নিরিবিলি বাড়ির দরজা

নিরিবিলি বাড়ির দরজা

আমার পাশের বাসায় এক মহিলা প্রায়ই তার স্বামীর সাথে মাঝরাতে ঝগড়া করে। আমি এই বাসায় উঠেছি মাত্র এক সপ্তাহ হলো। তিন তলা বাড়ির দুই তলায় থাকি। দুই তলাটা বাড়িওয়ালা নিজেদের থাকার জন্য বানিয়েছিলো। আমি যেই বাসায় উঠেছি এটা এক রুমের একটা ফ্ল্যাট বলা চলে। এটা বানিয়েছিলো ড্রাইভার থাকার জন্য। বাড়িওয়ালার ছেলে ইতালি থাকে৷ সেখানেই বাবা মাকে নিয়ে চলে গেছে। বাড়িয়ালার ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানেই থাকেন সেই দম্পতি। বাড়ির নাম নিরিবিলি। আসার পর থেকে মনে হচ্ছে নামের সাথে বাড়িরও মিল আছে। কারণ একেবারে শান্ত নিরিবিলি এই বাড়িটা। কেবল স্বামী-স্ত্রীর হুটহাট ঝগড়া ছাড়া।

গতকাল রাতেই ঘটে বেশ অদ্ভুত একটা ঘটনা। হঠাৎ রাতে সোয়া দুইটা কিংবা আড়াইটার সময়; ঠিক মনে নাই। আমার দরজায় ধুমধাম করে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছিলো। ধরফর করে উঠে বসলাম। দরজার ওপাশে কে যেন জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে শুনতে পাচ্ছিলাম। এতোই স্পষ্ট শুনেছি যে এখনো মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে যেতেই এক পুরুষ কণ্ঠ শুনতে পেলাম, ‘কেউ দরজা খুলবেন না। বিপদে পড়বেন। দয়া করে দরজা খুলবেন না।’

আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এদিকে এক নাগারে দরজায় ধাক্কা দিয়ে চলেছে কে যেন। মনে হচ্ছে দরজা বোধহয় ভেঙ্গেই ফেলবে। মাথাও কাজ করছিলো না কি করবো। কে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। আর কে-ই বা দরজা খুলতে মানা করছে। দুই তলায় মাত্র দুইটা ফ্ল্যাট। তিন তলায় কয়টা জানি না। কারণ উপরে উঠা হয়নি। শুধু জানি আমার পাশের ফ্ল্যাটে এক দম্পতি থাকেন। তাদের আমি দেখিওনি এখনো। কেয়ারটেকার এই বাড়িতে থাকেন না। কয়েক বিল্ডিং পরে এক বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন। রাতের বেলা একজন নাইট গার্ড থাকে শুধু। নিচ তলা পুরোটাই গ্যারেজ। আর স্টোর রুম। দরজার ওপাশে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। পাশের বাসার দম্পতির ঝগড়া এই এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার কানে এসেছে।

কিন্তু উনারাই বা আমার ঘরের দরজায় এই মাঝরাতে ধাক্কা দিবেন কেন? আর কেনই বা আরেকজন বলছে দরজা না খুলতে। আধা ঘন্টা পরে দরজায় ধাক্কা দেওয়া বন্ধ হলো। আমি তখনো মূর্তির মতোন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিহোল থাকলে দেখা যেত কিছুটা হলেও কি হচ্ছিলো। আরো মিনিট কয়েক পরে সেই পুরুষ কণ্ঠ আবার শুনতে পেলাম, ‘ভাই যান, ঘুমিয়ে যান। দরজার সামনে আর দাঁড়িয়ে থাকবেন না। রাতে কখনো দরজা খুলবেন না। যেই আপনাকে ডাকুক। আপনার মায়ের কণ্ঠ শুনলেও না।’

আমার সারা শরীরে একটা শিরশির অনুভূতি হলো। লোকটা এমন ভাবে কথা বলছিলো যেন সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে। কিভাবে বুঝলো যে আমি এখনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটার কথায় কেমন এক শীতলতা ছিল। যা বিশ্বাস করতেও ইচ্ছা করে না। আবার উপেক্ষাও করা যায় না। কেমন এক মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিলো। সারা রাত চোখের পাতা আর এক করতে পারলাম না। আমি কিছুতেই কোনো হিসাব মিলাতে পারছিলাম না। কি হলো, কেন হলো কিছুই বুঝতে পারছিনা। সকাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

সিগারেটের প্যাকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র তিনটা সিগারেট আছে। রাত তখন সাড়ে তিনটার মতো বাজে। রুমের লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে আছি। সিগারেট ধরালাম এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো। আর সাথে সাথেই শুনলাম কোন এক মহিলা চিৎকার দিলো অনেক জোরে। এতো ভয় জীবনে সেই প্রথম পেলাম। আমার হাত থেকে জলন্ত সিগারেট পড়ে গেলো। বুকের হার্টবিট দুই তিনটা মিস করলো যেন। এমন ভৌতিক চিৎকার এই প্রথম শুনলাম জীবনে। তাড়াতাড়ি সিগারেট হাতে নিয়ে বিছানা ঝারলাম অন্ধকারেই। বিছানায় লাগেনি আগুন। লাইটার জ্বালিয়ে সেলফোন নিলাম। সেলফোনের লাইট জ্বালালাম। আমার তখনো বুকের ধরফরানি কমেনি। এক রাতে এক ঘন্টার মধ্যে যেই ঘটনা গুলো ঘটলো তা আমার জীবনে আগে কখনো ঘটেনি। তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- এই বাসায় আর থাকবো না। আগামী মাসে নয়; পারলে এই মাসেই চলে যাবো।

কারেন্ট এলো মিনিট পাঁচেক পরেই। সিগারেট তখনো শেষ হয়নি। আমার কেন যেন হাত নিশপিশ করছিলো দরজা খোলার জন্য। আমি দেখতে চাই কেউ আছে কিনা। কারণ আমার বারবার মনে হচ্ছে কেউ একজন দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখতে চাই আসলেই কেউ আছে কিনা। আমি অনিশ্চিত থাকতে পছন্দ করিনা। সে যাই হোক আমি মুখোমুখি হতে চাই। বাইরে থেকে কুকুরের প্রচণ্ড চিৎকার কানে আসছে। চিৎকার গুলো একবার কাছ থেকে আসছে। একবার দূর থেকে। মনে হয় বাড়ির চারপাশে ঘুরে ঘুরে চিৎকার করছে একদল কুকুর।

ফোন হাতে নিয়ে ভাবলাম কেয়ারটেকার চাচাকে কল দেই। কিন্তু এতো রাতে কল দেওয়াটা অভদ্রতা হয়ে যাবে। নিচের নাইটগার্ডের নাম্বার আমার কাছে নেই। থাকলে কল দিয়ে উপরে আসতে বলতাম। আমি সিগারেট নিভিয়ে আরেকটা ধরালাম। বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দরজার হুক খুলবো; এমন সময় আবার সেই পুরুষের কণ্ঠ শুনতে পেলাম, ‘ভাই দয়া করে দরজা খুলবেন না। আপনাকে আগেও সতর্ক করেছি। রাতে কখনোই দরজা খুলবেন না। সূর্য উঠার পরে খুলবেন।’

আমি জিগ্যেস করলাম একটু সাহস নিয়ে, ‘আপনি কে? কিভাবে বুঝলেন আমি দরজা খুলতে আসছি?’ কোনো উত্তর পেলাম না। শুধু একটা গভীর নিঃশ্বাস শুনতে পাচ্ছিলাম দরজার ওপাশে। নিঃশ্বাসটা নারী নাকি পুরুষের বুঝতে পারছিলাম না। একটু আগে পুরুষ কণ্ঠ কথা বললেও আমার মনে হচ্ছিলো এটা কোনো নারীর নিঃশ্বাসের শব্দ। আমার শিরদাঁড়া দিয়ে কেমন এক শিহরণ বয়ে গেলো। গায়ে কাটা দিচ্ছে বারবার। সিগারেট হাতে ধরা অবস্থায় হাতেই নিভে গেছে। বিছানায় এসে শুলাম। সিগারেটটা আবার ধরাবার জন্য লাইটার হাতে নিলাম। সিগারেট না ধরিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আনমনে কি যে ভাবছিলাম জানি না। সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

ঘুম ভাঙলো একটু আগে। আজ শুক্রবার তাই অফিস বন্ধ। সকাল সাড়ে আটটা বাজে। এতো বেলা পর্যন্ত আমি সাধারণত ঘুমাই না। ছুটির দিনেও না। কিন্তু কাল রাতের সেই ঘটনায় কেমন সব উলোটপালোট হয়ে গেলো। রাতে যতটা ভয় লাগছিলো এখন তার কিছুই নাই। মনে হচ্ছে অযথা ভয় পেয়েছি। বিছানা ছেড়ে দরজা খুললাম। সামনের ফ্ল্যাটের দু’টো দরজাই বন্ধ। সিঁড়ির কাছে গিয়ে নিচে তাকালাম। সকালের একঘেয়ে ব্যস্ততা বাহিরে। আবার দরজার কাছে ফিরে আসতেই রক্ত হীম হয়ে গেলো।

দেখি দরজায় লম্বা লম্বা আচর। আর দুই একটা আচরে কালচে হয়ে থাকা জমাট রক্ত। তাড়াতাড়ি বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে কেয়ারটেকারকে ফোন দিলাম। ‘চাচা কোথায় আপনি?’ ‘ক্যান বাবা কি হইছে? এতো সকাল সকাল ফোন দিলেন?’ ‘একটু দরকার ছিল। আপনি একটু আমার বাসায় আসতে পারবেন? ‘এখন তো বাজারে যাবো বাবা। এরপর গোসল কইরা জুমার নামাজ আদায় করতে যাবো। একবারে বিকালে আসবো।’ ‘আমি একটা সমস্যায় পড়েছি। বাজারে যাওয়ার আগে একটু দেখা করে গেলে ভালো হতো।’ ‘নাহ বাবা এখন সম্ভব না। আমি বিকালেই আসুমনে।’

বলে কেয়ারটেকার চাচা কল কেটে দিলো। আমি আবার দরজা খুলে দাগ গুলো বোঝার চেষ্টা করলাম। মানুষের নখ এতো তীক্ষ্ণ নয় যে এভাবে কাঠের দরজায় আচর বসাতে পারবে। কালচে রক্ত গুলো কেমন যেন একেবারে সোজা সোজা রেখা টানা। সামনের ফ্ল্যাটে কারা থাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। একবার ভাবলাম নক করি। পরে ভাবলাম কি দরকার।

বিকালে কেয়ারটেকার চাচা এলো না। ফোন দিয়ে দেখি ফোন বন্ধ। রাতে ঘুম হচ্ছিল না চিন্তায়। নির্ঘুম রাত পার করলেও কিছুই ঘটেনি। পরদিন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে অফিস করতে হয়েছে। অফিসে কারো সাথে ঘটনাটা শেয়ার করবো কিনা বুঝতে পারছিলাম না। কাউকে বললে কেউ হয়তো ভাববে আমি মিছেমিছি গল্প ফেঁদেছি।

শনিবার রবিবার গেলো। কেয়ারটেকার চাচাকে কল দিয়ে আর পাইনি। নাম্বার বন্ধ। নিচে কোনো গার্ডকেও দেখলাম না আসার পর থেকে। শুধু শুনেছি রাতে নাইটগার্ড এসে পাহাড়া দেয়। বাড়ির মেইন দরজায় সব সময় তালা দেওয়া থাকে। যাওয়া আসা করি পকেট গেট দিয়ে। সেটাও তালা লাগানো থাকে৷ ভাড়াটিয়াদের চাবি দেওয়া আছে। কেয়ারটেকারকে শুধুমাত্র তিন দিন দেখেছি আমি। বাসা দেখতে আসার দিন। বাসায় উঠার দিন। আর বাসায় উঠার দুই দিন পরে। আর দেখি নাই। লোকটাকেও কেমন অদ্ভুত লাগে আমার কাছে। সব সময় মুখে হাসি লেগে থাকে। পান খাওয়া লালচে দাঁত দেখা যায়। সে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল যেন আমার দিকে তাকিয়ে নাই। কেমন যেন দৃষ্টিটা। ঠিক বোঝাতে পারবো না।

সারা সপ্তাহ মোটামুটি ঝামেলাহীনভাবে কেটে গেলো। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর কোনো ঝগড়াও কানে এলো না একবারও। কেবল এই বাড়িটাকেই কেমন রহস্যময় মনে হতে লাগলো। কাউকে কখনো বাসায় আসা যাওয়ার সময় দেখলাম না। কেমন একটা ঝিমঝিম ভাব বাড়িটায়। আজ বৃহস্পতিবার। অফিস থেকে বের হয়ে বিকালে আমাদের বন্ধুদের নিয়মিত আড্ডায় গেলাম। পরে শরীর ভালো লাগছিলো না বলে বাসার দিকে রওনা দিলাম। রিক্সা থেকে নেমে ভাবলাম তিন তলায় গিয়ে দেখি একবার। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছি। আমার বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। দরজায় এখনো আচরের দাগ আর রক্তের কালচে দাগ লেগে আছে। একবার উপরের দিকে তাকালাম। বাসায় না ঢুকে তিন তলায় যাওয়ার জন্য সিঁড়িতে পা ফেলতেই কে যেন পিছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখলো।

ভয়ে চমকে গেলাম। কারণ কাউকে তো দেখিনি আশেপাশে সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময়। ফিরে দেখি কেয়ারটেকার চাচা। হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে পান চাবাচ্ছেন। ‘বাবা কই যান?’ ‘আপনি কখন আসলেন চাচা। উঠার সময় তো দেখলাম না?’ তখনই মসজিদের মাইকে মাগরিবের আজান শুরু হলো। কেয়ারটেকার চাচা আমাকে তাড়াহুড়ো করে বললেন, ‘বাবা মাগরিবের আজান হইতাছে। রুমে ঢুকেন। কথা বাড়াইয়েন না। আর তিন তলায় উঠবেন না কোনো সময়। যান আজান শেষ হওয়ার আগে রুমে যান। আর রাইতে দরজা খুলবেন না।’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেয়ারটেকার চাচা দরজা খুলে আমাকে রুমে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, ‘তাড়াতাড়ি দরজায় হুক দেন।’ বলেই চলে গেলেন। আমি তখনও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। দরজার হুক লাগিয়ে বিছানায় বসতেই ব্যাপারটা মাথায় এলো। দরজার চাবি তো আমার কাছে। চাচার কাছেও চাবি থাকার কথা। কিন্তু উনি তো চাবি দিয়ে দরজা খুলেন নাই। কিভাবে তাহলে দরজা খুললেন। মাগরিবের আজান শেষ। আমার কেমন অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো। পোষাক না ছেড়ে ওভাবেই শুয়ে গেলাম বিছানায় পা ঝুলিয়ে।

হঠাৎ ঘুম ভাঙলো দরজায় তীব্র ধাক্কা শুনে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। ঘড়িতে দেখি রাত দুইটা বাজে। আশ্চর্য এতক্ষণ কিভাবে ঘুমালাম! রাতে খাওয়া দাওয়াও করিনি। অফিসের পোষাক পর্যন্ত ছাড়িনি। এমন তো কখনো হয়নি আমার। আবার দরজায় ধাক্কা। বুকে ধকধক করছে। কে ধাক্কা দিচ্ছে। কেন ধাক্কা দিচ্ছে। কি চায় আমার কাছে। অর্থহীন অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হিংস্র প্রাণীর মতো কেউ একজন লাগাতার নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তখনই পুরুষ কণ্ঠটা শুনতে পেলাম, ‘দয়া করে দরজা খুলবেন না। বিপদে পড়বেন। দরজা খুলবেন না।’ এদিক দরজায় ধাক্কা বেড়েই চলেছে।

আমি নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে পারছি না। একবার মনে হচ্ছে বিছানায় চুপচাপ বসে থাকি। বাইরে যা হওয়ার হোক। আবার মনে হচ্ছে দরজা খুলে মুখোমুখি হই। যা হবার আমার চোখের সামনেই হোক। কি করবো আর না করবো ভাবতে ভাবতে দরজার হুক খুললাম। দরজা খুলে দরজার সামনে তাকালাম। কেউ নেই। সামনে বিশাল আকাশ। অনেক দূরে চারপাশে শুধু মেঘ আর মেঘ।

পিছনে ফিরে দেখি কিছুই নেই। চারিদিকে শুধু মেঘ। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলাম। আকাশে ভাসছি। সময়টা কি দিন নাকি রাত বুঝতে পারছি না। খেয়াল করলাম আমি আসলে ভাসছি না। নিচের দিকে পড়ছি। কানের পাশ দিয়ে শোঁশোঁ করে বাতাস বইছে। আমি কি ঘুমে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি কিছুই বুঝতে পারছি না। নাকি বাস্তবে আছি। আমি শুধু নিচের দিকে পড়ছি। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে আমি অনন্তকাল ধরে আকাশ থেকে নিচে পড়ছি। এই নিচে পড়া যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।

পুনশ্চঃ নিরিবিলি বাড়ির মেইন দরজায় টু-লেট ঝুলছে। ‘মনোরম পরিবেশে এক রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হইবে। ব্যাচেলর কিংবা সিঙ্গেল ফ্যামিলির জন্য। সার্বক্ষণিক গ্যাস কারেন্ট পানির সুবিধা আছে।’

টু-লেট দেখে এক তরুণী টু-লেটে দেওয়া নাম্বারে কল দিলো। কেয়ারটেকার এসে দরজা খুললো। বাসা দেখতে উপরে উঠলো কেয়ারটেকারের সাথে। গিয়ে দেখে দরজা নেই ফ্ল্যাটে। ভিতরে রঙের কাজ করছে রঙ মিস্ত্রিরা। তরুণী বলল, ‘দরজা কোথায় চাচা?’ কেয়ারটেকার বলল, ‘দরজাডা পুরান হই গ্যাছিলো আম্মা। তাই বদলাই দিতাছি। আপনের বাসা পছন্দ হইলে আপনি উঠার আগেই দরজা লাগাই দিবানি।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত