চয়েস

চয়েস

ভাইয়ের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম,হঠাৎ ওর চোরের মতো কথা বলা শুনে থেমে গেলাম।খুব বেশি বয়স না ওর, তবে যে বয়সে আছে তাতে এমন অনেক কিছুই করে ফেলার ক্ষমতা থাকে।কয়েকদিন ধরেই দেখছি নিজের প্রতি একটু বেশি কেয়ারিং হয়ে গেছে, পাশাপাশি স্মার্টও বলতে হবে।ও যেই বয়সে আছে সে বয়সটায় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ একটু বেশিই থাকে। যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই হলো,কোনো মেয়ের প্রতি উইক হয়েছে। এতো মিষ্টি মিষ্টি কথাতো কোনো ফ্রেন্ডকে বলবে না।সময় থাকতে ওকে বুঝাতে হবে তা না হলে যীনার মতো জঘন্য পাপ ওর দ্বারা হয়ে যাবে।সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকলাম,প্রথমে একটু হকচকিয়ে গিয়েছে। এসময় কেউ আসতে পারে তা হয়তো আন্দাজ ছিল না।মোবাইলটা হাত থেকে রেখে সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

—তুই এখানে কেন?ঘুমাতে যাস নাই এখনো?
—হুমম.. যাবো।কিন্তু তোর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা এখনো শেষ হয় নাই?মোবাইল কখন দিবি আম্মুকে?
—সময় হলে দিব।তুই যা।
—ভাই!
—কি হইছে এত সুন্দর করে ডাকোস কেন?মতলব কি!
—হুমম..মতলব আছে।তোরে যীনা থেকে বাঁচানোর মতলব।
—ঐ কি কস?
—এতটুকু বুঝার বয়স তোর হইছে,আমার থেকে ছোট হইলে কি হইব।বুঝস তো অনেক কিছুই।
—মা..নে কী?(তুতলিয়ে)

—আচ্ছা বলতো ইসলামে বউ আর গার্লফ্রেন্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?
—সেটা আমি কি করে জানব?
—আমিই বলতাছি।শুন মনোযোগ দিয়ে:

বউয়ের হাতের সাথে হাত মেলালে হাতের সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। বউয়ের দিকে নেক নজরে তাকালে চোখের সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। বউয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে উভয়ের সওয়াব হতে থাকে। বউয়ের জন্য খুশিমনে খরচ করলে আমলনামায় সওয়াব লিখা হতে থাকে। এরকম আরো সওয়াব হতে থাকে এবং এতে কেউ নিষেধও করবে না। অন্যদিকে যখন গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলা হয় তখন তা নিষিদ্ধ এবং গুনাহ লিখা হতে থাকে।কারণ সে গায়রে মাহরাম।তার সাথে কথা বলার সময় মন এক প্রকার চোরের মতো কথা বলে।

কুরআন পাক এ মনচোরকে ধরে দিতেছে এ বলে: “যদি তোমাদের মনে আল্লাহর ভয় থাকে,তাহলে (অপরের সংগে) কমনূয় ভংগীতে কথা বলো না নতুবা যার মনে (খারাপ বাসনার) রোগ আছে, সে তোমাদের সম্পর্কে এক আশা পোষণ করে বসবে।কথা বলতে হলে সহজ সরলভাবে বল(যেমন একজন আর একজনের সংগে সাধারণত কথা বলে থাকো). (সূরা আহযাব) তোর বউ যদি তোর জন্য সাজে তাহলে তার সওয়াব হবে। কিন্তু তোর গার্লফ্রেন্ড যদি তোর সামনে আসে তাহলে তারও গুনাহ তোরও গুনাহ।কেননা তুই তার জন্য গায়রে মাহরাম।

কুরআনে ১৪ জন মাহরাম পুরুষ ছাড়া সকলেই গায়রে মাহরাম।তাদের সাথে যদি একান্তই দেখা দিতে হয় তো পর্দা করে সামনে যেতে হবে।ছেলেদের ক্ষেত্রেও গায়রে মাহরাম নারীর নিকট যাওয়া যায়েয নেই যদি সামনে এসে পরে তো চোখ নামিয়ে রাখতে হবে। মহিলারা তাদের সৌন্দর্য গোপন রাখবে,,,,অথচ গার্লফ্রেন্ড সেজেগুজে তোর সামনে আসছে।

তারপর বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এমন স্থানে দেখা করে যেখানে তারা দুজন ছারা আর কোনো মানুষ থাকে না আশেপাশে হয়তো আরো কাপল থাকে কিন্তু তারা তো নির্জনে থাকার চেষ্টা করে। অথচ যেখানে নারী পুরুষ নিরালা জায়গায় অবস্থান করে সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান থাকে,যা আমরা দেখি না।তাই সেখানে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে।

তারপর দুজন দুজনের হাত ধরে হাটা বা কথা বলা তেমন কিছুই নয়,,,কপালে কিস করাতো ভালবাসার উপহার তাই না!!অথচ মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,হাতের জেনা হল গায়রে মাহরামকে স্পর্শ করা।(বুখারী, মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন,,”তোমাদের কারো মাথায় লোহার সুচঁ ফুটায়ে দেয়া কোন গায়রে মাহরাম মহিলাকে (যে মহিলা তার জন্য হারাম) সে মহিলাকে স্পর্শ করার চেয়ে উত্তম।”(তবারানী,বায়হাকী)

মোটকথা বউ হলো আল্লাহর আদেশকৃত হালাল মেয়ে। আর গার্লফ্রেন্ড হলো আল্লাহ পাকের নিষেধ কৃত হারাম মেয়ে।এইবার তুই চিন্তা করে দেখ, কিছুবছর অপেক্ষা করবি হালাল নিয়ামতটার জন্য নাকি এখনি হারামটাকে গ্রহণ করে গুনাহের সাগরে পারি দিবি! আশা করি তুই বুঝে গেছিস কি বুঝাতে চাচ্ছি। আমি তোর বোন,একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। কখনো তোর খারাপ চাইবো না।

—(নিশ্চুপ)
—বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।ঘুমিয়ে পর,আল্লাহ হাফেজ।

বেশ কয়েক বছর পর আলহামদুলিল্লাহ!কথাগুলো হয়তো ভাইয়ের অন্তরে বসেছে,সে হালাল নিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করে একজন পর্দাশীল,নেককার জীবনসাথী পেয়েছে। যদিও প্রথমে তার গার্লফ্রেন্ডকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়েছে কিন্তু আল্লাহ পাকের বিধানের কাছে এসব কষ্ট তুচ্ছ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত