০৩. আজ পনের দিন হয়ে গেল
আজ পনের দিন হয়ে গেল রূপা আব্দুস সাত্তারের ফোন পায় নি। প্রতিদিন রাত একটা পর্যন্ত ফোনের অপেক্ষায় থাকে।
সায়মা রাত বারটা একটা পর্যন্ত পড়ে। তার সঙ্গে রূপাও কোনো দিন গল্পের বই, আবার কোনো দিন কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা পড়ে। সায়মা ঘুমিয়ে পড়ার পরও আব্দুস সাত্তারের ফোনের আশায় একটার পর বিছানায় শুয়ে জেগে থাকে।
সায়মা ব্যাপারটা প্রথম দিকে জানতে পারে নি। জানার পর একদিন ঘুমাবার সময় জিজ্ঞেস করল, কিছু অনুমান করতে পারলি?
।সায়মা কী জানতে চাচ্ছে, রূপা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে বলল, কী অনুমান করব?
অত আর ন্যাকামী করিস না। তুই যে আব্দুস সাত্তারের ফোনের আশায় রাত একটা দেড়টা পর্যন্ত জেগে থাকিস, তা আমার অজানা নেই।
রূপা চিন্তা করল, ও যখন জেনেই গেছে তখন আর মিথ্যে করে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবু ছোট্ট একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, তুই কী আব্দুস সাত্তার সাহেবের কথা বলছিস?
তা নয় তো কী সেই গুলি খাওয়া ছেলেটার কথা বলছি?
আমার মনে হয়, ঐদিন কোনো কারণে আব্দুস সাত্তার সাহেব আসতে পারেন নি। তাই লজ্জায় হয়তো ফোন করেন নি।
আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না।
কী মনে হচ্ছে তা হলে বল।
সায়মার প্রায় মনে হয়, গুলি খাওয়া ছেলেটাই আব্দুস সাত্তার সাহেব। কথাটা আপু বিশ্বাস করবে না ভেবে বলবে কিনা চিন্তা করতে লাগল।
কী রে, চুপ করে আছিস কেন? বলবি তো তোর কী মনে হয়?
শুনে তো বলবি, “তোর বুদ্ধি একদম কাঁচা।”
ঠিক আছে, আর কোনো দিন বলব না। এবার বল।
গুলি খাওয়া ছেলেটাই আব্দুস সাত্তার সাহেব।
রূপা চমকে উঠে কয়েক সেকেন্ড তার মুখের দিকে চেয়ে থেকে বলল, হঠাৎ তোর এরকম মনে হল কেন?
হঠাৎ মনে হয় নি, ঐ দিনই হয়েছে। তুই বিশ্বাস করবি না বলে বলি নি।
ঐ দিনই বা তোর মনে হল কেন?
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুস সাত্তার সাহেবের কথা তোর মনে না থাকলেও আমার ছিল। তাই যতক্ষণ ওখানে ছিলাম কাছের ও দূরের সব লাইট পোষ্টের দিকে লক্ষ্য রেখেছিলাম। কাউকেই নামায পড়তে দেখি নি।
সায়মার কথা শুনে গুলি খাওয়া ছেলেটার সুন্দর বলিষ্ঠ শরীর, তার সৎ সাহস। ও ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়ার পর চোখে চোখ পড়ার কথা রূপার মনে পড়ল। সেই সাথে সারা তনুমনে আনন্দের শিহরণ বয়ে গেল। চিন্তা করল, সায়মার কথা সত্য। হলে সে খুব ভাগ্যবতী। তার মতো ছেলে জীবনে দেখে নি। চওড়া কপাল, খাড়া নাক, কপালজোড়া কালো মিশমিশে যুগল, মাথায় কোঁকড়ান চুল, প্রায় ছ’ফুট শম্বা হলেও স্বাস্থ্য খুব সুন্দর, সংযত ও ভদ্র আচরণ, কি দুরন্ত সাহস। পিস্তল দেখেও এতটুকু ভীত হয় নি। কী অসীম ধৈর্য? অভদ্র ছেলেটা অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করলেও এতটুকু উত্তেজিত হন নি। বরং সংযত কণ্ঠে হাসিমুখে কথা বলেছেন।
তাকে চুপ থাকতে দেখে সায়মা বলল, আমার কথা কতটা সত্য বিচার করছিস তাই না?
রূপা এতক্ষণ যেন সংসদ ভবনে ছিল। সায়মার কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল, হ্যাঁ, তাই চিন্তা করছিলাম।
তা ফলাফলটা ইতিবাচক, না নেতিবাচক?
রূপা মনের ভাব গোপন করে বলল, নেতিবাচক। কারণ তিনি যদি আব্দুস সাত্তার সাহেব হতেন, নিশ্চয় ঐদিন রাতে ফোন করতেন। আমার মনে হয়, কোনো বিশেষ কারণে ঐদিন আসতে পারেন নি।
আসতে না পারার কারণটা কেন উনি ঐদিন ফোন করে জানালেন না, সে কথার উত্তরে কী বলবি?
ফোন না করারও কারণ থাকতে পারে।
এতদিনেও কী কারণটা শেষ হয় নি? আমি তোর যুক্তি মানতে পারলাম না। ঘুম পাচ্ছে বলে সায়মা পাশ ফিরে শুল।
রূপাও ঘুমাবার চেষ্টা করল; কিন্তু ঘুমাতে পারল না। চোখ বন্ধ করলেই আব্দুস সাত্তারে কথা মনে পড়তে লাগল। ভাবল, ঐদিন উনি এলেন না কেন? এতদিন ফোনও করেন নি কেন? তারপর সংসদ ভবনের ঘটনাটা মনের পর্দায়। ভেসে উঠল। গুলি খাওয়া ছেলেটা এতদিনে সুস্থ হয়েছে কিনা কে জানে। এইসব ভাবতে ভাবতে একটু তন্ত্ৰামতো এসেছিল, ফোন বেজে উঠতে ছুটে গেল। ভাবল, নিশ্চয় আব্দুস সাত্তারের ফোন। তাড়াতাড়ি উঠে রিসিভার তুলে মনের আবেগে সালাম দিয়ে ফেলল।
সালামের উত্তর দিয়ে আব্দুস সাত্তার বলল, আগে বলুন ক্ষমা করেছেন।
তার আগে বলুন, ঐদিন সংসদ ভবন চত্বরে আসেন নি কেন? আর এতদিন ফোন করেন নি কেন? জানেন না, ওয়াদা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ?
জানি। সেই জন্য সেদিন গিয়েছিলাম। আপনাদের সামনে গুলি হতে দেখেছি। গুলি খাওয়া ছেলেটাকে আপনারা নিয়ে চলে গেলেন তাও দেখেছি।
আপনি তো বলেছিলেন, কোনো একটা লাইট পোষ্টের কাছে নামায পড়বেন; কিন্তু তা তো পড়েন নি।
না পড়ি নি। ঘটনা দেখতে দেখতে পাঁচটা পঁচিশ বেজে গেল। তাই আপনারা চলে যাওয়ার পর পড়েছি।
তা না হয় বুঝলাম; কিন্তু ঐদিন রাতে ফোন করেন নি কেন?
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিশেষ কারণে করতে পারি নি।
বিশেষ কারণটা এই পনের দিন পর্যন্ত বুঝি ছিল?
ঐদিন রাতে ফোন করলে পরের দিন রূপা তাকে দেখতে চাইতে পারে ভেবে আব্দুস সাত্তার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করে নি। ভেবেছিল, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে করবে। আজ ডাক্তার ব্যান্ডিজ খুলে দিয়েছে। তাই ফোন করেছে। রূপার কথার উত্তরে। বলল, ঠিক কথাই বলেছেন।
রূপা রেগে উঠে বলল, বিশেষ কারণ না ছাই। আপনি আমাকে খেলাচ্ছেন। আমার তো মনে হচ্ছে, আপনি একটা ফ্রড।
আব্দুস সাত্তার মনে আঘাত পেয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।
কী হল? ফ্রড বলতে চুপ হয়ে গেলেন যে?
আব্দুস সাত্তার আহতস্বরে বলল, তাই যদি ভেবে থাকেন, তা হলে আপনাকে আর কোনো দিন বিরক্ত করব না। কথা শেষ করে লাইন কেটে দিল।
তার কথাগুলো রূপার কানে খুব করুণ শোনাল। কয়েক বার হ্যালো হ্যালো করে বুঝতে পারল, লাইন কেটে দিয়েছে। রিসিভার ক্যাডেলে রেখে চিন্তা করল, ফ্রড বলায় নিশ্চয় মনে কষ্ট পেয়ে লাইন কেটে দিয়েছেন। হঠাৎ মনে হল, তিনি হয়তো কাটেন নি, এমনি কেটে গেছে। যদি তাই হয়, তা হলে আবার ফোন। করবেন ভেবে অপেক্ষা করতে লাগল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন ফোন এল না তখন নিশ্চিত হল, লাইন কেটেই দিয়েছেন। ভাবল, সত্যিই কী তিনি আর। কোনো দিন ফোন করবেন না? কথাটা ভেবে মনের গহীনে কাঁটা বিধার মতো ব্যথা অনুভব করল। মনকে বোঝাল, কোথাকার কে, যাকে কোনো দিন দেখে নি, যে। নাকি পরিচয় দেয় নি, সামনে আসার যার সৎ সাহস নেই, তার জন্য ব্যথা পাওয়া। উচিত নয়।
ঘুম পাচ্ছে বলে সায়মা পাশ ফিরে শুলেও ঘুমায় নি। সেও গুলি খাওয়া ছেলেটার কথা চিন্তা করছিল। ফোন বেজে উঠতে কান খাড়া করে এতক্ষণ ঘুমের ভান করে পড়েছিল। হ্যালো হ্যালো করে রূপা রিসিভার রেখে দিতে বুঝতে পারল, লাইন কেটে গেছে। আবার ফোন আসার অপেক্ষায় তাকে অনেকক্ষণ বসে থাকতে দেখে বলল, আজ হয়তো আর লাইন পাচ্ছেন না; কাল নিশ্চয় করবেন। এবার শুয়ে পড়।
রূপা বলল, উনি হয়তো আর কোনো দিন ফোন করবেন না।
খুব অবাক হয়ে সায়মা জিজ্ঞেস করল, কেন?
ঐদিন সংসদ ভবন চত্বরে আসেন নি ও এতদিন ফোন করেন নি কেন বলে তাকে ফ্রড বলেছি। তাই আর কোনো দিন বিরক্ত করবেন না বলে লাইন কেটে দিলেন।
যাক বাবা, এতদিনে তা হলে তুই একটা ফ্রড ছেলের উপদ্রব থেকে রেহাই পেলি।
তুই অবশ্য ঠিক কথা বলেছিস, তবে কী জানিস, ফ্রড হোক আর যা কিছু হোক, আজ এক দেড় বছর ধরে যার সঙ্গে ফোনে আলাপ করে কি যেন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, সেই স্মৃতি থেকে কী সহজে রেহাই পাব? তা ছাড়া ছেলেটা যে সত্যি সত্যি ফ্রড নয়, তা আমার মতো তুইও জানিস। কোনো ফ্রড ছেলে। এতদিন ধরে ভালবাসার কথা বলে ফোন করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
আমারও যে বিশ্বাস হচ্ছে না, তা নয়। প্রথম দিকে তাকে ফ্রড মনে হলেও পরে তা মনে হয় নি। একটা কথা জিজ্ঞেস করব, উত্তরটা সত্য বলবি তো?
আমি কী কোনো দিন তোকে মিথ্যে কিছু বলেছি?
তুই কী সত্যি সত্যি আব্দুস সাত্তার সাহেবকে ভালোবেসে ফেলেছিস?
রূপা কিছু না বলে চুপ করে রইল।
কয়েকদিন আগে একটা হাদিসে পড়লাম, “মৌনতা নারীদের সম্মতির লক্ষণ।”
আগে ওঁর কথা শুনে শুধু রোমাঞ্চ অনুভব করতাম। সেই সাথে দেখার ইচ্ছা হত। আজ যখন করুণস্বরে আর কখনও বিরক্ত করবেন না বলে লাইন কেটে দিলেন তখন থেকে মনের মধ্যে যেন ব্যথা অনুভব করছি। এটা যদি ভালবাসা হয়, তা হলে তাই।
তাকে ফ্রড ভেবে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর। দেখবি, ব্যথা দূর হয়ে গেছে।
তোকে আর উপদেশ দিতে হবে না। এবার শুয়ে পড় বলে রূপা বালিশে মাথা রাখল।
.
আরো সপ্তাহখানেক পর একদিন সায়মা জুতো কেনার জন্য আপুকে নিয়ে নিউমার্কেটে এসে একটা জুতোর দোকানে ঢুকল। শোকেসে জুতা পছন্দ করে রূপা
একজন সেলসম্যানকে ডাকতে গিয়ে অবাক। সেই গুলি খাওয়া ছেলেটা একটা বোরখা পরা মেয়ের পাশে বসে আছে। মেয়েটা নতুন জুতো পায়ে দিয়ে দেখছে। তার হাতে পায়ে মোজা। চোখ দুটো ছাড়া সারা মুখ নেকাবে ঢাকা। কি দারুণ ডাগর ডাগর দু’টো মায়াবি চোখ। নাকের উপর থেকে কপালের অল্প অংশ দেখে বুঝতে পারল, মেয়েটি অপূর্ব সুন্দরী। দুই বোন নির্বাক দৃষ্টিতে একবার মেয়েটির দিকে আর একবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল।
একজন সেলসম্যান তাদের কাছে এসে বলল, বলুন, কী জুতো দেখাব?
ততক্ষণে বোরখা পরা মেয়েটি অন্য একজন সেলসম্যানকে বলল, এটা পাল্টে আর এক সাইজ বড় দিন।
রূপা তার সেলসম্যানের কথার উত্তর না দিয়ে এগিয়ে এসে মেয়েটির পাশে বসা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিল।
আব্দুস সাত্তার ছোট বোন উম্মে কুলসুমকে নিয়ে তার জুতো কিনতে এসেছে। সে মনে করল, কোনো মেয়ে কাস্টোমার দোকানের কাউকে সালাম দিয়েছে। তাই সেদিকে খেয়াল করল না।
রূপা এবার তার সামনে এসে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, আমি আপনাকে সালাম দিয়েছি।
আব্দুস সাত্তার চিনতে পেরে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, সরি, আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। তারপর সায়মাকে তার পাশে দেখে বলল, আজও দু’জনকে একসঙ্গে দেখছি। নিশ্চয় আপনারা দুই বোন?
রূপা মৃদু হেসে বলল, ঠিক বলেছেন।
সায়মা সালাম বিনিময় করে বলল, কেমন আছেন বলুন? সেদিন আমাদের চারণে আপনি গুলি খেয়েছিলেন। আল্লাহ আপনার হায়াত রেখেছেন, তাই বেঁচে গছেন। নচেৎ গুলিটা বুকে লাগলে বাঁচতেন কিনা সন্দেহ।
আব্দুস সাত্তার বলল, বাঁচা মরা আল্লাহ পাকের হাতে। ওসব নিয়ে আমি খনও ভাবি নি। দিন পনেরর মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছি। তা আপনারা নিশ্চয়ই ভালো আছেন?
সায়মার আগে রূপা বলল, জ্বি ভালো। আপনার সঙ্গিনীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন না?
নিশ্চয়। আমার ছোট বোন উম্মে কুলসুম।
উম্মে কুলসুম তাদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করল।
রূপা আব্দুস সাত্তারের দিকে তাকিয়ে বলল, সেদিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন। আপনার পরিচয় জানার সুযোগও দিলেন না। দিলে আপনার অসুস্থতার খোঁজখবর নিতে পারতাম।
আব্দুস সাত্তার বলল, এখানের কাজ শেষ করুন, বাইরে গিয়ে আলাপ করা। যাবে।
দোকান থেকে বেরিয়ে রূপা বলল, আপত্তি না থাকলে আমাদের বাসায় চলুন; আলাপ করা যাবে।
আব্দুস সাত্তার বলল, আজ যেতে পারব না। আরো কিছু কেনাকাটা আছে। অন্য একদিন যাব। সামনে একটা চাইনিজ রেষ্টুরেণ্ট আছে। চলুন ওখানে বসে কিছু খাওয়াও যাবে আর সেই সাথে আলাপও করা যাবে।
বেশ, তাই চলুন।
নাস্তা খাওয়ার পর কফির অর্ডার দিয়ে আব্দুস সাত্তার নাম পাল্টে বলল, আমার নাম আসিফ। তারপর রূপাকে বলল, আমরা অন্য টেবিলে বসে কফি খেতে খেতে আলাপটা সেরে নিই। ওরা দুজন এখানেই বসুক।
অন্য টেবিলে বসে বেয়ারা কফি না দেওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলল না। বেয়ারা কফি দিয়ে চলে যাওয়ার পর রূপা কিছু বলার আগে আসিফ জিজ্ঞেস করল, আপনি আব্দুস সাত্তার নামে কোনো ছেলেকে নিশ্চয় চেনেন?
নাম শুনে রূপা চমকে উঠে বলল, আপনার কথার উত্তর পরে দেব। তার আগে বলুন, ওঁর সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক?
ও আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড।
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমাকে চেনেন?
হ্যাঁ, ওর কাছেই আপনাদের সম্পর্কের কথা শুনেছি। খোলাখুলি বলছি শুনুন, আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে কলেজ লাইফ থেকে বন্ধুত্ব। ও যেমন পার্সোনাল সব কথা আমাকে বলে, আমিও তাকে আমার পার্সোনাল সব কিছু বলি। ঐদিন সংসদ ভবন চত্বরে নিয়ে এসে আপনাদেরকে দেখিয়ে বলল, ওদের দুজনের মধ্যে যিনি বেশি সুন্দরী তিনি রূপা, আর অন্যজন সায়মা। ওঁরা দু’বোন। আপনারা যে ওকে দেখতে এসেছেন এবং কিভাবে দেখবেন তাও বলল। আমরা আপনাদের কাছ থেকে অল্প। দূরে ছিলাম। তিনটে ছেলে আপনাদেরকে টিজ করতে দেখে আমাকে বলল, ওঁদেরকে ছেলে তিনটের হাত থেকে রক্ষা কর। তারপরের ঘটনা তো আপনারা জানেন।
রূপা কি বলবে চুপ করে ভাবতে লাগল।
আসিফ একটু অপেক্ষা করে বলল, আব্দুস সাত্তার প্রায় প্রতিদিন আমাদের বাসায় আসে। সপ্তাহখানেক আগে এসেছিল। তার মন খারাপ দেখে বললাম, কী রে, কী হয়েছে? বলল, আপনি নাকি ওকে ফ্রড ভাবেন। তাই মনে খুব আঘাত পেয়েছে। আমি ব্যাপারটা জানতে চাইলে আপনার সঙ্গে ফোনে যা কিছু আলাপ হয়েছিল বলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, আমি জীবনে আর কোনো মেয়ের কথা চিন্তা করতে পারব না। বললাম, দোষ তোর। তুই কেন আজ দেড় বছর তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছিস? তা ছাড়া তুই মাঝে মাঝে অনেকদিন তার সঙ্গে যোগাযোগও রাখিস না। মেয়েটি নিশ্চয় খুব ভালো, তাই তোর সঙ্গে ফোনে কথা বলে। ঠিকানা দে, আমি তোদের ভুল ভাঙ্গিয়ে দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেব। ও অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “কারো কথায় রূপা আমাকে ভালবাসবে, তা মেনে নিতে পারব না। এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলবি না। বললে এতদিনের বন্ধুত্ব হারাবি।” তার কথা শুনে আমি আর কিছু বলি নি।
আপনি নিশ্চয় ওঁর ঠিকানা জানেন?
হ্যাঁ, জানি।
ফোন নাম্বার?
তাও জানি।
রূপা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে কাগজ কলম বের করে বলল, লিখে দিন তো?
মাফ করবেন, ঠিকানা বা ফোন নাম্বার কোনোটাই দিতে পারব না।
রূপা খুব অবাক হয়ে বলল, কেন?
আপনাদের সম্পর্কের কথা প্রথম যখন বলে তখন ওয়াদা করিয়ে নিয়েছিল, আমি যেন কাউকে তার ঠিকানা বা ফোন নাম্বার না জানাই।
ওঁর পুরো বায়োডাটা বলুন তো?
মাফ করবেন, তাও বলতে পারব না, নিষেধ আছে।
রূপা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, তা হলে আপনি আমার কোনো উপকার করতে পারবেন না?
বিশ্বাস করুন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারছি না। তারপর একটু চিন্তা করে একটা ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে বলল, ও প্রতিদিন তিনটের দিকে আমাদের বাসায় আসে বললাম না? সে সময় ফোন করে কথা বলতে পারেন।
রূপা খুশী হয়ে বলল, অনেক ধন্যবাদ। তারপর কাগজটা ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে বলল, বোনেরা আমাদেরকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবতে পারে। চলুন ওঠা যাক বলে দাঁড়িয়ে পড়ল।
আসিফও দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলল, ভাবাটাই তো স্বাভাবিক। ওরাও তো বড় হয়েছে।
.
আসিফ ও রূপা অন্য টেবিলে চলে যাওয়ার পর সায়মা উম্মে কুলসুমকে জিজ্ঞেস করল, আপনি নিশ্চয় পড়াশোনা করছেন?
হ্যাঁ, কামিল ফার্স্ট ইয়ারে।
আপনাদের হোম ডিস্ট্রিক্ট কোথায়?
উম্মে কুলসুম চিন্তা করল, ভাইয়া যখন নাম পাল্টে বলেছে তখন নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। তাই সেও হোমডিস্ট্রিক্ট পাল্টে বলল, দিনাজপুর।
ঢাকায় কোথায় থাকেন?
এটাও পাল্টে বলল, রাজারবাগ।
নিজেদের বাড়ি?
হ্যাঁ।
আপনারা কয় ভাই বোন?
তিন বোন ও দুই ভাই। বড় ভাই দু’বছর আগে মারা গেছেন। আমি সবার ছোট। তারপর উম্মে কুলসুম মৃদু হেসে বলল, আপনি তো আমার সবকিছু জানলেন, এবার আপনাদেরটা বলুন।
সায়মা তাদের সবকিছু বলে বলল, আপনার সঙ্গে আলাপ করে খুব ভালো লাগল। ফোন নাম্বারটা দিন, মাঝেমাঝে আলাপ করব।
ফোন নাম্বার দেওয়াটা ঠিক হবে কিনা উম্মে কুলসুম চিন্তা করতে লাগল।
কী ব্যাপার? আপনাদের ফোন নেই? না আমাকে আপনার ভালো লাগে নি?
না-না, তা কেন? আপনাকে আমারও ভালো লেগেছে। তারপর একটা কাগজে ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে বলল, আপনাদেরটা দেবেন না?
নিশ্চয় বলে সায়মা আব্বার একটা কার্ড দিল।
কার্ডের ওপর চোখ বুলিয়ে উম্মে কুলসুম হর্ষোৎফুল্লা কণ্ঠে বলল, ওমা, আপনারা মন্ত্রীর মেয়ে?
এমন সময় রূপা ও আসিফ ফিরে এলে উম্মে কুলসুম ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, জান ভাইয়া, ইনারা মন্ত্রীর মেয়ে।
আসিফ বলল, আমি জানি। এবার চল, তোর তো অনেক কিছু কেনার রয়েছে।
.
ফেরার পথে সায়মা আপুকে বলল, আসিফ সাহেব কী এমন আলাপ করলেন। যা আমাদের সামনে করা গেল না?
যা কিছু আলাপ হয়েছে বলে রূপা বলল, তুই তো আসিফ সাহেবকেই আব্দুস সাত্তার বলেছিলি।
আজও তাই বলব। রূপা হেসে উঠে বলল, সাধে কি আর বলি তোর বুদ্ধি একদম কাঁচা।
ঠিক আছে, কাঁচা বুদ্ধি নিয়েই বেড ধরেছি, ।আসিফ সাহেব যদি আব্দুস সাত্তার না হন, তা হলে তোকে আমি পাঁচশ টাকা দেব। আর যদি হন, তা হলে তুই কী দিবি বল?
বেড ধরা ইসলামে নিষেধ। তাই ওসব বাদ দিয়ে বল, কেন তুই এত জোর দিয়ে কথাটা বলছিস? কোনো প্রমাণ পেয়েছিস?
প্রমাণ যা পেয়েছি, তা বললে তুই আমার বুদ্ধিকে কাঁচা বলবি। যেদিন পাকা প্রমাণ পাব, সেদিন বলব।
তা হলে অনুমান করে বলেছিস?
হ্যাঁ।
যাদের বুদ্ধি কাঁচা, তাদের অনুমানও কাঁচা।
সায়মা রেগে উঠে বলল, বারবার কাঁচা বুদ্ধি কাঁচা বুদ্ধি বলে রাগাবি না বলছি। যেদিন প্রমাণ করব আসিফ সাহেব ও আব্দুস সাত্তার একই মানুষ, সেদিন বুঝিয়ে দেব কার বুদ্ধি কাঁচা আর কার বুদ্ধি পাকা।
রূপা হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে, তাই বোঝাস।
সায়মা তাকে হাসতে দেখে আরো রেগে গিয়ে বলল, অত হাসিস না, বেশি হাসতে হাদিসে নিষেধ, সে কথা ভুলে গেছিস বুঝি?
ততক্ষণে গাড়ি বাসায় পৌঁছে গেল। রুমে এসে সায়মা বলল, আসিফ সাহেবের ফোন নাম্বারটা দে তো।
রূপা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে কাগজটা বের করে দিল।
উম্মে কুলসুম সায়মাকে যে নাম্বার দিয়েছিল সেটা বের করে মিলিয়ে দেখল একই। বলল, বাসার ঠিকানা নিস নি?
রূপা বলল, না।
এটা কিন্তু তোর পাকা বুদ্ধির পরিচয় হয় নি। আমি কিন্তু ওঁর বোনের কাছ থেকে দুটোই নিয়েছি। যদিও মনে হচ্ছে, ফোন নাম্বার ঠিক দিলেও বাসার ঠিকানা ঠিক দেয় নি।
তোর যেমন কথা, ফোন নাম্বার ঠিক দিলে বাসার ঠিকানা ঠিক দেবে না কেন?
তোর তো পাকা বুদ্ধি, তাই ধরতে পারছিস না। আমার কাঁচা বুদ্ধিতে আমি ঠিক ধরেছি।
কী ধরেছিস বলতো?
আজ বলব না, কাল বলব।
আজ বলবি না কেন?
তুই বিশ্বাস করবি না। বলবি, এটা তোর কাঁচা বুদ্ধির প্রমাণ। মনে রাখিস, পাকা বুদ্ধিমতী হয়েও যে তুই পদে পদে ভুল করছিস, তা দু’একদিনের মধ্যে প্রমাণ করেই ছাড়ব। তারপর তার কাগজটা ফেরত দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
আড়াই বছরের ছোট বোন সায়মাকে রূপা ভীষণ ভালবাসে। তবে চান্স পেলে ছোট খাট ব্যাপার নিয়ে রাগায়। সায়মা বেশি রেগে গেলে কেঁদে ফেলে। তার ক্রন্দসী মুখটা দেখতে রূপার খুব ভালো লাগে, তাই মাঝে মাঝে রাগায়। যেদিন। রাগে কেঁদে ফেলবে, সেদিন সায়মা সারাদিন মুখ গোমড়া করে থাকবে; কারো সঙ্গে কথা বলবে না। রাতে ঘুমাবার সময় রূপা তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে রাগ মানাবে। সেই ছোটবেলা থেকে আজও তার পরিবর্তন হয় নি। ফোন নাম্বারের কাগজটা ফেরত দিয়ে চলে যাওয়ার পর রূপা ভাবল, আর একটু হলে কেঁদে ফেলত, তাই তাড়াতাড়ি চলে গেল।
.
মার্কেটিং করে বাসায় ফিরে উম্মে কুলসুম আব্দুস সাত্তারকে জিজ্ঞেস করল, তুমি ঐ মেয়ে দুটোর কাছে তোমার নাম আসিফ বললে কেন?
আব্দুস সাত্তার বলল, শোন, তোকে একদিন বলেছিলাম না, আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি এবং তার সঙ্গে প্রতিদিন রাতে ফোনে কথা বলি? ঐ দুটো মেয়ের বড়টাকে, মানে রূপা হল সেই মেয়ে।
উম্মে কুলসুম খুব অবাক হয়ে বলল, কিন্তু ওঁর কথা শুনে তো মনে হল, তোমাকে চেনেন না। এমনকি তোমার নামও জানেন না। অথচ তুমি আমাকে এক বছর কি আরো দু’তিন মাস আগে কথাটা বলেছিলে। আজ আবার ওঁদেরকে নিজের নাম না বলে অন্য নাম বললে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
আব্দুস সাত্তার ও উম্মে কুলসুম কোলে-পিঠের ভাই বোন। ওদের বয়সের তফাৎ তিন বছর। দু’জনের মধ্যে খুব সদ্ভাব থাকলেও উম্মে কুলসুম ছোট ভাইয়ার। উপর খবরদারি করে। আব্দুস সাত্তার তা পছন্দ না করলেও ছোট বোনকে কিছু বলে না। উম্মে কুলসুম গ্রামের মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করার পর আব্দুস সাত্তারের বন্ধু সদ্য পাশ করা ডাক্তার আব্দুল মজিদের সঙ্গে আকদ হয়। আব্দুল মজিদের বাড়ি ওদের বাড়ি থেকে পাঁচ মাইল দূরে। তার বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না। তার মামাদের অবস্থা খুব ভালো। তারাই ভাগ্নাকে ঢাকায় রেখে ডাক্তারী পড়িয়েছেন। আব্দুস সাত্তারের বাবা আব্দুল হামিদ প্রথমে রাজি হন নি। বলেছিলেন, ডাক্তারের চরিত্র ভালো না। তা ছাড়া ওর বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ। উম্মে কুলসুম কষ্ট পাবে। আব্দুস সাত্তার বন্ধুর উন্নত আখলাক, ধর্মভীরুতা ও তাদের বাড়ির ধর্মীয় পরিবেশের কথা বলে রাজি করিয়েছে।
আব্দুস সাত্তারের কথার সততা জেনে আব্দুল হামিদ খুশী হয়েছেন এবং জামাইয়ের কিডনীর উপর উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানতে পেরে তাকে খরচ দিয়ে আমেরিকায় পাঠিয়েছেন। আব্দুল মজিদ যাওয়ার আগে বন্ধুকে বলেছিল, উম্মে কুলসুম যদি আরো পড়াশোনা করতে চায়, তা হলে ঢাকায় তোমার কাছে। রেখে আলিয়ায় ভর্তি করে দিও। তার কথামতো আব্দুস সাত্তার উম্মে কুলসুমকে ঢাকায় এনে ফাজিলে ভর্তি করে। এ বছর পাশ করে কামিল পড়ছে।
এখন তার কথা শুনে বলল, পরে তোকে সব কিছু বুঝিয়ে বলব। এখন শুধু এতটুকু শুনে রাখ, আমি রূপার সবকিছু জানলেও সে আমার নাম ছাড়া কিছুই। জানে না। এমনকি আমাকে একবারও দেখে নি।
উম্মে কুলসুম আরো অবাক হয়ে বলল, উনি তোমাকে দেখতে চান নি?
তা আবার চায় নি, বহুবার চেয়েছে, আমি ইচ্ছা করে দেখা দিই নি।
কারণটা বল।
পরে শুনিস। এখন যা বলছি শোন, তারপর সংসদ ভবন চত্বরের ঘটনা ও আজ চাইনিজ রেষ্টুরেণ্টে যেসব আলাপ হয়েছে, সে সব বলে বলল, দু’একদিনের মধ্যে ফোন করবে। তুই রিসিভ করলে আমাকে ডেকে দিবি। আমি ফুফু আম্মাকে বলে দেব, কেউ যদি ফোনে আসিফকে খোঁজে, তা হলে যেন আমাকে ডেকে দেয়।
উম্মে কুলকুম বলল, ওঁর বোন সায়মা আমার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়েছে। বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করতে বলেছি, রাজারবাগ।
আব্দুস সাত্তার হেসে উঠে বলল, রাজারবাগ বললি কেন?
তোমাকে নাম পাল্টে বলতে শুনে ভেবেছিলাম, নিশ্চয় এর ভিতর কোনো কারণ আছে। তাই আমিও বাসার ঠিকানা পাল্টে বলেছি।
বলে অবশ্য আপাততঃ ভালই করেছিস; কিন্তু ওরা যখন জানতে পারবে তখন তোকে কী ভাববে বল তো?
আর তুমিও যে নিজের নাম না বলে অন্য নাম বললে, সেকথা জানলে তোমাকে কী ভাববে?
যখন জানবে তখন বুদ্ধি করে কিছু একটা বলে ম্যানেজ করা যাবে কী বলিস?
হ্যাঁ, তাই করো। তারপর বলল, তুমি যে পরে সবকিছু বলবে বললে, তা এখন বলো না।
আব্দুস সাত্তারের এখন আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। রূপার অনিন্দ্য সুন্দর মুখটা বার বার মনে পড়ছে। তাই তাকে ভাগাবার জন্য বলল, তোর ডাক্তারের চিঠি টিঠি পেয়েছিস? প্রায় চার বছর হয়ে গেল, কবে ফিরবে-টিরবে কিছু জানায় নি? আমার বন্ধু কিন্তু আমাকে চিঠি দিয়েছে। সে তার বৌ এর জন্য কতটা। পাগল হয়ে আছে জানতে চাইলে চিঠিটা দিচ্ছি পড়ে দেখ। এই কথা বলে টেবিলের ড্রয়ার টেনে চিঠি বের করার ভান করল।
উম্মে কুলসুম লজ্জায় লাল হয়ে বলল, বড় ভাই হয়ে ছোট বোনকে এসব কথা বলতে বিবেকে বাধল না?
আব্দুস সাত্তার হাসি চেপে রেখে একটু গম্ভীর হওয়ার ভান করে বলল, তা হলে ছোট বোন হয়ে তুই কী করে বড় ভাইয়ের প্রেম কাহিনী শুনতে চাচ্ছিস?
ঠিক আছে, আমিও আলু আম্মুকে চিঠি দিয়ে জানাব, ছোট ভাইয়া একটা। আপটুডেট মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কথা শেষ করে উম্মে কুলসুম ছুটে পালিয়ে গেল।