প্রশ্ন

প্রশ্ন

“পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী আমার দিকে কেমন কেমন করে যেন তাকায় , মনে হয় কিছু বলতে চায় কিন্ত পরে আর বলে না” শাড়িগুলো ভাজ করে আলনা তে তুলে রাখছিলো প্রিয়তা। আমার কথা শুনেই ঠায় দাঁড়িয়ে গেল,তারপর আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বলে “কেমন কেমন??” প্রিয়তার চেহারায় স্পষ্ট একটা ঈর্ষা ফুটে উঠছিলো। ব্যাপার টা বেশ মজার,বিশেষ করে নিজের বউ এর চেহারায় এমন কিছু দেখাটা ত আরো মজাদার। আমি কোনমতে হাসি চেপে রেখে বলি,

“জানিনা আসলে।অভ্র কে স্কুলে নিয়ে যাবার সময় প্রায় নিচে উনার সাথে দেখা হয়। কি যেন বলতে চায় কিন্ত শেষমেষ আর কিছু বলে না।তুমি কি উনাকে চেনো? না মানে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই ত থাকে উনারা তাই না।” “না চিনি না।বার কয়েক দেখা হয়েছে উনার সাথে কিন্ত কথা হয় নি। ” বেশ রাগচটা স্বরে উত্তর দিলো প্রিয়তা। “ওহহ,ভদ্রমহিলার হাসবেন্ড কে অবশ্য দেখেছি একবার। কিন্ত উনার সাথেও কথা হয় নি। কেমন চাপা স্বভাবের তারা ২ জনেই!” “হয়েছে হয়েছে, তোমার আর গোয়েন্দাগিরি দেখাতে হবে না। এখন চুপচাপ খেতে চলো ত।”

সেদিন আর প্রিয়তার রুদ্রমূর্তি দেখে এই বিষয়ে আর কথা বাড়াই নি। পরদিন শনিবার ছিল তাই সরকারী ছুটি । কিন্ত ছেলের কিন্ডারগার্টেন এসব সরকারী ছুটি মানে না। তাই ওকে স্কুলে দিতে সেই সকালেই উঠে বেরিয়ে যেতে হলো।প্রিয়তাও বলে গেল আজ ও বাসায় থাকবে না, কি একটা কাজ আছে ওর। আমি ও না করিনি, সত্য বলতে ওর কোন বিষয়েই আমি না করি না। যাহোক অভ্র কে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম,যেই না ফ্ল্যাটের চাবি ঘুড়িয়ে ঢুকতে যাবো হুট করে কারো নরম হাতের স্পর্শে লাফিয়ে উঠলাম!!! পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম অই ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলা দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন।তার ফ্ল্যাটের দিকে ইশারা করে আমাকে ঢুকতে বললেন!

আমি কিছুক্ষন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়েছিলাম তার দিকে, এক্টু পর ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম “আপনি কথা বলতে পারেন না?” ভদ্রমহিলা এবারো একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালেন। বুকের মাঝে একটা ধাক্কা লাগলো,ভদ্রমহিলা তবে কথাই বলতে পারেন না? । হঠাৎ তিনি আবার আমার হাত ধরে তার ফ্ল্যাটের দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন, বাধা দিবো দিবো করেও যেন বাধা দিতে পারলাম না। হয়তো মনের মাঝে কিছুটা মায়ার আসন উনি দখল করে নিয়েছিলেন!

ফ্ল্যাটে ঢুকতেই সোফায় তার হাসব্যান্ড কে দেখলাম। পায়ে ব্যান্ডেজ অবস্থায় পেপার পড়ছেন। আমাকে দেখামাত্র ই হাসি দিয়ে বলে উঠলেন, “আরে দাদা নাকি,তা কি অবস্থা কেমন আছেন?আসলে আপনাদের বাসায় যাবো যাবো করেও যাওয়া হয় নি। ” “আরে না না, আপ্নার এই অবস্থা আমি নিজেও কি জানতাম?জানলে নিজেই দেখতে আসতাম।” “তা নিলু আপনাকে টেনে নিয়ে আসলো বুঝি?” ভদ্রমহিলা ফিক করে হেসে দিলেন। আমি ও মুখে হাসি এনে মাথা নাড়ালাম। লোক টি আবার বলতে শুরু করলেন, “আসলে ও এরকম ই। প্রচন্ড মিশুক টাইপের মেয়ে। আল্লাহ হয়তো মুখে জবান দেয় নি,কিন্ত সবার সাথে মনের মাধ্যমেই ভালোবাসা আদায় করে ফেলে!”

নিলু আবার ফিক করে হেসে দেয়ার পর হাসবেন্ডের কাছে গা ঘেষতেই তাকে চিমটি কেটে চুপ করার ইংগিত দিলেন!!!বেশ সুন্দর লাগছিলো তাদের দুজনকে দেখে, মনে হচ্ছিলো চারিদিকে যেন ভালোবাসার অদৃশ্য ফুলগুলো বেশ সুগন্ধ ছড়িয়ে ছড়িয়ে ফুটে চলেছে।। বলাই বাহুল্য সেদিনের সকালের আড্ডা টা আমাদের বেশ জমেছিলো। খাওয়ার নাস্তা হিসেবে অনেক ভালো ভালো খাবার অফার করেছিলেন তারা, যদিও আমি তেমন কিছুই খাইনি। তবে বেশ বুঝেছিলাম যে হাসবেন্ড বেশ ভাল জায়গাতে বেশ ভালো বেতনেই চাকরী করেন।

ভদ্রতার খাতিরে আমি ও তাদের আমাদের ফ্ল্যাটে আসার আমন্ত্রন ও করেছিলাম।তারাও সানন্দে সেই আমন্ত্রন গ্রহন করে কথা রাখে যে রাতে প্রিয়তা আর অভ্র যখন বাসায় থাকবে তখন ই তারা আসবেন। তাই রাত ৯ টার দিকে যখন কলিংবেল টা বেজে উঠে তখন আমি একটু ও বিচলিত হই নি। বেশ খুশি মনেই প্রিয়তাকে ডেকে দরজার খুলে দিয়েছিলাম।ভাবীর মুখের হাসিটা দেখেই বুঝতে পারলাম যে আমার অনুমান টাই সঠিক। কিন্ত ততক্ষনে খুব দেরী হয়ে গিয়েছে,

কারন ভাবীর হাতে থাকা লম্বা ছুড়িটা আমার বুকে ততক্ষনে অনেক গভীরে প্রবেশ করে ফেলেছে, বিস্ফোরিত আমি তখন ও কাপা কাপা শরীরে দাঁড়িয়ে আছি। ভাবী আমার কানে এসে আস্তে আস্তে বলেন, “কি করবো বলেন, আসলে আমার পক্ষে সম্ভব না কোন পুরুষ মানুষের সাথে মিলিতো হবার। এই একটা কারনেই আমাদের ভালোবাসার ঘর টা এতদিন অপূর্ণ ছিল। তবে আপনার অভ্রের কারনে আজ সেটা পূর্ন হলো। ভয় পাবেন না,অভ্রের খুব ভাল যত্ন নিয়ে বড় করবো আমরা!”

নাহ,আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলাম,হাত পা র প্র‍তিটা শিরায় যেন রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে অবশ হয়ে গিয়েছে। এর ই মাঝে প্রিয়তার আর্ত চিৎকার ও শুনতে পেলাম,কিন্ত আমার আর তখন কিছুই করার নেই। মার্বেলর ফ্লোর টা ততক্ষনে রক্তে ভেসে লাল হয়ে গিয়েছে। মাথাটাও ঝিম ঝিম করা শুরু করে দিয়েছে, ভাবী কে আসতে দেখলাম অভ্র কে কোলে নিয়ে। মুখ দিয়ে কিছু বের করতে চেয়েও কিছুই বের করতে পারলাম না।কিন্ত ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখলাম ভাবীর কালো চুলের লম্ভা সারি টা যেন সাপের মত নাচছে। সাপ যেভাবে বাকা হয়ে ফুসফাস করে ছোবলের ইংগিত দেয় ঠিক সেরকম।তবে কি ভাবী মানুষ নয়,অন্যকিছু???

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত