– তুই রাতে কার সাথে ফিসফিস করিস রে তুলি?
– কই কারো সাথে নাতো ভাইয়া।
– মিথ্যা বলবি না একদম। আমি তো বুঝি নাকি! ছেলেটা কে?
– ইয়ে মানে, তনয়।
– তুই পুচকে একটা মেয়ে হয়ে প্রেম করিস?
– ভাইয়া তুমিও তো শায়লা আপুর সাথে প্রেম করো। আমি কি কিছু বলি?
– চুপ বেয়াদব। ছেলে কি জানে তোর বড় ভাই আছে?
– না।
– জানিয়ে দিবি। সে যদি সাহসী হয়, আমার চোখের সামনে দিয়ে তোর হাত ধরে নিয়ে যেতে পারে তবেই তোর প্রেম মেনে নিব।
– চ্যালেন্জ দিচ্ছ?
– হ্যাঁ।
– ওকে ডান।
– তোর শায়লা আপু তোর সাথে অনেকদিন ধরে দেখা করতে চাচ্ছে। পরশু বিকালে তোর টাইম হবে?
– হ্যাঁ হবে। কোথায় আসব?
– ‘খাই খাই রেস্টুরেন্টে!’ তোর শায়লা ভাবি মানে আপু ট্রিট দিবে।
– হিহি। আচ্ছা ভাইয়া আসব। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর তুলি কল দিল তার বয়ফ্রেন্ড তনয়কে!
– হ্যালো তনয়?
– হ্যাঁ বলো।
– তুমি কি আমার বড় ভাইয়ের সামনে দিয়ে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে পারবা?
– কিহ তোমার বড় ভাই আছে? আগে বলোনি কেন? আগে জানলে তোমার সাথে প্রেম করতাম না।
– ধুর ছাই, রাখো তুমি। ভীতুর ডিম।
তুলি ভাবতে শুরু করে। অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। বিকাল ৫টা। ‘খাই খাই রেস্টুরেন্টে’ বসে আছে তুলি আর তুলির বড় ভাই রাজু। শায়লা এখনো আসেনি। রাজু খোঁজ নিয়ে জানলো রাস্তায় আছে। চলে আসবে।
– খাওয়া কি এখনি অর্ডার দিব নাকি তোর ভাবি আসলে? আই মিন তোর আপু আসলে?
– হইসে হইসে। আজ থেকে ভাবি ডাকব। ভাবি আসুক তারপর অর্ডার দিও।
– ওকে।
দুজন বসে গল্প করছে। এরপর হুট করে তনয় তাদের টেবিলের সামনে এসে হাজির। একবার রাজুর দিকে তাকালো আরেকবার তুলির দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। তারপর তুলির হাত ধরে টেনে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। রাজু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। নদীর ধারে বসে আছে তনয় তুলি। তনয় বলল,
– ছি ছি তুলি তুমি আমাকে ধোঁকা দিতে পারলা? তুমি আরেকটা ছেলের সাথে
– ওয়েট ওয়েট একটা কল দিয়ে নি। হ্যালো ভাইয়া, চ্যালেন্জ তো হেরে গেলা। আর বয়ফ্রেন্ড তোমার চোখের সামনে দিয়ে আমার হাত ধরে নিয়ে গেল। এটাই আমাদের কাছে আসার সাহসী গল্প। এবার তনয়ের অবাক হওয়ার পালা।
– ঐটা তোমার ভাই ছিল? কিন্তু তোমার বান্ধবী যে বলল, তুমি অন্য ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে ডেটিং করছ?
– আরে ঐটা আমি বলতে বলেছিলাম। যাতে তুমি রাগ করে আমার হাত ধরে নিয়ে যাও। আমার প্ল্যান সফল হয়েছে।
– মানে উনি তোমার ভাই রাজু?
– হুম। একথা শুনে তনয় সেন্সলেস। ঐদিকে শায়লা উপস্থিত।
– কি ব্যাপার রাজু, তুলি কোথায়?
– নিয়ে গেছে।
– মানে? কে নিয়ে গেছে?
– তার প্রেমিক। তারপর সব ঘটনা খুলে বলল শায়লাকে। শায়লা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। হাসতে হাসতে বলল,
– বড় ভাই হয়ে তো খুব পার্ট নিলা । অথচ আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে বললে দেখা করতে চাও না। কিসের এত ভয়?
– প্রেমিকার বড় ভাই থাকা মানেই আতংক। যাই হোক, কি খাবা বলো? খাওয়াদাওয়া শেষ করে বিল দিতে যাবার পালা। এক হাজার টাকা বিল। শায়লা বলল,
– বিলটা কি আমি দিব?
– না না। আমি দিচ্ছি। পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে ম্যানেজারের হাতে দিল রাজু। ম্যানেজার জিজ্ঞেস করল,
– খাবারের মান কেমন ছিল?
– হুম ভাই অসাধারণ। আগে তো এই রেস্টুরেন্টের নামই জানতাম না। শায়লা নিয়ে এসেছে।
– থ্যাংকস। আবার আসলে খুশি হব। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসলো রাজু শায়লা। রাজু জিজ্ঞেস করল,
– তোমার বাবা এখন কেমন আছেন? দুদিন আগে অসুস্থ বলেছিলে?
– হ্যাঁ ভালই আছেন। তবে রেস্টে আছেন!
– ওহ তাহলে আংকেলের রেস্টুরেন্ট কে দেখাশোনা করছে?
– দেখলাই তো আমার ভাই করতেসে।
– মানে?
– মানে আরকি? আমরা যেটাতে আজ ডেটিং করলাম সেটা আমার বাবার রেস্টুরেন্ট। বাবার অবর্তমানে কিছুদিনের জন্য ভাইয়া দেখাশোনা করছে।
– ঐ ম্যানেজারটা তোমার ভাই?
– হুম। ভাইয়া আমাকে চ্যালেন্জ দিয়েছিল, তার সামনে যদি রেস্টুরেন্টে এসে খাওয়াদাওয়া করতে পারি তাহলে আমাদের প্রেম মেনে নিবেন। এটা আমাদের কাছে আসার সাহসী গল্প রাজু। কেমন ছিল?
– খুবই ভয়ানক ছিল। একথা বলে রাজু সেন্সলেস।