তনু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। আমিও জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো করে আমার ঠোঁটের স্পর্শ বসিয়ে দিলাম। মেয়েটা আমাকে এতো সুখ দিবে ভাবতে পারেনি।মা আমাকে বার বার বলেছিলো এ মেয়ে দিয়ে তোর কখনো সুখ হবেনা।
কিন্তু মা’র কথাটা উল্টোভাবে প্রতিফলন হচ্ছে।সেই প্রথম রাত থেকে এই তিনটা বছর একবারও তো আমায় অখুশি রাখেনি।বরং অন্য সব জুটিদের থেকে অনেক ভালো আছি।আমার তনুর সেই কান্নার আওয়াজটা এখনো কানে এসে বিঁধে।সেই ঠুকরে ঠুকরে কান্নার শব্দটা আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো রাতে।যতবার ঘুমানোর চেষ্টা করতাম ততবার সেই কান্নার আওয়াজ কানে কানে বাজতো আর শুনতে পেতাম “মামা-মামি আর কয়েকটা মাস সময় দেও আমি চলে যাবো এখান থেকে।চাকরিটা হতে দাও; দয়া করো।”তনুর মামা মুখ ফিরিয়ে চলে গিয়েছিলো তনুর মামি চুলের মুঠি ধরে বলেছিলো ” ৫ দিন সময় দিলাম ডাইনী, এরমধ্যে যাওয়া চাই। নিজের সংসার খেয়ে এখন আমার সংসার খেতে আসছো।অলুক্ষণি মেয়ে।”ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
তনুর বাড়ির দরজার সামনে থেকে সেদিন সবার অলক্ষ্যে ফিরে এসেছিলাম।তনুর কান্নামাখানো কন্ঠ,কান্নারত দুটো চোখ বার বার ভেসে উঠিছিলো। জানিনা কেনো ভেসে উঠছিলো।আমি তো তনুকে চিনতাম না।কেউ ছিলোনা আমার।কখনো কথাও হয়নি তাও কেন সেই কথাগুলো কানে বাজতো? আমি আর মা ওর ছোট্ট বোন রিমিকে দেখতে গেলাম।কিন্তু আমার চোখ দুটো খুঁজছিলো শুধু সেই অবহেলিত মেয়েটাকে।হাসি হাসি মুখ করে সামনে আসলো, হাসিটা খুব সুন্দর লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো ওর চোখে মুখে কান্না মানায় না। হাসি মানায়।এ মুখে হাসি ছারা একটু ও মন খারাপ মানায় না।কি করে এই মিষ্টি মেয়েটাকে সবাই ডাইনী বলে।আমার বুঝে আসলো না।ওর বোন আসলো।আমি উঠে গেলাম আমার মন মানলো না।বাসায় এসে খেয়ে ঘুম দিলাম।
আমি আমাকেই বলছি “ওই মেয়েটার মুখে তুই হাসির রেখা টেনে রাখতে পারিস।হাসি না রাখতে পারলি মুখে, কান্নায় রাখবি না।মেয়েটা কে বাঁচা।মেয়েটা যে মরে যাবে তাহলে।”ঘুম থেকে জেগে উঠলাম।মনটা বড় অস্থির লাগছে।মনে হলো আজ তো পাঁচ দিনের শেষ দিন।তবে কি তাড়িয়ে দিয়েছে ওরা।কোথায় যাবে এখন তনু?দৌঁড়ে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে ওদের বাড়িতে যেতে থাকলাম।অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার মাঝখানে।গাড়ি থেকে নামলাম।অপরপাশ থেকে গাড়ি আসছে আরেকটি।দ্রুত গিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে আনলাম বুকের মাঝে।বুকটা কেমন ভরা ভরা লাগছে।ওর চোখের পানি আমার শার্টকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।ভয় পেয়ে সরে গেলো।অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।আমি কাছে টেনে চোখের পানি মুছে দিতে গেলাম। হাত সরিয়ে দিলো। তনু যেনো আমাকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো চোখ দুটো নিচে নামিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো
“আপনি?”আমি হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে উঠিয়ে বললাম
“চলুন আমার সাথে”
“কোথায় নিয়ে যাবেন আমায়? আমি যাবোনা। আমাকে মরতে কেন দিলেন না? আমার মতো অভাগীর মরে যাওয়া উচিৎ।” কথাগুলো বুকের মাঝে তীরের মতো বিঁধেছিলো।নিজেকে শান্ত রেখে বললাম
“মৃত্যু সবকিছুর সমাধান না।”
“আমার কাছে এটাই একমাত্র সমাধান। ” আমি আর কিছু বললাম বাসায় আসলাম তনুকে নিয়ে।মা ওকে দেখে পুরো থ’ হয়ে গেছে। আরালে টেনে নিয়ে বললো
“তনিমা এখানে কেন?” আমি ঝটাপট বললাম
“আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।তাই নিয়ে এসেছি। ” মা চোখ বড় বড় করে রাগীসুরে বললো
“ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে চাস,তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।দেখ অয়ন একদম পাগলামি করবি না।”
“মা আমি কোন পাগলামী করছি না।আমি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“এই কি তোর শেষ কথা?”
“হুম।”
“ঠিকাছে, এই বাড়িতে তোর আর জায়গা নেই।”
“ঠিকাছে তুমি এটা চাইলে, এটাই হবে।” মা হুংকার দিয়ে বললো
“ডিভোর্সি মেয়েরা ভালো হয়না।এদের দিয়ে কখনো সংসার হয়না। এরা অলক্ষী।তোকে বলে দিলাম এ মেয়ে দিয়ে তোর কখনো সুখ হবেনা” মা’র ভিন্ন রুপ দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। আমার মা এমন জানা ছিলোনা। উত্তরে বললাম “মা তোমার ডিভোর্স হলে, তোমার সাথে এমন হলে মা কি করতে।তুমি ও কি তবে ডাইনী হয়ে যেতে?” তারপর মুচকি হেসে চলে এসেছিলাম।মা শুধু তাঁকিয়ে ছিলো অবাক হয়ে।
হাত ধরে সেই যে হাঁটা শুরু করলাম এখন একটা প্রার্থণা এই হাতটি যেনো সারাজীবনের জন্য আমার পাশে থাকে।
এখনো মাঝে মাঝে ভাবি সেদিন যদি একা একা না জানিয়ে রিমিকে দেখতে না যেতাম তাহলে হইতো এই তনুকে পেতাম না।আজ আমাদের বিয়ের ৩ বছর পূরণ হলো।আজ আমাকে অনেক খুশির খবর দিলো। আমি বাবা হতে চলেছি।আমার আরেক ভাইয়ের বউ ,, মা কে তাড়িয়ে দিয়েছে।আমার কাছে উঠেছে এখন ।তনু সকল অভিযোগ ভুলে মা কে আপন করে নিলো।আমার মনে শুধু একটা প্রশ্ন জাগে মা কি এখনো বলবে “ডিভোর্সি মেয়েরা ডাইনি হয়।’