অতঃপর ভাইয়ার সাত মাসের রিলেশনশিপের ইতি হল ! এই জাস্ট ফ্রেন্ডের যুগে সাত মাস রিলেশনশিপ টিকিয়ে রাখা চাট্টি খানি কথা না ! তার একগাদা কদমবুসি প্রাপ্য ! দেবদাসের মত লুক করে একজন আদর্শ ছ্যাকাউল্লাহর মত ভাইয়াও আজ সারাদিন ঘরে বসে বসে সিগারেট ফুঁকছে ! সাউন্ড সিস্টেমে নোবেলের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত বাজছে “আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস !” বারবার গিয়ে উঁকিঝুঁকি করছি, ভাইয়ার অবস্থা দেখে রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে ! এটাই তো প্রথম ছ্যাকা না ! তাহলে এত ঢং কিসের ! রাগে ফসফস করতে করতে নিজের ঘরে এসে বসলাম আর যাই হোক, ভাইয়ের আজকের এই দূর্গতির মেইন ভিলেন কিন্তু আমিই !
আসলে হয়েছিলো কি – গতবছর আজকের দিনেই ভাইয়া ইমু আপুর কাছে ছ্যাকা খেয়ে আমি সহ আরো ৬৭ জনকে ট্যাগ করে কিছু স্যাড পোস্ট দিয়েছিল আজ মেমোরিজ গুলো সামনে চলে আসায় কিছু না ভেবেই শেয়ার দিলাম আর অমনি কেল্লা ফতেহ ! আমার ভাবী মানে সদ্য প্রাক্তন হওয়া ভাবী সেটা দেখে রেগে ফায়ার হয়ে ভাইয়ার অতীত স্ট্যাটাস সব চেক করে ফেলেছে ! তার আগেও যে ভাইয়ার মিতু, নীরা, শিলা আর ইমু আপুর সাথে রিলেশন ছিল তাও বুঝে গেছে ! ভাইয়ার মন আবার বিশাল বড় – সে কাউকেই “না” করতে পারে না তাই আজ এই অবস্থা ! এসব নাটকীয় কাজ কারবার দেখে আমি অভ্যস্ত, তাই হাই তুলতে তুলতে ঘুমোতে গেলাম মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। আমার ঘুম আর আসবে বলে মনে হচ্ছেনা !
মাঝরাতে এভাবে বসে থাকতে ভাল্লাগেনা ! এই অভ্যাসটা খুব বাজে। ইচ্ছে করে নিজেই নিজের গালে কষিয়ে দুটো চড় থাপ্পড় বসিয়ে দেই ! কিন্তু তা তো হয়না। টাইম পাস করার জন্য ফোনটা হাতে নিলাম, ডাটা অন করা মাত্রই টুং করে বেজে উঠল, আমার প্রাক্তন ভাবীর মেসেজ।ঘন্টাখানেক আগেই দিয়েছে, তখন আমি ঘুমোচ্ছিলাম। মেসেজ ওপেন করে দেখি লেখা “আপু প্লিজ একটু হেল্প করো ! অনিক (আমার ভাই) ঠিক কার কার সাথে রিলেশন করছে এসব একটু প্লিজ আপু ডিটেইলসে বলো ! আই রিকুয়েস্ট ! ও আমাকে সরি বলছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা কি বলব ! প্লিজ হেল্প”
সামনের পাটির বাঁকা দাঁতগুলো বের করে মেসেজটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। একটা শয়তানি বুদ্ধি মাথায় খেলে গেল ! মনে মনে ভাবলাম “ভাইয়া তুই যে ছোটতে আমার পুতুল ভেঙে দিতি, আমার হোমওয়ার্ক কেটে দিতি, আমাকে কুড়িয়ে আনা বাচ্চা বলতি ! আজ সব কিছুর বদলা নেব থাম !” আমিও আমার প্রাক্তন ভাবীকে ঘটা করে উত্তর দিলাম,
আমি : আরেহ ভাবী কি যে বলি আপনাকে ! নিজের ভাই বলে ভাববেন না আমি সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হব ! নেভার ! আমি আপনার পাশে আছি ! এগিয়ে যান ! শাস্তি দিন সেই পিশাচকে ! নারীবাদী চেতনায় নিজেকে উজ্জীবিত করেন ! জয় হোক বিশ্বের সকল নারীর ! (ভাবী এক্টিভ ছিল)
ভাবী : কিন্তু আপু আমি যে তাকে ভালবাসি…
আমি : ভাবী এসব গোনাডোট্রোপিকের বিছানো জাল ! এই জালে ভাইয়াও বহুবার পা দিয়েছে ! তার যেমন বহু এক্স আছে তেমনি জায়গায় জায়গায় Y Z এসবও আছে !
ভাবী : মানে?
আমি : (ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম) ভাবী আপনি তো জানেন না ! ভাইয়া যখন নার্সারিতে পড়ত তখন নিশাকে লাইক করত, তারপর কেজিতে উঠে অনামিকা কে, তারপর ওয়ান টু তে সে খুব অনেস্ট ছিল -তার একমাত্র লাভ ছিল সুহা, এরপর ক্লাস থ্রি ফোর ফাইভে রিদি, ইরা, খুশি এদের পেছনে টাইম পাস করেছে ! এসব তো শৈশবকালের কথা, কৈশোরকালের কথা কি যে বলি ! একজন প্রশিক্ষিত প্লে বয় আমার ভাইয়া !
ভাবী : আর ইউ শিউর এবাউট অল দিজ?
আমি : জ্বি ভাবী ! আমি শিউর ! (মিনিট পাঁচেক পর মেসেজ আসল)
ভাবী : এসবের পিছনে তাহলে তুই ! তোর জন্য আমার সংসার ভাঙছে ! থাম আমি আসতেছি ! তোকে আজকে দুদণ্ড চড় থাপ্পড় লাথি না মারলে আমি ঘুমাতে পারব না !
মেসেজ দেখে আমার মাথায় হাত ! মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে লাগলাম “এসব কি বলছে ভাবী?” তখনই শোনা গেল ভাইয়া দরজা ধাকাচ্ছে আর গরুর মত করে চিল্লাচ্ছে “দরজা খোল ! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন !” পরক্ষণে মনে পড়ল আমার সব ভাবীর পাসওয়ার্ড তো ভাইয়ার কাছে থাকে ! তার মানে এতক্ষণ আমি ভাইয়ার সাথেই! ভাইয়া অনবরত দরজা ধাক্কাচ্ছে আর আমি আয়াতুল কুরসি জপ করে যাচ্ছি জীবন মৃত্যু এখন একমাত্র আল্লাহর হাতে !