তেঁতুল সমাচার

তেঁতুল সমাচার

দূর থেকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটি একা একটা বেঞ্চে বসে আছে। চেহারা সুরত মাশাল্লাহ। ২০ সেকেন্ডে ডিসিশন নিলাম এই মেয়েকে আমার পটাতেই হবে যেভাবেই হোক। প্রয়োজনে মেয়ের সামনে গিয়ে ঘুরান্টি ডান্স দিব তবুও আমার তাকে লাগবে। আমি মেয়েটার কাছে গেলাম। ফোনে কারসাথে যেন কথা বলছে। আমিও বেঞ্চের একপাশে গিয়ে বসলাম। কথা বলা শেষ হলে মেয়েটিকে বললাম….

–হাই আমি রুবেল। অনেকে আদর করে বাবু রুপ্পেল বলে ডাকে।

মেয়েটি আমার দিকে একনজর তাকালো। পরক্ষণেই ভ্রুঁ-কুচকে চোখ সরিয়ে নিলো। তখন মনে হলো এই মেয়েকে পটাতে বেশ বেগ পেতে হবে। আমি আবারো বললাম….

-রাগ করবেননা, আমি যথেষ্ট ভালো ছেলে৷
–সরি ভাই চিনিনা আপনাকে।
-ভাই বলবেন না, কলিজায় লাগে৷ আমার একটা গুন আছে শুনলে অবাক হবেন।
–কিসের গুন।
-আমি জন্মগত সিঙ্গেল, এই যুগে এমন ছেলে পাবেননা। যত দ্রুত পারেন আপনি পটে যান…!
–হাউ ডেয়ার ইউ? আপনি কিসব বলছেন?
-জি সত্যি বলছি। আচ্ছা আপনার নাম কি?

মেয়েটি আর কিছুই বললনা। মোবাইল নিয়ে ফেসবুকিং শুরু করলো৷ আমি উঁকিঝুঁকি মেরে মেয়েটির ফেসবুক ইউজার নাম দেখলাম। সার্চ দিয়ে অনেক কষ্টের পর আইডি পেলাম৷ রিকুয়েষ্ট দিয়েই মেসেজ দিলাম….

–হাই আমি আপনার বেঞ্চের পাশে এতিমের মতন বসে আছি। প্লিজ আমার দিকে তাকান।

অনেক্ষণ কেটে গেলো কোন সারাশব্দ নাই। মেয়েটিকে মেসেজ দিলাম দেখলনা। একটু অপমানিত হলাম। মেয়ের আইডিতে গিয়ে প্রোপিকে কবিতা লিখে কমেন্ট করলাম “মনে আছে? একলা প্রহরে তুমি ছিলে পুকুর পাড়ে বসে। দেখিতে তোমায় আমি…উঠেছিলাম গাব গাছে তখন ছিলনা কেউ তোমার পাশে তোমাকে দেখিবার জন্য পুকুরে দিয়েছিলাম লাফ। ভয় পেয়ে তুমি দিলা ঘুরান্টি দৌড় করলেনা আমায় মাফ। কলার ধরে পিটালে আমায় অবাক হয়ে দেখছিলাম সেকি তোমার রাগ। আহারে ডিপ্রেশনে পরেছিলাম খুব কেউ নিলনা আমার মারের ভাগ।’

বিঃদ্রঃ মেসেজ দিয়েছি প্রিয় দেখেনিও” একটু পরই মেয়েটি মেসেজ সিন করলো। আমার দিকে তাকালো। বিনিময়ে আমি আবুল মার্কা হাসি দিলাম। মেয়েটি নাক সিটকিয়ে তৎক্ষনাৎ আমায় ব্লক করে দিলো। সাথেসাথেই ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। মেয়েটিকে আরেক দফা পটানোর জন্য ব্যাগ থেকে ইন্ডিয়ান ফগ পারফিউম বের করলাম। অনেক অ্যাডে দেখেছি পারফিউম মারলে মেয়েরা কাছে আসে। কিন্তু পারফিউম মারার পর এই মেয়ে কাছে আসাতো দূরে কথা তাকিয়েও দেখছেনা। উল্টা মুখে মাস্ক পরলো। মন চাচ্ছে ক্রস ফায়ার করে মারি খাচ্চুন্নি ছেমড়ি। এদিকে আবেগে মনটা নাড়া দিয়ে উঠলো৷ এত কষ্ট করলাম তবুও পটলনা। চিকা ভাগ্য আমার।

মনকে শক্ত করলাম। নাহহ এই মেয়েকে পটাবনা। গ্যালোরিতে নিজের শ’খানেক ছবির মাঝ থেকে একটা ভালো ছবি দেখে নিজেকে সান্তনা দিলাম ঐ মেয়ে আমার যোগ্যনা। ব্যাগ থোকে ছোটবোন রোদেলার জন্য আনা তেঁতুল বের করে খাওয়া শুরু করলাম। অনেকক্ষণ পর খেয়াল করলাম মেয়েটি আমার দিকে ঘনঘন তাকাচ্ছে। কাহিনী কি! আবার মুচকি মুচকি হাসছে। ব্যাপারটা ভালো ঠেকছেনা৷ আমি আয়েশে তেঁতুল খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম৷ একটু পর পকিং করে শব্দ হলো৷ মেয়েটি আনব্লক করে মেসেজ দিছে। আমি অবাক হলাম। হোয়াট এ সারপ্রাইজ তালোই? আবার জেদ হলো, ব্লক করে আবার মেসেজ। মেসেজে বলছে….

–হায় আমি সাদিয়া। একটু কথা বলা যাবে?
-আপনি সাদিয়া হোন আর পাদিয়া হোন তাতে আমার কি?
–এভাবে কথা বলছেন কেন?
-তো? একটু আগেওতো ব্লক করলেন।
–সরি আসলে….

আমি আর রিপ্লে দিলামনা। মেয়েটি আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। আমি কিছু না বলে তেঁতুল খাচ্ছি। মেয়েটি মেসেজ দিলো….

-একটু তেঁতুল দিবেন? আমারনা তেঁতুল খেতে ইচ্ছে করছে।

উরিশশশালা এই তাহলে কাহিনী?! তেঁতুলের জন্য এতকিছু। কি খচ্চোর মাইয়ারে, ভাবা যায়? আমি সুযোগ পেয়ে মেসেজ সিন করে রাখলাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকালো, মুচকি হাসলো। এই হাসির নাম দিলাম ‘চিকু হাসি’। মেয়েটি নিজ থেকেই কাছে আসলো। বুঝলাম এরে তেঁতুলের নেশায় ধরেছে। তবুও তেঁতুল দিচ্ছি না। মেয়েটি অনুনয় করে বলল….

–ইট্টু তেঁতুল দেন।
-সরি বইন আপনারে চিনিনা।
–এমন করেন কেন? একটু দিলে কি হয়?

মেয়েটির আবেগ মিশ্রিত কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম৷ সামান্য তেঁতুলের জন্য এতটা আবেগ। আমি মুখ চটকিয়ে তেঁতুল খাচ্ছি আর মেয়েটি ঘনঘন থুথু ফেলছে। বুঝলাম জিহ্বায় জল চলে এসেছে। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল, দিমুনা তেঁতুল। মেয়েটি অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। একটু মায়া হলো মেয়েটার জন্য। এখন আর মেয়েটিকে পটাতে ইচ্ছে করছেনা। পাত্তা না দিলে এক কথা ছিল। আমি এক চিমটি তেতুল মেয়েটিকে দিলাম। মেয়েটি খুশি হয়ে তেঁতুল নিয়ে খেয়ে ফেলল। হাতের যে অংশ দিয়ে নিয়েছে সেই অংশ চেটে খাওয়া শুরু করলো। ওরে খোদাহ! এ কেমন তেঁতুল খোঁড়। আমি দূরে সরে আসলাম। চুষে চুষে শব্দ করে তেঁতুল খাচ্ছি। মেয়েটির অসহায়ত্ব বেড়ে গেছে। বাচ্চাদের মতন বলল….

–আরেট্টু দেন তেঁতুল।
-কিনে কিনে খানগা।
–এমন করছেন কেন? একটুইতো চাইছি।
-তো আই কিত্তাম? একটুতো দিলামই।
–আরেট্টু….

আমি তেঁতুল দিলাম না। মুখ ঘুড়িয়ে খাওয়া শুরু করলাম। মেয়েটি কাঁদোকাঁদো ভাবে তাকাচ্ছে। একটু আগেও তো আমার লগে ভাব নিলো হু। হুট করে মাথায় চিন্তা এলো…’মেয়েটি এভাবে তেতুল না পেয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাবে, তারপর মাথায় সবসময় তেঁতুলের চিন্তাই ঘুরবে। ঠিকমতন খাওয়াদাওয়া হবেনা, শরীর খারাপ হবে। এভাবে চিন্তায় চিন্তায় মেয়েটি একসময় অক্কা পেয়ে টুপ করে উপরে চলে যাবে। আর আমি তার চল্লিশা খাব।’ উফফফ এত জোস আইডিয়া। মেয়েটি তাকিয়ে রইলো। আমি বললাম….

-টাউটামি করার জায়গা পাওনা? একটু আগেও তো আমায় বকলেন। আর এখন আমায় তেঁতুল খেতে দেখছেন অমনি জিহ্বায় জল চলে এসেছে? ছুচা মাইয়া জানি কুনহানের। বলেই আমি উঠে দাঁড়ালাম। তারপর তেঁতুল মুখে পুরে খাওয়া শুরু দিলাম। মেয়েটি ঢোক গিলল। জিহ্বার পানি গিললোরে। বেচারী! আমি উল্টো ঘুরে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। লাপ্পিউউ তেঁতুল বাবুহ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত