চেনার ভুল এবং অতঃপর

চেনার ভুল এবং অতঃপর

একটা সেন্ডো গেঞ্জি পড়ে বেলকনিতে কাপড় নাড়ছি। হঠাৎ চোখ পড়লো বিপরীত পাশের বিল্ডিংয়ের বেলকনিতে।তাসমিয়া হাতে ইশারা দিচ্ছে।লজ্জায় আমি বসে পড়লাম। তারপর নিচে বসে নিজেকে ওয়ালের আড়াল করে বগের মত ঘাড়টা লম্বা করে উঁকি দিয়ে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করলাম যে আসলে হচ্ছেটা কি । ওমা ! সে তো আমাকেই ডাকছে। তাসমিয়া আমাকে আগে দেখেনাই।কিন্তু সে ছাদে আসলে আমি প্রায়ই তাকে দেখি।ভালো ও লাগে।

সে ইশারায় কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে।আর আমার মনে তখন বাজছে চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে জেনে যাবে কেউ জেনে যাবে।

কিছুক্ষণ ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলার পর বুঝলাম আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলছে।ভাবলাম হয়তো কোনো দরকার। আমি তাড়াতাড়ি একটা টি শার্ট আর একটা প্যান্ট পড়ে তাদের বাসার দিকে রওনা হলাম।

কলিংবেল দেয়ার পর দরজা খুল্লো তার মা। আমি ওনাকে দেখে ভয় পেলেও ওনি ছিলেন হাসিমুখে।মনে মনে ভাবছি ডাকলো মেয়ে দরজা খুল্লো মা, কাহিনি কি? ইতোমধ্যে আন্টি আমাকে বসতে দিয়েছেন।

-তোমার কথা কতো শুনেছি ভাবির কাছ থেকে। ওনি মাঝেমধ্যে আমাদের বাসায় আসেন। তোমার অনেক প্রশংসা করেন। তুমি কাজে কামে অনেক ভালো। ভাবির সব কথা শোনো। এমন একটা লক্ষী ছেলে আমার ও দরকার ছিলো।ভাবির কথা শুনে তোমাকে দেখার ইচ্ছা ছিলো, এই দেখো আজকে দেখা হয়ে গেলো।

আমি একটা শুকনা হাসি দিয়ে কাচুমাচু হয়ে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বল্লাম জ্বী আন্টি জ্বী।কিন্তু মনে মনে আমি নাগিন ডান্স দিচ্ছি আর ভাবছি আমার এতো প্রশংসা আম্মু ক্যামনে করলো? ক্যামনে? আমি তো সারাদিন ঘুমাই আর ফোন টিপি। তাহলে কি তাসমিয়া কে আম্মুর পছন্দ? তাই আমাকে ভালো বানানোর জন্য তাদের কাছে আম্মু প্রশংসা করলো? আর আন্টি কেন বল্লো যে আমার মত একটা ছেলে তাদের দরকার তারমানে কি আন্টি আমাকে তার মেয়ের জামাই করতে চাচ্ছে?

-তুমি একটু বসো রান্নাটা হয়ে নিক তারপর তোমাকে দিচ্ছি।

-জ্বী আন্টি জ্বী

পোলাও মাংসের ঘ্রাণ পাচ্ছি আহ!।বাসায় কেউ নেই, আম্মু আব্বু এখনো গ্রাম থেকে আসেনি তাই রান্নাও হয়নি।একটু পরেই নিচে নেমে হোটেলে গিয়ে খেতাম ।কিন্তু কপাল গুণে এখন তো দেখা যাচ্ছে খাবারটা শশুড় বাড়িতেই খেতে যাচ্ছি। এতক্ষণ হয়ে গেলো এখনো তাসমিয়ার দেখা পেলাম না। আমাকে তো সে ই ডাকলো এখন কোথায়? আচ্ছা যাই হোক মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে।

আন্টি এসে বলা শুরু করলো শোনো বাবা ঈদের পরে এখনো আমার কেয়ার টেকার টা আসে নি আর আজকে প্রথম অফিস খোলাতে কাজের চাপে দুপুরে তোমার আঙ্কেল ও খেতে আসতে পারেনি। তাই একজন লোক খুঁজছিলাম খাবারটা পাঠাতে ।বেলকনি দিয়ে তোমাকে দেখে আমার মেয়ে বল্লো “আম্মু ওই বাসাটার কাজের ছেলে চলে আসছে ওকে ডাক দিয়ে আব্বুর টিফিন বক্সটা পাঠায়া দাও”। তাই তোমাকে ডাক দিতে বল্লাম । এই নাও একশত টাকা। বিশ টাকা রিক্সা ভাড়া আর আশি টাকা তোমার বখশিশ। যাও এই ঠিকানায় তোমার আঙ্কেলের খাবারটা দিয়ে আসো।

-এ্যাঁএএএএএএএ

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত