ঢিলা কালো বোরকা আর বড় হিজাব পরে বের হলে সবাই বয়স্ক মহিলা ভাবে!কারণ তখন বয়স বুঝার উপায় থাকে না। আর এমন টা আমার ক্ষেত্রে প্রচুর হয়েছে এমনই একদিনের ঘটনা,,,,
আমি আর তারিন হোস্টেল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম, কিন্তু পথিমধ্যে তারিন ওর বড় বোনের জন্য জুতা কিনতে আমাকে নিয়ে মার্কেটে গেলো। ওর কথা হচ্ছে জুতা কিনে দুজন স্টেশন যাবো। আর তারিন জানে ওর বোনের জুতার মাপ আমার জুতার মাপের সমান। তাই দোকানে গিয়ে সবগুলো আমাকে পরে দেখতে হচ্ছিলো! তারিনের বোন হলো ঘাড়ত্যাড়া টাইপের। জুতা এদিক সেদিক হলে ওর খবর করিয়ে ছাড়বে! এরপর অনেক খুঁজে এক জোড়া জুতা পছন্দ করলাম, কিন্তু সেটা ৬ নাম্বার সাইজ,যা আমার একটু ছোট লাগছে,আর ৭ নাম্বার টা একটু বড় লাগছে। আমি তারিনকে বললাম,আচ্ছা জিগা তো সাড়ে ছয় আছে নি? আমার কথা শুনে দোকানী হেসে উঠলো,আর বললো.. দাদু সাড়ে ছয় জুতা হয় না! মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়লো! হেতি কইলো ডা কি? আমি কার দাদু!?
মেজাজ টা এতো খারাপ হলো, তারিনকে এখান থেকে টেনে বের করলাম। কিন্তু তারিন দোকানীর কথা শুনে হু হু করে হেসে যাচ্ছিলো। তখন দোকানদার কিছু টা বুঝার চেষ্টা করে বললো! আরে আফা চাচিরে দাদি ডাকছে বইলা রাগ করেছে নাকি? আপনারা চলে যাচ্ছেন কেনো,জুতা নিবেন না? ওই চাচি,ওই আফা! রেগেমেগে তারিনের হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলাম।ওরে বললাম রাস্তার ওপাশের দোকানে জুতা দেখবো। কিন্তু এতো গাড়ি আসছে আর যাচ্ছে রাস্তা ই পার হতে পারছিলাম না..এর ফাঁকে তারিন একটা রিকশার দিকে হাত বাড়িয়ে রাস্তা পার হয়ে গেলো, কিন্তু আমি ভীতু দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন রিকশা ওয়ালা আমাকে লক্ষ্য করে বললো, আরে খালাম্মা আম্নে দাড়াই রইছেন কেল্লাইজ্ঞা? তারাতাড়ি পার হন।
হুট করে মাথায় ধাক্কা লাগলো! কিহহ আবারো আমাকে খালাম্মা ডাকলো? মেজাজটা দিলো চরম খারাপ কইরা।
তখন রাস্তার ওপাশে তাকিয়ে দেখি তারিন বেগম বেটকাইয়া হাসতেছে। মাথায় এক ঝাড় রাগ নিয়ে জুতা কিনার কাজ সম্পাদন করলাম। এরপর তারাতাড়ি করে স্টেশন পৌঁছালাম দেখি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে,এটা জয়েন্তিকা কিনা কনফার্ম হওয়ার জন্য একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম লোকটা তারাহুরো গলায় বললো,,হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই জয়েন্তিকা। তারিন আগে আগেই উঠে গেলো, ট্রেন ধীরে ধীরে ছেড়ে দিয়েছে প্রা. আমি তারাতাড়ি করে উঠতে যাবো এই সময় পেছন থেকে লোকটা ট্রেনে দাঁড়ানো একজনকে ডেকে বললো এই ভাই, মহিলাটাকে উঠতে সাহায্য করেন!
_কিহহ এখন আবার মহিলা বললো?? রাগটা তখন কোনোভাবে সামাল দিয়ে উঠলাম।সবচেয়ে বেশি রাগ উঠছিলো তারিনের বেটকানিতে। হেই হেসেই যাচ্ছে আমাকে নিয়ে। আর লোকগুলোর মতো দাদি, চাচি,খালাম্মা,মহিলা এসব বলে টিটকারি মারতে লাগলো। কিছু বললাম না শুধু এই জন্য,,এই পোশাক টা হলো সবচেয়ে সম্মানী! হাসলে হাসুক।
যায় হোক স্বাভাবিক ভাবেই ট্রেন থেকে নেমে রিকশা নিয়ে পাকা রাস্তা পর্যন্ত গেলাম। এরপর রিকশা নামিয়ে দিলো । আমি আর তারিন কথা বলতে বলতে বাড়ির রাস্তায় দিয়ে যাচ্ছিছিলাম। তখন দেখলাম ছোট ছোট বাচ্চারা খেলতেছে দূর থেকে বাচ্চাগুলো আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো,,, একটু পর এক পিচ্চি জোরে জোরে বলতে লাগলো এই মীম দেইক্কা যা তর নানী আইতাছে। তর লাইজ্ঞা মজা লইয়া আইতাছে! আমি বড় বড় চোখ করে তারিনের দিকে তাকাইলাম,আর তারিন আমার দিকে তাকিয়েই এমন জোরে অট্টহাসি দিলো,আমার কান স্তব্ধ হয়ে গেলো পুরো। !
এদিকে মীম আর তার দলবল রাস্তায় উঠে আসলো তার নানীকে আগাইয়া নিতে। এখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না.. চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নাই…তখন মুখটা খোলে সবগুলোকে বিকট ধমক দিয়ে বললাম ওই দুষ্টুর দল কেডা তদের নানী হ্যাঁ? আমাকে চিনতে পেরেই একটা পরিচিত বাচ্চা বলে উঠলো,,আরে তাজ্জিন হুপ্পি দি! আপনেরে মীমের নানির মতো লাগে পুরো। হাতের ব্যাগটা তারিনের কাছে দিয়ে,পাশে থেকে একটা বড় লাঠি নিয়ে বাচ্চাগুলোরে বললাম,,
_আমি মীমের নানি,,না? দাঁড়া তদের কে এখন তদের নানী মজা দিবে । বলেই লাঠিটা উপরে তুললাম, তখনই এক পলকে দেখি সবগুলো এক্কেরে উধাও। তারিন থেকে ব্যাগটা নিয়ে হাসতে হাসতে বললাম,,
— সারা রাস্তার অপমানের শোধ এখানে দৌড়ানি দিয়ে পুরা হয়েছে!বুঝলি তারিন বেগম!?