর পেছনে বসা মেয়েটি তাকে আবার ডেকে বললো-
-আপনি কি পরীক্ষার শেষে বাহিরে দাঁড়াতে পারবেন?
এর আগে কেউ তাকে পরীক্ষা শেষে বাহিরে দাঁড়ানোর কথা বলে নি বলে তার সুখ এবং কষ্ট মিলিয়ে মন খারাপ হয়ে গেলো।সে পরীক্ষার শেষে যুগ যুগ বাহিরে দাঁড়িয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে প্রস্তুত।যদি মেয়েটি এখনি বাহিরে গিয়ে দাঁড়াতে বলে সে খাতা জমা দিয়ে তাই করবে।অরুন এইবার খেয়াল করে দেখলো তার বাম পাশের সীটে বসা মেয়েটি মিটি মিটি হাসছে।তার এই হাসির কারন কি অন্যকিছু সে বুঝতে পারছে না।তার নিজের কাছেও লজ্জা লজ্জা লাগছে।মেয়ে মানুষ তাকে দেখে কখনো মিটিমিটি হাসে নি।এই প্রথমবারের মতো কোনো একটি মেয়ে তার জন্য মিটিমিটি হাসছে।মেয়েগুলোর মধ্যে কেউ কি তাকে প্রপোজ করতে যাচ্ছে ব্যাপারটা সে ধরতে পারছে না।পরীক্ষা শেষে অরুন তড়িঘড়ি করে মেয়েটির জন্য বাহিরে দাঁড়ালো।তার পেছন আর বাম পাশের সীটে বসা মেয়েটি এগিয়ে এসে বললো-
-অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করিয়ে রাখাতে মাইন্ড করেন নি তো!
-না..মাইন্ড করার প্রশ্ন আসে না।কি যেন বলবেন বলছিলেন!
মেয়ে দুটো একজন আরেকজনের দিকে চোখাচোখি করছে।হয়তো প্রপোজ করতে লজ্জা পাচ্ছে।অরুন নিজেও ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা খুশীর কিছু হতে যাচ্ছে বলে।মেয়েটি এইবার হেসে হেসে বললো-
-পেছনের সীটে বসে আপনার সাদা শার্টে আমি সূত্রগুলো লিখেছিলাম।আর তাই আপনাকে ডানপাশে তাকিয়ে থাকতে বলেছিলাম যাতে করে আপনার বামপাশে বসা আমার বান্ধুবী আপনার শার্ট দেখে সূত্রগুলো লিখতে পারে।আপনার শার্টের পেছনে সূত্রগুলো লেখা আছে।কষ্ট করে বাসায় গিয়ে শার্টটা ধুয়ে নিবেন।এইটা বলার জন্যই আপনাকে দাঁড়াতে বলেছি।আপনি কিছু মনে করেন নি তো! অরুন তার মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বললো-
-কিছু মনে করি নি। অরুন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার প্রচুর রাগ লাগছে।এইবার মনে হচ্ছে সিনেমার মতো যদি কোনো গুন্ডাদল এসে পরীক্ষার হল আক্রমণ করতো তবে সে নিজেই ভিলেন হয়ে যেতো।