আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন আমার ফুফু আমাকে বলেছিল,” রিমি তোকে আমার ছেলের বউ করবো”।ব্যাপারটা তখন সিরিয়াসলি নেই নি কারন আমি আর রবিন ভাই মাএ একবছরের ছোট বড় তবুও আমরা একই ক্লাসে পড়তাম।দুজন একজন আরেকজনের বন্ধু ছিলাম সবকিছু একে অপরের সাথে শেয়ার করতাম তাই কখনো এসব চিন্তাও করতে পারতাম না।
সেদিন ফুফুর কথাটা মজার ছলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। সবাই আমাদের দুজনকে জামাই বউ বলতো।ছোটবেলা ততোটা না বুঝলেও বড় হবার কেমন যেনো লজ্জা লাগতে শুরু করলো।তবে নড়েচড়ে বসলাম তখন যখন রবিন ভাইয়ার বড় বোন পারুল কথাটা বলল।কারন তার কথা যেনো ভবিষ্যত বাণীর মতো সবসময় সত্যি হয়।তাই ভাবতে শুরু করলাম কিভাবে রবিন ভাইকে অন্য মেয়ের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া যায়।আর যেদিন জানতে পারলাম যে আমার ক্লাসমেটকে রবিন ভাই এককালে পছন্দ করতো তখনতো সোনায় সোহাগা।ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপারটা সত্যি কিনা কিন্তু সে সাফ মানা করে দিল।
তবে আমিও কম না একদিক থেকে রেড সিগনাল পেয়েছি তো কি হয়েছে অন্য দিক থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাবার আশা এখনো রয়েছে।তাই ছুটে গেলাম মীম অর্থাৎ সেই মেয়ের কাছে ওকে বললাম আমার ভাই ওকে পছন্দ করে।ব্যস হয়ে গেল মেয়ে তো লজ্জায় লাল বুঝতে বাকি রইলো না তার মনেও ভাইয়ার জন্য একটি বীজ বোনা ছিল আর আমি সেই বীজে পানি ঢেলে দিয়েছি।সেদিন থেকে এই মেয়েকে ভাবী ডাকতে শুরু করলাম কারন সম্পর্কে তো আমি তার ননদ।মীম যেদিন ভাইয়াকে দেখতো সেদিন আমার কাছে এসে তার ভাইয়ার প্রতি অনুভূতির কথাগুলো বলতো।আমার কেমন যেনো অস্বস্তি লাগতো কথাগুলো শুনতে তবুও শুনতাম কারন ঝামেলামুক্ত হতে হলে একটুতো কষ্ট করতে হবে।আমার আর ভাইয়ার যেদিনই দেখা হতো সেদিনই দুজনের চেহারার অবস্থা বেহাল হয়ে যেতো।যেটা ভাবছেন তেমন কিছুই না আমরা দুজন মারামারি করতাম।
তাই কখনো আমার ঠোঁট কাটতো কখনো ওর মাথা ফুলে যেতো।এভাবেই মীমের ফিলিংস আর আমাদের মারামারি করা এসব নিয়ে আমরা এসএসসি পরীক্ষা শেষ করি।এরমধ্যে কয়েকবার আমি মীমের কথা রবিন ভাইকে বলেছি কিন্তু রবিন ভাই কোনো কথায় পাত্তা দিতো না।ভেবেছিলাম এসএসসি পরীক্ষার পর যেকোনো ভাবে এদের দুজনকে মিলিয়ে দেবো।কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখন যখন মীম এসএসসিতে টেস্টে ফেল করলো আর সেই কারনে ওর বাবা রাগ করে ওর বিয়ে দিয়ে দিলেন।বিয়েতে আমি গিয়েছিলাম।মেয়েটার কি কান্না খালি বলছিল রবিন ভাই এখন কতো কষ্ট পাবে ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে।কিন্তু ওর মাথায় বাঁশ পড়লো তখন যখন বরযাত্রীদের সাথে রবিন ভাই এলো।
এমনকি জামাই বউয়ের সাথে কবজি ডুবিয়ে খেলো।পরে জানতে পারলাম জামাই ছিলো রবিন ভাইয়ার বন্ধুর বড় ভাই সেই সুবাদেই সে এসেছিল।যাক মীমের বিয়ে হয়ে গেল আর সাথে আমার হাত থেকে ঝামেলামুক্ত হবার এতোবড় সুযোগটাও চলে গেল।রেজাল্ট বের হলো আমাদের পরীক্ষার।রবিন ভাই সাইন্স থেকে জিপিএ ফাইভ পেলো আর আমি কমার্স থেকে জিপিএ ফাইভ।দুজনেই আবার এক কলেজে ভর্তি হলাম।কলেজের সব মেয়েরা রবিন ভাইয়ার উপর ক্রাশিত ছিল আর যখন জানতে পারলো আমি ওর মামাতো বোন আমার সাথে কি ভাব ওর নাম্বার নেওয়ার জন্য।এখন আপনারা ভাবছেন যেই ছেলের উপর সব মেয়ে ক্রাশ খায় তার থেকে আমি কেন পালাতে চাইছি আসলে আমি বিয়ে করতেই চাইনা কারন বিয়ে করলে কতো দায়িত্ব পালন করতে হয় আর আমি এমনিতেই অলস।
কলেজেই কোনো মেয়েকে পাত্তা দিল না রবিন ভাই।এখন আমার খটকা লাগতে শুরু করলো এই ছেলের জেন্ডারে কোনো সমস্যা নেই তো কারন আমি ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথেই আজ পর্যন্ত কথা বলেনি।ভাবনা সত্যি না মিথ্যা সেটা আর যাচাই করতে পারলাম না কারন তার আগেই রবিন ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য আমেরিকা চলে গেল।আমিও ফেশন ডিজাইনিং এর কোর্স করতে ফ্রান্স চলে গেলাম।দীর্ঘ চার বছর পর দেশে ফিরলাম বাবার অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে পেরে আর গিয়েই বিপদে পড়লাম কারন সবাই আমাকে মিথ্যা বলে এনেছে।বাবা একদম সুস্থ আর বাড়ি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেনো বিয়ে বাড়ি আর আমি গাড়ি থেকে নামতেই আরেকজনকে দেখে শকড খেলাম।কারন ব্যক্তিটা রবিন ভাই।সবাই আমাকে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল।আমি জিজ্ঞেস করতে লাগলাম কার বিয়ে কিন্তু কেউই কিছু বলছেনা। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই মা এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।
বাবাতো এয়ারপোর্টে আমাকে আনতেই গিয়েছিল যখন জিজ্ঞেস করলাম মিথ্যা কথা কেনো বলছে তখন বলল আমি অনেকদিন বাড়িতে নেই বলে বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল তাই আমায় মিথ্যা বলে আনিয়েছে।সত্যিই তো আমাকে মিথ্যা কথা না বললে আমি কখনোই আসতাম না।বড় আপু,দুলাভাই সহ সব আত্মীয় স্বজন এসেছে।বুঝতে পারছি না বাড়িতে কি এমন অনুষ্ঠান যে সবাই এসেছে।বাবাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম বাড়িতে কি অনুষ্ঠান তখন দেখলাম সবাই মিটিমিটি হাসছে।আমার ভাগনি জিয়া তখন বলে উঠলো,”আরে খালামনি কাল তোমার বিয়ে তুমি জানো না”।আমার বিয়ের কথা শুনে বুঝতে বাকি রইলো না আমাকে কেন মিথ্যে বলে দেশে আনা হয়েছে।
আমি:আমার বিয়ে??কার সাথে?
তখনই পারুল আপু বলে উঠে,”কেন জানিস না বুঝি, আচ্ছা বুঝেছি তুই আমাদের মুখ থেকে শুনতে চাইছিস তাই তো ঠিকাছে বলছি”।তখন সবাই একসাথে বলে উঠে,”রবিন “।আমি কথাটা শুনে রবিন ভাইয়ার দিকে তাকালাম আর দেখলাম সে বাঁকা হেসে আমাকে চোখ টিপ দিয়েছে।ব্যাপারটা দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।তখনই সবাই আমাকে রুমে নিয়ে গেল গাঁয়ে হলুদের জন্য সাজাতে।আমি যেনো শকড থেকে এখনো বেড়তে পারিনি।যখন শকড থেকে বেড়োলাম তখন নিজেকে গায়ে হলুদের সাজে স্টেজে বসে আছি আর পাশে রবিন ভাই।সবাই আমাদের হলুদ দিয়ে যাচ্ছে আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।আমি যে রবিন ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলবো তারও কোনো সুযোগ নেই।গাঁয়ে হলুদ দেয়া শেষ হলে সবাই নাচানাচি শুরু করে দেয়।তখনই রবিন ভাই আমার কানের কাছে এসে বলে ,”তোর শেষ রক্ষা আর হলো না”।
আমিঃ মানে কি?কিসের শেষ রক্ষা?
রবিনঃ প্রথমে মীমের সাথে প্রেম করিয়ে দেবার চেষ্টা পরে কলেজের মেয়েদের আমার নাম্বার দেয়া তোর কি মনে হয় এসব কিছুই আমি বুঝতে পারিনি ।
আমিঃ তুমি জানতে এসব?
রবিনঃ হুম জানতাম,কিন্তু আমি কি এদের জন্য আমার বউকে ছেড়ে দেবো বল তাইতো এদের কাউকে পাত্তা দেইনি।
আমিঃ দেখ আমার মতো একটা চশমাকে বিয়ে না করে তুমি অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করে নেও,তুমি কতো হ্যান্ডসাম তুমি আমার চেয়ে ভালো মেয়ে পাবে।
রবিনঃ কিন্তু আমার তো এই চশমাকেই চাই ?
আমিঃ কেন?
রবিনঃ কারন চশমার পেছনের তোর ওই কাজল কালো চোখ গুলো আমায় মুগ্ধ করে,আর এমনিতেও তুই আমার সুখ দুঃখের সঙ্গ সেই ছোট বেলা থেকে তোর চেয়ে বেশি বিশ্বাস আমি অন্য কোনো মেয়েকে করতে পারবো না,আর তুই তো আমার সব গোপন তথ্যও জানিস তাই তোকেই বিয়ে করবো।
আমিঃ হ্যা যেমন তোর জেন্ডারে সমস্যা আছে।
রবিনঃ মানে তুই বলতে চাইছিস আমি গেই?
আমিঃ বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট ।
রবিনঃ ওহ তাহলে কাল রাতেই বুঝিয়ে দেবো আমার কোনো সমস্যা আছে কিনা।
আমিঃ মানে ??
রবিনঃ বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
শেষ পর্যন্ত আমার আর রবিন ভাইয়ের বিয়েটা হয়েই গেল আর আমারও শেষ রক্ষা হলো না।