তিথির সাথে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত জানা ছিল না তার মধ্যে কোন সমস্যা আছে কিনা! কিন্তু তিন কবুল বলার পর হঠাৎ করে যখন তার দাদী এসে বলল ভাই তিথির কিন্তু কামড়ে দেওয়ার দোষ আছে, এইটা একটু মানিয়ে নিস। আমি দাদীর কথা শুনে রীতিমত চমকে গেলাম। কি বলছো এসব! তিথি কী এখনো বাচ্চা নাকি যে কামড়ে দিবে! তার যথেষ্ট বয়স হয়েছে এই বয়সে তার এগুলো মানায় নাকি! আরে দাদি তোমার মাথা ঠিক আছে তো! দাদী বলল মাথা আমার ঠিকই আছে, যখন কামড়ে দিবে তখন বুঝতে পারবি। ওকে বেশি রাগালে কামড়ে দেয় তাছাড়া মেয়ে খুব শান্ত আছে। আমি আগে থেকে সর্তক করে দিলাম এই আরকি। আমি বললাম দাদী সমস্যা নেই আমারও একটা দোষ আছে। মাঝে মধ্যে ঘুমের ঘোরে কোলবালিশকে থাপ্পড় দেই কিন্তু আজ থেকে তো আর কোলবালিশ প্রয়জন হচ্ছে না। তিথি এটা মানিয়ে নিতে পারলে আমিও তার কামড়ানো দোষটা মানিয়ে নিব।
এরপর আমার বন্ধুরা পাশে আসাতেই দাদী মুখটা পেঁচার ন্যায় করে স্থান ত্যাগ করলো। দাদীর মুখটা এমন দেখে আমি মিটমিট করে হাসছি। বন্ধুরা জিজ্ঞাস করলো কি হয়েছে রে! আমি কথা ঘুরিয়ে অন্য কথায় আসলাম। হ্যাঁ তারপর বল আমার শালিদের কেমন দেখলি! পছন্দ হয়ছে নাকি একটাও! তারা বলল ঐ তুই যে বললি তোর বউ একা তার কোন ভাই বোন নেই, তাহলে শালি আসবে কোথা থেকে!! উত্তরে আমি বললাম আরে বলদের দল বউয়ের নিজের বোন নেই তো কি হয়ছে? বান্ধবী আছে তো, ঘরের ঐ পাশে যে মেয়েগুলো দেখলি ও গুলো সব আমার শালিকা। মানে আমার বউয়ের বান্ধবী আর কাজিন। এ কথা শুনার পরে সবকজন উঠে গেল। আমি বললাম ঐ সবাই যাচ্ছিস তা আমার কাছে থাকবে কে! এই ফাস্ট বিয়ে করছি ভয় লাগে না বুঝি!! বদমাইশ কয়টা আমার কথা কোন রকম শুনলো না। পরাণডা আপিস টিপিস করছে কখন যে শালিদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়!
বিয়ের সকল কাজ শেষ। এখন শ্বশুর আব্বা আমার হাতে তার মেয়েকে তুলে দিয়ে বলল বাবা আমার একমাত্র মেয়ে, কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেইনি, কোনদিন নখের আঁচড়ও দেইনি। আমার কলিজার টুকরোকে তোমার হাতে তুলে দিলাম তুমি তাকে কখনো কষ্ট দিও না। আমি বললাম আব্বা চিন্তা কইরেন না। কষ্ট দেওয়া তো দূরের কথা, আপনার মেয়ের ধারের কাছেও কষ্ট আসতে দিব না। গাড়িতে উঠবো কিন্তু তখনও তিথি কান্না করছে না। আমি তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম কি ব্যাপার তুমি কান্না করবে না নাকি! এই কথা বলার পর আমার দিকে দাঁত মুখ শিটকিয়ে উঠলো। আমি মনে করলাম এবার মনেহয় কামড়ে দিবে, তাই তাৎক্ষণিক এক লাফে গাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লাম। তিথির আচমকা এমন আচরণে আমি গোমড়া মুখ করে বসে আছি আর ভাবছি এই মেয়ে কি মামা, খালার বাড়ি যাচ্ছে নাকি যে চোখে একফোঁটাও জল নেই। আমি যতদূর জানি মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি কান্দে।
যেমনটা তার বাবা মরে গেলেও কান্দে না। কিন্তু আমার বউয়ের বেলায় বিপরীত। শেষ পর্যন্ত এই সাংঘাতিক মেয়েকে নিয়ে আমার হোল্ড লাইফটা কাটাতে পারবো তো! নাকি তার আগেই অক্কা পেতে হয় আল্লাহ ভালো জানে! যাই হোক এখানে যতই কথা কম বলব ততই আমার জন্য মঙ্গল। এরপর ভুম গাড়িতে করে বউ নিয়ে চলে আসলাম। বন্ধুরা পিছনের গাড়িতে আনন্দ করতে করতে আসছে। রাস্তার মাঝ বরাবর আসার পর আমার মোবাইলে একটা কল আসলো। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম তিনি আর কেউ নন তিনি আমারই দাদা। স্মার্ট দাদা। ফোনটা রিসিভ করেই দাদাকে বললাম কি ব্যাপার দাদা এখন কল দিছো কেন! ঘন্টাখানেক আগেই তো বললাম আমি কেবল রওনা দিব। বাসায় ফিরতে হয়তো দুই ঘন্টার মতো লাগতে পারে। রাখলাম বাসায় এসে কথা বলবানে।
দাদা বলল আরে দাড়া দাড়া যেটা জিজ্ঞাস করব সেটা না শোনার আগেই রাখতে বলছিস কেন? আগে বল নতুন বউয়ের সাথে কে আসছে! দাদী নাকি নানি? আমি বললাম আচ্ছা তুমি কি এটা শুনার জন্য ফোন দিছো? তিনি বলল তা নয়তো কি! বেশি প্যাচাল না পেড়ে বলতো কে আসছে !! আমি দাঁত শিটকে বললাম বউয়ের দাদি। এরপর দাদা বলল যাক তাহলে মনেহয় মনের আশাটা এবার পূরণ হবে”! মনে মনে বলছি এই বুইড়া আবার কি আশা করে রইছে কেই জানে! দাদী বলল কি ব্যাপার কোন গার্লফ্রেন্ড কল দিছিলো! যাই হোক ঐসব গার্লফ্রেন্ড টার্লফ্রেন্ড বাদ দাও এখন কিন্তু বিয়ে করছো৷ যা করছো বিয়ের আগে এখন আর নয়। এখন থেকে যা হবে সব আমার নাতির সাথে। আমি বললাম দাদিআম্মা আসলে তেমন কিছু নয় আমার দাদু আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এত সময় আমার দাদুর সাথেই কথা বলছিলাম। এই প্রথমবার আমাদের বাড়িতে যাচ্ছেন তো তাই তার তরফ থেকে অগ্রিম আমাকে দিয়ে অভিনন্দন জানাতে বলল।
দাদী বলল তা সেটা আমি বাসায় গেলেও তো জানাতে পারতো। এসব বুইড়াদের ঢং দেখে বাঁচি না। আমি বললাম দাদী আপনিও কিন্তু বুড়ি। আর আমার দাদা বুইড়া হলেও যথেষ্ট স্মার্ট আছে। আজ মেকআপ করিনি বলে বুড়ি বলছিস মেকআপ করলে তোর বউও আমার কাছে ফেলটু মারতো। এভাবে সারা রাস্তা দাদীর সাথে তর্ক করতে করতে অবশেষে বাসায় এসে পৌছালাম। গাড়ি থেকে নামতেই দাদার মুখখানা দেখতে পেলাম। দাদা তিথির দাদীর সামনে গিয়ে বলল কংগ্রেস্যালুশন। আমাকে যেন দেখেও দেখছে না।
নতুন বিয়ে করে সবসময় বউয়ে পাশেপাশে থাকলে মানুষজন ভাববে বউ পাগলা। তাই সবসময় নতুন বউয়ের থেকে দূরে থাকছি কিন্তু আমার দাদা নতুন বউ এবং বউয়ের দাদীর সাথে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিতেই আছে। এমনভাবে হাসিঠাট্টা করছে মনেহয় বহুদিন ধরে চেনাপরিচয়। কিছুক্ষণ পর বন্ধুরা বলল চল ক্লাবে যাই। নতুন বউকে দাদার কাছে রেখে যেতেও ইচ্ছে করছে না তবুও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যেতে হল, তা নাহলে অনেক কথা শুনতে হতো। রাত দশটা বেজে গেছে তবুও বন্ধুরা ছাড়াছে না।
বন্ধু শাহিনের বাসা থেকে তার বাপ কল দেওয়ায় আজকের মতো আড্ডার সমাপ্তি ঘটলো। যাক আমিও জেলখানা থেকে ছাড়া পেলাম। নতুন বউকে ঘরে রেখে বন্ধুদের সাথে থাকাটা আমার কাছে আজ জেলখানা মনে হচ্ছিলো। তারপর তড়িঘড়ি করে বাসায় আসলাম। বাসায় এসেই দাদার মুখটা দেখলাম মলিন হয়ে গেছে। কি ব্যাপার দাদা তোমার মুখটা এমন মলিন কেন! যাওয়ার সময় তো দেখলাম বেশ হাসিখুশী আছো, কিছু হয়ছে নাকি? দাদা বলল কি আর হবে! তোর বউ আর বউয়ের দাদীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে আমার বয়স নিয়ে তর্কাতর্কি করে। এরপর তর্কে হেরে গিয়ে তোর বউ আমাকে কামড়ে ফুটা করে দিয়েছে