আমার সারাদিন

আমার সারাদিন

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোন রকম ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ার অফিসে। আমার একটা সিমের বিষয়ে কথা বলতে। কাস্টমার কেয়ারে ঢুকার সাথে সাথে সিকিউরিটি আমার হাতে একটা টোকেন দিলো। আমার সিরিয়াল হলো ১৩ নাম্বার। আমি আমার পাশে থাকা পত্রিকাটা উল্টে পাল্টে পড়তে লাগলাম। একটু পর খেয়াল করলাম একজন বয়স্ক লোক ভিতরে ঢুকলো। আমি উনাকে বসতে দিয়ে বললাম,

~আংকেল আপনার সিরিয়াল নাম্বার কত? উনি বসতে বসতে বললেন,

–বাবা আমার সিরিয়াল নাম্বার হলো ২৭। মনে মনে ভাবলাম একটা বয়স্ক লোক এতক্ষণ বসে থাকবে। তাই আমি উনাকে বললাম,

— আংকেল আপনি আমার টোকেনটা রাখেন। আমার সিরিয়াল নাম্বার ১৩। আপনি কেন এতক্ষণ বসে থেকে কষ্ট করবেন। উনি হাসি মুখে আমার টোকেনটা নিয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,

— সমাজে এখনো তোমার মত কিছু ভদ্র ছেলে আছে যারা এখনো মুরব্বিদের সম্মান করে।।

কথাটা শোনার পর মনের মাঝে একটা অন্য রকম ভালো লাগা শুরু হলো। মাঝে মাঝে মানুষের ছোট একটা উপকার করলে ওরা খুশি হয়ে মন থেকে দোয়া করে আরো ১ ঘন্টা পর আমার সরিয়াল আসলো। আমি ওদের সাথে কথা বলে। রিচম্যান শোরুমে ঢুকলাম একটা শার্ট কিনার জন্য। শোরুমে ঢুকে দেখি শোরুমের ছেলে গুলো একটা ছেলেকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি পাশে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এই ছেলের কি হয়েছে? উনি বললেন, এই ছেলেটা না কি এই শোরুমে কাজ করে। প্রেমে ব্রেক-আপ হয়ছে দেখে কারেন্টের লাইনে হাত দিয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিলো।

আমি তখন ছেলেটার পাশে বসলাম। সুইসাইড করার পর ওর বাবা মার কি সমস্যা হতে পারে। পরকালে আল্লাহ তালা তাকে কি কি শাস্তি দিবে সবকিছু এই ছেলেটাকে বুঝালাম। প্রায় দেড় ঘন্টা ছেলেটাকে বুঝানোর পর ছেলেটা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, ভাই আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর করে সব কিছু বুঝানোর জন্য।

মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম মাঝে মাঝে মানুষকে সামান্য কিছু কথা বলে অনেক বড় উপকার করা যায়। ছেলেটা হাসি হাসি মুখে আমায় বললো, ভাইয়া কি কিনতে এসেছিলেন? আমি মুচকি হেসে ছেলেটাকে বললাম, ভাই অনেক দেরি হয়ে গেছে আরেক দিন কিনা কাটা করবো নিউলুক সেলুনে ঢুকলাম চুল কাটার জন্য। যখন আমার সিরিয়াল আসলো তখনি একটা লোক তড়িঘড়ি করে ভিতরে ঢুকলো। সেলুনের ছেলেটাকে বললো, ভাই আমাকে একটু তাড়াতাড়ি দাড়িগুলো কেটে দিতে পারবে আমার ৩০ মিনিট পর ট্রেন।

ছেলেটা তখন লোকটাকে বললো, স্যার এইখানে সিরিয়াল ওভারটেক করা হয় না। আমি তখন মুচকি হেসে ছেলেটাকে বললাম, তুমি উনারটা আগে করে দাও আমি না হয় এই ফাঁকে জুতা কিনে নিয়ে আসি আজ আমার সারাদিন যাচ্ছে মানুষের ছোটখাটো উপকার করে। সত্যি বলতে মানুষের উপকার করলে ভালোই লাগে জুতার শোরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ জুতা দেখে একজোড়া জুতা পছন্দ করলাম। জুতাগুলো যখনি পায়ে পড়ে দেখতে যাবো ফিট হয় কি না তখনি কোথাথেকে এসে শোরুমের একটা ছেলে আমার শার্টের কলার ধরে বললো,

~ ঐ মিয়া, আপনার জুতা কিনতে হবে না। আপনি বের হয়ে যান। আমার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার দেখে পাশে থাকা অন্য একজন কাস্টমার বললো,
— আরে, আপনি কাস্টমারের সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করছেন কেন? ছেলেটি তখন বললো,

~ ভাই ঐ লোক কোন কাস্টমার না। ঐ লোকের কাজেই হলো বিভিন্ন শোরুমে ঢুকে এই গরমে এসির বাতাস খাওয়া। পকেটে চেক করে দেখেন ১০০ টাকাও নাই। ও কি করে হাজার টাকা দিয়ে জুতা কিনবে?

আমাকে শোরুম থেকে বের করে দেওয়া হলো। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এই গরমের মাঝে এসি রুমের ভিতর এই সামান্য অপমান কিছুই না। আগামী কাল যাবো পপুলার ক্লিনিকে।ঐখানে আমার সিরিয়াল দেওয়া। সিরিয়াল নাম্বার হলো ৫১। ইন্ডিয়া থেকে একজন ডাক্তার প্রতি মাসে আসে। ডাক্তার যখন ৫০তম রুগী দেখবে তখন ৫১তম রুগী ক্লিনিক থেকে হাওয়া হয়ে যাবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত