অদ্বিতীয় ঘনাদা (গল্পগ্রন্থ): দাঁত

অদ্বিতীয় ঘনাদা (গল্পগ্রন্থ): দাঁত

দাঁত

মাছ ধরতে যাওয়া আর হল না।

এতদিনের এত জল্পনা কল্পনা আয়োজন-উদ্যোগ সব ভেস্তে গেল। অথচ কী উৎসাহ নিয়েই না সব ব্যবস্থাপত্তার করা গেছল। কী নিখুঁত তোড়জোড়! কী নির্ভুল অভিযানের খসড়া!

মাছ ধরা তো নয়, সত্যিই রীতিমতো একটা যুদ্ধযাত্রা।

শিবুর ওপর কমিসেরিয়েট-এর ভার, শিশির আছে আসেনাল-এর তদারকে, আর গৌর নিয়েছে ট্রান্সপোর্ট-এর ঝক্কি।

অর্থাৎ শিবু ব্যবস্থা করবে ভূরি-ভোজনের, শিশির জোগাবে ছিপ-বড়শি, টোপ, চার আর গৌর দেবে পৌছে সেই আশ্চর্য অজানা জলাশয়ে যেখানে সভ্যতার সংস্পর্শহীন সরল মাছেরা এখনও কুটিল মানুষের কারসাজির পরিচয় পায়নি।

তারপর শুধু ছিপ ফেলা আর মাছ তোলা।

গত কদিন ধরেই তাই দারুণ উৎসাহ উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে মেসের দিন কাটছে। ধরার পর অত মাছ আনা যাবে কী করে তাই নিয়েও তুমুল তর্ক হয়ে গেছে এবং আনাও যদি যায় তা হলে বাজারে কিছু বিক্রি করতে ক্ষতি কী—এ প্রস্তাব করতে গিয়ে খেলোয়াড়ি মেজাজের অভাবের অভিযোগে শিবুকে দস্তুরমতো অপ্রস্তুত হতে হয়েছে।

শখের মাছ ধরে এনে বিক্রি।

মাছ চালানোর ব্যবসা করলেই হয় তা হলে!

এই বেঁফাস কথার সাফাই গাইতে শিবুকে সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যন্ত দোহাই পাড়তে হয়েছে। এত মাছ একসঙ্গে এনে এই ভাদ্রের গরমে পচলে শহরের স্বাস্থ্য বিপন্ন হতে পারে এই তার বক্তব্য।

কিন্তু তাতেও সে পার পায়নি।

পাবে কেন! খিচিয়ে উঠেছে শিশির।

বিলিয়ে দেব আমরা। উদার হয়ে উঠেছে গৌর।

প্রতিবেশীদের মধ্যে কাদের মাছ বিলিয়ে অনুগ্রহ করা যায় তার একটা তালিকাও তৈরি হতে বিলম্ব হয়নি।

এই তালিকা তৈরির মাঝখানে উদয় হয়েছেন ঘনাদা।

শিশিরের কাছে তিন হাজার তেষট্টিতম সিগারেটটা ধার নিয়ে ধরাতে ধরাতে বলেছেন, কী হে, তোমাদের Operation Pisces-এর কতদূর!

জানতি পার নার জ দেওয়া পিসেজ শুনে প্রথমটা একটু ভড়কে গেলেও তাড়াতাড়ি সামলে নিয়েছি। শিবু থাকতে আমরাও বিদ্যেয় কম যাই নাকি! পিসেজ তো জ্যোতিষের মীন অর্থাৎ মৎস্য রাশির ল্যাটিন নাম। আমরা হেসে বলেছি, দূর আর কোথায়! আপনার জ্যোতিষের মৎস্য রাশি উঠোনে এনে ফেলেছি বললেই হয়।

উৎসাহের চোটে সেই আশ্চর্য পুকুরের সরল সুবোধ মাহদের কথা উচ্ছাস ভরেই শুনিয়েছি এবার।

ঘনাদা কিন্তু শুধু একটু মুখ বেঁকিয়েছেন।

মাছ ধরতে তা হলে যাচ্ছ না। ঘনাদার কথায় যেন কোথায় খোঁচা।

যাচ্ছি না মানে? কী করতে যাচ্ছি তা হলে?

বলো, মাছ মারতে। মাছ ধরা আর মারার মধ্যে তফাত আছে কিনা। একটা হল খেলা আর একটা খুন। যে মাছ খেলাতেই জানে না তাকে ধরা নয় শুধু মারা-ই যায়।

কথাগুলো মোটেই মনঃপূত হয়নি আমাদের। তাই খুঁত ধরে বলেছি, মাছ আবার খেলাতে জানবে কী! মানুষই তো মাছকে খেলিয়ে তোলে।

খেলায়, খেলায়, মাছও খেলায়। তেমন মাছ হলে মানুষকেই খেলায়। আর মাছ যদি খেলোয়াড় না হয় তা হলে ছিপ ধরাই মিছে। তবে তেমন খেলোয়াড় আর আজকাল আছে কোথায়? শেষ দেখেছিলাম নীলিমা-কে।

নীলিমা! আমরা অবাক।

হ্যাঁ, নীলিমা। নামটা অবশ্য আমারই দেওয়া। মেয়ে নয়, মাছ। ওপরে গাঢ় নীল আর নীচে ধোঁয়াটে রুপোলি। পাক্কা সাত হাত বিশমনি টুনি। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাভালন শহরের নাম শুনেছ কি না জানি না। মোটর বোটে ছিপ দিয়ে সমুদ্রের টুনি ধরার খেলা সেই শহরের মাথা থেকেই প্রথম বেরোয়। কিন্তু নীলিমার কাছে ঘ না দা সমগ্র সেই শহরের মাথা একেবারে হেঁট হয়ে গেছল সেবার। বাঘা বাঘা টুনি শিকারি যেখানে জমা হয়, অ্যাভালনের সেই টুনা ক্লাব একেবারে নিঃঝুম। নীলিমার কাছে হার মেনে সমস্ত শহর মর্মাহত। নীলিমা টোপ গেলে অম্লানবদনে, কিন্তু সে যেন শিকারিকে আহাম্মক বানাবার জন্যেই। নাচিয়ে খেলিয়ে বেচারা শিকারিকে নাকালের চূড়ান্ত করে শেষ পর্যন্ত ছিপের সুতোটি কীভাবে সে কেটে পালায় কেউ বুঝতে পারে । তাই নীলিমা মাছের ছদ্মবেশে জলকন্যা এমন একটা গুজবও তখন রটে গেছে।

সেই অ্যাভালন শহরে সেবার…

বেড়াতে গেছলেন, আর বাঘা বাঘা শিকারিরা যার কাছে মাথা মুড়িয়েছে, সেই নীলিমাকে মোটরবোটের বদলে ডাঙা থেকেই, হুইলের জায়গায় হাত-ছিপেই ধরে সবাইকে একেবারে তাক লাগিয়েই দিয়েছিলেন—এই তো? ঘনাদার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে এইভাবে শেষ করেও গৌর থামেনি, তার ওপর জুড়ে দিয়েছে, এ আর শোনাবেন কী! খবরের কাগজেই তো তখন বেরিয়েছিল। আমরা পড়েছি।

গৌর আমাদের দিকে সমর্থনের জন্যে তাকিয়েছে। কলের পুতুলের মতো আমরাও মাথা নেড়ে সায় দিয়েছি বটে, কিন্তু বুঝতে তখন আর আমাদের বাকি নেই যে, অবস্থা চিকিৎসার বাইরে গেছে।

একসঙ্গে ঘনাদার গল্প তাড়াতাড়ি থামানো ও তাঁকে খুশি রাখাই হয়তো গৌরের উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু ফল হয়েছে হিতে বিপরীত।

না, পড়োনি, ঘনাদার গলায় বিষাদের মেঘের ডাক, পড়তে পারো না। কারণ ব্যাপারটা যা বানালে তা নয়। আর খবরের কাগজে কিছু বার করতেই দেওয়া হয়নি।

শুনুন ঘনাদা, শুনুন। আর শুনুন!

ঘনাদা ততক্ষণে সিঁড়ি দিয়ে তাঁর টঙের ঘরে উঠছেন।

গৌরের ওপর আমরা সবাই খগহস্ত হয়েছি।

দিলি তো সর্বনাশ করে।

বাঃ! আমি তো ভালই করতে চেয়েছিলাম। গৌরের করুণ কৈফিয়ত, খবরের কাগজে পড়েছি শুনলে খুশি না হয়ে খাপ্পা হবেন কে জানত! তা ছাড়া স্টেশন-ওয়াগন যে দেবে তার সঙ্গে এই সকালেই দেখা না করলে নয়। গল্প একবার গড়ালে দুপুরের আগে কি থামত!

দোষ গৌরকে খুব দেওয়া যায় না। মাছ ধরার আয়োজনের এই ঝামেলার মধ্যে ঘনাদার গল্পটা মুলতুবি রাখার পক্ষে আমাদের সবারই সায় ছিল মনে মনে।

কিন্তু ঘনাদার মন তো আর তা শুনে গলবে না।

সেই যে তিনি বেঁকলেন, আর সোজা করে কার সাধ্য! উৎসাহ না থাকলেও আমাদের খেয়ালে আপত্তি তাঁর ছিল না আগে। আমাদের সঙ্গ ও শিক্ষা দেবার কথাও দিয়েছিলেন। সে কথা তিনি স্পষ্ট করে ফিরিয়ে নেননি এখনও। কিন্তু ভাবগতিক দেখে আমরা চিন্তিত।

রবিবারে আমাদের অভিযান! শুক্রবারে ঘনাদা তাঁর ঘর থেকে সন্ধের পর নামলেন না। ঠাকুর ওপরেই খাবার দিয়ে এল। শুনলাম তাঁর সর্দি। শনিবার সকালে শোনা গেল সর্দির সঙ্গে জুরভাব, আর রাত্রে বুলেটিনে জানলাম দাঁতের ব্যথা।

দাঁতের ব্যথা! খাবার-ঘরে আমরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম।

খাওয়ার পরই একতলায় শিশিরের ঘরে দরজা ভেজিয়ে মন্ত্রণাসভা বসল। ঘনাদা যে আমাদের সব মজা মাটি করবার প্যাঁচ কষেছেন, তা আর বুঝতে তখন বাকি নেই। কিন্তু আমাদেরও জেদ, ঘনাদাকে পাই বা না পাই, মাছ ধরতে যাব-ই। আর তার আগে ঘনাদাকে একটু জব্দও না করলে নয়।

পরদিন সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই ঘনাদার ঘরে গিয়ে সবাই আমরা হাজির। আমরা আর সদ্য ভাজা এক প্লেট গরম ক্রোকেট।

কী ব্যাপার, ঘনাদা! তিন দিন ধরে নীচে নামছেন না, আমাদের সঙ্গে যাবেন না নাকি?

কী করে আর যাই! ঘনাদার দীর্ঘশ্বাস আমাদের, না ক্রোকেট-এর প্লেটের উদ্দেশে বোঝা কঠিন।

হ্যাঁ, দাঁতের ব্যথা নিয়ে যাওয়া উচিতও নয়, আমরা সহানুভূতিতে গদগদ। কিন্তু ক্রোকেটগুলো কেমন হল আপনাকে একটু চাখানোও তো তা হলে যাবে না। সবই আমাদের ভাগ্য। চল হে।

আমাদের সঙ্গে ক্রোকেট-এর প্লেটও অন্তর্ধান হওয়ার উপক্রম দেখে ঘনাদা আর বুঝি সামলাতে পারলেন না।

অত যখন পেড়াপীড়ি করছ, দাও দেখি একটা চেখে। ঘনাদার নেহাত যেন অনিচ্ছা।

আমাদেরও যেন সঙ্কোচ—কিন্তু এই দাঁতের ব্যথায়…

গৌর প্লেটটা ঘনাদার প্রায় নাকের কাছ দিয়েই ঘুরিয়ে নিয়ে যায় আর কী!

তার হাত থেকে প্লেটটা একরকম কেড়ে নিয়েই ঘনাদা আত্মবিসর্জনের সুরে বললেন, তোক ব্যথা। একটা দায়িত্বও তো আছে। সঙ্গেও যাব না, আবার কী ছাইপাঁশ সঙ্গে নিচ্ছ, দেখেও দেব না, তা কি পারি!

প্রথম কামড়টা নির্বিঘ্নে-ই পড়ল, তারপর দ্বিতীয় কামড়–কটাস!

আমরা একসঙ্গে হাঁ হাঁ করে উঠলাম।

একদিকে ক্রোকেট-এর ভেতর থেকে বড় মার্বেল গুলিটা মেঝেতে আর একদিকে ঘনাদার মুখ থেকে দুপাটি দাঁত প্লেটের ওপর তখন ছিটকে পড়েছে।

চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে গৌর গলায় মধু ঢেলে জিজ্ঞেস করলে, বাঁধানো বলে মনে হচ্ছে না? বাঁধানো দাঁতেও ব্যথা হয় তা হলে?

ঘনাদা কি অপ্রস্তুত?

আমাদেরই মনের ভুল!

ফোকলা মুখেই করুণামিশ্রিত সহিষ্ণুতার হাসি হেসে দাঁতের পাটি কুড়িয়ে নিয়ে মুখে লাগিয়ে ঘনাদা বললেন, না, তা হয় না।

তারপর তাঁর গলার স্বর গাঢ় হয়ে উঠল রহস্যে—তবে ছেলেমানুষি চালাকি করে আজ তোমরা যা জানলে একদিন তা ধরা পড়লে এই দুনিয়ার চেহারাখানাই পালটে যেত। কাঁচা দাঁত তুলিয়ে সেদিন যদি না বাঁধিয়ে রাখতাম, আর সেই নীলিমার কাছে হদিস যদি না পেতাম, তা হলে পৃথিবীর ইতিহাস আজ অন্যভাবে লেখা শুরু হত।

আবার নীলিমা! আমরা চঞ্চল হয়ে উঠি ঘর থেকে বেরুবার জন্য।

কিন্তু ঘনাদা তখন বলে চলেছেন, এই দুপাটি বাঁধানো দাঁতই এক ভুইফোড় রাজ্যের লোভর থাবা থেকে সেদিন মানুষকে বাঁচিয়েছে।

অ্যাভালন শহরের নাম সেদিন করেছি। শহরটা কোথায় বলিনি। এ শহর হল ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিমে সেন্ট ক্যাটালিনা নামে ছোট এক দ্বীপে। পুরো দ্বীপটা যেন একটা নাদা পেট বেলেমাছ, দক্ষিণ-মুখো চলেছে। অ্যাভালন শহরটা যেন তার চোখ। এ শহরে বেড়াতে আমি যাইনি শখ করে। গেছলাম ডেকস্টা নামে এক পুরোনো বন্ধুর ডাকে। ডেকস্টা নামে অবশ্য তাকে খুঁজে পাবার আশা করিনি। শ্রীকৃষ্ণের শত নামের মতো তারও নামের সংখ্যা অগুনতি আর সেই সঙ্গে ছদ্মবেশও। কিন্তু নাম আর চেহারা তার যত রকমেরই হোক, স্বভাব তার চিরকাল এক। যেখানে কোনও গোলযোগের গন্ধ সেখানেই ডেকস্টা। জীবনে কত বিপদের মুখেই যে দুজনে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি তার হিসেব নেই। এই কিছুদিন আগেও অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক অ্যান্টনি ফিশার অন্তর্ধান হওয়ার পর তার খোঁজে প্রাণ হাতে নিয়ে কী না করেছি। খোঁজ যে পাইনি সে অবশ্য আমাদের একটা কলঙ্ক। এই ডেকস্টার জরুরি সংকেত টেলিগ্রাম পেয়েই অ্যাভালনে ছুটেছিলাম। টেলিগ্রামে এখনকার নাম সে দেয়নি। যে নামেই থাকুক তাকে খুঁজে আমি বার করবই সে জানত।

ঘনাদার দম নেওয়ার ফাঁকে নীচে স্টেশন-ওয়াগনের হর্ন শুনতে পেলাম। মন তখনও উসখুস করছে।

আচ্ছা, তা হলে, বলে গৌর তো উঠেই দাঁড়াল, কিন্তু ওই উঠে দাঁড়ানো পর্যন্তই।

ঘনাদা আবার ধরলেন।

অ্যাভালনে নেমেই ডে কস্টাকে খুঁজে ঠিক বার করলাম। কিন্তু জীবিত অবস্থায় নয়। ডে-কস্টা আমার পৌছোবার আগের দিনই সেন্ট ক্যাটালিনার পশ্চিম দিকের সমুদ্রে কেমন করে ড়ুবে মারা গেছে। ওখানকার ক-জন জেলে তার হাঙরে ঠোকরানো মৃতদেহটা উদ্ধার করেছে কোনওমতে। অ্যাভালনের কেউ তাকে ডে-কস্টা বলে শনাক্ত করতে অবশ্য পারেনি। মিলার বলে যে ছদ্মনামে সে এখানে ছিল দু-একজন সেই নামেই তাকে চিনেছে।

ডেকস্টার ড়ুবে মরাটা আমার কাছে কেমন রহস্যময় ঠেকল। ফুর্তির সাঁতার কাটতে ড়ুবে মরার ছেলে তো সে নয়। কী করতে সে এখানে এসেছিল? আমাকেও ডেকে পাঠাবার কারণ কী?

ডে-কস্টাই নেই—এ রহস্যের হদিস কে দেবে! তবু তার সংকেত-টেলিগ্রামটা আর একবার পড়ে দেখলাম। ডে-কস্টা অতি সাবধানী। সংকেত-লিপিতে পাঠানো টেলিগ্রামের পাঠোদ্ধার করলেও কিছু সন্দেহ করবার নেই। টেলিগ্রামের কথা হল এই, অ্যাভালনের টুনি মাছ সব শিকারীর স্বপ্ন। ধরবে তো তাড়াতাড়ি এসো।

না, এ টেলিগ্রামে আসল রহস্যের কিছুই বোঝবার উপায় নেই। সত্যিই রহস্য কিছু নেই, এমন কি হতে পারে! সংকেত-লিপিটা হয়তো তার রসিকতা, আসলে ক-দিনের ছুটি উপভোগ করবার জন্যে টুনি মাছ ধরতে সে আমায় ডেকে পাঠিয়েছে, এমন হওয়াও তো সম্ভব।

কিন্তু এ ব্যাখ্যা মন কেন যেন মানতে চায় না। ডেকস্টার মতো মানুষ খেলা কি ছুটির মর্ম জানে না, রহস্যের পেছনে ছোটাই তাদের জীবন, তাদের ছুটি।

তা হলে টুনি শিকারের মধ্যেই রহস্যের সূত্র হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে নাকি?

অ্যাভালন শহরে তখন নীলিমাই একমাত্র প্রসঙ্গ। রাস্তায় ঘাটে দোকানে বাজারে ও-ছাড়া আর কথা নেই। টুনা ক্লাবে তাই যেতে হল। ছিপ নিয়ে মোটর বোট ভাড়া করে একদিন টুনি-শিকারেও বেরুলাম। দেখাও পেলাম নীলিমার, আর কানমলাও যথারীতি। নাচিয়ে খেলিয়ে নীলিমাকে যখন প্রায় বোটে তুলতে যাচ্ছি, কেমন করে ওই ইস্পাতের তারের মতো শক্ত সুতো কেটে সে পালাল।

রোখ চেপে গেল আমারও। কিন্তু একদিন দুদিন তিনদিন নীলিমার কাছে নাকের জলে চোখের জলে হয়ে চার দিনের দিন আর শিকারে বেরুলাম না। মোটর লঞ্চ ভাড়া করে গেলাম আসল ক্যালিফোর্নিয়ার নিউ পোর্ট শহরে। ড়ুবুরির পোশাক পরে গভীর সমুদ্রের তলায় বল্লম দিয়ে মাছ শিকার সেখানকার এক খেলা। একদিন সেই খেলায় কাটিয়ে টুনা ক্লাবে ফিরতেই টিটকিরি শুলাম, কী রে নিগার! টুনা ধরার শখ মিটল! পালিয়েছিলি কোথায়?

টিটকিরি আর কারুর নয়, ক্লাবের সবচেয়ে ধনী সভ্য বেনিটোর। যেমন বদখদে সাদা গণ্ডারের মতো লোকটার চেহারা, তেমনই তার পয়সার অহঙ্কার। সাদা চামড়ার সভ্যদেরই সে মানুষ বলে গণ্য করে না তো আমাকে!

আমার কাছে কোনও জবাব না পেয়ে সে আমার টেবিলের ধারেই এসে দাঁড়িয়ে গোরিলার মতো হাতের বিরাশি সিক্কা একটি চাপড় আমার পিঠে বসিয়ে মুলোর মতো দাঁত বের করে হেসে বললে, তুই গুগলি ধর, বুঝেছিস, হাঁটু জলে কাদা ঘেঁটে গুগলি! যেমন মানুষ তেমনি তো শিকার।

ঠাট্টার ছলে সঙ্গে সঙ্গে আর একটি গোরিলা-হাতের রদ্দা।

তবু কোনও জবাব না দিয়ে শুধু একটু হাসলাম।

বেনিটো ঘৃণা ভরেই এবার আমায় রেহাই দিয়ে চলে গেল।

বেশির ভাগ পয়সার সামনে দণ্ডবৎ হলেও মার্কিন মাত্রেই অমানুষ নয়। বেনিটোর এই অহেতুক জুলুম অনেকেরই খারাপ লেগেছে বুঝলাম। কেউ কেউ এসে আমার ওপর রাগও দেখালে—তুমি মানুষ না কী! কী বলে ওই অসভ্য জানোয়ারটার জুলুম সহ্য করলে বল তো!

হেসে বললাম, জুলুম আর কী। বড়লোকের রসিকতাই ওই রকম। অত বড় একটা নিজস্ব পেল্লায় জাহাজ নিয়ে যে দুনিয়াটা টহল দিয়ে বেড়াতে পারে, কত তার পয়সা ভাবতে পারো। ওরকম লোক আমাদের মতো মানুষকে পোকা-মাকড় মনে করবে না তো করবে কে! একটু খুশি রাখলে ওর জাহাজের পার্টিতে একদিন নেমন্তন্নও তো পেতে পারি।

মার্কিন বন্ধুরাও মুখ বেঁকিয়ে এবার সরে গেল। বুঝলাম আমার ওপর যেটুকু শ্রদ্ধা তাদের ছিল তা-ও খুইয়েছি।

কিন্তু বেনিটোর জাহাজের পার্টিতে সত্যিই একদিন নিমন্ত্রণ পেলাম।

তার আগে নিউপোর্ট থেকে আনা ড়ুবুরির পোশাকে একদিন সমুদ্রে আমি নেমেছি। কোনও কোনও মরিয়া টুনি শিকারি তখনও নীলিমাকে ধরবার আশা ছাড়েনি। মোটর বোট নিয়ে দু-একজন সেদিনও তাই বেরিয়েছে।

নীলিমার অজেয় হওয়ার রহস্য সেদিনই বুঝলাম আর সেই সঙ্গে ডেকস্টার মৃত্যুরহস্যও বুঝি কতকটা!

কিন্তু আসল যে রহস্য তখন অনুমানও করতে পারিনি, বেনিটোর জাহাজের পার্টির রাতেই তা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।

জাহাজ তো নয়, জলের ওপর স্বর্গপুরী। টুনা ক্লাবের সবাই তো বটেই, আভালনের নাম করা কেউ নিমন্ত্রণ থেকে বাদ পড়েনি। মস্ত ওপরের ডেক ঝলমল করছে রংবেরং-এর আলোর পোশাকে। নাচগান খাওয়া ফুর্তি চলছে অবিরাম।

সারা রাতই চলবার কথা। কিন্তু রাত সাড়ে বারোটায় হঠাৎ সমস্ত উৎসব থেমে গেল এক নিমেষে। ডেকের ওপরকার সমস্ত ফুর্তিবাজের দল যেন কাঠের পুতুলের মতো স্তব্ধ। শুধু বেনিটোর কর্কশ বাজখাঁই গলা শোনা গেল

বন্ধু সব, আমার জানাতেও ঘৃণা হচ্ছে যে, আপনাদের মধ্যে এমন একজন নীচ ননাংরা জানোয়ার আছে যে অতিথি হওয়ার সুযোগ নিয়ে চুরি করতে এখানে ঢুকেছে। আমার অত্যন্ত মূল্যবান কিছু কাগজপত্র ও জিনিস এই জাহাজে আমি সঙ্গে নিয়ে বেড়াই। এইমাত্র আমি জানতে পেরেছি যে সকলের ফুর্তি করার সুযোগে আমার সেই গুপ্ত সিন্দুক-ঘরের দরজা সে কৌশলে খুলে ঢুকেছে। ঢুকে যা-ই সে করুক এ জাহাজ থেকে পালাতে সে পারেনি এ বিষয়ে আমি নিশ্চিন্ত। ধরা তাই সে পড়বেই। আজকের উৎসব বাধ্য হয়েই আমাকে এখানে বন্ধ করতে হচ্ছে। আপনাদের শহরে ফিরে যাবার লঞ্চের ব্যবস্থাও আমি অবিলম্বে করছি, কিন্তু তার আগে নিজেদের আত্মসম্মানের খাতিরেই আপনারা যদি নিজের নিজের নাম জানিয়ে আপনাদের কাছে আমার মূল্যবান জিনিস যে কিছু নেই তার প্রমাণ স্বেচ্ছায় দিয়ে যান আমি বাধিত হব।

খানাতল্লাশিতে কিছুই অবশ্য পাওয়া গেল না এবং বলাবাহুল্য, সব অতিথি বিদায় নেবার পর যে নামটি বাকি রইল তা আমার।

জাহাজের একটি কামরাতেই তখন আমি বসে আছি। কটা সিগারেট যে পুড়েছিল মনে নেই, কিন্তু কামরার দরজার হাতলে বাইরে থেকে হাত পড়তেই উঠে দাঁড়িয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে বললাম, এসো বেনিটো, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছি! খানাতল্লাশি করতেই বুঝি এত দেরি হল!

বেনিটোর হতভম্ব ভাবটা কাটতে কয়েক সেকেন্ড লাগল। তারপর হিংস্র গোরিলার সঙ্গে রঙে ছাড়া তার মুখের আর বুঝি কিছু তফাত রইল না।

কিন্তু এ ভাবটাও সে সামলে নিলে। ইঁদুরকে থাবার মধ্যে পেলে শিকারি বেড়াল তখুনি তাকে কামড়ে ছিড়ে খায় না।

বেনিটো অদ্ভুত পৈশাচিক মুখ-টেপা হাসি হেসে আমার দিকে এগিয়ে এল। তার মুখ দেখে বুঝলাম এমন তারিয়ে তারিয়ে জিঘাংসা মেটাবার সুযোগ পেয়ে তার আনন্দ আর ধরে না।

ব্যাঙ হয়ে সাপের গর্তে সিঁধ কেটেছিস, তোর সাহস আছে বলতেই হবে। কিন্তু লাভ কী হল এ-সাহসে। পারবি পালাতে?

বেনিটোর শেষের কথাগুলোয় রাগের চিড়বিড়িনি চাপা রইল না। তবু হেসে বললাম, পালাতে যাবই বা কেন? তোমার জাহাজটা তো তোফা আরামের।

বলে বসতে যাচ্ছিলাম, এক হেঁচকায় আমায় টেনে তুলে দাঁতে দাঁতে কিষ্কিন্ধ্যার কড়মড়ানি তুলে বেনিটো বললে, আরামই তোকে দেব, তার আগে কোথায় কী লুকিয়েছিস, দেখি।

অম্লান বদনে হাত তুলে দাঁড়ালাম। তন্ন তন্ন করে সব পরীক্ষা করে বেনিটো গর্জন করে উঠল, ভেবেছিস এখন কোথাও লুকিয়ে রেখে পরে পাচার করবি সুযোগ বুঝে। কিন্তু তার আগে তোকেই যে পাচার হতে হবে।

ডে কস্টার মতো—কেমন!

এক মুহূর্তের জন্যে চমকে উঠে বেনিটো আরও হিংস্র হয়ে উঠল, হাঁ, ডেকস্টার মতো। সে-ও তোর মতো এ জাহাজের রহস্য ফাঁক করতে এসেছিল।

এ জাহাজের রহস্য তা হলে আছে কিছু! দামি জিনিসের মধ্যে আমি তো লুকোনো সিন্দুকে এক বান্ডিল কাগজই দেখলাম।

সে কাগজ তুলে ঘেঁটেছিস তা হলে? বেনিটোর রাগের পারা চড়ছে।

তা ঘেঁটেছি বইকী, তবে নিইনি যে কিছু সে তো তুমি নিজেই গুনে দেখেছ।

আমার নির্বিকার ভাবটাই বুঝি বেনিটোর বেশি অসহ্য।

না নিলেও, টুকে যে রাখিসনি তাতে বিশ্বাস কী!

ও বাবা, ওই বিদঘুটে মাথা-গুলোনো এক বান্ডিল অঙ্ক আমি টুকব, এইটুকু সময়ে!

যা-ই করে থাকিস, নিস্তার তোর নেই। এ জাহাজের রহস্য জেনে কেউ জ্যান্ত ফেরে না। ডেকস্টার মতোই তোকে হাঙরদের ভোজে লাগাবার ব্যবস্থা করছি এখুনি। তবে তোর ওই কেলে মাংস হাঙরেও বোধ হয় ছোঁবে না।

তা হলে তোমার মতো যে মাংস হাঙরের পছন্দ তাই তাদের পাতে দিলে ভাল হয় না?

কী বলব, খ্যাপা গোরিলা না ষাঁড়, না দুই-এর একত্র সম্মিলনের মতো বেনিটো এবার আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

জামাটা ঝেড়ে নিয়ে আর একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, অনেক দিনের অনেক কিছুর শোধ নেবার আছে বেনিটো, এত তাড়াতাড়ি কীসের?

ঘাড়মুড় গুজে কেবিনের যে ধারে বেনিটো পড়েছিল সেখান থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে এবার সে সাবধানে আমার দিকে এগুতে লাগল। তাড়াহুড়োয় কিছু হবে সে বুঝেছে।

কাছাকাছি এসেই সাঁড়াশির মতো দু হাত দিয়ে সে আমায় জাপটে ধরতে গিয়ে সেই যে পড়ল আর ওঠবার নাম নেই। রদ্দাটা অত জোর হবে ভাবিনি।

কোমর ধরে তুলে তাকে কামরার সোফাটার ওপর বসিয়ে দিলাম।

পরমুহূর্তেই দেখি তার পিস্তল আমার দিকে তাক করা। আমি তাকে ধরে তোলবার সময় সুযোগ পেয়ে সে পকেট থেকে সেটা বার করেছে।

এইবার শয়তান? শয়তানের মতোই বেনিটোর মুখের হাসি—বল, কী করেছিস আমার সিন্দুকের কাগজপত্র ঘেঁটে?

সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললাম, আর বলে লাভ কী! বললেও যা না বললেও তা-ই। মরতে তো হবেই।

না, সত্য কথা যদি বলিস তো একটা সুযোগ তোকে দেব।

শুনতে পাই সুযোগটা?

এই জাহাজ থেকে সাঁতরে দ্বীপে যাবার সুযোগ।

হেসে বললাম, ডেকস্টাকেও এই সুযোগই তো দিয়েছিলে, কিন্তু এখানকার হাঙরগুলো যে বড় হ্যাংলা।

এখনও রসিকতা! বেনিটো চিৎকার করে উঠল, এ পিস্তলটা কি রসিকতা মনে হচ্ছে?

পাগল, বিশেষত তোমার মতো আনাড়ির হাতে। কিন্তু যা বলব শুনলে যদি তোমার মেজাজ আরও খারাপ হয়?

তবু শুনতে আমি চাই। বেনিটো হুংকার দিলে।

তবে শোনো, নেহাত যখন ছাড়বে না। ও কাগজপত্রের আমি ফোটো নিয়েছি।

ফোটো নিয়েছিস?

হ্যাঁ, নির্ভুল মাইক্রোফোটো যাকে বলে, এক এক করে সব পাতার।

অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিল বেনিটো, কোথায় সেসব ফোটো?

সেসব তো আর এ-জাহাজে নেই।

জাহাজে নেই! উত্তেজনায় বেনিটো উঠে দাঁড়াল, কোথায় ফেলেছিস!

ফেলব কেন! পাঠিয়ে দিয়েছি। আশ্চর্য যে guided missile অর্থাৎ দূর থেকে চালানো অস্ত্রের এখানে পরীক্ষা চালাচ্ছ, অস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে রসিকতার লোভ সামলাতে না পেরে টরপেডোর মতো যে জলে-ডোবা অস্ত্র দিয়ে টুনি শিকারিদের ছিপের সুতো কেটে নীলিমাকে অজেয় করে তুলে সবাইকে থ করে দিয়েছ, সেই টরপেডো দিয়েই নিউপোর্ট-এর সমুদ্রকূলে সে-সব ফোটো পাঠিয়ে দিয়েছি। খবর যাদের দেওয়া আছে তারা কাল সকালেই সমুদ্রতীর থেকে টরপেডো তুলে তা খুলে সে-সব ফোটো উদ্ধার করবে।

মিথ্যা কথা? বেনিটোর আর্তনাদ না চিৎকার বোঝা যায় না! সে টরপেডো একজন ছাড়া কেউ চালাতে জানে না।

যে জানে সে-ই চালিয়েছে। আমার নয়, বেনিটোর পেছনে আর একজনের কণ্ঠস্বর। শীর্ণদেহ, কিন্তু ঋজু সৌম্য চেহারার এক বৃদ্ধ বেনিটোর পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কখন তিনি তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন, বেনিটো উত্তেজনার মধ্যে বুঝতেও পারেনি।…

দিশাহারা অবস্থায় তার মুখ দিয়ে কটা অস্ফুট আওয়াজ শুধু বেয়োয়, আপনি— অ্যান-ট-নি…

হ্যাঁ, আমি অ্যান্টনি ফিশার। চুরি করে বন্দী করে নিয়ে গিয়ে পাঁচ বছর ধরে যাকে দিয়ে ক্রীতদাসের মতো যা খুশি তোমরা করিয়েছ সেই হতভাগ্য নীচ বৈজ্ঞানিক। আমি দুর্বল, মরতে আমি ভয় পাই। তাই তোমাদের হুকুম কাপুরুষের মতো আমি তামিল করেছি। আমায় দিয়ে শুধু এই দূর থেকে চালানো অস্ত্র তোমরা তৈরি করিয়ে নাওনি, যে কোবাল্ট বোমা আজও কেউ তৈরি করতে পারেনি, তার সমস্ত অঙ্ক লিখিয়ে নিয়েছ। সে অঙ্কের খাতা আর তোমাদের শুধু একলার নয়। তার হুমকি দেখিয়ে দুনিয়াকে আর তোমরা ভয় দেখাতে পারবে না, এই আমার সান্ত্বনা। নরপিশাচদের হাতের পুতুল হয়ে যে আমায় থাকতে হবে না তার জন্যে এই মানুষটিকে ধন্যবাদ।

বেনিটোর হাত থেকে তার পিস্তল কেড়ে নিয়ে বললাম, আমায় নয়, ধন্যবাদ দিন সেই ডে কস্টাকে, প্রাণ দিয়ে এ-রহস্যের কিনারা করার ইঙ্গিত যে দিয়ে গিয়েছে।

তার সংকেত-টেলিগ্রাম যে আপনাকেই নিয়ে তা এতদিনে কাল সবে বুঝেছি। টুনা-শিকারির কথাটার ভেতর যে অ্যান্টনি ফিশার নামটা লুকোনো আছে তা আগে মাথাতেই আসেনি।

কিন্তু কিন্তু ফোটো তোলা হল কীসে? বেনিটো এই হতাশার মধ্যেও জিজ্ঞেস না করে পারেনি। আমি গোপনে কে কী নিয়ে জাহাজে উঠেছে সব সন্ধান রেখেছি। ছোট-বড় কোনও ক্যামেরা তোমার কাছে দেখা যায়নি। ক্যামেরা তোমার ছিল কোথায়?

আমার কথা শুনেও ক্যামেরা কোথায় ছিল বুঝতে পারছ না!

কথা শুনে মানে? হঠাৎ মানেটা বুঝতে পেরে বেনিটো মেঝের ওপরই হতভম্ব হয়ে বসে পড়ল।

হ্যাঁ, সোজাসুজি ক্যামেরা আনলে ধরা পড়তে হবে জানতাম বলেই এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যা সন্দেহের বাইরে। আমার বাঁধানো দাঁতই গুপ্ত ক্যামেরা। ছবি সমেত সেই বাঁধানো দাঁতজোড়া-ই টরপেডোতে পাঠিয়েছি। ফোকলা মুখে সব কথা যদি না বোঝাতে পেরে থাকি তো দুঃখিত।

আমার রদ্দায় যা হয়নি এই শেষ কটা কথায় তাই হল। বেনিটো মাথা ঘুরে পড়ে একেবারে অজ্ঞান।

টরপেডো গুপ্ত ক্যামেরায় ফোটো নিয়ে যথাস্থানেই পৌঁছেছিল। বেনিটো আর তার জাহাজটাকে তার পরদিন থেকে সেন্ট ক্যাটালিনার ধারে কাছে কিন্তু কেউ দেখেনি। সেই সঙ্গে টুনা ক্লাবের আর একটি লোককে যার সম্বন্ধে ক্লাবের সভ্যদের ধারণা আজও অত্যন্ত নিচু।

ঘনাদা থামলেন।

মাছ ধরতে যাওয়ার আর তখন সময় নেই।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত