বিয়ে বাড়ির সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম।বিরিয়ানির ভারী গন্ধ নাকে এসে বারি খাচ্ছিলো।মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি ভিড় জমেছে।ভাবছি এই বিয়ে বাড়িতে মেহমান রূপে ভোজন সেরে আসলে মন্দ হবে না।এইরকম কাজ অবশ্য আগেও অনেক করেছি।বিশেষ করে কলেজ লাইফে।আমি আর আমার ফ্রেন্ডরা মিলে বিয়ে বাড়িতে যেয়ে খেয়ে দেয়ে আসতাম।ভাব ধরতাম যেন আমরাই বরপক্ষ।কিন্তু আজ আমার সাথে ফ্রেন্ডরা কেউ নেই।আমি একা একটা মেয়ে হয়ে এই কাজ করলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে জিরো পার্সেন্ট।আমি অবশ্য নরমাল জামা কাপড়ে আসি নি।যতোটুকুই আছি ফিটফাট অবস্থাতেই আছি।কাজেই কেউ আমাকে বাহিরের মানুষ ভাববার মতো ভুল করবে না।
বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বউ দর্শনের জন্য স্টেজের সামনে ভিড় করা মানুষগুলো পাশে দাঁড়ালাম।সবার মতো করে আমিও হ্যান্ড সেট বের করে নববধূর কিছু ছবি তুলে নিলাম।হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন আমার কাধে হাত দিতেই আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম একজন মহিলা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বুকটা ধ্বক করে উঠলো।আমি কি ধরা খাবার মতো কোনো ভুল করেছি!মহিলাটি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন-
-এই মেয়ে,এখানে কেমন করে আসা হলো?আমি আমতা আমতা করে বললাম-
-এইতো বিয়ের দাওয়াত খেতেই এলাম। মহিলা আমাকে বেশী কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো-
-আরে পরী,সেটা তো আমিও জানি যে তুই বিয়ে খেতে এসেছিস।তো কিভাবে আসা হলো তোর?
এই মহিলার কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে রইলাম।কে পরী?এই মহিলা আমাকে পরী নামে ডাকছেন কেন?তিনি কি ভাবছেন আমি পরী নামের তার পরিচিত কেউ। আমিও ভাবটা এমন ধরলাম যেন আমি তাকে খুব ভালো চিনি এরপর হাসি হাসি মুখে বললাম-
-কেমন আছেন?অনেকদিন পর দেখা।শরীর স্বাস্থ্য ভালো তো! মহিলা রাগী কন্ঠে বললেন-
-রাখ তো তোর কথা।একবারও আমাকে ফোন টোন দিস না।একবার তো ফোন দিয়েও খবর নিতে পারিস।তোর মায়ের সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা আছে। আমি বললাম-
-কি কথা?
-তোর মা আমাকে বলে রেখেছিলো তোর জন্য ভালো ছেলে দেখতে।আমি একটা ভালো ছেলের খোঁজ পেয়েছি।
আমি খুশি হবার মতো করে বললাম-
-তাই নাকি।যাক,মা অনেক খুশি হবেন আপনার কথা শুনলে।
-ছেলে একেবারে মনের মতো রে।এইরকম ছেলে আজকাল দুনিয়াতে কম আছে।মেয়ে মানুষদের দিকে তাকানো এই ছেলের স্বভাবে নেই।বি.এ মাস্টার্স একেবারে ফার্স্ট ক্লাস।এখন বাবার বিজনেসে মন বসিয়েছে।বলতে গেলে একেবারে সোনার ছেলে। মহিলার কথাবার্তা আমার মোটেও ভালো লাগছিলো না।অন্যদিকে খাবারের গন্ধে আমার পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।আমি তাকে এইটা বোঝাই কি কেমন করে!অবশেষে আমি বললাম-
-চলুন,খেতে বসে পরি।খেতে খেতে কথা বলি।মহিলা রাজি হলেন।তিনি খাবার টেবিলে আমার চেয়ারের পাশেই বসলেন। বসে বসে বললেন-
-তুই দেখেও ছেলেকে পছন্দ করবি। আমার তার কথা হজম করাটা কঠিন হয়ে পরলো।তবুও আমি শক্ত হয়ে কথা শুনে তাল মিলিয়েই যাচ্ছি।মহিলা বললেন-
-তুই কোনো কথা বলছিস না কেন?লজ্জা পাচ্ছিস?আহারে দুনিয়া।বিয়ের আগে হবু জামাইয়ের কথা শুনলে মেয়েরা লজ্জায় ফেটে পরে অথচ বিয়ের পর এই লজ্জা দজ্জালে পরিণত হয়। ওমনি তিনি নিজেই ফিক করে হাসি দিয়ে খাবার নাকেমুখে উঠিয়ে বিষম খাওয়ার মতো পর্যায়ে চলে গেলেন।
অবশেষে আমার খাবার খাওয়া শেষ হলো।এইবার আমি এই মহিলার থেকে লুকিয়ে এখান থেকে কেটে পরার সুযোগ খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু মহিলা আমাকে বললেন-
-পরী,তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আমি বললাম-
-সেটা কি?
-তোকে একটা কথা এখনো বলি নি।তোর জন্য আমার সেই পছন্দের ছেলে এখানেই আছে।
আমি পরলাম বিপদে।এক তো ফ্রি বিয়ে খাওয়ার ধান্দায় আসলাম আর এই মহিলা এসে কি সব কথা বলে আমাকে প্যাচে ফেলে দেয়ার মতো জাল বিছাচ্ছে।মহিলা একটি নীল রঙের ব্লেজার পরা একজনকে দেখিয়ে আমাকে বললেন-
-তুই কি দেখতে পাচ্ছিস ওই ছেলেটাকে?ওই ছেলেটার কথাই আমি বলছিলাম।তুই একটু দাঁড়া।আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।দুজনে সামনাসামনি কিছুক্ষণ কথা বল।
ছেলেটাকে দেখে আমার চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হলো।এই মহিলা এতোক্ষণ যার বর্ননা দিচ্ছিলেন ওই ছেলে আর কেউ না সে আমার প্রাক্তন প্রেমিক।অর্থাৎ দুই বছর আগে এই ছেলের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্কের ইতি ঘটে গেছে।মহিলা এই ছেলেকে ডেকে ফিরে আসার আগেই আমি আর এক বিন্দু দেরী না করে বিয়ে বাড়ি থেকে কেটে পরলাম।বাহিরে এসে মনে মনে মহিলাটার প্রতি আমার জেদ হচ্ছিলো।কারন সে আমাকে কিছু মিথ্যে কথা বলেছেন।প্রথমত বি.এ তে এই ছেলে থার্ড ক্লাস পেয়েছিলো।আর দ্বিতীয়ত ভার্সিটিতে মেয়ে পটানোর ধান্দাই ছিলো একসময় ওর বেকারত্বের চাকরী।আর ওই মহিলার চোখে সে সোনার ছেলে।
‘পরী পরী’ ডেকে আমাকে যেই মহিলা এতোক্ষণ বিরক্ত করেছেন তার যদি একসময় সেই আসল পরীর সাথেই দেখা হয় তখন কি ঘটবে কে জানে!সে কি বুঝতে পারবে যে বিয়ে বাড়িতে তার সাথে দেখা হওয়া আমি পরী নামের একজন ভুল মানুষ ছিলাম নাকি আসল পরীকে দেখেই সে তার পরবর্তী কথাগুলো বলতে থাকবে!যাক গিয়ে ওসব কথা।প্রাক্তনের বিয়ে হচ্ছে এইটা ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে।
সোনার ছেলে বলে চালিয়ে দিয়ে কোনো এক পরী নামের মেয়ের বিয়ে হবে এই ছেলের সাথে।আমার অবশ্য ওদিকে মাথা ব্যথা নেই।বিয়ে বাড়ির ফ্রি খাবার খেয়েছি এতেই আমার আনন্দ হচ্ছে।ভাবছি প্রাক্তনের সাথে ওই পরী মেয়েটার বিয়ের দিনও আমি একই কাজ করবো।মহিলাটিকে আমার পরিচয় দিয়ে সেদিন আমি চমকে দিবো।আমাকে দেখে তখন তার অভিব্যক্তি কেমন হবে সেটা কল্পনা করতে করতেই আমি হাটা শুরু করলাম।