ঠিক করেছি তিন বান্ধবী মিলে একই দিনে একই কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে করবো ৷ আমরা যা করি তিন জন মিল রেখে করি। কোনো অকেশন আসলে তিনজন মিলিয়ে মিলিয়ে সেইম ড্রেস বানাই। শাড়ি কিনলেও তিনজন একই শাড়ি কিনি। অনেক ধৈর্য নিয়ে আমরা শপিং এ বের হই। কারন তিনজনের সব কিছু ম্যাচিং হতো না সহজে, অনেক ঘুরে ফিরে সব ম্যাচিং করতাম৷ সব দোকানপাট ওলটপালট করে খুঁজতাম। আমাদের এক ফ্যামির সাথে অন্য ফ্যামিলির অনেক মিলও আছে। ঠিক যেনো আত্নীয়।
সবই ঠিকঠাক চলছিলো আমাদের মাঝে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো বিয়ে নিয়ে। এদিকে আমাদের তিনজনেরই বাসায় প্রেশার দিচ্ছে বিয়েসাদীর জন্য। তিনজন সবসময় ম্যাচিং করে সব করি। কিন্তু ম্যাচিং করা জামাই কই পাবো! একজনকেতো তিনজন বিয়ে করতে পারবোনা৷ যমজ ভাই হলেও হতো। কিন্তু লাগবে আমাদের তিনজন।
এদিকে বাসায়ও প্রেশার বেড়েই চলেছে আমাদের। আমরা আমাদের তিনজনের ফ্যামিলিতেই আমাদের বিবাহ পরিকল্পনা জানালাম। বিয়ে হবে একদিনে, একই জায়গায়, তিন বান্ধবী একই পার্লার থেকে সাজবো। তারপর আমাদের পরিবার আমাদের এই উদ্ভট চিন্তা ভাবনা নিয়ে বকাবকি করলো। এরকম বিয়ে নাকি নাটক সিরিয়ালেই সম্ভব, এর আগে বাস্তবে বাংলাদেশের কোথাও এমন বিয়ে হয়েছে বলে নাকি তাদের জানা নেই৷ অনেক কষ্টে হাতে পায়ে ধরে সবাইকে রাজি করালাম আমরা । কিন্তু সবার কথা একটাই ছেলে পক্ষরা কি রাজি হবে এমন আজগুবি বিয়ের নিয়মে।
এদিকে আমরাও মনে মনে আমাদের তিনজনের জন্য জামাই খুঁজতে লাগলাম। সহজ বুদ্ধি হিসেবে প্ল্যানিং করলাম যে ফ্যামিলিতে তিন ভাই আছে, তাদের কব্জা করতে হবে। কিন্তু এরকম তিন ভাই খুঁজতে গিয়ে আমাদের যে হিমশিম খেতে হবে তা হাড়েমজ্জায় টের পেয়েছি। তিন ভাই খোঁজার আগে আমরা তিনজন আগে ঠিক করছিলাম কে কত নাম্বার বউ হবে। আমি ঠিক করলাম ছোট বউ হবো। রানু আর তিন্নি বড় মেজো মিলিয়ে নিবে। কিন্তু এরকম কোনো ছেলেই আমরা পাচ্ছিলাম না। তিন ভাই পেলেও কেউ মধ্যবয়স্ক , কেউ আমাদের চেয়ে বয়সে ছোট। এরকম না না রকম সমস্যার সম্মুখীন হলাম আমরা।
ঠিক করলাম তিন ভাই ক্যান্সেল। হ্যান্ডসাম তিনজন ছেলে হলেই হবে। তবে বাড়ি পাশাপাশি হতে হবে যাতে বিয়ের পর আমরা সকাল বিকাল যখন খুশি একজন আরেকজনের বাড়ি গিয়ে গাল-গল্প করতে পারি। সেদিন এক রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম আমরা তিনজন। ঢুকেই দেখি তিনজন ছেলে একটা টেবিলে বসে খাচ্ছে, আর গল্প করছে। তিনজনকেই একই বয়সের মনে হচ্ছে। রানু বললো দোস্ত আল্লাহ মনেহয় আমাদের জন্য তিনপিস এখানে একদম রেডি করে রাখছে। খুশিতে আমরা একজন আরেকজন ঠিক করে ফেললাম কে কাকে পটাবে। অনেকক্ষণ তাদের ফলো করলাম আমরা। এরপর দেখি তিনজনের একজন উঠে বিল দিতে যাচ্ছে। দেখলাম বিল দেওয়ার সময় একজন ওয়েটারের সাথে খুব আলাপসালাপ করছে৷ যখন ছেলেগুলো চলে গেলো, ওয়েটার কে ডেকে জিজ্ঞাস করলাম
-আপনি কি ওদের চিনেন?
-হ্যা ম্যাডাম। ওনারা এখানে সবসময় আসেন। কেনো ম্যাডাম কিছু বলেছে আপনাদের ?
– না না কি বলবে। দেখেইতো খুব ভদ্র দেখাচ্ছে তাদের। কি সুন্দর তিন ভাই মিলেমিশে খেলো। অনেক ভদ্র ফ্যামিলির। দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
-সরি ম্যাডাম ওনারা মামা ভাগ্নে, যিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি মামা অনেক ভালো মানুষ!
এক ধাক্কায় আমাদের তিনজনের মন ভেঙে খান খান হয়ে গেলো। ভাই না হোক, বন্ধু হলেও মেনে নিতাম। কিন্তু মামা ভাগ্নে কে পটিয়ে বিয়ে করে আমাদের তিন বান্ধবীর সম্পর্ক মামি ভাগ্নি করার ইচ্ছা নাই। এবার বাড়িতেও চাপ বেড়ে যাচ্ছে। বাবা বললেন বিয়ে তোমরা যেভাবে চাও সেভাবেই হবে। কিন্তু আমরা পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছি। তোমাদের পছন্দের অপেক্ষা আর করতে পারবোনা। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমাদের তিনজনের ফ্যামিলিই একটা বোর্ড মিটিং বসিয়ে দিয়েছিলো।
যথারীতি তিনজন পাত্র পাওয়া গেলো, কিন্তু তারা আমাদের এরকম উদ্ভট শর্তে অবাক। ঘটকের চাপার জোড়ে তিন পাত্রের পরিবারও রাজি হলো তিন বিয়ে এক সাথে করতে। কাল আমাদের বিয়ে, অথচ পাত্র দেখলাম না কেউই ৷ মনের মধ্যে শোক নিয়ে তিনজনই ভেবে নিলাম যাহ কপালে যা আছে। এখনতো পাত্রই পাওয়া যাচ্ছেনা, এরকম শর্ত অনুযায়ী পাত্র মিলানো খুব মুশকিল। যা পাওয়া গেছে তাতেই আমরা অর্ধেক অর্ধেক খুশি।
রাত ২ টায় আমাদের সবার বাসায় তুমুল কান্ড বেধে গেলো। শুনলাম রানুর পাত্র নাকি হারপিক খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তাকে নাকি জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো সেই দুঃখে সুইসাইড করতে নিয়েছে৷ কিছুক্ষন পর শুনলাম তিন্নির পাত্র নাকি বাড়ি ছেরে চলে গেছে কই কেউ জানেনা। একটু পরেই বাবার ফোন এলো আমার হবু জামাই নাকি তার চেয়ে বয়সে তিন বছরের বড় কোন মেয়ের সাথে কি না কি চক্কর ছিলো। সে তার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে রানু, তিন্নি, আমি মনে মনে খুশি হলাম , আর বললাম ভালোই হইসে কিছু সময় পাইসি, আয় আবার তিন ভাই খুঁজি আরামসে ….