গত বছর দুই বন্ধু ঠিক বিশ রোযার দিন মার্কেটে গিয়েছিলাম। মার্কেটে গিয়ে চার পাঁচটা দোকান ঘুরে একটা শার্ট মনে ধরেছে। একদরের দোকান কোনো কথার প্রয়োজন পড়েনি প্যাকেট হয়ে গেছে। টাকা দিব প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই দেখি পকেট ফাঁকা। দেখি কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠেছে। বাবার পকেট থেকে মেরেছি দুই হাজার, মায়ের লুকোনো হাত ব্যাগ থেকে নয়শত টাকা, বোনের লুকনো তোষকের নিচ থেকে পনেরশত টাকা আর বাবা দিলেন মোট পাঁচ হাজার টাকা।
প্রায় দশ হাজার টাকা আর দামী মোবাইল খান হারিয়ে আমি সদ্য বিধবা বউয়ের মত দোকানের মেঝেতেই হাত পা মেলে বসে পড়েছি। জীবনে কখনো কাঁদিনি তাই বুঝতে পারিনি কিভাবে কাঁদতে হবে। বিলাপের শুরুতে প্রথমে মায়াগো দিয়ে শুরু করছি পরে ভেবে দেখলাম না আমি পুরুষ মানুষ বলে কথা বাবাগো দিয়ে শুরু করি। না তাও হচ্ছেনা। ঠোঁট ভেঙ্গে কাঁদবো নাকি ঠোঁক কামড়ে কাঁদবো কিছুই ঠিক করতে পারছি না। ওমা সামনেই দেখি এক ডানা কাটা পরীর আগমন। লুকিং গ্লাসে দেখছি চেহারা খান একেবারে কাজের ছেলের হাব ভাবের মত হয়ে গেছে। বন্ধু রাকিব হাত ধরে টেনে তুলেছে। আমিও এই ফাঁকে মাথার চুলের ফাঁকে আঙ্গুলগুলো চালিয়ে নিলাম। এমন মাইর কোনো দিন খাইনি তাই শোকে নেতিয়ে পড়েছি। মাইয়াটা দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকী হাসি দিযেছে। আমার কলিজাটা দেখি দুই ভাগ হয়ে গেলো।
আমিও খুব জোর করে মুখে কৃত্রিম হাসি এনে চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছি নাম্বার ওয়ান হিরু। টাকা নাই পকেট ফাঁকা নিয়ে সুন্দর সুন্দর মেয়েদের পিছনে যতক্ষণ ঘুরেছি ততক্ষণ মনে লাড্ডু ফুটেছে। যেইনা মেয়েগুলো বাই বলে বেরিয়ে গেলো দেখি শরীরে দুইশত পাঁচ ডিগ্রী জ্বরে কাঁপন ধরেছে। মনের দুঃখে বাসায় এসে আম্মু, আপুকে বললাম তোমার বদদোয়ায় আজ আমি নিঃস্ব। রাতে বাসায় এসে আব্বু লেকচার দিচ্ছেন, “এখন জ্বর বাঁধিয়েছিস ক্যান? সুন্দর মেয়ে দেখলেতো হুশ থাকে না। আমি একশত ভাগ নিশ্চিত তুই মেয়েদের দিকে তাকিয়েছিলে আর পকেটমার সুন্দর করে তোর পকেট ফাঁকা করে দিয়েছে।” সবাই কথা শোনাতে ছাড়েনি আমায। সখের বেড়ালটাও আমার কাছে আসেনি একবার। যাই হোক মন খারাপ করে আর কী হবে? তাই এবার রোযার শুরুতেই ফুটপাত থেকে একটা প্যান্ট কিনে দর্জিকে দিয়ে এসেছি দশটা পকেট করে দিতে।
আজ মার্কেটে যেতে হবে জি এফ দাঁড়িয়ে থাকবে বলল। এবার অনেক প্ল্যান করে চুরি ধারি মিলিয়ে মোট ১২০০০ টাকা ভাগ ভাগ করে দশ ভাগে দশটা পকেটে রেখেছি। দেখি শালারা এখন কেমতে টাকা নেয় আমার থেকে? তবে এক পকেট খালি করলে আরো নয় পকেট বাকী থাকবে। প্যান্টটা পড়ে মোরের মাথায় দাঁড়িয়ে আছি দেখি একদল সুন্দরী লবঙ্গ লতিকারাও মার্কেটে যাচ্ছে। নিজেকে কেমন যেন জোকার জোকার লাগছে দেখতে। কারণ জায়গার অভাবে দর্জি হাঁটুর নিচেও পকেট করে দিয়েছে।
অটোতে উঠেই মূখস্ত করছি কোন পকেটে কত টাকা ঢুকিয়েছি যেমন এস এস সি পরীক্ষায় টুকলি ঢুকাতাম আর সারা রাত টুকলির নাম্বারগুলো মূখস্ত করতাম। জানেন পড়া মাথায় ঢুকেনা শুধু চারিদিকে ললনাদের চোখের আইলাইনার, কাজল, মাশকারা আর লিপষ্টিক চোখে ভাসে। গত বছর টাকা চুরি হওয়ায় জি এফকে গিফ্ট করতে পারিনি বলে সে আস্তে করে বাই বলে অন্যজনের গলায় ঝুলে পড়েছে। এইবার আর এই চান্স নেই বললেই চলে। ঈদের বাজার বেশ গরম। ভিড়ের ঠেলায় পাঁচশত গজ দূরেই আমাকে নামতে হলো। কিন্তু এই ভেবে খুশি লাগছে ললনাদের সাথেই আমিও হেঁটে যাব। কিছুদূর এগোতেই দেখি সবাই আমাকে দেখে শুধু হাসে। কেউ কিছু বলেনা আমাকে ভিড় করে অনেক লোক ঘিরে ধরেছে।কিছুক্ষণ পর দুই একজন সাংবাদিক আমার সামনে ক্যামেরা ফিট করে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করছে, “এই যে ভাই আপনার এই ঈদের বাজারে নিউ প্যান্ট কালেকশন কোত্থেকে করেছেন? সারা প্যান্টময় পকেটের বাহারে বেশ আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। আমরা কি আপনার ছবি তুলতে পারি?”
আমিতো আনন্দে গদগদ হয়ে ভাইদের বললাম ছবি তুলবেন? আরে তুলেন তুলেন, হয়তো ঈদের বাজারে আমি ফেমাস হয়ে যাব। ছবি তুলে কিছুদূর এগোতেই দেখি উপরের দুই পকেট ফাঁকা। বুঝতে বাকী রইলোনা তার মানে আমাকে ধান্ধাবাজ ধরেছিল। ধূরর লবঙ্গ লতিকাদের হারিয়ে ঢুকেছি মার্কেটে। ওমা একি, জি এফ দেখি সামনেই খাড়া। আমাকে দেখেই মুক্তো ঝরা হাসি দিয়ে আমাকে টানতে টানতে এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের ফ্যাশন হাউজে ঢুকলো। একেকটা থ্রীপিছের দাম শুনেই আমার স্ট্রোক করার অবস্থা। আরেকটা দোকানে গেলাম জি এফ বললো, “বাবু এই থ্রিপিছটা দেখ কি সুন্দর, এটা পড়লে আমাকে নায়িকাদের মত দেখতে লাগবে। বলনা এটা কিনে দিবে তো?” মনে মনে বললাম ফইন্নির ঘরের ফইন্নি এত নায়িকা হওয়ার সখ বাপের থেকে টাকা আনতে পারলি না? আমি ধ্যান করে আছি টাকার চিন্তায় অমনি জি এফ এমন ধাক্কা দিল হুড়মুড়িয়ে পড়তে পড়তে আর পড়িনি। জি এফ বলে, “এই কী হলো তোমার? দাওনা বাবু ড্রেসটা কিনে?”
দোকানদারকে বললাম, ড্রেসটা নামান তো দেখি? ও মা বত্রিশ হাজার টাকা? দোকানদার দেখি ড্রেস প্যাকিং করছে দু’চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। প্ল্যান করছি পালাতে হবে নইলে মান ইজ্জত নিয়ে ফিরতে পারবো না। জি, এফ দোকানদারের কাছ থেকে ব্যাগ হাতে নিচ্ছে আমি আস্তে করে কেটে পড়েছি। দরজার বাইরে এসে এমন দৌড় দিলাম আমাকে আর পায় কে? পথিমধ্যে রাস্তায় কার পকেটে যেনক পকেটমার হাত ঢুকিয়েছে কিন্তু মানি ব্যাগ বের করার আগেই টের পেয়ে দিল দৌড়ানি আর সব লোক পকেটমার বলে চিল্লায় আর ধরার জন্য পিছনে দৌড়ায়। আমি তো আগে থেকেই দৌড়াচ্ছি।
আমাকে জোকারের মত দেখে সবাই আমাকে ধরে বলছে পকেটমার ধরেছি। ব্যস আর কী লাগে? প্রথমে গুণে গুণে দশটা পকেট আবিষ্কার করলো।প্রতি পকেটেই এক থেকে দেড়হাজার টাকা করে আছে। ওরা টাকা বের করে আর কিল ঘুষি মেরে বলে, “কী চালাক পকেটমার দশটা পকেট বানিয়েছে। না জানি আজ কত জনের টাকা চুরি করেছে?” এই যে আম চিৎকার করে বলছি আমি পকেটমার নই কে শোনে কার কথা। গণ ধোলাই খেয়ে হাত পা ভেঙ্গে আপাতত হাসপাতালে অবস্থান করছি।