রিকশা শিয়া মসজিদ ক্রস করে তাজমহল রোডে পড়তেই শামিমের বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে গেলো।আর বড়জোর দুই মিনিট লাগবে ছাঁয়ানীড়ে যেতে।সি ব্লকের পাঁচ নম্বর বাড়িটার নাম ছাঁয়ানীড়।এই বাড়ির চার তলায় শামিমের মেঝ মামার ফ্লাট।শামিম এখানে একরকম কামলা হিসেবেই থাকছে গত চার বছর ধরে।
শামিমের বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলায়।গ্রামের কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে সিট না পেয়ে শেষমেশ মামীর ঘোর আপত্তি স্বত্তেও মামার একক সিদ্ধান্তেই এই বাসায় ওঠে।এখন সে পড়ছে চতুর্থ বর্ষে।
একটু পরে কপালে কী যে ঘটতে যাচ্ছে,সেই চিন্তা করতেই তার বুক শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।ইচ্ছা করছে নীরাকে রেখেই চলন্ত রিকশা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে রাস্তা পার হয়ে এক দৌড়ে জাপান সিটি গার্ডেনের ভেতর চলে যেতে।বারবার মনে হচ্ছে হুটহাট করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া বোকামি হয়েছে।শুধু বোকানিই না,চরম লেভেলের গাধামিও হয়েছে।
নীরা বললো,তুমি এমন ছটফট করছো কেন?চুপ করে বসে থাকো তো!আচ্ছা,দেখো তো আমার গায়ে জ্বর আছে কিনা।জ্বর মাপামাপির এই ব্যাপারটা তাদের অনেক দিনের পুরনো খেলা।শামিম নীরার কপালে হাত রাখলো।নীরা বললো,এবার হাতটা সরাও,মানুষজন কী বিশ্রীভাবে তাকিয়ে আছে! শামীম বললো,থাকলে থাকুক,তাতে আমার কী?নীরা বললো, জনাব,এইটা আপনার বাসার ড্রইংরুম না,রাস্তা।
নিমিষেই শামীমের ভয় ভয় ভাবটা কেটে গেলো।এখন ভারী ফুর্তি লাগছে মনের মধ্যে।গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু এইমুহূর্তে একটা ভালো গানও মাথায় আসছে না।নীরা এক নাগাড়ে ফড়ফড় করে কথা বলে যাচ্ছে।কী চমৎকার লাগছে শুনতে।মনে হচ্ছে সৃজা ঘোষ কানের কাছে বসে কবিতা আবৃত্তি করছে।শামিমের মনে হলো,এই মেয়েটা পাশে থাকলে ছোট্ট একটা জীবনটা খুব আনন্দেই কাটানো যাবে। রিকশাওয়ালা বললো,নামেন মামা,চইলা আইছি।এই বলেই সে পান খাওয়া কটা লাল দন্তগুলি বিকশিত করে ক্লোজআপ মার্কা হাসি দিলো।নীরা কিছুতেই বুঝতে পারলো না,বাসায় চলে আসার সাথে রিকশাওয়ালার এমন হাসির সম্পর্কটা কি?শামিম পকেট থেকে একশ’ টাকার একটা নোট বের করে তাকে দিলো।
রিকশা ভাড়া ঠিক হয়েছিলো আশি টাকা,রিকশাওয়ালা গাঁট থেকে পলিথিনের ঠোঙাটা বের করে নোটটা সেখানে রেখে আবার গাঁটে গুঁজে রাখলো।বিশ টাকা ফেরত দেয়ার কোনো লক্ষণ না দেখে শামিম বললো, মামা,বিশ টাকা ফেরত দেন।সে আবার আগের মতো করে হেসে দিয়ে বললো,থাইক মামা,আইজ আর ফিরত নেওন লাগতো না।আইজ আফনেগো ইশপিছাল দিন উপলক্ষে এইটা রাইখ্যা দেই।শামিম আর কথা না বাড়িয়ে সিড়ির দিকে হাটা দিলো।
কলিংবেলে চাপ দিতেই দরজা খুলে গেলো।দরজার ওপাশে জারা দাঁড়ানো।সে কোথায় যেন বের হচ্ছিলো,শামিমের সাথে শাড়ি পরা একটা অপরিচিত মেয়েকে দেখে সে রীতিমতো চমকে উঠলো,কিন্তু এমন একটা ভাব করলো,যেন কিছুই হয়নি। এবাড়িতে শামীমের সাথে একটা মেয়ের আসাটা তেমন কোনো ঘটনা না,এমন ঘটনা এ বাড়িতে প্রায়ই ঘটে। জারা শামিমের মামাতো বোন।উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী।কেন যেন এই মেয়েটা শামিমকে দু’চোখে দেখতে পারেনা।সে কিছু জিজ্ঞেস না করে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।শামিম নীরাকে নিয়ে বাসায় ঢুকলো।
বিকেল চারটার মতো বাজে।এই সময়ে জোহরা বেগম ঘুম থেকে উঠে এক কাপ কফি খান।এইটা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস।শামিম কিচেনের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালে জোহরা বললেন,গাধার মতো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিছু বলবে?শামিম মিনমিনিয়ে বললো,না।তার বুক শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।বারবার পিপাসা লাগছে।মনে হচ্ছে ছাদে গিয়ে পানির টাঙ্কিটার মুখ খুলে একটানে সবটুকু পানি শেষ করে ফেলতে।
জোহরা বেগম কফির মগ হাতে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলেন শামিমের পাশে শাড়ি পরা একটা অপরিচিত মেয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে সোফায় বসে আছে।যেন এইটা তার নিজের বাড়ি,আরাম করে বসে আনমনে কিছু ভাবছে।জোহরাকে দেখে নীরা উঠে খানিকটা সামনে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।শামিমও নীরার দেখাদেখি সালাম করে ইনিয়েবিনিয়ে বললো,মামী,ওর নাম নাম নীরা।ইউনিভার্সিটিতে আমার সাথে পড়ে।ওর মতের বিরুদ্ধে ওর বড়ো চাচা জোর করে এক লম্পটের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো,তাই কাউকে না জানিয়ে আজ আমরা নিজেরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি। এই কথাগুলো অনেকক্ষণ ধরে শামীম ব্রেনস্টর্ম করছিলো।মামীর সামনে দাঁড়িয়ে ঠিকমতো ডেলিভারি দিতে পেরে এখন তার বেশ হালকা হালকা লাগছে।
জোহরাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,সে অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে।ভালোমন্দ কিছুই সে বললো না,নীরাকে শুধু বললো, তুমি কফি খাবে?নীরা বললো হ্যাঁ,খাবো।কিন্তু তাকে কফি দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না।এই কথাটা সে মূলত ঘোরের মধ্যেই বলেছে,এখন বোঝা যাচ্ছে। জোহরা শোয়ার ঘরে গিয়ে আজহার সাহেবকে ফোন দিলেন।আজহার শামিমের মামা। সোনালী ব্যাংকের পান্থপথ শাখায় চাকরি করেন।অফিস শেষ করে আসতে তার রোজ সন্ধ্যা সাতটার মতো বাজে।
আজহার ফোন রিসিভ করে বললেন,কিছু বলবে?হাতে অনেক ফাইল,কাজের কথা না থাকলে ফোন রাখো।জোহরা বললো,তুমি শেষ কবে আমার সাথে ভালোমতো একটু কথা বলেছো,মনে করতে পারবে? আজহার খানিকটা বিব্রত হয়ে গেলো।আসলেই কাছাকাছি থেকেও বড়ো একটা দূরত্ব তৈরী হয়ে গেছে সংসারের সাথে তার। কাজের চাপ,ব্যস্ততা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা পুরোদস্তুর সামাজিক একটা মানুষকেও যন্ত্র বানিয়ে ফেলে। আহজার সাহেব ফোন কানে নিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। জোহরা বললো,আজ ফিরবে কখন?আজহার বললো,রোজ যখন ফিরি,তখনই ফিরবো।আর কিছু বলবে?জোহরা পুরো ব্যাপারটা চেপে গিয়ে বললো,না ঠিক আছে।
ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোহরা ধপ করে খাটের উপর বসে পড়লো।তার মাথার ভেতর দপদপ করছে।প্রেসার বাড়ছে। আজহারের অফিসে বড়সড় কী একটা ঝামেলা যেন যাচ্ছে,আজহার কিছু বলছেনা, তবে ব্যাপারটা যে ভয়াবহ,তা জোহরা আঁচ করতে পারছে। প্রায় রাতেই সে টের পায় আজহার বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটায় চুপচাপ বসে থাকে।তাকে তখন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ লাগে।
জোহরা চিন্তা করছে,এতো বড়ো ঘটনাটা আজহার কীভাবে দেখবে?ছেলেমেয়ে দুইটা বাসায় নেই।জারা এইমাত্র কোথায় যেন বের হলো।নাহিদও বাসায় নেই। ওরা থাকলে ওদের সাথে একটু পরামর্শ করা যেতো।ড্রয়ার থেকে নাপা এক্সটা বের করে দুইটা খেয়ে সে জারাকে ফোন করে এক্ষুনি বাসায় ফিরতে বললো।
শামিম নীরাকে বললো,তোমার কি ধারণা,মামা-মামী আমাদেরকে বাসা থেকে বের করে দিবে নাকি?নীরা বললো, তুমি একটু চুপ করে বসো তো প্লিজ!যা হওয়ার হবে।যখন হবে, তখন দেখা যাবে।এখন রিলাক্সে থাকো।বিয়ে করে এতো টেনশন করা ঠিক না মশাই!শামিম বললো,তাহলে কি করতে হয়,হু?তার মুখে দুষ্টুমির হাসি।নীরার দিকে সে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলো,এরমধ্যেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
নাহিদ ঘরে ঢুকেই দেখলো নীরা আপা সোফায় বসে আছে। নাহিদ জারার বড়ো ভাই।বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ছে এবার। এর আগে সে শামিম ভাইর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে নীরা আপাকে বহুবার দেখেছে।এই বাড়িতে মামা ছাড়া নাহিদই একমাত্র ব্যক্তি,যে শামিমকে পছন্দ করে।
নাহিদ বললো,ভাইয়া,ঘটনা কি? শামিমের মুখ খোলার আগেই নীরা বললো,ঘটনা ঘটায়ে ফেলছে তোমার ভাইয়া।এই বলে সে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।এতো চমৎকার করে একজন মানুষ কীভাবে হাসে! নাহিদের মনে হলো,শামিম ভাই এই পৃথিবীর অল্পকিছু সুখী মানুষদের একজন।এক জীবনে সে নীরা ভাবির এমন জোছনা হাসি অসংখ্যবার শুনতে পারবে।
নাহিদ মা’র ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো সে শুয়ে আছে।জোহরা ধড়ফড় করে উঠে বিছানায় বসে নাহিদকে ভিতরে আসতে বললো।সে যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।নাহিদ বললো,কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো মা।হাতে অনেক কাজ।আচ্ছা মা,তোমার কাছে কি হাজার দুই টাকা হবে? থাকলে তাড়াতাড়ি দাও তো।টাউন হল থেকে ফুল টুল কিনে আনি।বাসর ঘর সাজাতে হবে। ছেলের কথা শুনে জোহরার গা জ্বালা করছে।ইচ্ছে করছে এক চড়ে দুই তিনটা দাঁত ফেলে দিতে।ওর বাবা বাড়ি এসে এই কাণ্ড দেখে কি করবে,সেই চিন্তায় সে অস্থির হয়ে আর এই দামড়া ছেলে কি কিছুই আঁচ করতে পারছে না?
নাহিদ,শামিম আর নীরা নাহিদের রুমে বসে গল্প করছে।শামিম নাহিদকে বললো;নাহিদ,মামা বাসায় এসে কি কি করতে পারে,আর তখন আমরা কি করবো,তার একটা খসড়া কর তো।পয়েন্ট দিয়ে দিয়ে খাতায় লেখ।এক নম্বরে লেখ,এই ঘটনা শোনামাত্র আমাকে মাইর শুরু করবে।তখন আমার কাজ হবে দম টম বন্ধ করে ক্ষিচ মেরে পড়ে থাকা।এতে ব্যথা কিছুটা#নাহিদ বললো,চলিত ভাষায় লিখবো,নাকি সাধু ভাষায়?নীরা হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে এদের কাণ্ডকারখানা দেখে।তার বেশ ভালোই লাগছে। মুক্তির আনন্দ পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো আনন্দ।
যে লোকটার সাথে তার চাচা জোর করে বিয়ে ঠিক করেছিলো,সে একটা বদের হাড্ডি,সোজা কথায় যাকে বলে হাড়ে বজ্জাত।হারামজাদার ঘরে দুই ছেলেমেয়ে সহ একটা বউ আছে।লোভে পড়ে এই খাটাসটার সাথেই চাচা তার বিয়ে ঠিক করেছিলো।আজ রাতে তাদের বিয়ে হওয়ার কথা,বাড়িতে নিশ্চয় এতক্ষণ কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে। শালারপুতের সাথে বিয়েটা হলে কী যে হতো,ভাবতেইন#গায়ে কাটা দিচ্ছে!
আজহার সাহেব বাসায় আসলে আন্য দিনের মতোই জোহরা ওয়াশরুমে গামছা এগিয়ে দিলো।ফ্রেশ হয়ে বের হলে দুই কাপ চা হাতে নিয়ে সে ব্যালকনির টেবিলে আজহারের পাশের চেয়ারে বসলো। আজহার আবার কফি খেতে পারে না,গন্ধ লাগে।শামিমের ঘটনা সম্পর্কে আজহার এখনো কিছু ঠিক পায়নি।
জোহরা বললো,তোমার শরীর ঠিকাছে?আজহার সে প্রশ্ন যেন শুনলোই না,তার মানে এইটা নিতান্তই একটা অবান্তর প্রশ্ন।জোহরার উশখুশ ভাব দেখে কিছুক্ষণ পর সে বললো,কিছু বলবে?জোহরা বললো,হু।আগে বলো,সবকিছু শুনে উত্তেজিত হবে না?আজহার খড়খড়ে গলায় বললো,এতো ভনিতা না করে ঝেড়ে কাশো।জোহরা বললো,শামিম আজ বিয়ে করে ফেলেছে।আজহার বললেন,বিয়ে করা তো খুব ভালো কথা।ডাকো দেখি ওকে।
শামিম মামার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,নীরাও এসেছিলো প্রথমে। সালাম পর্ব শেষে আজহার বললেন,মাশাল্লাহ।বেঁচে থাকো।এই বলে তাকে ভেতরে চলে যেতে বললো।নাহিদ আর জারা দরজার পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনছে,নীরা নাহিদের ঘরে আর জোহরা আজহারের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আজহার বললো,তোর এবার কোন ইয়ার চলে?শামিম বললো, ফোর্থ ইয়ার,সেভেন সেমিস্টার। আজহার বললো;ভালো,খুব ভালো।আচ্ছা,তোর এই বাড়িতে কি কি আছে?শামিম লক্ষ্য করলো;মামা খুব ঠান্ডা মাথায় গুছিয়ে গুছিয়ে কথা বলছে।তার মানে পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রূপ নিতে যাচ্ছে।
আজহার বললো;এক কাজ কর,যা যা আছে তার সবকিছু গুছিয়ে গুনে গুনে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে মেয়েটাকে নিয়ে আমার বাসা থেকে বের হয়ে যা।এখন বাজে৮ঃ১৩,রাত বেশী হয়নি।কাজে লেগে পড় তাড়াতাড়ি।শামিম কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিল,এমন অবস্থায় আজহার হাতের কাপটা মেঝেতে ছুড়ে মেরে উত্তেজিত হয়ে বললো, কুত্তার বাচ্চা,লাত্থি মেরে পাছার হাড্ডি ভেঙে দিবো।বের হ শুয়োরের বাচ্চা।শামিম আর কথা না বাড়িয়ে ভিতরে গিয়ে নীরাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে নাহিদ দুই হাজার টাকা তার হাতে গুজে দিলো। শামিমরা বের হয়ে যাওয়ার পর জোহরা বললো,এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেন?মেয়েটার সামনে এতো চিল্লাপাল্লা না করলেও তো পারতে।আজহার চিৎকার করে বললো,চুপ কর ধুমসি মাগি। চিল্লাপাল্লা ভালো না লাগলে তুইও চলে যা তোর বাপের বাড়ি। জোহরা আর কথা বাড়ালো না।
রাত নয়টার মতো বাজে। খাওয়ার টেবিলে বসে আজহার বললো,নাহিদ,জারা ওরা কই? ওদেরকে ডাকোনি?জোহরা বললো,ডেকেছি,খাবে না ওরা। আজহার উঁচু গলায় ডাক দিলো,কিছুক্ষণ পর নাহিদ এসে খেতে বসলো,কিন্তু জারা সাফ জানিয়ে দিলো,নতুন একটা বউয়ের সামনে ওমন আচরণের জন্য বাবা যতক্ষণ ক্ষমা না চাইবে,ততক্ষণ সে এবাড়ির কিছু খাবে না। আজহার কিছু বুঝতে পারছে না, বাড়ির সবাই রাতারাতি এমন বদলে গেলো কিভাবে!নাহিদ বাদে এ বাড়ির অন্যরা শামিমকে দুচোখেই দেখতে পারতো না,তাদের আজ শামিমের জন্য দরদ উথলে পড়ছে!ঘটনা কী! অথচ শামিমকে বের করে দিয়ে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পাচ্ছে সে নিজেই।
নীরা শামিমের হাত ধরে হাটছে। রাত এগারোটার সামান্য কিছু বেশী।প্রচন্ড শীতের কারণে হোক কিংবা রাত বাড়ার কারণেই হোক,রাস্তাঘাট পুরো ফাঁকা। তারা মামার বাসা থেকে বের হয়ে দ্বীপন বাসে করে শাহবাগ নেমে সোজা ক্যাম্পাসে গেছে। দশটা পর্যন্ত টিএসসিতে আড্ডা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ সারারাত দুইজনে হাত ধরাধরি করে পথে পথে ঘুরবে।শামিম প্রথমে একটু আপত্তি করলেও উপায়ন্তর না দেখে রাজি হয়েছে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে পল্টনের রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত এসেছে তারা।উদ্দেশ্য কমলাপুর রেলস্টেশন।আর তাছাড়া আজ এভাবে হাটায় কিছুটা রিস্কও আছে।কারণ নীরার বাড়ি থেকে নিশ্চয়ই এতক্ষণ জিডি করে ফেলেছে।
নীরা বললো,আমার না আনন্দে বারবার চোখে পানি এসে যাচ্ছে। তাকাও আমার দিকে।শামিম দেখলো সত্যি সত্যিই নীরার চোখে পানি টলমল করছে। আকাশে ফকফকে জোছনা উঠেছে আজ৷সেই আলোয় নীরার চোখের পানি চিকচিক করছে।তাকে এতো চমৎকার লাগছে।কী যে মায়া হচ্ছে মেয়েটার জন্য।মনে হচ্ছে এই জোছনা কন্যা পাশে থাকলে এমন দুই একটা জীবন খুব সহজেই কাটিয়ে দেয়া যায়।শামিম হাত বাড়িয়ে নীরার চোখের পানি মুছে দিয়ে মনে মনে বললো,জনম জনম তব তরে কাঁদিবো।
ফকিরাপুলের দিক থেকে একটা গাড়ির হেড লাইটের আলো মধ্যম গতিতে এগিয়ে আসছে।কাছাকাছি আসার পর দেখা গেলো এটা টহল পুলিশের গাড়ি। শামিমের বুক শুকিয়ে আসার জোগাড় হলো।গাড়িটা ঠিক তাদের গা ঘেঁষে থামলো।একজন পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে তাদেরকে কাছে এগিয়ে আসলো।এবার সত্যি সত্যি শামিমের পা কাঁপা শুরু হলো।অথচ নীরা কী ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যেন এই সময় পুলিশ আসা কোনো ব্যাপারই না।