টানা ৫ মাস হোস্টেলে থাকার পর আজ বাড়ি যাচ্ছি।যতটা আনন্দ বাড়ি যাওয়া নিয়ে হচ্ছে তার চেয়ে বেশি বিরক্ত লাগছে এই জ্যামে পড়ে।তার উপর এই অসহ্যকর গরম।তবুও যাই হোক ২ঘন্টার পথ ট্রাফিক জ্যামের জন্য ৩ ঘন্টা লাগলো পৌঁছাতে।
বাড়ি এসেই সবার খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি।বাসায় আম্মু ছাড়া আর কেউই আপাতত নেই।আব্বু আর ছোট ভাই মসজিদে গেছে।তাই আম্মুর সাথেই কথা বলা শুরু করলাম। আম্মু তুমি কি জানো আমাদের বাসার দারোয়ান চাচা যে পাশের বাসার লিজাদের বুয়ার সাথে প্রেম করে। তাকে প্রতিদিন ফুল, চকলেট এসব দেয় তুমি কি তার কোনো খবর রাখো।আর দারোয়ানের বউ তো মনে হয় এসবের কিছুই জানে না।এসবের খোঁজ খবর রাখা উচিত তোমার।
আমাদের তৃতীয় তলার ছেলেটি যাকে তোমরা খুব ভালো বলো ও যে তিন দিন আগে একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে।এগুলো কি তার থেকে আশা করেছিলে।শুনো আম্মু চেহারা দেখে সব কিছু বিচার করা যায় না।রহিম চাচার মেয়ে যাকে কালো বলে সবাই বিয়ের জন্য রিজেক্ট করতো আজ ও এম বি বি এস হওয়ার পর ওর জন্য বিয়ের লাইন ধরা হচ্ছে।
সারাদিন মিউজিক সিস্টেম চালু করে ফুল ভলিউমে গান শুনে তোমাদেরকে বিরক্ত করা ক্লাস নাইনের সেই ছেলের মিউজিক সিস্টেমটা নষ্ট হয়ে গেছে গতকাল রাতে।তাই আমরা এখন শান্তিতে বসে কথা বলতে পারছি।তোমাকে কথায় কথায় হীরার লকেট দেখিয়ে কথা শুনাতো যে রহিমার মা তার গত সপ্তাহে স্বামীর গিফট দেওয়া সেই হীরার লকেট চুরি হয়ে গিয়েছে।তাই স্বামীর ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছে না।
রিফাতের আব্বু বুড়া বয়সে আরেক বিয়ে করেছে সে খবর তো তোমরা কেউই জানো না।আচ্ছা এলাকার নারিকেল গাছগুলো থেকে যে নারিকেল চুরি হচ্ছে সে চোরকে তো আজও তোমরা ধরতে পারো নাই।আমার কি মনে হয় জানো গত মাসে পাশের বিল্ডিং এ যে নতুন ভাড়াটিয়া আসছে ওদের কাজের ছেলেটা এসব করছে।
আচ্ছা এলাকার খবর বাদ দাও নিজের ঘরের খবর বলি আব্বুকে বলো এসব লটারির টিকিট কিনে কোনো লাভ নাই।কিছুই পাবে না।আব্বুর বালিশের নিচে গিয়ে খোঁজ করো পরশুর একটা টিকিট পাবে। তার উপর তোমরা রায়হানকে যে নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছো তাকি আমাকে একবার ও বলেছো।রায়হান আমার ছোট ভাই ওর সব খবর আমাকে জানানো উচিত।আর তোমার যে প্রেশার বেড়ে গিয়ে দুই দিন হাসপাতালে ছিলা তার কিছুই তো আমাকে বলোনি।যখনই ফোন করেছি ভালো আছো বলেছো।
আর পাশের বাসার ওই আন্টি এটা বলে তোমার কান ভারী করছে তাই না “আরে ভাবী মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিন।নয়তো কখন কার সাথে ভেগে যাবে টের পাবেন না” শুনো আম্মু এগুলার কিছুই হবে না।আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি না। আম্মু কতক্ষন ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে অবশেষে বললো “তুই এসব কিভাবে জানলি তোকেতো আমরা কিছুই বলিনি।তার মানে তোকে” আমাকে কি ? আমি কিছু বলার আগেই আম্মু কাকে কাকে জানি ফোন করা শুরু করলো।এই দিকে খুব টায়ার্ড ও ছিলাম। তাই রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম। বিকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি পাড়া প্রতিবেশী সবাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
আর এর মধ্যে দারোয়াব চাচা হাত জোড় করে বলে আমি যেন তার বউকে এসবের কিছুই না বলি।একথা শুনে বুয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সেও এতক্ষনে ভয়ে শেষ।তৃতীয় তলার আংকেল জিজ্ঞাসা করলো তার ছেলে এখন কোথায়।রহিম চাচা জিজ্ঞাসা করলো তার মেয়ের বিয়ে কবে হবে।আর তার মধ্যে নতুন ভাড়াটিয়ার কাজের ছেলেটা আমার পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়ে বলে আপু মাপ করেন।আমি এ নারিকেল চুরি করছি।আপনি বললে এরা সবাই আমাকে মাপ করে দিবে।রহিমার মাও ততক্ষনে জিজ্ঞাসা করলো তার হীরার লকেট টা কোথায় হারিয়েছে। এদের সবার মধ্যে হঠাৎ আব্বু সবাই কে এই সরো সরো বলে তার টিকিট হাতে নিয়ে এসে বললো দেখতো মা আমার এই টিকিটে কোনো পুরষ্কার পাবো নাকি
কতক্ষন থেকে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।তাই ছোট ভাইয়ে ইশারা করায় ও এসে কানে কানে বললো আম্মু এলাকার সবাইকে ফোন করে জানিয়েছে আমাকে নাকি জ্বিনে ধরছে আর তার জন্য ৫ মাস এলাকার বাহিরে থেকে ও এলাকার পুরো খবর জানি।এই কথা শুনে আম্মুর দিকে তাকাতেই আম্মু এসে বলে তুই চিন্তা করিস না মা তোকে এই জ্বিন থেকে আমি ঠিকই ছাড়িয়ে নিবো।এই কথা বলে আম্মু কপালে একটা চুমু দিলো।
এদিকে আমি আম্মুকে বলেই যাচ্চি আমাকে কোনো জ্বিনে ধরেনি।কিন্তু কে শুনে আমার কথা। এখন আসল কথা ওদেরকে কীভাবে বুঝাই যে আসার সময় হোস্টেল থেকে বাসা পর্যন্ত পুরোটা পথ আমি সি এন জি তে এলাকার দুই আন্টির মাঝখানে বসে এসেছিলাম তার জন্য এলাকার সব খবর আমি জানি।