ইতি মাদকাসক্ত। বিষয়টি জানার পরও আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়েটা করে ফেলেছিলাম সেদিন। যদিও পরিবারের অ-মতে এমন কাজ করা কখনই সমীচিন নয়,কিন্তু ইতিকে দূরে ঠেলে দেয়াও আমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। এক শক্তিশালী মায়ার জালে আটকে ফেলেছিল ইতি আমাকে। যে জাল ছিড়ে বের হয়ে আসার কোন পথই আবিষ্কার করতে সক্ষম হইনি।
ইতির সাথে পরিচয় হয় অনলাইনে। শত শত পাঠকের মেসেজের ভিড়ে সিলেক্ট হয় ইতির মেসেজ। সেই থেকে কথা বলা,তারপর ঘনিষ্ঠতার বাড়াবাড়ি,অতঃপর বিয়ে। অনলাইনের রিলেশনগুলোতে যেমন সব বিষয় ভালভাবে জানা হয়ে উঠে না। কিছু না কিছু কোন একজন গোপন রাখে,তেমনি ইতির মাদকাসক্ত হওয়ার ব্যাপারটিও আগে থেকে আমি জানতে পারিনি অথবা ইতি বলেনি। যখন জেনেছি তখন পানি অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। তখন কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।
শুধু ইতির মুখের দিকে তাকিয়ে সেদিন বিয়ে করাটাই যে আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা আসলেই আমি কোনদিন ভাবতেই পারিনি। তাই বিয়ে করে বাসায় উঠেছিলাম সেদিন। ফলে পেয়েছি ভর্ৎসনা,হারিয়েছি নিজ পরিবার। এ পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও সংকীর্ণতার বাকডোরে আটকে গিয়েছিলাম আমি। চারদিকে শুধু দেখতে পাচ্ছিলাম অন্ধকারের জয়জয়কার!
এতকিছুর মাঝে আমি ইতির সাথে সংসার শুরু করি সব পিছুটান ভুলে। ইতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেষ্টা করবে। নেশার জগতকে চিরতরে বিদায় জানাবে। কিন্তু দিন যতই সামনে এগুতে লাগল উল্টো বাড়তে থাকল তার মাদকের ভয়াবহতা। এর প্রতিক্রিয়া দেহ ছাড়িয়ে সাধারণ জীবন চলার মাঝে গালার কাটার মত আটকে থাকল। বাড়ল দুরত্ব, মনে জন্ম নিল ইতির জন্য অপ্রত্যাশিত ঘৃণা! আজ ইতিকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিl অবস্থার অবণতি দেখে আমার নিজেরই খুব আফসোস হচ্ছে। ডাক্তার সাহেব বলেই ফেললেন “আমার মনে হচ্ছে আর চিকিৎসা করে কোন লাভ নেই। রোগী যদি নিজেই সুস্থ হতে না চায় তাকে সুস্থ করার মত কঠিন কাজ দুনিয়াতে নেই।”
সব কথার বিপরীতে কথা বলা যায় না। ডাক্তারের কথার জবাবে বলার মত কোন উত্তর আমি পাইনি। এভাবে কিছুদিন কাটল। ইতির মাঝে কোন ধরণের পরিবর্তন তো হলই না বরং বিষয়টি আরো গুরুতর হল। আমার অবর্তমানে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে লাগল অন্য ছেলেদের সাথে। সে কি ভয়াবহ কান্ড! মাদক মানুষকে এত নিচে নামিয়ে দিতে পারে?
একদিন বাসায় এসে দেখি ইতি শুয়ে আছে। মোবাইলটি পাশে পড়ে আছে। হাতে নিয়ে ফোন চেক করতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠল। ইতির কয়কটি আপত্তিকর ছবি সে একজনকে পাঠিয়ে রেখেছে। মেসেজ পড়ে মোটামুটি বুঝতে পারলাম টাকার বিনিময়ে সে এগুলো করছে। নেশার দ্রব্য ক্রয়ের ব্যবস্থা করছে। তখন আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছিল। যে ইতির জন্য এতকিছু করলাম সেই আমাকে ধোঁকা দিল। ততক্ষণে ইতি জেগে গেছে। ফোন ওর দিকে বাড়িয়ে ধরতেই সে সাধারণ ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল যেন এটা কোন বিষয়ই না। এমনকি আমি রেগে গিয়ে যখন বললাম তোমাকে আমি আর রাখতে চাই না তখন হাসিতে ফেটে পড়ল। বেশ কুৎসিত সে হাসি!
আইনের নিয়মানুসারে ইতিকে চিরতরে বিদায় দেয়ার ব্যবস্থা সমপন্ন করলাম। কাবিনের টাকা মাসে মাসে পাঠিয়ে শোধ করতে লাগলাম। এক মাসে টাকা পাঠাতে একটু লেইট হচ্ছিল। তখন ইতি হঠাৎ ফোন করে টাকা চেয়ে বলল: “ভেবোনা টাকা দাওনি বলে ফোন করেছি। বরং আমার কাছে এখন টাকার ছড়াছড়ি। হবেই বা না কেন বল। টাকার জন্য যদি তোমার সাথে শুতে পারি অন্যের সাথে কেন পারবো না? ”
ইতির শেষ কথাটি কানে গুলির মত প্রবেশ করল। মুখ থেকে কোন বাক্য বের হল না। ফোন কেটে গেল। কিন্তু কথাটি কানে আটকে রইল অভিশাপ হয়ে। অনেক কাল এভাবে চলে গেল। ইতির টাকা পরিশোধ শেষ হয়েছে। সে আর ফোন করে না। কিন্তু এখনও ঘুমের ঘোরে ইতির শেষ কথাটি শুনে লাফিয়ে উঠি। আচ্ছা ইতি কি এখনও আগের মত মাদকাসক্ত?