মেঘের কোলে রোদ: ০৪. যীনাত মারাত্মক আহত

মেঘের কোলে রোদ: ০৪. যীনাত মারাত্মক আহত

০৪. যীনাত মারাত্মক আহত

আজ নাদের আলির মুখে ঘরে আগুন লেগে যীনাত মারাত্মক আহত হয়েছে শুনে হাবিব ডাক্তার খুব আতঙ্কিত হল। তাড়াতাড়ি সাইকেল চালিয়ে আসার সময় তার জন্য মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করে ভাবল, আজরাফ স্যার কি তাকে বিয়ের প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন?

তখন গ্রীষ্মকাল, গ্রামের প্রায় সবার মাটির দেয়াল হলেও ছাউনি খড়ের। আজকাল অবশ্য অনেকে দালানকোঠা করছে। রোদের তাপে খড়ের চাল এমনই গরম ছিল। আগুন লাগতে বারুদের মতো জ্বলে উঠে। প্রথমে জালালদের রান্নাঘরে কেমন করে জানি আগুন লাগে। তারপর সেই আগুন অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।

হাবিব ডাক্তার পশ্চিমপাড়ায় এসে দেখল, প্রায় বেশির ভাগ ঘর পুড়ে গেছে। মেয়েরা সব কান্নাকাটি করছে। পুরুষরা পোড়া বাঁশ কাঠ সরাচ্ছে। এসব দেখে তার চোখে পানি এসে গেল। দালানকোঠাগুলো ও আজরাফ স্যারের ঘর ঠিক আছে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেল। তাকে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেল।

তাকে দেখে আজরাফ হোসেন সালাম বিনিময় করে বললেন, আসুন আমার সঙ্গে। তারপর যেতে যেতে বললেন, যীনাতের বোধহয় একটা পা ভেঙ্গে গেছে। আমি স্কুলে ছিলাম, আগুনের ধোয়া দেখে চলে আসি। তার আগেই যীনাত আহত হয়েছে। এসে শুনলাম, ও আমাদের রান্না করছিল। লোকজনের আগুন আগুন চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে দেখে দাউ দাউ করে অনেক ঘরের সঙ্গে ওদের ঘরও পুড়ছে। ছুটে নিজেদের ঘরে গেল। চাচা ঘুমিয়েছিলেন। আগুনের তাপে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন বেরোবার পথ ছিল না। লোকজন কেউ তাকে বের করে আনার সাহস পাচ্ছিল না। যীনাত গিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা বস্তা নিয়ে পুকুরে গলা পর্যন্ত নামে তারপর বস্তাটা ভিজিয়ে গায়ে জড়িয়ে জ্বলন্ত ঘরে ঢুকে বস্তাটা চাচার গায়ে জড়িয়ে বের করে নিয়ে আসে। চাচার ও যীনাতের হাত-পা কিছুটা পুড়ে গেলেও মারাত্মক কিছু হয় নি। কিন্তু বেরিয়ে আসার সাথে সাথে ঘরের একটা আড়া তার ডান পায়ের উপর পড়ে। মেয়েরা ধরাধরি করে তাকে আমার ঘরে নিয়ে আসে।

ততক্ষণে তারা যে ঘরে হাশেম আলি ও যীনাত ছিল, সেখানে এসে গেল। হাবিব ডাক্তার তাদের দুজনের পোড়া জায়গাগুলো পরীক্ষা করে মলম লাগিয়ে দিল। তারপর যীনাতের পা পরীক্ষা করে প্লাস্টার করে দিয়ে সঙ্গে আনা কিছু ওষুধ খাওয়ার জন্য দিল এবং আরো কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বলল, অন্য যারা আগুনে পুড়ে জখম হয়েছে, তাদের কাছে যাচ্ছি।

কয়েকদিনের মধ্যে বাপ-মেয়ের পোড়া ঘা ভালো হয়ে গেলেও যীনাতের প্লাস্টার একমাস পরে খোলা হল। কিন্তু পায়ে ভর দিয়ে চলতে পারছে না দেখে হাবিব ডাক্তার আবার প্লাস্টার করে দিল।

হাবিব ডাক্তার একদিন তাসনিমা খাতুনকে দেখতে এসে ফেরার সময় আজরাফ হোসেনকে জিজ্ঞেস করল, যীনাতকে আমার প্রস্তাবের কথা কী জানিয়েছেন?

আজরাফ হোসেন বললেন, হ্যাঁ, জানিয়েছি। সে রাজি আছে।

হাবিব ডাক্তার আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বেশ কিছু টাকার একটা বান্ডিল তার হাতে দিয়ে বলল, ওদের দু’কামরা পাকা ঘর করে দেবেন। পরে আরো দেব।

আজরাফ হোসেনের খুব আপত্তি সত্ত্বেও প্রথম থেকে কোনো টাকা পয়সা না নিয়ে হাবিব ডাক্তার চাচার চিকিৎসা করছে। বাপ-মেয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরও যে চিকিৎসা করছে, সেজন্যেও কোনো টাকা পয়সা নেয় নি। আজ আবার তাদের পাকাঘর করে দেয়ার টাকা দিতে দেখে আজরাফ হোসেন যতটা না অবাক হলেন, তারচেয়ে বেশি অপমান বোধ করলেন। বললেন, এটা আপনার ঠিক হচ্ছে না। আমিই ভেবেছি, এবার চাচাকে পাকাঘর করে দেব। না-না, এ টাকা আমি নিতে পারব না বলে ফেরৎ দিতে গেলেন।

হাবিব ডাক্তার তার টাকাসহ হাতটা দু’হাতে ধরে বলল, মনে হচ্ছে, আপনি খুব অপমান বোধ করছেন। সেজন্য মাফ চাইছি। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আপনাকে অপমান করার ধৃষ্টতা আমার যেন কোনো দিন না হয়। আসলে হাশেম আলি চাচার মতো ভালো মানুষ আমি আর কাউকে দেখি নি। যীনাত যদি আমার প্রস্তাবে রাজি নাও হত, তবু তার ঘর করে দিতাম। ওঁকে আমি বাবার মতো শ্রদ্ধা করি। তাই ছেলে হয়ে বাবার জন্য কিছু করতে পারলে মনে শান্তি পাব, আর দুস্থকে সাহায্য করলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দঃ) খুশি হবেন ভেবে এটা করে দিতে চাচ্ছি। তা ছাড়া ভেবেছি, বিয়ের পর আমি ওদের সংসারের সব দায়-দায়িত্ব বহন করব।

তার কথা শুনে আজরাফ হোসেন আর আপত্তি করতে পারলেন না। টাকাসহ হাতটা টেনে নিয়ে মৃদু হেসে বললেন, বিয়ের আগেই তা হলে ঘরের কাজ শেষ করতে চান?

হাবিব ডাক্তার মৃদু হেসে বলল, সেটা যখন বুঝতেই পেরেছেন তখন আর জিজ্ঞেস করছেন কেন? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘরের কাজ কমপ্লিট করুন। তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেল।

আজরাফ হোসেন হাবিব ডাক্তারকে যত জানছেন তত অবাক হচ্ছেন। কিছুক্ষণ তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে স্ত্রীকে ডেকে কথাটা জানালেন।

তাসনিমা খাতুনও হাবিব ডাক্তারকে যত জানছেন, তত অবাক হচ্ছেন। বললেন, সত্যি, ওঁর মতো মানুষ হয় না। যীনাতের ভাগ্য খুব ভালো, এরকম একজন মানুষকে স্বামী হিসাবে পাবে।

হ্যাঁ, তোমার কথাই ঠিক। এজন্যেই বোধহয় আল্লাহ ওকে দু’দুবার বিয়ের রাতেই বিধবা করেছেন। যারা এতদিন ওকে অপয়া বলত, বিয়ের পর তারা ওর ভাগ্য দেখে হিংসা করবে।

তুমিও ঠিক কথা বলেছ। দোয়া করি, আল্লাহ ওদের জোড়া তাড়াতাড়ি কবুল করুক।

চাচার কাছে যীনাত আছে তুমি চাচাকে এখানে আসতে বল। এখনই সব কিছু জানাব। মনে হয় আপত্তি করবেন না, বরং খুশিই হবেন।

আমারও তাই মনে হয় বলে তাসনিমা খাতুন ভিতরে চলে গেলেন।

একটু পরে হাশেম আলি এসে বললেন, বৌমা বলল, তুমি নাকি ডেকেছ?

আজরাফ হোসেন বললেন, বসুন চাচা, জরুরী আলাপ করব।

হাশেম আলি তার সামনের চেয়ারে বসলেন।

টাকা দেয়ার পর হাবিব ডাক্তার যা কিছু বলেছে, আজরাফ হোসেন সে সব বলে বললেন, আমরা বিয়ের ব্যাপারে যীনাতের মতামত নিয়েছি। সে রাজি আছে।

প্রথম যেদিন হাবিব ডাক্তার হাশেম আলিকে দেখতে আসে, সেদিন তাকে দেখে ও কথাবার্তা শুনে খুব ভালো লেগেছিল। তারপর তার চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারছে, সেজন্য আগের থেকে এমনি কৃতজ্ঞ ছিল। এখন টাকা পয়সা না নিয়ে চিকিৎসা করছে, পাকা ঘর করার জন্য টাকা দিয়েছে ও বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে শুনে আরো বেশি কৃতজ্ঞতা বোধ করলেন। সেই সাথে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো আনন্দিত হলেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভিজে গলায় বললেন, তুমিই যখন আমাদের সব কিছু করছ তখন আমি কি আর বলব বাবা? ওর চিন্তা আমার বুকে পাথরের মতো এতদিন চেপে ছিল। আজ তা দূর করে আল্লাহ আমাকে মুক্ত করলেন। সেইজন্য তাঁর পাক দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া জানাচ্ছি।

.

কিছুদিন পর যেদিন হাবিব ডাক্তার যীনাতের প্লাস্টার খুলে দিল, সেদিন যীনাত আপ্যায়ন করাবার সময় বলল, দু’একটা প্রশ্ন করব, কিছু মনে করবেন না বলুন?

মনে করার কি আছে, আপনি নিশ্চিন্তে বলুন।

আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনেও এই অজপাড়াগাঁয়ের মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেন? আপনি তো ঢাকার ছেলে, সেখানে ধনী ঘরের শিক্ষিত মেয়েরতো অভাব নেই?

আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব, তবে তার আগে আপনার মুখের নেকাব সরাতে হবে। এতদিন শুধু আপনার দুটো চোখ দেখে এসেছি।

বেগানা মেয়ের মুখ ইচ্ছা করে দেখা ইসলামে নিষেধ তাতো জানেন? হা জানি। তা হলে এরকম কথা বলছেন কেন? বিয়ের আগে ইসলামে পাত্র-পাত্রীকে একে-অপরকে দেখার অনুমতি যে আছে, তা বোধহয় জানেন না?

না, জানা ছিল না।

এবার তা হলে মুখটা খুলুন?

যীনাত কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে দৃষ্টি নিচের দিকে করে রইল।

সুবহান আল্লাহ বলে হাবিব ডাক্তার তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তার মনে হল, কোনো পরীকন্যা দেখছে। আরো মনে হল, মুশতাক বিশ্বাসের মেয়ে আতিকার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে লজ্জামিশ্রিত কণ্ঠে যীনাত বলল, এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।

আমার প্রস্তাবে রাজি আছেন কিনা জানার পর উত্তর দেব।

যার কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন তার কাছ থেকে জেনে নেবেন।

তাতে নেবই। তবু এখন আপনার কাছে জানতে চাই।

পাড়াগাঁয়ের মেয়েরা এখনও সরাসরি এরকম প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মতো এ্যাডভান্স হয় নি।

তা স্বীকার করছি। আপনাকে তাদের থেকে ব্যতিক্রম দেখে প্রশ্নটা করেছি। উত্তর দেয়াটা কিন্তু নির্লজ্জতা নয়, বরং ভালো।

রাজি বলে যীনাত লজ্জারাঙা হয়ে মুখ নিচু করে নিল।

আলহামদুলিল্লাহ বলে হাবিব ডাক্তার বলল, প্লীজ, মুখ তুলে আমার দিকে তাকান।

যীনাত কয়েক সেকেন্ড একইভাবে থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকাল।

হাবিব ডাক্তার দেখল, টানাটানা মায়াবী চোখ দুটো থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, তোমার মতো মেয়েকে আল্লাহ আমার তক্বদীরে জোড়া করেছেন। তাই শহরের কোনো মেয়েকেই আমার পছন্দ হয় নি। সেইজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।

তার কথা শুনে যীনাত আরো বেশি লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে নিল। তারপর চোখ মুছে কাঁপা গলায় বলল, ঐ একই কারণে হয়তো দু’দু’টো স্বামীকে আল্লাহ বিয়ের রাতেই দুনিয়া থেকে তুলে নিলেন। তবু সেই ঘটনাগুলোর কথা ভেবে খুব ভয় পাচ্ছি।

তক্বদীরের উপর কারো হাত নেই। আল্লাহর উপর ভরসা কর। আর প্রত্যেক মুমীন মুসলমান নর-নারীর তাই করা ও উচিত। ইনশাআল্লাহ বিয়ে করে তোমার ভয় দূর করে দেব। আজ অনেক বড় দুশ্চিন্তা থেকে আল্লাহ আমাকে রেহাই দিলেন। সেজন্য আর একবার তার শোকরিয়া আদায় করছি। তারপর বলল, আমি তোমাকে তুমি করে বলছি। এখন থেকে তুমিও আমাকে তুমি করে বলবে।

মাফ করবেন, এখন থেকে বলতে পারব না, তবে বিয়ের পর—বলে লজ্জায় জিব কেটে চুপ করে গেল।

হাবিব ডাক্তার মৃদু হেসে বলল, ঠিক আছে, তাই বলো। এখন একটা কথার উত্তর দাও তো, এতদিন নিজেকে অপয়া ভেবে বিয়ে করতে রাজি হও নি, এখন হলে কেন? তোমার আব্বাকে ও তোমাকে টাকা পয়সা না নিয়ে চিকিৎসা করে ভালো করেছি, সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য কী রাজি হয়েছ?

যীনাত কয়েক সেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে কঠিন গলায় বলল, আপনার ধারণা ভুল। আপনি যে বিনা টাকা পয়সায় আমাদের চিকিৎসা করছেন, তা জানতাম না।

তা হলে আসল কারণটা বল।

আপনি যে কারণে আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন, আমিও সেই কারণেই রাজি হয়েছি।

আমার ব্যাপারটা তুমি জানলে কেমন করে?

সে কথা বলতে পারব না। এবার নিশ্চয় আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন?

উত্তর তো তুমি জান, তবু বলতে বলছ কেন?

আমার ধারণাটা সত্য কিনা যাচাই করার জন্য।

যাচাই করা লাগবে না। তোমার ধারণাটাই সত্য।

এমন সময় হাশেম আলিকে আসতে দেখে হাবিব ডাক্তার সালাম বিনিময় করে বলল, কেমন আছেন?

আল্লাহর রহমতে ভালো আছি বাবা, তারপর মেয়ের পায়ে প্লাস্টার নেই দেখে বললেন, কী রে মা, এখন আর চলাফেরা করতে অসুবিধে হচ্ছে না তো?

যীনাত আব্বাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিল, তাকে নিজের চেয়ারে বসিয়ে বলল, না আব্বা, কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। তারপর একটা তাল পাখা এনে বাতাস দিতে লাগল।

ডাক্তারকে নাস্তা পানি কিছু দিয়েছিস?

চা-বিস্কুট দিয়েছি।

তা ছাড়া কিই বা দিবি মা? ঘরে তো….

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে হাবিব ডাক্তার বলল, এবার আসি চাচা। অনেকক্ষণ এসেছি। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে গেল।

.

আজ তাসনিমা খাতুন চাঁদের মতো একটা ফুটফুটে ছেলে প্রসব করেছেন। আজরাফ হোসেনের ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠার কথা জেনে আজরাফ হোসেন নিজে কার্পাসডাঙ্গায় গিয়ে হাবিব ডাক্তারকে খবরটা দেন।

হাবিব ডাক্তার একজন নার্স সঙ্গে নিয়ে আসে এবং ঐ নার্সের তত্ত্বাবধানে প্রসব করায়।

প্রসবের পর যা কিছু করণীয় করার পর বিদায় নেয়ার সময় আজরাফ হোসেন নার্সকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে খুশি করলেন। হাবিব ডাক্তারকে খুশি করতে ইচ্ছা করলেও সে অপমানবোধ করবে ভেবে কিছু দিলেন না।

সাতদিনে আজরাফ হোসেন দু’টো খাসি জবেহ করে ছেলের নাম রাখলেন আবরার হোসেন। যার অর্থ ন্যায়বান সুন্দর। নামটা হাবিব ডাক্তার ঠিক করে দেয়। ঐদিন পাড়ায় গরিব-ধনী সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালেন। কার্পাসডাঙ্গার হেলথ কমপ্লেক্সের দু’জন ডাক্তার ও দু’জন নার্সকেও দাওয়াত করেছিলেন।

খাওয়া-দাওয়ার পর সাগীর ডাক্তার ও নার্সদের হাবিব ডাক্তার বলল, আপনারা যান। আমার তো সাইকেল আছে, কিছুক্ষণ পর আসছি।

তারা চলে যাওয়ার পর আজরাফ হোসেনকে বলল, আপনি কী আমার প্রস্তাবটা নিয়ে যীনাতের আব্বার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন?

আজরাফ হোসেন বললেন, হ্যাঁ করেছি। উনি রাজি আছেন।

তা হলে এই আনন্দের দিনে আমি বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাই।

তার কথা শুনে আজরাফ হোসেন আনন্দিত হলেও অবাক হয়ে থতমত খেয়ে বললেন, আজ কী করে সম্ভব?

আল্লাহর মর্জি থাকলে সবকিছু সম্ভব। শুনুন, আমি এখন চলে যাচ্ছি, আপনাকে যেভাবে যা কিছু করতে বলেছিলাম, যীনাত ও তার আব্বার সঙ্গে আলাপ করে সে সব ব্যবস্থা করে রাখবেন। আমি রাত দশটার দিকে আসব। তারপর আজরাফ হোসেনকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সাইকেলে চেপে বসল।

আজরাফ হোসেন কিছুক্ষণ হাঁ করে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর ঘরে এসে স্ত্রীকে হাবিব ডাক্তারের কথা জানিয়ে বললেন, এখন কী করি বলতো?

তাসনিমা খাতুন বললেন, কী আবার করবে? উনি যেভাবে যা করতে বললেন, করবে। আমি তো অসুবিধে কিছু দেখছি না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত